রহমত সপ্তাহে সাতদিন রিক্সা চালিয়ে অতি কষ্টে সংসারের রুটি রোজগারের ব্যবস্থা করে । প্রথম দিকে তার ঢাকার রাস্তাঘাট চিনতে অসুবিধা হলে ও এখন আর হয় না। এখন আর প্যাসেঞ্জার তাকে সঠিক ভাড়া না দিয়ে ঠকাতে পারে না। ঝড়,বৃষ্টি কোনো কিছুই তাকে বাধা সৃষ্টি করে না। বৃষ্টিতে ভিজে হলে ও তাকে মালিকের ভাড়া চুকিয়ে নিজের ঘরে কিছু না কিছু টাকা নিয়ে আসতে হয়। তা না হলে সংসার চলে না । বৃষ্টিতে ভিজে সে অনেক সময় অসুস্থ হয়ে পড়ে। সর্দি ,কাশি ,গলা ব্যাথা প্রায় লেগে থাকে । অসুস্থ শরীর নিয়ে কাজে যাইতে চাইলে হাসি এবং ছেলেমেয়ে বাধা দেয় । কাজে না গেলে সে দুর্ভাবনায় পড়ে,কি করে সংসারের খরচ বহন করবে? কাজ পরিবর্তন করবে সে ভরসা ও নেই, এ ছাড়া কোনো কাজ তার জানা নাই । তা’ছাড়া কে তাকে সাহায্য করবে ? অনেক প্রতিকূলতার মধ্যে আমি হাসিকে বিয়ে করেছি । আমাদের জীবন এঁকে বেঁকে চলছে এবং আমরা দু’জনে এখনো ভবিষ্যতের উজ্জ্বল স্বপ্ন দেখে যাচ্ছি । তাদের মনে অদম্য সাহস ও সৎ চিন্তা ছেলেমেয়েদের শিক্ষিত করে মানুষ করা। সে রিক্সা চালায় আর গুন্ গুন্ করে গান ধরে । যে সব গান তার প্রিয় তার মধ্যে ” আরে ও রিক্সাওয়ালা তুই ধীরে ধীরে চালা ,আজ বলবো তোরে মনে কত জ্বালা ।” আরো ও কত কি গান গাইতে গাইতে রিক্সা চালিয়ে বড় বড় দালান ,দোকান এবং রাস্তা পার হয় । মাঝে মধ্যে নজরে পড়ে ঢাকা শহরের বিরাট বিয়ে ও অন্যান্য অনুষ্ঠান যা দেখে রহমত ভাবে আমি দু’বেলা রুটি রোজগার করতে অপারগ হলে ও অনেকে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে আনন্দ করে। খোদা কাউকে অসহায় দরিদ্র করে পাঠিয়েছে আর কাউকে অঢেল সম্পদ দিয়েছে। মানুষের বড় বড় দালান ,ব্যবসা আর রকমারি গাড়ি দেখে ভাবে, আমার কিছুই নাই আর চাওয়া ও নাই। আমি যা পেয়েছি ,এ নিয়ে খুশি আছি। আমাদের হুজুরগণ বলেন ,যার যত ধন সম্পদ ,বিচারের দিনে তার ততো বেশি প্রশ্ন হবে। আমার কিছুই নাই, আমাকে খোদা কি প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করবে ? সে মনে মনে ভাবে আমি আজ বা কাল কি খাবো , সে ভাবনায় আছি। কাল কি আমি কাজ করতে পারবো ? যদি কাজ করতে না পারি তাহলে ছেলে মেয়েরা না খেয়ে থাকবে। আমাকে সুস্থ থাকতে হবে,যেন কাল কাজ করতে পারি। এভাবেই সে সারাক্ষন মনে মনে চিন্তার জাল বুনতে থাকে। সে চিন্তা করে তার ছেলে মেয়ে একদিন পড়াশুনা করে অনেক বড় হবে। তারা চাকুরী করবে ,নিজের ঘর সংসার হবে ও ভালো থাকবে । তারা আমার ও হাসির মতো কষ্ট করবে না। তার পরিচিত যেই শুনে, সেই বলে তোমার ছেলেমেয়েরা শিক্ষিত হলে তোমাদের স্বীকৃতি দিতে লজ্জাবোধ করবে, পরিচিয় দেবে না। রহমত মনে মনে বলে তাতে ক্ষতি কি? আমি আমার দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি । আমার ছেলে মেয়েরা তা করবে না। সে চিন্তা করতে করতে মাঝে মাঝে নিজের চোখের জল মুছে । ভাবতে ভাবতে অনেক সময় রহমত রাস্তা ভুল করে বসে এবং প্যাসেঞ্জার বলে তুমি ভুল করে অন্য রাস্তায় চলে এসেছো। সে ফিরে রাস্তা পরিবর্তন করে ।

হাসি প্রতি সকালে কাজে যায়। সে জোর করে মাবাবার অমতে আমাকে ভালোবেসে বিয়ে করেছে এবং প্রতিজ্ঞা করেছে , আমরা নিজের পায়ে দাঁড়াবো, তোমাদের নিকট আর ফিরে আসবো না । সে আজকাল দুই বাসায় কাজ করে। আমি যতই বলি একটা কাজ ছেড়ে দাও। সে বলে তোমার একা রোজগারে সংসার চলবে না। তা’ছাড়া ছেলেমেয়েদের বই খাতা ও কাপড় চোপড় কেনার জন্য কিছু বাড়তি পয়সা দরকার।

রহমত রিক্সা চালাচ্ছে আর আনমনে স্ত্রী হাসির সঙ্গে কল্পনার জাল বুনছে। অন্য মনস্ক ভাবে নিজের মনে কথা বলে , তুমি কি এখন ঘুমিয়ে পড়ছো ? হ্যা! এখন ঘুমাতে চেস্টা করছি ? হারু ও রেনু কি ঘুমিয়ে পড়ছে ? না ,ওরা এখন ও পড়াশুনা করছে। অনেক রাত্র হয়েছে , ওরা কখন ঘুমাবে ? ওদের কাজ শেষ হলে ঘুমাবে। হাসি হাই তুলতে তুলতে জিজ্ঞেস করে তুমি এখন কি করো ? আমি সদরঘাট টার্মিনালে প্যাসেঞ্জার পাবার আসায় বসে আছি। ওখানে চায়ের দোকান আছে ,এক কাপ চা ও সিঙ্গারা খেয়ে নিও । তুমি যে খাওয়া দিয়েছো ,তা কিছুক্ষন হয় খেয়েছি। এখন খাবার মতো ইচ্ছে হয় না। আচ্ছা একটা প্যাসেঞ্জার এদিকে আসছে ,দেখি কোথায় যাবে। এই ভাই কোথায় যাবেন? আমি আজিমপুর কলোনী যাবো। আসেন আসেন ভাই ,আমি ঐদিকে যাবো। কত ভাড়া দিতে হবে ? দিবেন ইনসাব করে । ইনসাফ করে এক টাকা ও দিতে পারি,তাতে তুমি রাজি হবে ? রহমত হাসে এবং বলে স্যার আপনার ইনসাফের উপর ছেড়ে দিলাম। লোকটা বলে চলো তোমাকে নিয়ে যাই। রহমত আস্তে রিক্সা চালাচ্ছে আর মনে মনে চিন্তার জাল বুনছে । রহমত ভাবতে ভাবতে আজিমপুর চলে এসেছে এবং জিজ্ঞাস করে কোন বিল্ডিঙে যাবেন, স্যার ? পার্টি হাউসের সামনে রেখে দাও। এই নাও তোমার ভাড়া। ভাড়া নিয়ে সালাম দিয়ে মনের খুশিতে আবার মনে মনে হাসির সঙ্গে কথা বলে , তুমি কি ঘুমিয়ে পড়েছো ? হাসি কোনো জবাব দেয় না। হাসি কি ঘুমিয়ে পড়েছে ? রাট তিনটা বাজে ,সবাই ঘুমাচ্ছে ,আমি জেগে আছি । রহমত আবার মনে মনে গান ধরলো ও নিউ মার্কেটের মোড়ে গিয়ে দাঁড়ালো। এখন অনেক রাত,লোকজন দেখা যাচ্ছে না। তাই রহমত রিক্সা নিয়ে নিউ মার্কেটের সামনে থেকে সলিমুল্লাহ মুসলিম হল পার হয়ে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতাল গেটে গিয়ে দাঁড়ালো। বেশিক্ষন দাঁড়াতে হলোনা , দুইজন যাত্রী এসে বলে এই রিক্সাওয়ালা তুমি কি বংশাল রোড যাবে ? হু ,যাবো। কত ভাড়া চাও ? পাঁচ টাক। এদের একজন পুরুষ ও একজন মহিলা, দুইজনই কাঁদো কাঁদো হয়ে কথা বলছে । রহমত জিজ্ঞাস করে ভাই , আপনাদের কি কোনো রোগী আছে হাসপাতালে ? হু । কি অবস্থা ভাই ? ভালো না । রহমান চুপ করে রইলো । এর আগে ও এই জাতীয় এক লোক পেয়েছিলো এবং কাঁদতেছিল । সে পয়সা না দিয়ে চলে গেলো । রহমান ভাবে ,কত রকম মানুষ এই দুনিয়াতে আছে ? হয়তো বা সত্যি কোনো রোগী খারাপ অবস্থা । বংশাল রোড যাওয়ার পর যাত্রী বলে আমাকে হাজি আব্দুল্লাহ সরকার লেনে মসজিদের সামনে নামিয়ে দাও। এরা পয়সা দিয়ে চলে গেলো । রহমান ভাবে সব লোক এক রকম হয় না । যাত্রী নামিয়ে পয়সা নিয়ে আপন মনে গুন্ গুন্ করে গান ধরলো । গাইতে গাইতে সদরঘাটের দিকে অগ্রসর হলো আর ভাবতে লাগলো পুরানো দিনের সে সব ফেলে আসা স্মৃতি । মনে পড়ে রহমত ছোটকালে গ্রামের বন্ধুদের নিয়ে ঘুরে বেড়াতো আর গান গাইতো । জ্যৈষ্ঠ মাসে ঝড়ে ঘর থেকে বের হয়ে আম কুড়াতে যেতাম । কাঁচা আর পাকা আম ডুলা ভর্তি করে ঘরে নিয়ে আসলে মা খুশি হতো। মা কাঁচা আমের আচার বানিয়ে রৌদ্রে শুকাতো। ঝড়ে আর বৃষ্টিতে পুকুর থেকে মাছ উপরে উঠলে ধরে ঘরে নিয়ে আসলে মা কুটে রান্না করতো আর আমি চুলার কাছে বসে থেকে মায়ের গল্প শুনতাম। সে খুবই গানের ভক্ত , মা মনোযোগ দিয়ে ছেলের গান শুনতো আর বলতো তুই আমার বাবা তানসেন । মনে পড়ে সে সব কথা, সে সকাল হলে রিক্সা নিয়ে বের হতো আর হাসিকে বাড়ি থেকে উঠিয়ে নিয়ে স্কুলে পৌঁছে দিতো। প্রথম দিকে হাসি কথা বলতে লজ্জা পেত, আমি ও তাই । ধীরে ধীরে আমাদের মধ্যে আন্তরিকতা গড়ে উঠে। দুইজনে রোজ রোজ ছোট ছোট করে মনের কথা লিখে মুস্কি হেসে একে অন্যকে দিতাম । হাসির ভাই ও তাদের পরিবার অনেকদিন থেকে আমাদের সন্দহ করে আসছিলো। একদিন হাসির স্কুলের খাতা থেকে দুইজনের চিঠি বের করে, হাসিকে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। হাসি ভাইয়ের পা ধরে কান্না শুরু করে এবং বলে ,ভাইয়া আমি স্কুলে যাবো,আমার পড়াশুনা বন্ধ করোনা । কিন্তু তার ভাই ও বাবা তাকে স্কুলে যাইতে দেবে না । হাসির কান্না থামানো কঠিন এবং হাসি রোজ রোজ আমার আসা যাওয়ার পথের দিকে তাকিয়ে থেকে,একটু চোখে চোখে দেখা না হলে ঘরে যেত না। মাবাবা তাকে বিয়ে দেয়ার জন্য অনেক ভালো ভালো প্রস্তাব এনেছে। কিন্তু হাসিকে কিছুতেই রাজি করাতে পারে নি। হাসির বড়ো ভাই মোমিন কলেজের ছাত্র । সে ক্ষেপে গিয়ে আমাকে একদিন মেরেছে এবং বলে তোকে পিটিয়ে মেরে ফেলবো যদি আমার বোনের দিকে তাকাস ।তুই আমার বোনের দিকে তাকালে , চোখ খুলে ফেলবো । রহমত কাঁদে আর বলে আমি আর ওর দিকে তাকাবো না। ভাই আমাকে ছেড়ে দেন ,আমাকে আর মারবেন না। মোমিন বলে তোকে এই যাত্রায় ছেড়ে দিলাম। কিন্তু আবার যদি কোনো কিছু শুনি তোকে মেরে ফেলবো। মোমিন ওকে গলা ধাক্কা দিয়ে বলে এই গ্রামের রাস্তায় তোর রিক্সা চালান বন্ধ করে দেব। হাসি কেঁদে কেঁদে বলে ভাইয়া ওর কি দোষ ? ওকে তুমি কেন মেরেছো ? আমাকে মারো ,আমি ওকে ভালোবাসি ,শাস্তি দেবে তো আমাকে দাও। এই বলে সে কান্না শুরু করে। সে যখন সিরিয়াস হয়ে খাওয়া বন্ধ করে, হাসির মা কান্না কাটি করে বলে যে এই গ্রামের কেরামত আলীর মিয়ার মেয়ে যে ভাবে পোকার ঔষুধ খেয়ে মারা গিয়েছে ,সে ধরণের গঠনা হলে তোমরা কি করবে ? ওকে বিয়ে দিয়ে দাও , সে তার কপাল নিয়ে চলে যাবে ,আমাদের কোনো দোষ দিতে পারবে না । অগত্যা সবাই রাজি হয়ে আমার নিকট হাসিকে বিয়ে দিয়ে বিদায় করে । হাসির ভাই মোমিন ঢাকা সরকারি চাকুরী করে এবং তার স্ত্রী স্কুল টিচার। মোমিন বলে আমার কোনো বোন নাই। সে অনেক আগে মরে গেছে। রহমত চোখের পানি ফেলে আর সে স্মৃতি নিয়ে সর্বক্ষণ চিন্তা করে আর মনে মনে বলে তাকে ভালো বেসে আমি কি অন্যায় করেছি ? অনেক বৎসর হলো,আমার খোঁজ না নিলেও হাসির খবর তো একবার ও নেয়া দরকার মনে করে নি । আমার ছেলেমেয়েরা একদিন তার জবাব দেবে।

রহমতের কতোই না বলা কথা যা দু’জনে একত্রিত হলে একের পর এক গল্প করে সময় কাটায়। তাদের সংসারে অর্থাভাব রয়েছে। তবে ভালোবাসার কমতি নেই । দুজনের হাসি/কান্নার গল্প শেষ হয় না। তারা পরিশ্রম করে , অভাব দূর হয় নি। রহমতের বন্ধুরা বলে ,তোমার ছেলে বড় হয়েছে ,ওকে রিক্সার কাজে লিগিয়ে দাও। তোমরা দু’জন একটু রিলাক্স করো। রহমত বলে আমি প্রতিজ্ঞা করেছি আমার ছেলে মেয়েকে পড়া শুনা করিয়ে মানুষ করবো। বন্ধুরা বলে তুমি অযথা মরীচিকার পিছনে দৌড়াচ্ছ। “সাত মন তেল ও পুড়বে না আর রাধা ও নাচবে না। ” ছেলে মেয়েরা মানুষ হবে আর তোমাদের সুখে রাখবে। এরা বড় হলে তোমাদের আদর করে ভাত কাপড় ও চিকিৎসা দেবে ? এ সব তোমার অবান্তর চিন্তা মাথা থেকে সরিয়ে নাও । রহমত বলে দারিদ্রতা এড়াতে হলে শিক্ষার দরকার, ওদের পড়া শুনা করানোই আমার দায়িত্ব । আমি এবং আমার স্ত্রী আর কিছু চাই না। যতজন আমাকে চিনতো , ততজন আমাকে গায়ে পড়ে উপদেশ দিতো । তুমি কেন এত কষ্ট করো ? আমার কাছে মনে হলো ওরা নিজের চরকায় তেল না দিয়ে পরের চরকায় তেল দেয়া পছন্দ করে । যে দরুন আমি আস্তে আস্তে ওদের সঙ্গে সম্পর্ক ছেড়ে দেয়া উচিৎ বলে মনে করলাম।আমার প্রতিবেশী আফজাল এবং রমিজ আমাকে সাপোর্ট দিয়ে বলে ওদের বাজে কথা শুনবে না ।

রহমত সকালে কাজ থেকে আসার পর খানিকটা ঘুমিয়ে উঠে হাসির জন্য অপেক্ষা করে, হাসি কাজ থেকে আসার পথে পোস্ট মেনের কাছ থেকে চিঠি পেয়ে ঘরে নিয়ে এসেছে । রহমত বলে ,রমিজ ব্যাতিত এই চিঠি আর কেউ লিখতে পারে না । কি জানি কেরামত আলী মিয়া রমিজ ও তার পরিবারকে ঘর থেকে বের করে বাড়ির জমি দখল করে নিয়েছে কিনা? হাসি বলে চিঠি পড়ে দেখো ? রহমত বলে এই চিঠি হারু পড়বে । এ সব ভাবতে ভাবতে বিকেল গড়িয়ে এল । ছেলে মেয়েরা ঘরে আসলে হারুকে জোরে জোরে চিঠি পড়ে শুনাতে বললো । হারু বলে কাকু চিঠি দিয়েছে .রহমত ও হাসি বলে চিঠি পড়ে শুনাও ।

রহমত ভাই :
আমি অনেক দিন হয় তোমাদের খবর জানিনা । তোমার ছেলে হারুর স্কুলের টিচার আমাদের উপজেলা ভূমি দপ্তরে যে চিঠি লিখে দিয়েছে তা দিয়ে কাজ হয়েছে । অফিসার কেরামত আলী মিয়াকে কাগজ পত্র নিয়ে দেখা করতে বলেছে এবং আমাকে ও আমার কাগজ নিয়ে যাইতে বলেছে । আমার বাবা জমি বিক্রি করেছে এ জাতীয় কোনো প্রমানাদি মিয়া দেখতে পারে নি । শুধু সে জমি খারিজ করেছে সে কাগজ দেখিয়েছে এবং অফিস ওকে বলেছে জমি খরিদের কাগজ দেখাতে । পুনরায় তিন মাস সময় দিয়ে মিয়াকে কাগজ নিয়ে দেখা করতে বলেছে । কিন্তু সে দেখাতে পারে নি এবং সে জন্য অনেক জেরার পর অফিসার কেরামত আলী মিয়ার নাম কেটে জমি আমার নামে খারিজ করে দিয়েছে । তোমার উপকারের জন্য আমি অনেক খুশি হয়েছি । মোটামোটি আমাদের বিপদ কেটে গেছে। তোমরা এসে দেখা করে যাবে । আর কি লিখবো । তোমরা ভালো থেকো ।আমরা সবাই ভালো আছি ।
তোমাদের
রমিজ

রহমত ও হাসি বলে হারু তোমার চেষ্টায় রমিজ আঙ্কলের কাজ হয়েছে । হারু মাবাবার দিকে তাকিয়ে খানিকটা হাসলো। তোমাদের হেডমাস্টার সাহেব অনেক কষ্ট করেছে এবং বলবে আমরা তাঁর উপকারের জন্য কৃতজ্ঞ । আমরা অনেক খুশি এবং একবার গ্রামে গিয়ে দেখা করে আসবো । হারু তুমি তোমার কাকুকে একটা চিঠি দিয়ে বলবে আমরা তোমাদের স্কুল ছুটি হলে দেখা করে আসবো । আফজাল বলে ,রহমত ভাই ,আপনার নামে কিসের চিঠি এসেছে ? রহমত বলে ,তোমার মনে আছে রমিজ এখানে এসে ছিল এবং তার জমিজমা সংক্রান্ত অনেক ঝামেলা? হারুর হেডমাস্টার উপজেলা ভূমি অফিসে চিঠি দিয়েছিল। ওই চিঠিতে কাজ হয়েছে এবং রমিজ কেস পেয়েছে। আফজাল শুনে খুশি এবং বলে “জোর যার মুল্লক তার, এটাই মূল সমস্যা । ” সে যাই হোক রমিজ কেস পেয়েছে শুনে খুশি হলাম।

পরদিন কাজের পর ঘরে এসে রহমত স্কুলে গিয়ে হেডমাস্টার সাহেবকে বলে স্যার, আপনি সাহায্য না করলে আমার বন্ধু কিছুতেই এই জমির ঝামেলা মীমাংসা করতে পারতো না । হেডমাস্টার বলে, আমি অনেক খুশি হয়েছি যে তোমাদের একটু উপকার করতে পারলাম । রহমত একটু চুপ করে থেকে বলে স্যার,আমার ছেলেমেয়েরা কেমন করতেছে ? হেডমাস্টার বলে ওরা ভালোভাবে পড়াশুনা করে। তুমি ওদের পড়াশুনা করিয়ে নিও। রহমত বলে স্যার, দো’আ করবেন। হেডমাস্টার মাথা নেড়ে সায় দিলেন। পরদিন হারু তাঁর বাবার হয়ে রমিজ কাকুকে চিঠি দিয়েছে :
ভাই রমিজ :
তোমার চিঠি পেয়ে বিস্তারিত অবগত হয়েছি । আমরা তোমার সুখবর শুনে এত খুশি হয়েছি যা তোমাকে বুঝানো যাবে না । ছেলে মেয়েদের স্কুল ছুটি হলে আমরা তোমাদের সঙ্গে দেখা করে আসবো । তোমাদের ছেলে মেয়েদের আমাদের আদর ও স্নেহ দিও ।
তোমারি
রহমত ভাই,

পরদিন স্কুল সাপ্তাহিক ছুটি । রহমত বলে আমি কাল রিক্সা চালাবো না এবং আমরা সবাই একটু বাজার করতে যাবো । হাসি বলে আমার সকালে কাজ আছে এবং আমি না গেলে বাড়িয়ালীদের অনেক অসুবিধা হবে । রহমত বলে একদিন না গেলে হয় না ? না ! কি করে হবে ? ওদের অন্য কোনো কাজের লোক নেই । যাই হোক দিনের দুইটা বাজে বা তাঁর ও পূর্বে ঘরে চলে আসবো । বিকালে আমরা ছেলে মেয়ে নিয়ে বাজারে যাবো। ওদের কিছু কাপড় চোপড় লাগবে। আমরা হতদরিদ্র। তাই বলে ওদের কাপড় চোপড় না দিয়ে স্কুলে পাঠানো ঠিক হয় না। ছেলেমেয়েরা স্কুলে যায়। নিজেদের যাই হোক , ওদের একটু ভালো কাপড় দেয়া দরকার, না হয় ওরা ক্লাসে গেলে মন খারাফ করবে, অন্যরা তাদের সঙ্গে মিশতে চাইবে না। ছেলেমেয়েদের একটু স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে দেব । রহমত বলে ঠিক আছে ।

পরদিন দেড়টা বাজে হাসি কিছু খাওয়া নিয়ে ঘরে আসে এবং বলে বাড়িয়ালীরা কিছু ভাত, রুটি ও খাবার দিয়েছে । এক বাড়িওয়ালি কিছু শুটকি তরকারি , এবং গুঁড়া চিংড়ি দিয়ে লাউ তরকারি ও ভাত এবং আর এক বাড়ি থেকে কয়েকটি রুটি , আলু বেগুন ভাজি দিয়েছে । ছেলে মেয়েরা খুশি হয়ে খাচ্ছে । পরদিন ছুটি সে জন্য হারু ও রেনু আজ আর পড়া শুনা নিয়ে বসে নি বরং মাবাবাকে কাছে পেয়ে গল্প করছে । হাসি অনেকদিন থেকে বলে সে তাঁর মাবাবাকে দেখতে মন চায় । ছেলে মেয়েরা বলে আম্মু আমরা যখন রমিজ আঙ্কেলের বাড়ি যাবো ,সে সময় নানু বাড়ি বেড়াতে যাবো । হাসি বলে ঠিক আছে । বিকেলে হাসি ও রহমত গোপীবাগের দিকে একটু কাঁচা বাজার করতে গেলো ।

হাসির ছোট কালের বান্ধবী রিতা ও তাঁর স্বামী গোপীবাগ থাকে । রিতা কিভাবে ঠিকানা জোগাড় করে একদিন আমাদের বস্তির বাসায় এসে হাজির। আমি ওকে দেখে অপ্রস্তুত এবং লজ্জা পেয়েছি। সে বলে কিরে তুই আমাকে দেখে মনে হয় চিনতে পারিসনি। আমি বললাম তোকে চিনতে পেরেছি ,তবে তোকে কোথায় বসতে দেই? সে বলে হাসি ! আমি তো বড়ো লোকের মেয়ে না। আমি গ্রামের বাড়িতে মাটিতে বসে খেয়েছি এবং মাটিতে বিছানা করে ঘুমিয়েছি ।আমাকে নিয়ে তোর ভাবনার কিছু নেই । আমি নিজে ও ভাড়া বাসায় থাকি। তাতে কি ? অনেক আলাপ করে আমাকে অনেক করে বলে গেছে ওর বাসায় যেতে তোমাকে ও ছেলে মেয়েকে নিয়ে । রিতার জামাই আনিস এক অফিস মতিঝিলে কাজ করে এবং রিতা ঘরে ছেলেমেয়েদের দেখাশুনা, রান্না ও ঘর গুছানোর কাজ করে। সে জানে আমাদের অবস্থা। তথাপি সে বলেছে আমাদের যেতে । রহমত বলে ,আমার কারো বাসায় যেতে ইচ্ছা করে না, খুবই লজ্জা লাগে, কারণ একজনের বাসায় গিয়ে খেয়ে আসলে আবার তাকে ও একদিন বলতে হয় । হাসি বলে ,ও আমার ছোটকালের বন্ধু ,তুমি ওকে দেখবে একজন সাদাসিদে মানুষ। আচ্ছা তুমি যা ভালো মনে করো । তুমি কি বাসা চিনো ? না , তবে আমাকে ঠিকানা লিখে দিয়েছে । চলো দেখি , যদি পাই গেলাম ,নতুবা ফিরে আসলাম । হাসি ও রহমত দুইজন হাটতে হাটতে বাসায় গিয়ে নক করে । বাসার নিচ তলা থেকে এক অল্প বয়সী ছেলে এসে বলে আপনারা কাকে চান ? হাসি বলে আমার এক বান্ধবী এখানে থাকে তাঁর নাম রিতা । সে বলে আপনারা কে? হাসি বলে আমি রিতার বান্ধবী । আপনারা দাঁড়ান । আমি ডেকে আনি ওদের । সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে ছেলেটি বলে আঙ্কেল আপনাদের কে যেন নিচে এসেছে । আনিস নিচে গিয়ে ওদের চিনতে না পেরে বলে , আপনারা কাকে চান ? হাসি সালাম দিয়ে বলে , আমি রিতার গ্রামের লোক, ও আমার স্বামী। আনিস বলে ,আপনারা উপরে আসেন । ঘরে ঢুকে আনিস বলে ,ওগো শুনেছ ? রিতা রান্না ঘর থেকে বলে কি শুনবো ? দেখো তোমার বান্ধবী হাসি ও তার স্বামী এসেছে । সত্যি ! হু । ঘরের ভিতরে সোফা ,ডাইনিং টেবিল ,ফ্রীজ ,টেলিভশন এবং বাহিরে দুইটি আয়েশী চেয়ার দেখে ওরা হকচকিয়ে যায়। রিতা রান্না ঘর থেকে দৌড়ে এসে বলে , আরে হাসি তুই এসেছিস ! রিতা ও আনিস ক্ষানিক বসে ওদের সঙ্গে গল্প করে । রিতা বলে হাসি তুই আমার সঙ্গে রান্না ঘরে আয় আমরা গল্প করবো । তুই এখানে বস ,আমি ডাল পুরি বানাচ্ছি । হাসি বলে , তোর এত কষ্ট করার কি দরকার ছিল ? রিতা বলে , আরে! আমরা রোজ বিকালে কিছু না কিছু খাই ,তোদের জন্য বাড়তি কিছুই করছি না। তুই এখানে বস , তোর সঙ্গে কথা আছে । হাসি ,ওই দেখ আমার ছেলেমেয়েরা খুব ছোট । দেখ ওরা বাহিরে খেলছে ।বিয়ের পর আমাদের ৫/৬ বৎসর কোনো ছেলে মেয়ে হয় নি । কত কি তদবির আর ডাক্তার কবিরাজ করে শেষ পয্যন্ত এই এক ছেলে তিন বৎসর আর এক মেয়ে এক বৎসর । আনিস আমাকে কাজ করতে দেয় না । আমি প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষয়িত্রীর কাজ পেয়েছিলাম । আমি খুব আগ্রহ নিয়ে ইন্টারভিউ এবং চাকরি হওয়াতে খুশি হয়েছিলাম । আনিস বলে , আমার একজনের ইনকামের পয়সা যথেষ্ট । তুমি ঘরে থাকো এবং রিলাক্স করো । আমার শ্বশুরের অবস্থা ভালো এবং সে একমাত্র ছেলে । বাড়ি থেকে সারা বৎসরের চাল ,ডাল,নারিকেল আরও কত কিছু নিয়ে আসে । হাসি বলে তোকে আমি একটু সাহায্য করি ,চা বসিয়ে দেই অন্য চুলায় । পুরি ও চা হলে রিতা বলে চলো ড্রয়িং রুমে যাই একত্রে খাবো । আনিস আর রহমত বসে অনেক আলাপ করে। চায়ের পর রিতা বলে , চল আমরা দুইজনে নিচে বাগানে গিয়ে বসি । হাসি বলে ছেলেমেয়েদের আমরা একা একা ঘরে রেখে আসছি । আমরা বেশিক্ষন বসবো না । রিতা বলে ,তুই পাগল হয়েছিস । আমি তোদের না খেয়ে যাইতে দিবো না, যা আছে খেয়ে যাবি । বাগানে,গোলাপ, জবা , বেলি আরও অনেক রকমের ফুল ,গন্ধে চারিদিক কি আমেজ লাগে! রিতা বলে ,আমাদের বাড়িওয়ালা অনেক ভালো মানুষ ।এদের পয়সাকড়ির কোনো অভাব নেই । এরা ভাড়ার জন্য এত কাতর না । নিচে দেখ দুইটা ঘর খালি আছে এবং রান্না ঘর ও গ্যাসের চুলা সবই আছে । আমি বাড়িওয়ালির সঙ্গে বলে দেখবো যদি দেয় তোদের নিয়ে আসবো । হাসি বলে ,এত বড়ো লোকের সঙ্গে আমরা কি থাকতে পারি? রিতা বলে নিজেকে এত ছোট করে দেখিস না কখন ও । তোর ছেলে মেয়েরা বড়ো হয়ে গিয়েছে এবং এরা একদিন দেখবি চাকরি করবে এবং তোদের দুর্দিন চলে যাবে । হাসি দীর্ঘ নিঃশাস ফেলে অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে নিজেকে সামলিয়ে নেয় । হাসি বলে রিতা দেখ আমরা অনেক গরিব মানুষ । তোর এখানে থাকার মতো যোগ্যতা আমাদের নেই । রহমত সাতদিন রিক্সা চালায় এবং আমি দুই বাসায় কাজ করে মাসে ১০০ টাকা পাই ,এ দিয়ে কোনো রকমে বস্তিতে ছেলে মেয়েদের নিয়ে থাকি । রিতা বলে কাজে ছোট বড়ো নেই , আমি বাড়িওয়ালির সঙ্গে বলে দেখবো । তাছাড়া এদের বাগানে মালি আছে ,গাছে পানি ও বাগান দেখা শুনা করে । মাসে কত দেয় তা জানি না । যদি সব মিলিয়ে ভালো হয় তাহলে তোকে জানাবো । উপর থেকে রহমত ডাকে ,হাসি চলো আমরা যাই । রিতা বলে না, আপনাদের না খেয়ে যেতে দেব না । রহমত বলে আপা আজ না ,অন্য একদিন এসে খেয়ে যাবো । আজ উঠি । ওরা চা খেয়ে উঠে এবং রহমত বলে ভাই আমরা পরে আর একবার আসবো । রিতা বলে , হাসি তোকে বললাম খেয়ে যেতে ,তুই না খেয়ে চলে যাবি? হাসি বলে না , রিতা আজ না । রাত ৮টা বাজে , দুজনে অনেক দিন পর হাত ধরে রেল লাইনের পাশ দিয়ে আস্তে আস্তে নিজের বাসার দিকে রওয়ানা হয়েছে । অনেকদিন পর নিজেদের মধ্যে একটু রিলাক্স করার সুযোগ পেলো । হাসি নীল আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে ,দেখো আজ আকাশে কোনো মেঘ নেই । জোস্নার চাঁদ উঠেছে , গ্রাম থেকে আসার পর এত সুন্দর চাঁদের আলো আর দেখিনি । চলো আমরা খানিকটা হাঁটি, এ সময় টি অনেক দিন পাই নি । রহমত বলে ঠিক বলেছো । খানিক হাঁটার পর হাসি বলে ছেলেমেয়েরা না খেয়ে বসে আছে। চলো বাসায় যাই । বাসায় ঢুকার পর রেনু বলে ,মা,আমরা মনে করেছি ,আন্টি না খেয়ে দিবে না । তাই তোমরা বাসায় ফিরতে দেরি করছো । হাসি বলে , তোমার আন্টি ও আংকেল অনেক সাদাসাদী করেছে খেয়ে আসার জন্য । মা,আন্টিটা অনেক ভালো মানুষ। সেদিন স্কুলে গিয়ে আমাদের ভাই বোনকে অনেক গুলি কলম ও পেন্সিল দিয়েছে এবং বলেছে বাসায় যাইতে ।

পরদিন ছিল সাপ্তাহিক স্কুল ছুটি, রহমত গত রাত কাজে যায়নি । দুপুরের খাবার পর রহমত হাসি ও ছেলে মেয়েকে নিয়ে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ হকার্স মার্কেট গিয়ে ছেলে মেয়েদের জামা কাপড় এবং হাসির জন্য একটা পাবনা আকাশি রঙের শাড়ি কিনে কিছু সময় ঘুরে বাসায় ফিরে আসে । বাসায় ফিরে খাওয়া দাওয়া সেরে প্রতিবেশী আফজাল সহ রিক্সা নিয়ে কাজে বের হয়ে যায় । গত রাত অনেক ঘুম হওয়াতে আজ রিলাক্স মনে হয় । তা ছাড়া কাল হাসির বান্ধবী রিতার বাসায় যাওয়ায় খানিকটা সময় ভালো কেটেছে । সে কয়েকটা প্যাসেঞ্জার পেয়ে রাত দুইটার দিকে দোকান থেকে এক কাপ চা ও সিঙ্গারা নিয়ে রিক্সার সিটে বসে চা শেষ করে আপন মনে গুনগুনিয়ে গেয়ে উঠে, ” হায়রে ডাক দিয়েছেন দয়াল আমারে ,রইবো না আর বেশিদিন ভবের মাজারে, ও আমি চলতে পথে দু’দিন থামিলাম ,ভালোবাসার মালাখানি গলে পরিলাম ,আমার সাধের মালা যায়রে ছিড়ে ….. “
ক্রমশ :

 

পূর্ববর্তী নিবন্ধসামনে এগিয়ে যেতে হলে সুশিক্ষার কোনো বিকল্প নেই
পরবর্তী নিবন্ধজাদুঘর থেকে বলছি-পর্ব ১৭
নজরুল ইসলাম
নজরুল ইসলাম - জন্ম:- ১৯৪৮ সাল । এনায়েতপুর, কচুয়া, চাঁদপুর, বাংলাদেশ। শিক্ষা:- এম, কম ( ব্যাবস্থাপনা ), ঢাকা ইউনিভার্সিটি। এম, এ (অর্থনীতি ) জগন্নাথ ইউনিভার্সিটি। চাকুরী জীবন:-ইসলামাবাদ, পাকিস্তান,বাংলাদেশ, নাইজেরিয়া,আমেরিকা ও কানাডা। বর্তমানে :- অবসর জীবন- কানাডাতে। ছাত্রজীবন থেকেই লেখালেখির শুরু। প্রকাশিত বই:-আমার সংগ্রামী জীবন,সাদা ঘোড়া,জীবন চক্র,শুচিতা ও জীবনের মুখোমুখি।

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন