মজিদ ওর মায়ের অসুখের রিপোর্ট দেখিয়ে জরুরি ভিত্তিতে চাকুরী বদলি হওয়ার জন্য যে দরখাস্ত করেছে অনেক টেবিল ঘোরাঘুরির পর অবশেষে অনুমোদিত হয়েছে ।
অফিসের বড়ো সাহেব মজিদকে ডেকে বলেন, আপনার দরখাস্ত অনুমোদিত হয়ে এসেছে, আগামি সপ্তাহে রিলিজ করিয়ে দেব, আপনার পরিবর্তে আর একজনকে হেড অফিস থেকে এখানে পাঠাবে । শুনেছি ইমরান সাহেবকে পাঠাবে, আপনি ওকে অফিসের চার্জ বুজিয়ে দেবেন । মজিদ বলে জ্বি স্যার, আমি কাগজ পত্র গুছিয়ে বুঝিয়ে দেব ।
মজিদ টেলিফোন উঠিয়ে রেনুকে বলে আমার ট্রান্সফার অনুমোদিত হয়েছে। আমি আগামী উইকেন্ডে চলে আসবো । রেনু শুনে বলে যাক আমরা এই খবরে অনেক খুশি । সে বলে বাসার জিনিস পত্র একবারে নিয়ে আসবে ?
হ্যাঁ, তাই করবো । হেড অফিস থেকে ইমরান সাহেবকে পাঠাবে দুই এক দিনের মধ্যে, ও আসলে ওকে অফিসের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে সব গুচিয়ে নিয়ে চলে আসবো । তোমার অনেক ঝামেলা হবে মালামাল প্যাক করতে ।
কি করা যাবে?
লোক নিয়ে প্যাক করে ফেলবো । এত মালামাল কোথায় রাখবে?
সে দেখা যাবে । আমাদেরকে কি আলাদা বাসা নিতে হবে?
এসে নেই, আম্মুর অবস্থা বুঝে এবং অফিসে আলাপ করে সিদ্ধান্ত নেবো । আবিদের অফিসের স্টোরেজ এ কিছু জিনিস কয়েক সপ্তাহের জন্য কি রেখে দিতে পারবে ?
এটা তুমি একটা ভালো কথা স্বরণ করিয়েছো, দেখি আলাপ করে আবিদের সঙ্গে । আমি কি আসবো তোমাকে সাহায্য করতে মালামাল গুছানোর জন্য?
আসলে ভালো হয়, আমি বুঝতে পারবো না কোনটা কোন লাগেজে দেব । তুমি ভালো বুঝবে কোন লাগেজে কি দিতে হবে ।
তুমি কি মায়ের সঙ্গে কথা বলবে?
মজিদ বলে দাও আম্মুকে খবর দিলে খুশি হবে । ধরো আমি মাকে টেলিফোন দিচ্ছি ।
রেবেকা টেলিফোন উঠিয়ে বলে তুই কবে আসবি?
আম্মু, আমি আগামী উইকেন্ডে চলে আসবো । ঠিক আছে আমার সঙ্গে আল্লাহ হাফেজ । তুই রেনুর সঙ্গে কথা বল ।
মজিদ ভুল করে টেলিফোন রেখে দিয়েছে , রেনু বলে ঠিক আছে পরে কল দেব ।
রেবেকা রহমান সাহেবকে বলে, শুনেছ ?
কি শুনবো ?
মজিদ ট্রান্সফার হয়েছে । এত খুশির খবর, কবে আসবে?
আগামী উইকেন্ডে আসবে বলে জানিয়েছে । ঠিক আছে, তাতে ভালো হবে ।
মজিদ পুনরায় টেলিফোন করেছে , রেনু বলে হ্যাঁ কি বলবে?
তুমি না আসলে আমার অসুবিধা হবে । রেনু বলে আমি না আসলে তুমি লাগেজ গুছাতে পারবে না । ঠিক আছে, দিনাকে নিয়ে কাল চলে আসি । তোমরা দুই জন মা বেটি আসলে আমার কষ্ট কম হবে ।রহমান সাহেব ভোরে রেনু ও দিনাকে নিয়ে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে প্রথম বা দ্বিতীয় শ্রেণীর টিকেট না পেয়ে কোনো এক এজেন্টকে কিছু পয়সা দিয়ে দ্বিতীয় শ্রেণীর টিকেট সংগ্রহ করে । রহমান সাহেব উত্তেজিত হয়ে বলেন আপনাদের কাউন্টারে টিকেট পাওয়া যায় না, কিন্তু বাহিরে বাড়তি পয়সা দিলে পাওয়া যায় । টিকেট ক্লার্ক বলে স্যার, কে বা কাহারা টিকেট খরিদ করে, ওটা আমরা চেক করতে পারি না । সে যাই হোক আপনারা টিকেট পেয়েছেন । রহমান সাহেব বলেন হ্যাঁ পেয়েছি, তবে অনেক কষ্ট করে এবং বেশি পয়সা দিয়ে । রহমান সাহেব ওদের ট্রেনে উঠিয়ে দিয়ে বাসায় এসে টেলিফোন করে মজিদকে বলে রেনু ও দিনাকে ট্রেনে উঠিয়ে দিয়েছি , পথে কোনো কারণে দেরি না হলে বিকেল ৫টার দিকে পৌছেবে। মজিদ বলে ঠিক আছে আব্বু, আমি ওই সময় ট্রেন স্টেশনে থাকবো ।
কসবা স্টেশন (কুমিল্লা) পার হওয়ার পর কিছু লোক চেইন টেনে গাড়ি স্টপ করিয়ে নেমে পড়ে। রেলওয়ে পুলিশ দৌড়ে ওদের ধাওয়া করে এবং দুইজনকে ধরে ট্রেনে টানা হেচড়া করে নিয়ে আসে । এরা প্রায়ই ট্রেন থামিয়ে নেমে পড়ে এবং ট্রেনের যাত্রীদের ভোগান্তি শুরু হয় । ট্রেন থেকে লোকজন জড়ো হয়ে ওদের মার ধর করে এবং এ নিয়ে প্যাসেঞ্জারদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয় । দিনা ভয়ে কেঁদে বলে আম্মু আমরা কি নিরাপদ ?
রেনু ওকে নিয়ে ট্রেনে উঠে দরজা বন্ধ করে বসে আছে । কিছু প্যাসেঞ্জার শান্তনা দিয়ে বলে আপনাদের ভয়ের কোনো কারণ নেই, আমরাও আপনাদের মতো প্যাসেঞ্জার ।
পরিস্থিতি শান্ত হয়েছে, ট্রেন ছাড়বে কিনা বুঝা যাচ্ছে না । দিনা বলে আম্মু ট্রেনে অতিরিক্ত গরম আর বসে থাকতে পারছি না, বাহিরে একটু দাঁড়াই । কিছু যাত্রী বাহিরে এখনো দাঁড়ানো এবং ট্রেন ছাড়ার জন্য অপেক্ষা করছে। দিনা বাহিরে গিয়ে ফেরিওয়ালার নিকট থেকে চিনা বাদাম কিনে খোসা ছড়াচ্ছে আর ট্রেন ছাড়ার জন্য অপেক্ষা করছে । অবশেষে ট্রেন ছেড়ে দিবে বলে ট্রেনের যাত্রীদের ট্রেনে যেতে বলা হচ্ছে শুনে দিনা ট্রেনে উঠে বলে আম্মু , এখন ট্রেন ছেড়ে দেবে ।
মজিদ স্টেশনে দুই ঘন্টার মতো অপেক্ষা করে ওদের দেখে বলে তোমরা শেষ পয্যন্ত আসতে পারলে ?
দিনা বলে আব্বু আমরা দুই ঘন্টার মতো কসবা দাঁড়িয়েছে ছিলাম । মজিদ বলে ট্রেন ভোগান্তির খবর নুতন কিছু নয় । বাসায় যাওয়ার পর মজিদ বলে আজ রাত কিছুই করার দরকার নেই । কাল সকাল থেকে তোমরা কাজের লোকের সঙ্গে ধীরে সুস্থে গুছানো শুরু করবে । রেনু বলে মা সীমা আন্টিকে অনুরোধ করেছিল কিছু মাল ওদের স্টোরে রাখার জন্য । আবিদ জানিয়েছে কোনো অসুবিধা হবে না । দুই দিন থেকে সব কিছু গুচিয়ে দিয়ে রেনু ও দিনাকে ট্রেনে ঢাকা পাঠিয়ে দেয় । মজিদ আরও কয়েক দিন অফিসের কাজে থাকতে হবে । আজ আর বেশি অসুবিধা হয় নি ওরা সময় মতো কমলা পুর স্টেশনে এসে পৌঁছে বেবি ট্যাক্সি নিয়ে বাসায় চলে আসে । ওরা আসার কয়েক ঘন্টা পর ট্রাক এসে পৌঁছে এবং আবিদ টিকাটুলি স্টোরে মাল রেখে কিছু ব্যাবহারিক জিনিস বাসায় পৌঁছে দেয় ।
রেনু বলে বাসায় বেশি জিনিস আছে বলে মনে হয় নি । কিন্তু এটা সেটা গুছাতে গিয়ে অনেক মালামাল বলে মনে হলো । একটা ট্রাক পুরা পুরি লেগেছে । পুরা লাগেজ বাসায় রাখা হলে লোকজনের হাঁটার মতো জায়গা হতো না । রেবেকা বলে আমাদের স্টোরে ও কিছু রেখে দিতে পারবে ।
রেনু বলে মালামাল মাসুদ আংকেলের অফিসের স্টোরে রেখে দেয়াতে ভালো হলো । রাত মজিদ টেলিফোন করে জেনেছে সব কিছু ঠিক ভাবে পৌঁচেছে । আম্মু সীমা আন্টির সঙ্গে আলাপ করাতেই ব্যবস্থা হলো, কিছু অপ্রয়োজনীয় জিনিস সাকিলার বাসায় পাঠিয়ে দিতে পারো । ওর নুতন সংসার ওকে দিয়ে দাও । রেবেকা বলে ওটা রেনুর ব্যাপার, ও গুলি আমার জিনিস নয় । রেনু মনে করলে দিতে পারে আমি এই ব্যাপারে কিছুই বলবো না ।
রেনু বলে মা তুমি আমাকে এক সপ্তাহ সময় দাও, আমি আগে দেখি কোন কোন জিনিস আমার এখানে লাগবে । তাছাড়া মজিদ অফিস থেকে যদি বাসা পায়, তা হলে আবার এ সব মুভ করতে হবে । রেবেকা বলে এগুলি তোমার জিনিস, আমি বা তোমার শ্বশুর কিছুই বলবো না । তবে মাসুদ সাহেবের স্টোরে ওদের নিজস্ব মালামাল আনা নেয়া করে, ওখানে বেশি দিন রাখতে পারবে না ।
মজিদ ঢাকা আসার পর সবাই কিছুটা স্বস্তির নিঃশাস ফেলে, রেবেকা ও রহমান বলে তুই বাসায় থাকলে আমরা নিশ্চিন্ত থাকি । প্রতি সপ্তাহে নিয়ম মাফিক রেবেকার থেরাফি চলছে এবং বাসায় একটা সুস্থ পরিবেশ ফিরে এসেছে ।
মজিদ ভোরে ঘর থেকে বের হওয়ার পূর্বে বলে আম্মু তোমার শরীর কেমন?
আমি ভালো, আমার জন্য তোদের চিন্তা করার কোনো দরকার নেই । আমি এভাবে যে কতদিন বাঁচি, তোমরা আমার চিকিৎসা করিয়েছো । আমার জন্য আর কি করবে ?
আম্মু প্রয়োজনে তোমাকে একবার আব্বুকে সহ ইন্ডিয়া পাঠাবো । ওখানে ভালো চিকিৎসা আছে । এখানেও ভালো চিকিৎসা আছে এবং আমি ভালো চিকিৎসা পাইতেছি ।
রেনুকে জিজ্ঞেস করে কোনো কিছু কি দরকার আছে অফিস থেকে ফেরার পথে নিয়ে আসবো?
বাবা দৈনিক সকালে বাজারে গিয়ে কাঁচা বাজার নিয়ে আসেন । তোমার এ ব্যাপারে চিন্তা করতে হবে না,বাবা লিখে দিলে বাজার করে নিয়ে আসতে পারেন । তাছাড়া বাবাকে কাজে কর্মে ব্যস্ত না রাখলে ঘরে কি করবেন?
মজিদ বলে কাজে কর্মে ব্যস্ত থাকলে শরীর ও মন ভালো থাকে । তুমি জানো না, বাবাকে ব্যস্ত না রাখলে, পীরের খানকায় গিয়ে বসে থাকেন । পীর মনে করেন বাবা খুব ধনী মানুষ, তাই টাকা খসানোর বিভিন্ন ফন্দি বের করে ।
তাই নাকি ?
হ্যাঁ, তুমি জানো না, মায়ের অসুখ হয়েছে, পীর বলে বাড়িতে জ্বিনের আছর আছে । কোথায় কোন কোহকাফ শহর থেকে জ্বিন এসে এখানে বাসা বেঁধেছে । জ্বিন তাড়াতে হবে, একটা সাদা গরু পীরের খানকায় জবাহ করে লোক জনকে খাওয়াতে হবে । এ রকম বলে থাকলে তো আব্বুর পীরের বাড়ি যাওয়া নিষেধ করে দিতে হবে । মা,দিনা ও আমি সব সময় নিষেধ করি । ঠিক আছে, আব্বুকে একটা কাজের ব্যবস্থা করে দিবো, তাহলে ব্যস্ত থাকবেন । আব্বু ভালো ইংলিশ জানেন, দিনাকে ইংলিশ পড়াবেন, তাছাড়া আম্মুকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাওয়া,বাজার করা বাগানে ফুলের গাছ গুলিতে নিয়মিত পানি দেয়া অনেক কাজ, এ সবে ব্যস্ত থাকলে সময় কেটে যাবে ।
রেনু চিটাগাং থেকে কলেজের চাকুরী ছেড়ে দিয়ে চলে আসার পর এখনো কোনো কাজ হয় নি, তবে সাকিলা তার প্রাক্তন স্কুলের প্রধান শিক্ষয়ত্রীকে বলে দরখাস্ত দিয়েছে । সাকিলার স্কুলে সায়েন্সের টিচার দরকার, রেনুর সম্ভবনা রয়েছে ।
সাকিলা তার নিজের নুতন সংসার এবং সরকারি কলেজে কাজ পেয়েছে । ওকে সিলেট পোস্টিং দিয়েছে এবং মজিদ তদবির করে ঢাকা শহরে রেখেছে, ফলে সে যখন তখন আসা যাওয়া করে বাসার খবর নিতে পারে । আম্মুর অবস্থা বোঝে সাকিলা ধানমন্ডি বাসা নিয়েছে এবং যখন তখন আসা যাওয়া করে। আবিদ ও নিয়ম মতো এসে সবাইকে দেখে যায় । আবিদ জানে সাকিলা বাসার প্রতি অনেক দুর্বল, সে জন্য আবিদ নিকটে বাসা নিয়েছে এবং সবার খেয়াল রাখে ।
আবিদের চাকুরীতে প্রমোশন হওয়াতে আজকাল অনেক সময় রাত করে কাজ করতে হয় । সে আজকাল প্রতিটি সেকশন দেখাশুনা এবং এক্সপোর্ট ইম্পোর্ট ও নিজের দায়িত্বে করে । প্রতি উইকেন্ডে একবার মাসুদ সাহেবের সঙ্গে বসে পুরা সপ্তাহের কাজের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা করে । প্রতি তিন মাসে অন্তত এক বার বাহিরে যেতে হয়, তবে সে সাকিলাকে নিয়ে যেতে চেষ্টা করে যদিও সাকিলা বাহিরে যাওয়া পছন্দ করে না, তাছাড়া ওর কলেজের নুতন চাকুরী, অনুপস্থিত থাকতে চায় না ।
মাসুদ সাহেবের কিছুদিন হলো সিভিয়ার হার্ট এটাক হয়েছে এবং আজকাল কঠোর পরিশ্রম করা ও বাহিরে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে । এ জন্য আবিদের উপর কাজের চাপ বেড়েছে ।মাসুদ সাহেব আবিদের উপর অনেক ভরসা করে এবং বাসা থেকে ব্যবসার খোঁজ খবর নিয়ে কি ভাবে ব্যবসা বাড়ানো যায় সে দিকে মনযোগ দেয় ।
মাসুদ সাহেবের বড়ো ছেলে আরিফ চার্টার্ড একাউন্টেন্সি পাশ করে সবে মাত্র কাজে যোগ দিয়েছে এবং ব্যবসা ভালো ভাবে বুঝে উঠতে পারছে না । কিন্তু অফিসে তাঁর উপস্থিতিতে অনেকের কাজের প্রতি মনোযোগ বেড়েছে । সবাই সময় মতো অফিসে আসে ও সময় মতো অফিস থেকে বাড়ি যায় ।
মোশারেফ ফ্যাক্টরি অফিস থেকে বদলি ও প্রমোশন নিয়ে প্রধান কার্য্যালয়ে এসেছে । সে ও আবিদকে কাজে কর্মে অনেক সাহায্য করে, তাছাড়া সময় অসময় চিটাগাং, খুলনা, রাজশাহী ও অন্যান্য স্থানে ব্যবসা সংক্রান্ত ভ্রমণ করে থাকে । সে ফকিরা পুল একটা ছোট্ট বাসা নিয়ে গ্রাম থেকে তার মাকে নিয়ে এসেছে, এতে তার কাজে স্থিতিশীলতা এসেছে ।
রহমান সাহেব আজকাল অমনোযোগী হয়ে পড়েছেন , কিছুই সঠিক ভাবে মনে রাখতে পারেন না । বাসা থেকে বাজারে গেলে ঠিক ভাবে বাজার করতে পারে না । বাজারে যাওয়ার পূর্বে রেনু বাজারের লিস্ট তৈরী করে দিয়ে বলে বাবা এই গুলি নিয়ে আসবে । রহমান সাহেব বাজারে গিয়ে প্রথমে মাছ বাজারে ঢুকে ।সকালে মাছ বাজারে প্রচন্ড ভিড় থাকে এবং কয়েক বার পকেট মার তাঁর পকেটের টাকা নিয়ে গিয়েছে । রেনু বলে বাবা তুমি দুপুরে বাজার করতে যাবে, সে সময় বাজারে ভিড় কম থাকে । দেখো রেনু , দুপুরে ভালো মাছ পাওয়া যায় না । রেনু বলে বাবা দুপুরে টাকা হারানোর ভয় কম থাকে, আমরা একটু খারাপ খাইলাম, এতে কোনো অসুবিধা নেই । কিন্তু তুমি নিরাপদে বাজার করে ঘরে আসলে । রেনু তুমি এটাও ঠিক বলেছো, সকালে বাজারে নাইবা গেলাম ।
রহমান সাহেব সারাক্ষন বাসায় বসে মনে হয় যেন কিছু একটা ভাবতেছে, টেলিভিশনের সামনে বসলেও চেহেরার দিকে তাকালে মনে হবে যেন অন্য কোনও রাজ্যে বাস করছেন । অনেক সময় সামনে কিছু একটা খেতে দিলে সে ভুলে না খেয়ে উঠে যায় । দৈনিক চশমা ভুল করে এক জায়গায় রাখে এবং সারা বাড়ি খোঁজ করে । দিনা দেখতো আমার চশমা কোথায় রাখলাম, দিনা বলে দাদা এইতো তোমার চশমা, তুমি বাথরুমে গিয়ে ওখানেই চশমা রাখে এস ।
দিনা বলে দাদা তুমি কি তোমার অফিসের ডলি বেগমের প্রেমে পড়লে ?
তুমি এই কথা কোথায় শুনলে ?
দাদু বলে তুমি ডলি বেগমকে ভালো বাস ।
কবে ,কোথায় কি ভাবে?
সে দিন ডলি বেগম সুন্দর সাজগোছ করে এসে তোমার সঙ্গে হেঁসে হেঁসে কি যেন বলছিলো?
আরে পাগলী কেউ হেঁসে হেঁসে কথা বললেই প্রেম হয়ে যায় ?
হ্যাঁ !
রেনু আর রেবেকা হেঁসে বলে দিনা অনেক হয়েছে, আর না ।
তুমি সব সময় যেন আনমনে কিছু একটা ভাবছো ।
ডাক্তার আজমল বাসায় আসলে দিনা ফিস ফিসিয়ে বলে, দাদা আজকাল কোনো কিছুই মনে রাখতে পারে না । ডাক্তার আজমল বলে রহমান তুমি একটা কিছু নিয়ে ব্যস্ত থাকবে, কাজ করলে মানুষের মন মেজাজ ভালো থাকে। রহমান সাহেব বলে আমি কি নিয়ে ব্যস্ত থাকবো ?
তুমি লাইব্রেরি থেকে কিছু বই নিয়ে পড়া শুনা করো , অথবা বাগানের বা বাড়ির কিছু না কিছু নিয়ে দৈনিক রুটিন অনুযায়ী ব্যস্ত থাকবে । যদি ব্যস্ত থাকো, তা হলে ব্রেইন কাজ করবে । শুধু বসে বসে ভাবনা চিন্তা করলে ব্রেইন অকেজো হয়ে যায় এবং তুমি নিজেও অসুস্থ হয়ে পড়বে । সে বলে ঠিক আছে আমি কিছু না কিছু নিয়ে ব্যস্ত থাকবো । রেবেকার অসুখ ওকে অনেক চিন্তিত করে তুলেছে ।
মজিদ সকালে কাজে যাওয়ার সময় হলে আম্মুকে দেখে যায় ।
রেবেকা বলে, আমি কাল বেড থেকে নামতে গিয়ে পড়ে গিয়ে ব্যথা পেয়েছি । রেনু ও তোমার আব্বু চেয়েছিলো ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাইতে, আর কত যাবো ডাক্তারের কাছে । তোদের কত যন্ত্রনা করি ,এ ভাবেই যে কতদিন বেঁচে থাকি আর আমাকে নিয়ে টানা টানি করবি না । কিন্তু আম্মু তুমি ডাক্তারের কাছে না গেলে কি ভাবে ফলো আপ করবে?
আর ফলো আপ দরকার নেই, এভাবেই যে কয়দিন বেঁচে থাকি । আম্মু তোমাকে বিনা চিকিৎসায় থাকতে দেব না তোমার চিকিৎসা ঠিক মতোই চলবে ।
আজ বিকেলে সাকিলা ও আবিদ আসবে, রেনু তুমি আব্বুকে বাজারে পাঠিয়ে দিও ।রেনু বলে মোশারেফ অনেক দিন এ বাসায় আসে নি , আসবে বলে জানিয়েছে ফুফুকে নিয়ে । রহমান সাহেব বলেন কখন আসবে তা কি জানো?
রহমান সাহেব বলেন, আজ যেহেতু সাকিলা ও আবিদ আসবে, আজ আসলেই তো ভালো হতো ।
রেবেকা বলে তুমি তোমার বোনকে চিনো , সে আসলে কোনো না কোনো ব্যাপারে তর্ক বিতর্ক হতে পারে । কাজেই ,সাকিলা ও আবিদ আজ এসে যাক, কাল ওরা ওদের মতো করে আসবে এবং এক বেলা খেয়ে আমাকে দেখে যাবে ।
রহমান সাহেব বলেন রেনু বাজারের লিস্ট দাও আমি গিয়ে বাজার নিয়ে আসি । রহমান সাহেব বাজারের ব্যাগ, লিস্ট ও টাকা নিয়ে বাজারে চলে যায় । সে সাধারণত সকালে হাঁটতে হাঁটতে ধানমন্ডির বাসা থেকে নিউমার্কেট কাঁচা বাজারে যায় । এতে সকালে হাঁটার কাজ হয়, বাজার করে একটা রিক্সা নিয়ে চলে আসে, আজ ও তার ব্যাতিক্রম হয় নি । বাজার নিয়ে ঘরে এসে ব্যাগটা হাসুর হাতে ও কিছু টাকা রেনুর হাতে ফিরিয়ে দিয়ে ঘরে ঢুকে । রেবেকাকে বলে তুমি ঔষুধ এবং সকালের নাস্তা কি খেয়েছো?
রেবেকা বলে ঔষুধ খেয়েছি তবে সকালে কিছু খাবার মতো রুচি হয় না । রহমান সাহেব বলেন না খেতে না খেতে তোমার এ অবস্থা হয়েছে ।
আবিদ ও সাকিলা একটা মস্ত বড়ো মাছ কেটে ও ধুয়ে পরিষ্কার করে এনেছে । রেনু বলে তুমি এত বড় মাছ এনেছো !
আমি রান্না করে ফেলেছি, এখন কি ভাবে এই মাছ রান্না করি?
রেবেকা বলে মাছ সে কেটে এনেছে, কয়েকটা টুকরা হাসুকে দিয়ে জটপট করে ভাজি করে সবাইকে দাও । রেবেকা বলে আবিদ তুমি এত বড়ো মাছ কোথায় পেয়েছো?
আম্মু , আমাদের এক কর্মচারী যাত্রাবাড়ী থাকে, ও পুকুর থেকে ধরে কুটে নিয়ে এসেছে । আমরা মাঝে মাঝে গিয়ে ওখানে বড়শি দিয়ে মাছ ধরি । আমরা বসি আপনারা রান্না করলে খাবো ।
সবাই একত্রে খেতে বসেছে, দিনা বলে ফুফু অনেক দিন আমরা এত বড়ো স্বাদের মাছ খাই নি এবং খেতে খুব ভালো লেগেছে । আবিদ বলে তোমার ভালো লেগেছে শুনে আমি খুশি হয়েছি । তুমি আর একটা টুকরা নাও এই বলে দিনার প্লেটে এক টুকরা মাছ উঠিয়ে দিয়ে হেঁসে বলে তুমি খাইলে আমাদের ভালো লাগে । আজকাল ছেলে মেয়েরা মাছ খাইতে চায় না, কেবল বলে মাংস দাও । তুমি তার বিপরীত, সাকিলা বলে ও সব কিছু খায়, কোনো কিছুতেই না করে না । আবিদ ও সাকিলা রাত ১০টা পয্যন্ত থেকে বাসায় চলে যায়, আবিদ বলে সাকিলা তুমি ইচ্ছা করলে থেকে যেতে পারতে । সাকিলা আস্তে আস্তে আবিদকে বলে, নিজের বাড়ি অথচ কেন জানি আজ কাল পর পর লাগে, তাছাড়া তুমি একা একা থাকবে, আবিদ ওর দিকে তাকিয়ে মিসকি হেঁসে বলে হায়রে মহব্বত !
পরদিন ঘুম থেকে উঠে রহমান সাহেব বলেন আজ আলেয়া ও মোশারেফ দুপুরে আসবে, রেনু আমাদের বাজারে কিছু লাগবে কি?
না, বাবা আবিদ কাল মাছ এনেছে, মাছ, মাংস এবং অন্যান্য সবই আছে ।
মজিদ বলে রেনু ফুফু ও মোশারেফ আসবে, তুমি কি ভুলে গেছো?
না, ভুলে যাবো কেন?
রেনু হেঁসে বলে আমার মনে আছে এবং বাসায় সবই আছে । দুপুরে ১টার দিকে মোশারেফ ওর আম্মুকে নিয়ে বাসায় এসেছে । মোশারেফ দোকান থেকে অনেক গুলি সন্দেশ ও মিষ্টি এনেছে , দিনা বলে সন্দেশ আমার প্রিয় মিষ্টি । মোশারেফ বলে সে জন্যই তোমার জন্য আনলাম ।
আলেয়া রেবেকার কাছে গিয়ে কাঁদো কাঁদো অবস্থায় বলে ভাবি তুমি এতটা অসুস্থ হয়ে পড়েছো আমি এসে দেখতে পারি নি । মোশারেফ এতদিন বাসা নেয় নি, আমি বাড়িতে ছিলাম । রেবেকা বলে ঠিক আছে, সবাইকে আসতে হবে, দরকার নেই । তাছাড়া তোমার ও তো অসুবিধা আছে, কি করে আসবে । ভাবি তুমি কেমন শুকিয়ে গেছো । না, আমি ভালোই আছি আমার জন্য চিন্তা করো না । সাকিলার বিয়ে হয়েছে শুনে খুশি হয়েছি এবং আবিদ মোশারফকে প্রমোশন দিয়ে হেড অফিস এনেছে । নিজের মানুষ থাকলে দেখো কত উপকার হয় । আবিদ ও সাকিলাকে একবেলা খাওয়াতে পারলাম না ।
রেবেকা বলে আবিদ কাজ নিয়ে অনেক ব্যস্ত থাকে, তাছাড়া ও কারো বাসায় যাওয়ার সময় পায় না । আমাদের বাসায় আসলে বড়ো জোর এক কাপ চা খেয়ে চলে যায় । রেবেকা বলে তোমরা হাত মুখ ধুয়ে এস, সবাই খাবার জন্য বসে আছে ।
মজিদ ও রেনু কবে আসছে?
রেবেকা বলে আমার অবস্থা দেখে ও বদলি হয়ে এসেছে । দিনা বলে দাদু তুমি টেবিলে যাও, আম্মু খাওয়া দিয়েছে । চলো খেয়ে নেই, তার পরে কথা বলতে পারবে ।
মুজিদ বলে দিনা তুমি দাদুকে একটু আদর করে দিও । আমার এখন ক্ষিদে পেয়েছে, খেয়ে নেই, তার পর চাচুকে এবং দাদুকে আদর করে দিবো । ওর কথা শুনে রহমান সাহেব বলে দিনা ঠিক বলেছে , পেটে ক্ষিদে থাকলে কোনো কিছু ভালো লাগে না । ঠিক না, দিনা ?
দিনা হাঁসে । অনেক বড়ো বড়ো মাছের টুকরা দেখে আলেয়া বলে মাছটা খুব স্বাদের । রেনু বলে আবিদ ও সাকিলা কাল নিয়ে এসেছিলো । আবিদ বলেছে ওদের অফিসের কোন কর্মচারী তাদের বাড়ির পুকুরে ধরেছে । মোশারেফ বলে আমি চিনি ও আমাদের সেক্শনে কাজ করে ।
রেনু আজ বিরিয়ানী, মাছ ও মিষ্টি করেছে । খাওয়ার পর সবাই ড্রয়িং রুমে গিয়ে বসেছে । দিনা গিয়ে চাচু এবং দাদুদের আদর করে বলে আব্বু এবং আম্মুকে ও আদর করবো । রেনু ও মজিদ বলে আদর না করলেও তুমি আমাদের অনেক প্রিয় ।
রহমান সাহেব বলে তুমি আমাদের ঘরের আলো। তুমি যখন চিটাগাং ছিলে,তখন এই ঘর ছিল অন্ধকার, আমরা ছিলাম প্রাণহীন । সবাই হেঁসে উঠে, মোশারেফ বলে মামা ঠিক বলেছেন তুমি এই ঘরকে হাঁসি খুশিতে ভরে রাখো।
তুমি আমাদের চা খাওয়াবে ?
হাসু বলে জ্বি , দাদা আমি চা নিয়ে আসতেছি । দিনা দৌড়ে গিয়ে চা,মিষ্টি এনে সবাইকে দিয়ে বলে নাও এবার আস্তে আস্তে খাও আর গল্প করো।
খাওয়ার পর অনেক গল্প করে বিকেলের দিকে মোশারেফ ও আলেয়া বাসায় চলে যায় ।
ক্রমশ: