ফজর নামায শেষ করে তিনি অনেক দিনের পুরানো অভ্যাস অনুযায়ী খানিক্ষন কুরানশরীফ তেলোয়াত করে থাকেন। এরপরে তিনি সাধারণত হালকা নাস্তা সেরে দেশের বাইরে থাকা ছেলে মেয়েদের সাথে কিছুক্ষণ টেলিফোনে কথা বলেন। তবে, আজ তিনি সেই নিয়ম ভাঙলেন। নামাজ শেষ করেই দেশের লেটেস্ট আপডেট খবর জানার জন্য বিশ্বস্থ মামুন সাহেবকে ফোন করলেন। এই মানুষটিকে তিনি শুধু বিশ্বাসই করেন না, বেশ স্নেহও করেন। এই মামুন সাহেব বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন। ২০২২ সালের ৩০শে সেপ্টেম্বর থেকে বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক হিসাবে নিযুক্ত হওয়ার আগে এই মামুন সাহেব র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ানের (র্যাব) মহাপরিচালক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
ফোন হাতে নিয়ে কিছুটা রুক্ষ মেজাজে প্রধানমন্ত্রী বললেন, ‘বলেন মামুন সাহেব, লেটেস্ট খবর কি ? ঢাকার চারিদিকে ব্লক দিয়েছেন ঠিকভাবে ? ওপর প্রান্ত থেকে মামুন সাহেব কাঁপা কাঁপা গলায় বললেন , ‘ ম্যাডাম, আশুলিয়া, টঙ্গী, পূর্বাচল, কাঁচপুর, নারায়ণগঞ্জ সব যায়গায় ব্লক তো দিয়েছিলাম, কিন্তু ম্যাডাম..?’ প্রধানমন্ত্রী অধৈর্য হয়ে বললেন, ‘কিন্তু কি ? মামুন সাহেব কাচুমাচু করে বললেন, মানুষজন কারফিউ মানছে না, জীবনের মায়া না করে বন্যার পানির মতো শহরের দিকে এগিয়ে আসছে।’ এবার প্রধানমন্ত্রী আরেক কাঠি রেগে যেয়ে মেজাজ বিগড়ে বললেন, ‘আর আপনারা বসে বসে আঙ্গুল চুস্ছেন? আর্মিরা কি করছে? নিজেকে খানিকটা কন্ট্রোল করে প্রধানমন্ত্রী বললেন, ‘সকাল সাড়ে দশটায় আমার বাসায় ইম্পর্টেন্ট মিটিং করবো’, তিনবাহিনীর প্রধানদেরও বলছি।’ এই বলে তিনি ঝপ করে ফোন রেখে সেনা প্রধান, জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান সাহেবের ব্যাক্তিগত নাম্বারে ফোন দিলেন।
আজ সকাল থেকেই গুমোট আবহাওয়া। ভাদ্র মাসের তেজি দীপ্ত সূর্য মেঘের চাদরের আড়ালে লুকিয়ে আছে। মেঘেদের নিয়ম হচ্ছে বিচ্ছিন্নভাবে এরা ছোট ছোট খন্ডে সূর্যের আশেপাশে ভিড়তে পারে না। ভিড়লেও ক্ষনিকের জন্য পরাক্রমশীল সূর্যকে বেশিক্ষন ঢেকে রাখতে পারেনা। দোর্দন্ড প্রতাপের সাথে সূর্য ভূস করে বের হয়ে আসে। অথচ, এই ছোট ছোট মেঘের খণ্ডগুলো যখন একতাবদ্ধ হয়ে মোটা প্রলেপে সূর্যকে আষ্টেপৃষ্ঠে গেঁথে ফেলে তখন আড়ালে চলে যেয়ে সূর্যের রোদের প্রখরতা চুপসে যায়। তারপর সময়ের সাথে সাথে আরেকটু থিতু হলে অশ্বিনের হালকা হিমেল পরশ কাশবনের ফাঁকফোকর দিয়ে বাংলাদেশিদের মনে কিছুটা স্বস্তি বয়ে আনে। স্বৈরতন্ত্র থেকে গণতন্ত্রের রূপান্তরও অনেকটাই এরকম। আপামর জনতার দৃঢ মনোবল, ত্যাগ-তিতিক্ষা ও জনগণের একাত্মতা, দাম্ভিক স্বৈরাচারকে কাবু করে ফেলে। তিমির আঁধারে নির্বাসিত হয়ে ঢাকা পড়ে যায় এক সময়ের দোর্দন্ড প্রতাপশীল স্বৈরাচার। তবুও কেন যেন পৃথিবীর মানুষ ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয় না। কিছু কিছু ক্ষমতা লিপ্সু শাসকেরা বারবার ভুলের সিঁড়িতে পা দিয়ে ভুল গন্তব্যে পৌঁছে নিজের মাথার চুল ছিঁড়তে থাকে।
ফোন ধরলেন ওয়াকার সাহেবের স্ত্রী শারহনাজ কমলিকা। শেখ হাসিনা বললেন , ‘ তুই এতো ভোরে উঠেছিস? তোর হাসবেন্ড কোথায় ?’ কমলিকা বললেন, ‘স্লামালেকুম আপা, উনি বাইরে জগিং করতে গেছেন এক্ষুনি চলে আসবে। শেখ হাসিনা রাগত স্বরে বললেন,’আমি একা টেনশনে মরছি, আর উনি ভোরের হাওয়া গায়ে লাগিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, যাক, ফিরে এলে অবশ্যই আমাকে কল দিতে বলবি।’ প্রাক্তন সেনাপ্রধান জেনারেল মুস্তাফিজুর সাহেবের কন্যা শারহনাজ কমলিকার। এই মুস্তাফিজ সাহেব শেখ হাসিনার সম্পর্কে কাকা। সুতরাং, কমলিকা হচ্ছেন শেখ হাসিনার খুড়তোতো বোন, বয়সে শেখ হাসিনার বেশ ছোট। শেখ হাসিনার ফোন রাখতে না রাখতেই ধবধবে সাদা সর্টস আর সাদা টি শার্ট পরে জেনারেল ওয়াকার সাহেব ঘরে ঢুকলেন। কমলিকা বললেন , ‘বড়ো আপা, ফোন করেছিলেন, ইমিডিয়েট তোমাকে ফোন করতে বলেছে। ওয়াকার কাল বিলম্ব না করে প্রধানমন্ত্রীকে ডায়াল করলেন:
‘জি ম্যাডাম, ফোন করেছিলেন?’
‘আমাকে ফোন করতে হবে কেন ? আপনি আমাকে আপডেট দিয়েছেন ? শুনলাম, ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে লোকজন হুহু করে ঢুকছে, আর আপনি নাকে সর্ষের তেল দিয়ে জগিং করে বেড়াচ্ছেন ? ওয়াকার সাহেব, আপনাকে এজন্য সেনাপ্রধান বানানো হয়েছিল?’ আচমকা প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে এরকম প্রশ্ন শুনে থতমত খেয়ে ওয়াকার সাহেব কিছু বলতেই তিনি বললেন, ‘আপনাদের মুরোদ বুঝে গিয়েছি। শোনেন, অ্যাডমিরাল হাসান সাহেব, আর চিফ মার্শাল মাহমুদ সাহেবকে খবর দিন সকাল সাড়ে দশটায় আমরা বাসায় জরুরি মিটিংযে থাকতে হবে। আমি জনে জনে বলতে পারবো না, আপনি ওনাদের খবর দিয়ে আমার এখানে সবাইকে নিয়ে চলে আসুন। আইজিপি সাহেবকে বলতে হবে না, ওনাকে আমিই নিজে বলেছি।
আফতাবকে মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল থেকে ট্রান্সফার করে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে এসে একদিন পরেই ডাক্তারদের পরামর্শক্রমে গত দুদিন আগে পায়ের অপারেশন সম্পন্ন করা হয়েছে। বাম পা’টিকে উরুর দিক থেকে সম্পূর্ণভাবে কেটে ফেলা হয়েছে। বন্ধু রাজন এসেছে আফতাবকে দেখতে। আফতাবের পায়ের কেটে ফেলা অংশে প্যাচানো ব্যান্ডেজের দিকে তাকিয়ে রাজন বললো, ‘বন্ধু, অপারেশনের ঘাঁ শুখাতে আর কতদ্দিন লাগবে ডাক্তার কিছু বলেছে? আফতাব বন্ধুর প্রশ্নের উত্তরে কথা না বলে শুধু না সূচক মাথা নাড়লো। রাজন বুঝতে পারছে আফতাবের মনের অবস্থা বিশেষ ভালো না। একে তো শরীরের একটি অঙ্গ সে হারিয়ে ফেলেছে, তার উপর আরেক কষ্ট, তিথির বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। রাজন শেষ চেষ্টা হিসেবে তার বাবা দেলোয়ার হোসেনের সাথে আলাপ করেছিল। রাজনের ধারণা ছিল, যেহেতু তার বাবা আফতাবের বাবার ঘনিষ্ঠ বন্ধু, তাই বাবা হয়তো বন্ধুর ছেলের কথা ভেবে ভালো পরামর্শ দিবে, তিথির বাবাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে এই বিয়েটা ভেঙে দেয়ার জন্যে ওকালতি করবে। কিন্তু তা হয়নি। রাজনের বাবা দেলোয়ার হোসেন সব শুনে বলেছে আফতাবের বাবা’র দুটা পয়সা থাকতে পারে, কিন্তু আফতাবের নিজের তো কিছুই নেই, বউকে কি খাওয়াবে? আর তাছাড়া, শুধু যে চাল ও চুল নেই তা নয়, আফতাবের শরীরের একটি অঙ্গও নেই। সে খোঁড়া মানুষ । তিথির উচিত সেই গরুর ডাক্তারকেই বিয়ে করা আর আফতাবের উচিত এখনই বিয়ের জন্য না ভেবে ক্যারিয়ারের কথা চিন্তা করে লেখাপড়া শেষ করে চাকরি খোঁজা ।
তিথির প্রসঙ্গকে পাশ কাটিয়ে আফতাব রাজনকে বললো, ‘দেশের অবস্থা কি রে? সমন্বয়করা যে নয় দফা বাদ দিয়ে এক দফা দাবি নিয়ে তোড়জোড় করছে, তার খবর কি? প্রসঙ্গটি রাজনের বেশ পছন্দ হলো। রাজন মহা উদ্দমে আফতাবকে সারা দেশ থেকে ঢাকার দিকে আজকের লং মার্চ এর খবরের বিস্তারিত বর্ণনা দিচ্ছে। এক পর্যায়ে রাজন বললো, ‘দোস্ত দেখিস একটা কিছু আজ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।’ আফতাব চোখ বড়ো বড়ো করে বন্ধুর দিকে তাকিয়ে আছে। তবে কি অবশেষে শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে দিচ্ছে? পনেরো বছরের শাসন কি শেষ হতে চলেছে? বন্ধু রাজন কি সেরকমই ইঙ্গিত দিচ্ছে ? তাই যদি হয়, তবে কার কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন শেখ হাসিনা? বিএনপি কি সাংগঠনিকভাবে দেশ শাসনের জন্যে রেডি? নাকি বিএনপি-জামাত ঐক্য হতে চলেছে? আর্মিরা আবার যদি দখল করবে না তো?
গণভবনে শেখ হাসিনার বৈঠকখানায় সকাল সাড়ে দশটার মিটিং শুরু হয়েছে । বাংলাদেশ নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান বসেছেন সোফার এক কোনায়। তার পাশেই প্রায় গা লেগে বসেছেন বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ। হাতা ওয়ালা রাজকীয় চেয়ারে বসা শেখ হাসিনার একদিকে বসেছেন সেনাবাহিনী প্রধান ওয়াকার-উজ-জামান, আর আরেক দিকে বসেছেন বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন। মিটিংয়ের শুরুতেই শেখ হাসিনা সবাইকে স্মরণ করে দিলেন এখানে উপস্থিত অফিসারবৃন্দগণ আগে কে কোথায় ছিলেন এবং প্রত্যককে কিভাবে আজকের অবস্থানে নিয়ে আসা হয়েছে। এর পরে তিনি গলা খাকারি দিয়ে মামুন সাহেবের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘মামুন সাহেব, জাতির এই দুঃসময়ে ক্রান্তিকালে আপনি যেভাবে দেশের পুলিশবাহিনীকে সংগঠিত করে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের গন্ডগোল প্রতিহত করে যাচ্ছেন, আমি বেশ গর্বিত। আমি আপনাকে বিশেষ ধন্যবাদ জানাচ্ছি। কিন্তু গত ২৪ ঘন্টায় যা হচ্ছে এবং এখনও হচ্ছে, আপনার বাহিনীর কাছ থেকে আরও ভালো আউটকাম আশা করছি। এবার তিনি সেনাপ্রধান ওয়াকার সাহেবের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘শুনলাম, উশৃঙ্খল ছেলেপেলেরা কারফিউ ভেঙে মিছিল করছে, সেনাবাহিনীর ট্যাঙ্কের উপরে উঠে উল্লাস করছে, লাল রং করছে, এসব কি হচ্ছে ? ওয়াকার সাহেব মাথা নিচু করে মুখ লাল করে মেঝের কার্পেটের দিকে তাকিয়ে ছিলেন। এবার তিনি মাথা তুলে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘ম্যাডাম, জনগণকে কিছুতেই দমিয়ে রাখা যাচ্ছে না। সেনা সদস্যরা চার্জ করতে অস্বীকার করছে। অস্থির প্রধানমন্ত্রী ওয়াকার সাহেবকে থামিয়ে ক্রোধে ফেটে পড়ে বললেন, ‘তাহলে কি করতে হবে? আমাদের সবাইকে চুড়ি পরে বসে থাকতে হবে?
ওয়াকার সাহেব দৃঢতার সাথে বললেন, ‘তা হবে কেন? আমি আপনাকে অনুরোধ করছি ক্ষমতা হস্তান্তর করুন। আমার কাছে লেটেস্ট খবর আছে, আপামর জনতার স্রোত উত্তরা ও শাহবাগের দিক থেকে আপনার বাসভবনের দিকে দ্রুত এগিয়ে আসছে। ওঁরা যেভাবে আসছে এখানে পৌঁছাতে চল্লিশ থেকে পঁয়তাল্লিশ মিনিট সময় লাগবে। তাই, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনাকে আবারো অনুরোধ করছি এই সময়ের আগেই ক্ষমতা হস্তান্তর করুন, নইলে ওঁরা এসে গেলে কেলেঙ্কারি ব্যাপার ঘটবে।’ শেখ হাসিনা উত্তেজিত হয়ে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালেন, চিৎকার করে বললেন, ‘আমাকে আর উপদেশ দিবেন না। আমি জানি কি করতে হবে,কি না করতে হবে। রগে গজ গজ করতে করতে তিনি মিটিং ছেড়ে অন্দরমহলে চলে গেলেন। নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান, বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ, পুলিশের মহাপরিদর্শক আবদুল্লাহ আল মামুন সবাই উঠে দাঁড়িয়ে নিচু স্বরে খানিক্ষন কথা বলে শেখ রেহানার সাথে যোগাযোগ করে পরিস্থিতির গুরুত্ব ব্যাখ্যা করলেন এবং বোঝাতে লাগলেন।
ক্ষমতার গদির অদ্ভুত এক আকর্ষণী শক্তি থাকে। লোভ-লালসার কারণে দুর্বল চিত্তের ব্যাক্তিগনের পক্ষে সেই আকর্ষণী শক্তির মায়া জাল কেটে বের হয়ে আসার প্রক্রিয়া বেশ কঠিন হয়ে থাকে। সেই প্রক্রিয়া যত কঠিনই হোক প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে অসৎ পথে ক্ষমতার গদিকে আঁকড়ে ধরা ক্ষমতাধর মানুষদেরকে যুগে যুগে সত্যের কাছে, গণতন্ত্রের কাছে নতি শিকার করতে হয়।
আমার প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশে যখন সকাল থেকে হঠাৎ করে পট পরিবর্তনের অভাস পাওয়া যাচ্ছে আমি তখন টরেন্ট শহরে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। ভুল বললাম। অগভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। মানুষ কি গভীর ঘুমে থাকা অবস্থায় স্বপ্ন দেখে ? নাকি হালকা ঘুমে স্বপ্ন দেখে? কোথায় যেন পড়েছিলাম মানুষ স্বপ্ন দেখে গভীর আর হালকা ঘুমের সন্দিক্ষনে, REM (Rapid Eye Movement ) স্টেজে। এসময় চোখের পাতা লাফাতে থাকে। আমি স্বপ্ন দেখছি বগুড়া জিলা স্কুলে এসেম্বলিতে দাঁড়িয়ে আছি। স্কুল জুড়ে চরম উত্তেজনা। আজ আমাদের স্কুলে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান আসবেন। আমাদের স্কুলের এসেম্বিলির নিয়ম হচ্ছে একজন ভলান্টিয়ার ছাত্র সামনে দাঁড়িয়ে সূরা ফাতিহা পাঠ করেন। এর পরে, ৪/৫ জন ভলান্টিয়ার ছাত্ররা সামনে দাঁড়িয়ে জাতীয় সংগীত গায় আর বাকি সব ছাত্ররা গলা মেলায়। আমাকে সূরা ফাতিহা পাঠ করার জন্য ডাকা হলো। প্রেসিডেন্টকে দেখে আমি এতই উত্তেজিত হয়ে পড়েছি যে শুরুতেই ‘আউজুবিল্লাহি মিনাশ শায়তানির রাজিম’ না বলে সুর করে বলে ফেললাম ‘আউজুবিল্লাহি র রহমানির রাহিম’। এসিট্যান্ট হেড সার আমাকে কান ধরতেই ঘুম ভেঙে গেল।
আমি ঘুমভেঙ্গে খাঁটের পাশে রাখা গ্লাস থেকে ঢক ঢক করে খানিকটা পানি খেয়ে আবারো ঘুমিয়ে পড়লাম। আমার বেশ কিছু অদ্ভুত ক্ষমতার মধ্যে একটি ক্ষমতা হচ্ছে আমি ধারাবাহিকভাবে স্বপ্ন দেখতে পারি।
আজও তাই হলো। তবে, ভাগ্য ভাল এসিট্যান্ট হেড স্যারের কান মলা খেতে হলো না। স্বপ্নে দেখলাম চোখে সানগ্লাস পরে জিয়াউর রহমান সাহেব এসেম্বলির সামনে দাঁড়িয়ে আমাদের ওনার ছেলে বেলার এই স্কুলে পড়ার কাহিনী বলছেন। এক পর্যায়ে তিনি বললেন, ‘তোমরা আমার কাছ থেকে কিছু একটা চাও, যা চাও তাই দেয়া হবে।’ আমাদের হেড স্যারের ছেলে গেগু ভাই বললেন, ‘একটি কালার টিভি চাই’। সবাই হোহো করে হেসে উঠলো, শুধু হেড স্যার তাজমিলুর রহমান স্যার কড়মড় করে ছেলের দিকে তাকিয়ে থাকলেন।
চলবে ….
পর্ব ২-পর্ব ২
পর্ব ৩-পর্ব ৩
পর্ব ৪-পর্ব ৪
পর্ব ৫-পর্ব ৫
পর্ব ৬-পর্ব ৬
পর্ব ৭-পর্ব ৭
পর্ব ৮-পর্ব ৮
ঝরঝরে লেখা। গল্পের মেজাজ কোথাও বিন্দুমাত্র ক্ষুণ্ণ হয় নাই। তরতরিয়ে চলেছে। পড়ে বেশ আনন্দ লাগলো।