সুমিত রাতে হাসপাতাল বেড থেকে উঠে টয়লেটে গিয়ে ফ্লোরে পড়ে যায়। এ অবস্থায় নার্স দৌড়ে এসে তাকে ধরে বেডে নিয়ে শুইয়ে দিলে ও কিছু সময়ের জন্য তার জ্ঞান ফিরে আসে নি।ইমার্জেন্সি ডাক্তার অনেক ধরণের টেস্ট করে কারণ খোঁজে বের করতে চেষ্টা করছে । জ্ঞান ফিরে আসলে সে আস্তে আস্তে বেড থেকে উঠতে চেষ্টা করে, কিন্তু উঠতে পারে না। তাকে ডাক্তার জিজ্ঞেস করে তোমার কি হয়েছিল?
সে কিছুই মনে করতে পারে না।
আজ কি বার ?
সে তাকিয়ে আছে, কিছুই বলতে পারে না ।
তুমি কোথায় আছো এবং তোমার কি হয়েছিল?
কিছুই বলতে পারে না । ডাক্তার তার ব্লাড প্রেসার চেক করে, উচ্চ চাপ ।কয়েক দিন হলো সুমিতের ওপেন হার্ট সার্জারি হয়েছে, এখনো দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে পারে নি । সে মানসিক ভাবে অনেক ভেঙে পড়েছে এবং স্বাভাবিক কথা বলতে গিয়ে মুখে জড়িয়ে আসে, কথাবার্তায় অসংযত । তার এ অবস্থায় ডাক্তার না ছেড়ে হাসপাতালে আরও কয়েক সপ্তাহ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সে কিছুই মনে রাখতে পারে না । নিজে নিজে বিড় বিড় করে আপন মনে কি যেন বলতে থাকে।
ডাক্তার তাকে মানসিক ডিপার্টমেন্টে রেফার করেছে তার অন্য কোনো ধরণের অসুবিধা আছে কি না দেখার জন্য।মানসিক বিভাগের ডাক্তার বলেছে যে তার অপারেশন সম্পূর্ণ ভালো না হওয়া পয্যন্ত তাকে অন্য কিছু চিকিৎসা দেয়া সম্ভব না।
প্রায় এক মাস পার হওয়ার পর সুমিতকে হাসপাতাল থেকে বাসায় পাঠানো হয়েছে এবং প্রতি সপ্তাহে নার্স এসে দেখে যায়। সে এতই দুর্বল যে ভালো ভাবে উঠা বসা ও নড়াচড়া করতে পারে না সে প্রায়ই কান্নাকাটি করে এবং বলে আমি মরে যাবো, তোমরা আমাকে কেউ দেখবে না।
শুচিতা ও তার মা আভা এবং প্রীতম দ্রুবকে নিয়ে এসে দেখে গেছে । আভা ঘর থেকে কিছু খাওয়া দাওয়া নিয়ে এসেছে । কমল,তার ছেলে মেয়েরা এসে কথা বার্তা বলেছে, কিন্তু আরতি তার ঘর থেকে একবার ও বের হয় নি। ওরা কয়েক ঘন্টা থেকে চলে গিয়েছে এবং শুচিতা বলেছে যে সে উইকেন্ডে ছুটি চাটার দিনে এসে দ্রুবকে নিয়ে থাকবে ।
শুচিতা সুমিতকে দেখে যাওয়ার পর বাসায় পৌঁছে বলে মা তুমি কি খেয়াল করেছো আরতি একবার ও আমাদের দেখতে রুম থেকে বের হয় নি?
তাতো দেখলাম।আমরা এতগুলি লোক এতক্ষন বসে ছিলাম, আরতি একবার এসে সৌজন্য মূলক কেমন আছেন বলতে পারতো। আমি জানি না কেন সে এমনটি করে, হয়তো সে এখনো ভাবে যে আমরা ছোট লোক এবং সে বড়ো লোক । প্রীতম হাঁসে, বলে তোমরা ওকে গুরুত্ব দেবে না , সে থাকগে তার মেজাজ নিয়ে। তোমরা তোমাদের দায়িত্ব পালন করেছো ।
বাবা তুমি বলো ওকে গুরুত্ব দিবে না । আমি হয়তো যাবো, কিন্তু দেখা যাবে আরতি আমার সঙ্গে কথা কাটা কাটি হচ্ছে, আমি কি সব সময় মুখ বন্ধ করে থাকবো?
চেষ্টা করবে সব সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে, হয়তো সে আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে ।
সুমিত তার মা বাবা ও ভাইবোনকে নিয়ে যে বিল্ডিং এ থাকে ওটা ৩৪ তলা বিল্ডিং এবং প্রতিটি ফ্লোরে ১০ টি করে পরিবার থাকে । বহু লোক একত্রে থাকে । এই বিল্ডিং এ নানাহ ধরণের সুবিধা যেমন ৬ টি এলিভেটর, কমিউনিটি সেন্টার, জিমন্যাস্টিক, সুইমিং পুল, ডে কেয়ার ।
ডে কেয়ার-এ ছোট ছেলেমেয়েদের রেখে ভোরে মাবাবা কাজে যায় এবং বিকেলে নিয়ে ঘরে ফিরে। এই ডে কেয়ার সরকারি ফান্ডে পরিচালনা করে, যেখানে মাবাবা মাসিক ইনকাম অনুসারে কিছু পয়সা দিতে হয় এবং কারো কারো ক্ষেত্রে যদি মাসিক আয় কম হয়, কিছুই দিতে হয় না । তা ছাড়া প্রতিটি ছেলেমেয়ে সরকার থেকে চাইল্ড সাপোর্ট পেয়ে থাকে ।
ডে কেয়ার থেকে বাচ্চাদেরকে সকালে ব্রেকফাস্ট, দুপুরে লাঞ্চের পর ঘুমানো (এক ঘন্টা) এবং বিকেলে স্নাক্স দিয়ে থাকে ।
ডে কেয়ার ওয়ার্কার অন্তত দুই বার শিশুদের বাহিরে হাঁটতে নিয়ে যায় । শিশুরা এখানে খেলাদুলার সঙ্গে সঙ্গে পড়াশুনার পরিবেশ ও পেয়ে থাকে ।
যারা ডে কেয়ার ওয়ার্কার হিসাবে কাজ করে ,কমিউনিটি কলেজ থেকে দুই থেকে তিন বৎসরের চাইল্ড কেয়ার ট্রেনিং ডিপ্লোমা নিয়ে চাকুরীতে আসে । এরা ছেলেমেয়েদের সাময়িক ট্রিটমেন্ট ও ফার্স্ট এইড দিয়ে থাকে । মাবাবা যারা ছেলে মেয়েদের এই সেন্টারে রেখে কাজে বা পড়াশুনা করতে যায়, কোনো উদ্বিঘ্নতা থাকে না। যদি শিশুরা অসুস্থ হয়, ওরা সঙ্গে সঙ্গে ফার্স্ট এইড দিয়ে থাকে, প্রয়োজনে অ্যাম্বুলেন্স কল দিয়ে বাচ্চা হাসপাতালে পাঠায় এবং মাবাবাকে অবহিত করে ।
এখানে রয়েছে কমিউনিটি রিক্রিয়েশন সেন্টার যেখানে বিয়ে সাদি ও ধর্মীয় আলাপ আলোচনা এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিধা । তা ছাড়া তৎসংলগ্ন ব্যায়ামাগার ও সুইমিং পুল যেখানে ২৪ ঘন্টা পুরুষ মহিলা সুবিধামতো ব্যায়াম করতে পারে ।
এই বিল্ডিং এ বেশ কয়েকটি ভারতীয় পরিবার রয়েছে । সুমিতের একই ফ্লোরে ললিত নামে এক লোক প্রায় ১৫-১৬ বৎসর থেকে পরিবার নিয়ে থাকে । ললিতের স্ত্রী গত দশ বৎসর হয় তার অকাল মৃত্যুতে ললিত সম্পূর্ণ ভেঙে পরে এবং এক ছেলে প্রিয়ব্রত এবং এক মেয়ে নিমি কে নিয়ে সংসার করে । প্রিয়ব্রত গত দুই বৎসর হয় ইউনিভার্সিটি থেকে সোশ্যাল সাইন্স নিয়ে পড়াশুনা করে একই শহরে কাজ করে এবং বিয়ে করে তার স্ত্রী অদিতি ও এক ছেলে নিলয় আলাদা থাকে ।
নিমি কমিউনিটি কলেজ থেকে আর্লি চাইল্ড এর উপর ডিপ্লোমা করে ডে কেয়ার এ কাজ করে এবং বাবার সঙ্গে থাকে । বাবা ললিত অবসর জীবন এবং সব সময় বাসায় থাকে ।
কমল অধিকাংশ সময় প্রতিবেশী ললিতের সঙ্গে গল্প করে এবং যেহেতু কমল একজন ব্রাম্মন অর্থাৎ উচ বংশের লোক ললিত ওকে সব সময় সম্মান করে ।
ললিতের মেয়ে নিমি দিনে বাসায় থাকে না, ওরা সময় কাটানোর জন্য দুই জন বসে গল্প করে । এ সুযোগ নিয়ে সুমিত ও হুইল চেয়ার ঠেলে ঠেলে গিয়ে বাসা নক করে বসে আংকেল ললিতের সঙ্গে গল্প করে এবং অনেক সময় তর্কে জড়িয়ে পরে ।ডাক্তার সুমিতের অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে উত্তেজিত হওয়া থেকে বিরত থাকতে নিষেধ করেছে । সুমিতের এক দিকে হার্টের সমস্যা এবং ওপর দিকে মানসিক সমস্যা, সে অল্পতেই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে । সে মাঝে মধ্যে ওদের বাসায় হুইল চেয়ার ঠেলে গিয়ে আড্ডায় যোগ দিয়ে থাকে। ললিত যখন যা পারে আপ্যায়ন করায় এবং দেশের রাজনীতি,সমাজ নীতি নিয়ে আলাপ করতে করতে এক পর্যায়ে তর্কে মেতে উঠে ।
নিমি সময় অসময় কাজ থেকে ঘরে এসে বাবাকে হয় কমল বা সুমিত কে নিয়ে উচ্চ স্বরে চিৎকার করতে শুনে । সে দু একবার বলেছে বাবা তুমি বাহিরের লোক কেন ঘরে নিয়ে এসো ?
আমি কাজ করে ঘরে এসে অস্বস্তি বোধ করি । কিন্তু ললিত নিমির কথায় কর্ণপাত না করে তর্ক করে যে এতে তোমার কি অসুবিধা হচ্ছে?
নিমি বলে বাবা তুমি আমার অসুবিধা বুঝতে পারছো না, এতে ঘরের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। আমি রোজ রোজ বাসায় এসে দেখি তুমি ওদের নিয়ে চিৎকার ব্যতীত স্বাভাবিক ভাবে কথা বলতে পারছো না, এতে আমার অনেক কষ্ট হয় । ওরা আমাকে দেখে ও বাসায় যায় না এবং আমার সঙ্গে ও অসঙ্গত ভাবে কথা বলে, যা আমি একদম সহ্য করতে পারছি না । ললিত বলে কমল একজন ব্রাম্মন উচ্চ বংশের লোক ,ওকে আমি শ্রদ্ধা করি । সে যাই হক বাবা তুমি বাহিরের মানুষ সব সময় ঘরে নিয়ে এস এটা আমি পছন্দ করি না । ললিত রাগান্বতি স্বরে বলে ওরা আমাদের প্রতিবেশী বাহিরের লোক কোথায়?
বাবা আমি তোমার ভালোর জন্য বলছি, এদের সঙ্গে এত মাখামাখি করবে না।
টেবিলে থালাবাসন,খাওয়া দাওয়া ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এবং কিচেন নোংরা করে রাখে যা রোজ রোজ নিমিকে পরিষ্কার করতে হয়। কিচেন নোংরা করে রাখে যা দেখে নিমি চোখের পানি ফেলে, বলে বাবা তুমি নিশ্চয় পাগল হয়ে গেছো, তোমার চিকিৎসা দরকার।
অনেক সময় নিমি রাতে ঘুমিয়ে পড়ে, ললিত কমল কে নিয়ে রাত একটা দুইটা পয্যন্ত বসে আড্ডা এবং চিৎকার করে বাসায় যায় । ললিত বলে নিমি তুমি এই উইকেন্ডে বাসায় থাকবে না, বাসায় আমরা ৪-৫ জনে ছোট খাটো একটা পার্টি করবো, তোমার সহ্য হবে না, তুমি বরং বাহিরে থেকো।
নিমি তুমি বাহিরের লোক ডেকে বাসায় পার্টি করবে, বাবা তুমি পাগল হয়ে গেছো, তাই না?
আমাকে ঘর থেকে বের করে তুমি এখানে আড্ডা জমাবে আর অযথা চিৎকার করবে। ললিত বলে একটু আধটু বন্ধু বান্ধব মিলে গল্প গুজব করি এমন অসুবিধা কোথায়, কমল ও সুমিত উঁচু বংশের লোক, একজন ব্রাম্মন এবং ভালো সম্পর্ক রাখলে তোমার অসুবিধা কি?
বাবা তুমি গল্প গুজব করো, নিজেদের কন্ট্রোল করতে পারো না, এক পর্যায়ে তোমরা চিৎকার শুরু করো । বাবা মা মরার পর তোমাকে অনেক সময় দিয়েছি এবং এই তোমার শেষ পরিণতি । তুমি কোত্থেকে এই সব গুছিয়েছো, ভাইয়া চলে গেছে এবং আমিও তোমাকে ছেড়ে চলে যাবো । যা তুই যেখানে খুশি, আমি একাই থাকবো।
সে দিন অতিরিক্ত স্নো পড়েছে, রাস্তায় গাড়ি, বাস চলাচল অত্যন্ত স্লো, নিমি কাজ থেকে বের হতে অনেক দেরি হয়েছে, রাস্তায় অতিরিক্ত স্নো ও গাড়ি,বাস চলাচল স্লো হওয়ার কারণে লোকজন কাজ থেকে এসে বাচ্চা নিতে দেরি করছে । এক এক করে সব বাচ্চা অভিভাবকদের নিকট পৌঁছে দিয়ে পার্কিং এ গিয়ে দেখে পুরা পার্কিং পাহাড় পরিমান স্নো । স্নো পরিষ্কার করে গাড়িতে ঢুকে স্টার্ট দিচ্ছে, কিন্তু অতিরিক্ত ঠান্ডায় ইঞ্জিন বসে গেছে এবং স্টার্ট নিচ্ছে না । সে বার বার চেষ্টা করছে, কিন্তু গাড়ি স্টার্ট নিচ্ছে না । অনেক চেষ্টা করেও পুরানো গাড়ি কোনোরকমে স্টার্ট নিতে পারছে না । তার সহকর্মী নাহিদ তার অবস্থা দেখে, নিজের গাড়ি নিয়ে এসে বুস্টার দিয়ে স্টার্ট দিয়েছে । সে আস্তে আস্তে চালাচ্ছে, পুরানো গাড়ি ব্র্যাক দেয়া রিস্কি,সারা রাস্তা, বাড়ি ঘরের চাদ দেখলে মনে হয় সাদা পেজা তুলা দিয়ে ঢাকা ।কাজের জায়গা দুই কিলোমিটার দূরত্ব, কিন্তু স্নো আর পিচ্ছিল রাস্তা,একটু জোরে ব্র্যাক দিলে গাড়ি উল্টা দিকে চলে যায় । অনেকে গাড়ি কাজের জায়গায় রেখে দিয়ে বাসে বাসায় যাচ্ছে। সে ভুল করে গাড়ি নিয়ে রওয়ানা হয়েছে।
বাসায় পৌঁছতে এক ঘন্টা সময় লেগেছে। গ্যারেজের গেটের সামনে স্নো পরিষ্কার করা হয় নি, বিল্ডিং এর নিচে (বেসমেনটে) গাড়ি ঢুকাতে কষ্ট হচ্ছে।
সে গাড়ি থেকে বের হয়ে এলিভেটর দিয়ে উপরে উঠে লেটার বাক্স চেক করে কোনো চিঠি না পেয়ে ভাবছে বাবা দিনের বেলা হয়তো চেক করে কিছু থাকলে নিয়ে থাকবে । সে এলিভেটর দিয়ে উপর উঠতেই এপার্টমেন্ট থেকে লোকজনের চিৎকার শুনা যাচ্ছে। সারা দিনের কাজের পর বাসায় আসছে, কিন্তু হয়তো দেখবে বাবা প্রতিবেশী কমলবা আরও দু/এক জন কে নিয়ে আড্ডা জমিয়েছে, সুমিত ও এ আড্ডায় এসে যোগ দেয় । রোজ রোজ এ সব দেখতে ইচ্ছে করে না । সে ভাবছে আজ তার একটা বিহিত করবেই এবং এ আর সহ্য হয় না ।
মা মরার পর কতবার বাবাকে বলেছি, তুমি বিয়ে করে নাও । কিন্তু সে করবে না, এ দিকে সারা দিন বাবা এ ঘর থেকে সে ঘর হাঁটাহাঁটি করে এবং চোখের দিকে তাকালে মনে হয় কি যেন ভাবছে, তাছাড়া সারাক্ষন বিরবির করে আপন মনে কথা বলে । কতবার বলেছি বাবা তোমার ট্রিটমেন্ট দরকার । কিন্তু সে ডাক্তারের কাছে যেতে চায় না । রাতে বাবাকে অন্য মনস্ক দেখলে আমার ভয় লাগে ,আমি বয়স্কা মেয়ে, আমাকে দেখলে ও বাবার একটু অনুশোচনা হয় না । দাদা ও বৌদিকে অনেক বার এসব নিয়ে কথা বলেছি যে বাবাকে দেখেশুনে বিয়ে করিয়ে দাও । ওরা বলে বাবা একটু অন্যমনস্ক থাকে ,ওটা তার চিরদিনের অভ্যাস, তাছাড়া সে বিয়ে করবে না ।
নিমি দরোজার কাছে গিয়ে কান পেতে শুনে ললিত ও কমল জোরে জোরে চিৎকার করে কি নিয়ে তর্ক করছে । প্রায় দশ মিনিট দাঁড়িয়ে থেকে সে ভাবে আজ আর ঘরে ঢুকবে না বরং কোথায় ও রাতের জন্য চলে যাবে । কিন্তু বরফ আর ঠান্ডার মধ্যে কোথায় যাওয়া যায়?
নিমি অনেক সময় দাঁড়িয়ে থেকে ভাবে বিল্ডিং এর কর্নারে বাস থামে এবং বাসে তার দাদা প্রিয়ব্রতের বাসায় গেলে দাদা এবং অদিতি তাকে এই অসময়ে রাতে ফেলে দেবে না । অন্তত একটু খেতে ও ঘুমাতে দেবে, তাছাড়া তার দাদা বৌদি বাবা ললিতের সঙ্গে কথা বলবে । সে দেরি না করে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে বাসের জন্য অপেক্ষা করে । অতিরিক্ত স্নো ও ঠান্ডাতে শরীর বরফ হয়ে যাচ্ছে, পায়ে জুতা এবং মৌজা পানিতে ভিজে গেছে। বাস স্টপ এ কোনো চাওনি নেই যা ঠান্ডা থেকে রক্ষা পাবে।
বাস আসতে ১৫-১৬ মিনিট লেগেছে এবং নিমি জটপট বাসে উঠে নিজে সিট নিয়ে বসে । ভাগ্গিস বাসে হিট দেয়া আছে, সে জুতা থেকে পা খুলে হিটারের উপর রেখেছে নিজেকে আরাম দেয়ার জন্য । বাস সম্পূর্ণ খালি, পথে যেতে যেতে ৫-৭ জন প্যাসেঞ্জার উঠেছে । সে সারা দিনের কাজের পর ক্ষিদা ও ক্লান্ত শরীর নিয়ে বাস থেকে নেমে টিম হর্টন ঢুকে একটা মাফিন ও এক কাপ কফি নিয়ে বসে খাচ্ছে আর মনে মনে ভাবছে ,বাবা একটু বুঝে দেখুক ,অনেক ছাড় দিয়েছি,আর না।
নিমি এক ব্লক হাঁটতে হাঁটতে প্রিয়ব্রতের বিল্ডিং এ গিয়ে এপার্টমেন্টে দরজা নক করতেই অদিতি দরজা খুলে অবাক হয়ে বলে আরে নিমি! ভিতরে আয় ।
নিলয়, এ দিকে এসে দেখো কে এসেছে?
নিলয় এসে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে বলে পিসি এসেছে । সে ভিতরে ঢুকে বলে বাহিরে আজ দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া , ঠান্ডায় আমি জমে গেছি, সারাদিন বরফ আর বরফ, মনে হয় আকাশ ফুটা হয়ে গেছে ।
আজ কাজে না গেলে ও পারতে?
না গিয়ে উপায় তো নেই। অদিতি রাতের কাপড় এনে বলে তুমি ড্রেস চেঞ্জ করে হাতমুখ ধুয়ে টেবিলে খেতে এস, আমি ততক্ষনে খাওয়া লাগিয়ে দেই ।
নিমি বলে দাদা কোথায়?
তোমার দাদা অফিসের কাজে শহরের বাইরে গেছে এবং কাল আসবে ।
কি রান্না করেছো?
আমি আজ শুটকি রান্না করেছি, তুমি কি শুটকি খাবে ?
শুটকি আমার পছন্দের খাওয়া । শুটকি আর বেগুন এবং সিমের বিচি দিয়ে রান্না করেছি। । মুখরোচক খাওয়া, ডাল এবং কালকের মুরগির মাংস আছে খেতে পারো ।
অদিতি বলে বাবা টেলিফোন করেছিল এবং তুমি বাসায় যাও নি আমাকে জানিয়েছে । আমি বলেছি যে নিমি আমাদের এখানেও আসে নি । বাবার কান্ড আর বলবে না, বাবা পাশের বাসার কমল আংকেলকে নিয়ে সারা দিন এখানে আড্ডা জমায় । এতে আমাদের প্রাইভেসী নষ্ট হচ্ছে সে বুঝে না । কমলের ছেলে সুমিত অসুস্থ, হুইল চেয়ার ঠেলে ঠেলে এই ঘরে এসে বাবা ছেলে আমার বাবার সঙ্গে কি নিয়ে তর্ক থেকে চিৎকার শুরু করে । আমি এ সব সহ্য করতে পারি না, আমি বাসায় থাকলে ওদের জন্য কিচেন এবং বাথরুমে যেতে পারি না ।
আমি সুমিতের স্ত্রী শুচিতাকে দেখেছি ওতো ভালো মেয়ে এবং ভালো চাকুরী করে। এটা তো সম্পূর্ণ অকৃতজ্ঞতা, তার সাহায্য নিয়ে ওরা এখানে আছে অথচ তাকেই দেখতে পারে না ।
তাহলে শুচিতা কি এ বাসায় থাকে না?
না, কি ভাবে থাকবে ওরা ওকে একদম সহ্য করতে পারে না । ওকে দিয়ে চাকর বাকরের মতো কাজ করায়, ও সারাদিন অফিসে কাজ করে, ঘরে তার জন্য সব কাজ রেখে দিয়ে চাকরানীর মতো কাজ করায় এবং বলে শুচিতা কাজ জানে না । সব সময় বলে ও নিচু বংশের । এই ধরণের কথা বললে কে থাকতে চায় । সুমিত অসুস্থ ,বহু বৎসর বেকার এবং কাজ করে না ।এরা আমাদের এপার্টমেন্টে ঢুকে এখানকার পরিবেশ ও নষ্ট করে দিচ্ছে ।
আজ রাস্তায় গাড়ি চালানো ঝুঁকিপূর্ণ, আমি কাজ থেকে অনেক কষ্ট করে বিল্ডিং এ ঢুকেছি । এলিভেটর থেকে বের হয়ে শুনি ওরা আমাদের বাসায় চিল্লাচিল্লি করতেছে,সে জন্য আমি আর ঘরে ঢুকি নি ।
ঠিক আছে প্রিয়ব্রত আসুক, ওকে দিয়ে বাবাকে বলাবো । তবে তুমি এখানে এসেছো এই খবর দিতে হবে, নতুবা বাবা দুশ্চিন্তা করবে ।
তুমি খাওয়া দাওয়া করো, আমি বাবাকে কল দেই । অদিতি টেলিফোন করেছে, কিন্তু কেউ টেলিফোন ধরছে না ।
টেলিফোন তো উঠাচ্ছে না, কি হতে পারে?
কয়েকবার টেলিফোন করা হয়েছে , কিন্তু উঠাচ্ছে না । জানাশুনা দু/এক জনের বাসায় টেলিফোন করেছে, কেউ কিছু বলতে পারছে না । শেষে নিমি কমলদের বাসায় টেলিফোন দেয়ার পরে জেনেছে যে ললিত এবং কমলকে পুলিশ কাস্টডিতে নিয়ে গেছে ।
নিমি বলে অদিতি আমি তোমাকে বললাম যে বাসায় অনেক হৈ চৈ শুনেছি । কেউ হয়তো রিপোর্ট করেছে,পুলিশ এসে ধরে নিয়ে গেছে ।
পর দিন নিমি কাজ থেকে জানতে পারে যে গত রাতে ললিত ও কমল দুইজনে অনেক হৈ চৈ করাতে পাশের এপার্টমেন্টের লোকজন ৯১১ কল দিলে পুলিশ এসে কমল ও ললিতকে ধরে নিয়ে যায় । যেহেতু সুমিত হুইল চেয়ার এ বসা পেয়েছে, তাই ওকে নেয় নি । এখনও কমল এবং ললিত পুলিশ কাস্টডিতে আছে বলে জানিয়েছে ।
নিমি পুলিশ স্টেশন এ গিয়ে এবার মুখ খুলেছে, বলে বাবা তুমি আমার কথা শুনো না । এখন দেখো, আমি থাকলে যে কি অবস্থা হতো তা একমাত্র ভগবান জানে । হয়তো আমাকে ও এর মধ্যে জড়িয়ে ফেলতো । কোর্টে উপস্থিত করার পর জজ বিবরণ শুনে বলে তোমরা দুইজন এক বিল্ডিঙে থাকতে পারবে না ।
এপার্টমেন্টের ম্যানেজমেন্ট কমল ও ললিতের এপার্টমেন্ট বাতিল করে দিয়ে বলে তোমরা ৪৮ ঘন্টার মধ্যে বাসা ছেড়ে দিতে হবে । কিন্তু ওরা ম্যানেজমেন্ট অফিসে গিয়ে বলে তোমরা আমাদের এক মাসের সময় না দিলে আমরা কোর্টে যাবো। ম্যানেজমেন্ট অফিস বলে তোমরা কোর্টে যেতে পারো, আমরা তোমাদের অপরাধের জন্য বাসার আলোটমেন্ট কেটে দিয়েছি। তোমরা গেলে যাবে আমাদের কিছু বলার নেই। শেষে ওরা দুইজনই কোর্টে গিয়ে ম্যানেজমেন্ট অর্ডার এর বিরুদ্ধে আপীল করলে জজ বাসা না পাওয়া পয্যন্ত ওদের এখানে থাকার অনুমতি দিয়ে ম্যানেজমেন্ট অফিসকে নোটিশ দিলে সেই নোটিশ নিয়ে অফিসে জমা দিয়ে বলে জজ আমাদের থাকার পারমিশন দিয়েছে।
ম্যানেজমেন্ট অফিস বলে আমরা তোমাদের বিরুদ্ধে পুনরায় কোর্টে আপীল করবো।
নিমি ম্যানেজমেন্ট অফিসে গিয়ে বাবার পরিবর্তে নিজের নামে বাসা এলোটমেন্ট চেয়ে দরখাস্ত করে। তার দরখাস্ত অনুসারে ম্যানেজমেন্ট অফিস বলে তোমার বাবাকে এখানে রাখা যাবে না, যদি রাজি হও তাহলে তোমাকে বাসা দিতে পারবো।
নিমি তার ভাই প্রিয়ব্রত ও অদিতির সঙ্গে আলাপ করে জানায় যে তার বাবা ললিত অবসর জীবনে কিছুই করছে না এবং সারাদিন রাত ঘরের এই মাথা থেকে ওই মাথা হাঁটে এবং অন্যমনস্ক থাকে এবং তার ট্রিটমেন্ট দরকার। ওকে ভালো করতে হলে মানসিক (CAMH )হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে ভালো ভাবে চিকিৎসা করাতে হবে । তাছাড়া তাকে ঘরে কারো সঙ্গেই রাখা নিরাপদ না । সে বলে আমি বাবাকে অনেক ভালোবাসি,তবে বাবার সঙ্গে বাসা করে থাকা নিরাপদ মনে করি না । প্রিয়ব্রত ললিতকে নিয়ে পুলিশ রিপোর্ট সহ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয় এবং ওরা ওকে কয়েকদিন রেখে বলে যেহেতু ললিত কাউকে আঘাত করছে বলে কোনো প্রমান পাওয়া যায় না, কাজেই তাকে রাখা যাবে না । প্রিয়ব্রত বলে সেই দুর্ঘটনার রাতে তার বাবা এবং কমল হাতাহাতি করেছে এবং প্রতিবেশী পুলিশ না ডাকলে হয়তো এটা মারাত্বক হতে পারতো । CAMH (centre for addiction and mental health) অনেক পরীক্ষা করার পর ওকে এক মাস অব্জারভেশনে রেখে দেয় । কিন্তু ওর অবস্থা ভালো না দেখে ওকে আরও ৬ মাসের জন্য রেখে চিকিৎসা করার সুযোগ দেয়।
ললিত হাসপাতালে থাকতে চায় না, সে বলে আমার কিছুই হয় নি, তোমরা আমাকে অযথা এখানে ফেলে রেখেছো । প্রিয়ব্রত এবং নিমি হাসপাতাল থেকে অনেক অনুরোধ করে তাকে একটা শেয়ারিং প্লেসে থাকার ব্যবস্থা করেছে । এই শেয়ারিং প্লেসে ললিতের মতো কয়েক জন যারা একত্রে থাকে, হাসপাতাল থেকে সব সময় সোশ্যাল ওয়ার্কার এবং নার্স এসে দেখা শুনা করে । এদের কারও অবস্থা খারাপ হলে, হাসপাতালে পাঠানো হয়।
নিমি একা বাসা নেয়ার জন্য দরখাস্ত দিলেও শেষ পয্যন্ত বাসা না নিয়ে তার দাদা ও বৌদির সঙ্গে থাকার সিদ্ধান্ত নেয় । কাছাকাছি থাকাতে, ওরা বাসার সবাই পর্যায় ক্রমে ললিতকে দেখাশুনা করতে পারে ।
মানস, নিমির তিন বৎসরের কলেজমেট, কলেজে থাকাকালীন সময়ের, একাউন্টিং এবং কম্পিউটারের উপর কোর্স করে একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে কাজ করে । কলেজ জীবনে তাদের জানাশুনা হয়েছে। মানসের মাবাবা পশ্চিম বাংলা ২৪ পরগনার লোক । সে পড়াশুনার জন্য কানাডা এসে লেখাপড়া শেষ করে কাগজ বানিয়েছে । সে কয়েকজন মিলে মেস করে থাকে পয়সা বাঁচানোর জন্য ,উইকেন্ডে মানস এবং নিমি মাঝে মধ্যে দেখাশুনা হয়ে থাকে । ওরা প্রতিজ্ঞা করেছে যে দুইজনেই বিয়ে করে সংসারী হবে । কিন্তু মানসের হাতে কোনো টাকা পয়সা থাকে না, যা কিছু জমে,দেশে অভাবি মাবাবা এবং ভাইবোনকে দিয়ে খালি হাতে থাকে । মাবাবা চায় সে দেশে গিয়ে মাবাবার পছন্দমতো বিয়ে করে কানাডা নিয়ে আসবে । কিন্তু সে মাবাবার সঙ্গে ভিন্ন মত পোষণ করে, বলে আমি এখানে বিয়ে করবো । মাবাবা শুনতে রাজি নয় , বলে তুমি দেশে এসে বিয়ে করে যাবে, এ নিয়ে পরিবারে সঙ্গে ওর মতপার্থক্য, সে জন্য সে বিয়ে নিয়ে দেরি করছে ।
নিমি বলে আমাদের সামর্থ অনুযায়ী আমরা খরচ করে বিয়ে করবো ।মানস বলে সে ঠিক আছে, তবে মাবাবাকে বুঝিয়ে বিয়ে করবো, এতে পরে কোনো সমস্যা যেন না হয় । তাছাড়া আমি অনুষ্ঠান করবো, মাবাবা ও ভাই বোনের সঙ্গে । আত্মীয়স্বজন দেখবে এবং আনন্দ করবে, কারণ এটা পরিবারের সর্ব শেষ বিয়ে । আমি ওদের অসুখী করতে চাই না, তোমার ছবি পাঠিয়েছি, মা পছন্দ করছে। আশা করি ওদের সবার সমর্থন পেয়ে যাবো এবং তখন আমি তোমাকে নিয়ে যাবো ।
নিমি অদিতিকে বলে, দেখো আমি মানসকে বিশ্বাস করি, ওকে বাদ দিয়ে কোথায় কোন ছেলে দেখতে যাবো?
অদিতি বলে দেখো শেষ পয্যন্ত সব কিছু ঠিক ঠাক মতো হলেই হয় । বাবা অসুস্থ, মানস কি এ ব্যাপারে কিছু জানে এবং তোমাকে কিছু বলে?
হ্যাঁ, মানস সব কিছু জানে এবং বলে মানুষের অসুখ তো থাকবেই, ওতে আমাদের অসুবিধা কি?
আমি ওকে বুঝিয়ে বলেছি যে মা মারা যাওয়ার পর বাবা আমাদের আগলিয়ে ধরে রেখেছে এবং যদি ও আমরা বাবাকে বলেছি যে তুমি বিয়ে করে নাও ।কিন্তু আমাদের অসুবিধা হবে ভেবে সে বিয়ে করে নি । এটা আমাদের জন্য বাবার অনেক বড় স্যাক্রিফাইস, তাই না?
মানস বলে তাতো ঠিকই ।
মা মারা যাওয়ার পর বাবা আমাদের ছেড়ে এক দিনের জন্য ও কোথায় ও যায় নি বা তার কোনো রকম উল্টাপাল্টা চলাফেরা দেখি নি । আজ বাবা অসুস্থ্য হয়ে পড়েছে, আমরা ব্যতীত বাবার কে আছে?
মানস বলে তা ঠিকই বলছো, চল একদিন বাবাকে দেখে আসি ।
ঠিক আছে ।
অদিতি বলে অনেক রাত হয়েছে, যাও ঘুমিয়ে পর, সকালে আবার তোমার এবং আমাদের সবার কাজ আছে। নিমি গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে. কিন্তু তার ঘুম আসে না, এ পাশ ও পাশ করতে করতেই ভোর হয়ে যায় ।
সে রাতের কাপড় ছেড়ে সকালের নাস্তা খেয়ে টিফিন ক্যারিয়ার করে দুপুরের লাঞ্চ নিয়ে বাসে কাজে গিয়ে পৌঁছে । রাতে ঘুম হয় নি, আজ খারাপ দিন যাবে ।
দিনের তিনটা বাজে অদিতি টেলিফোন করে বলে,বাবা ললিত তার বাসা থেকে না বলে কোথায় চলে গেছে কেউ বলতে পারে না ।
সে বলে দাদা কি জানে ?
তোমার দাদা ডাক্তারকে টেলিফোন করেছে এবং ডাক্তার বলে পুলিশ রিপোর্ট করা হয়েছে এবং ওকে যেখানে পায় নিয়ে আসবে ।
নিমি কাজ সেরে বাসায় টেলিফোন করে অদিতিকে বলে আমি কি বাবার ওখানে যাবো?
না, তোমার দাদা কাজ সেরে ওখানে যাবে এবং ডাক্তারের সঙ্গে আলাপ করবে । তুমি বাসায় চলে এস ।
নিমি বাসায় এসে দেখে ওর দাদা প্রিয়ব্রত বাসায় এসেছে এবং নিমি জিজ্ঞেস করে দাদা বাবার কি কোনো খবর পেয়েছো?
হ্যাঁ ও বেশি দূরে যায় নি । পাশে এক শপিং মলে গিয়ে বেঞ্চে বসে ছিলো এবং পুলিশ গিয়ে ওকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে ডাক্তারকে রিপোর্ট করে । আমি ওখানে যাই নি এবং ডাক্তারের অফিস থেকে আমাকে জানিয়েছে যে সে ভালো আছে । যাক অল্পতে বেঁচে গেলাম ।
কমল, সুমিত এবং তাদের পরিবার কোর্ট থেকে এক মাস থাকার অনুমতি পাওয়ার পর পাশে একটা এপার্টমেন্টে মুভ করে । শুচিতা জেনেছে কমল কে পুলিশ ধরে নিয়ে গিয়েছে তার প্রতিবেশীর বাসায় গিয়ে চিৎকার ও মারামারির জন্য। প্রতিবেশী রিপোর্ট করেছে যে কমল এবং সুমিত পাশের বাসায় গিয়ে সব সময় চিৎকার করে । একে কেন্দ্র করে পুলিশ ললিত এবং কমল কে ধরে নিয়ে গিয়েছে । সে মনের দুঃখে বেশ কয়েকদিন ওদের বাসায় টেলিফোন করে নি।
আভা বলে শুচিতা তুমি সুমিতের কোনো খবর কেন নিলে না?
মা, আমি অনেক কিছুই শুনি এদের ব্যাপারে যে জন্য কোনও খবর নিতে ইচ্ছা করে না।
কি খবর শুনেছ?
আমার শ্বশুর কমলকে পুলিশ ধরে নিয়ে গিয়েছে।
কবে তাতো কিছুই বলো নি?
মা এ সব বলতে ভালো লাগে?
তাতো বুঝি, কি করবে দুঃখ করে?
মা আমার দুঃখে কাঁদতে ইচ্ছে করে।সে বুঝি, সবই তোর কপাল । মা এরকম ভাগ্য আমার, আমি কিছুই সহ্য করতে পারি না । প্রীতম বলে একবার গিয়ে দেখে আসলে কেমন হয়?
বাবা কোথায় যাবো, ওরা তো ওই বিল্ডিং এ নেই। ওরা কোন বিল্ডিং এ গিয়েছে?
পাশে কোন বিল্ডিং এ গিয়েছে জানি না।
কমল ধর্ম কর্ম করে, সে কেন অন্য বাসায় গিয়ে চিৎকার ও মারামারি করবে ?
বাবা মানুষের ঘাড়ে যখন শয়তান চাপে, ন্যায় অন্যায় জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। তাছাড়া মানুষ যদি নিয়ম মাফিক কাজ না করে, তখন শয়তানের তাড়নায় দিক বিদিক জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। ওদের ঘরে কোনো লোক কাজ করে না, সবাই সরকারের অনুদানের উপর নির্ভর, এরা মনে করে এই করেই সব কিছু চলে যাবে। এই দেশে কোনো কিছুই করার দরকার নেই। ওরা রেফিউজি ক্লেম করেছে, কেউ দুই পয়সাও রোজগার করে না বা করার যোগ্যতা অর্জন ও করে না। তাছাড়া ওরা মানুষের সমালোচনা করে। ওরা কি কাজ করে, ফ্যাক্টরি লেবারের কাজ করে, এদের মান সম্মান জ্ঞান নেই, ইত্যাদি ।
এ কি মানুষের কাছে বলার মতো কাজ?
সারাক্ষন এদের মুখে সমালোচনা, এই ছাড়া কিছুই শুনবে না।
কমল ও আরতি দুই জনে দিনের ৯টা বাজে সেজে গুজে শপিং মলে গিয়ে বেঞ্চে বসে দুই কাপ কপি এবং ডোনাট বা মাফিন নিয়ে এ দিক সেদিক তাকাবে, গাল গপ্পো করবে, দুপুরে খাওয়ার সময় হলে বাসায় এসে খেয়ে ঘুম বিকেল ৫টা পয্যন্ত। বিকেলে ঘুম থেকে উঠে এক কাপ চা, বিসকুট যা কিছু আছে নিয়ে বসবে টেলিভিশন খুলে ইন্ডিয়ান মুভি দেখবে এবং অপেক্ষা করবে শুচিতা কখন আসবে এবং টেবিল সিংক পরিষ্কার করে রাতের রান্না করবে। খাইতে বসবে, রান্না ভালো হয় নি সমালোচনা করবে। এতো নবাবি জীবন ওদের।
আমি জানি সুমিত অসুস্থ,এখন দেখি ওর বাবা কমল ও অসুস্থ, তা না হলে পুলিশ ওকে কেন নিয়ে যাবে?
আভা বলে আমরা জানি কমল একজন ধর্মপরায়ণ ব্যাক্তি, কিন্তু সে কেন অন্যের বাসায় রোজ রোজ যাবে এবং হৈ চৈ করে অনাসৃষ্টি করবে ?
ওতো একা যায় না, সুমিত হুইল চেয়ার ঠেলে ঠেলে গিয়ে ওদের সঙ্গে যোগ দেয় । ওটা শুনে আমার মনে হয় যে সুমিত নিজেও মানসিক দিক থেকে সুস্থ না । তাছাড়া ওকে হাসপাতাল থেকে মানসিক বিভাগে পাঠিয়েছে এবং অতিমাত্রায় উত্তেজিত হতে নিষেধ করেছে । কিন্তু সে ছাড়তে পারছে না ।
শুচিতা বলে মা তুমি এখন বিশ্বাস করো, আমি কেন ওকে পছন্দ করি না । ও আমার সঙ্গে একটা ব্যপারেও কোনো রকম আলোচনা করে না ।
বিকেলে সুলতা কল দিয়ে বলে শুচিতা তুমি এবং দ্রুব কেমন আছো?
আমরা ভালো ।
তোমরা কেমন আছো?
তুমি কি জানো আমরা বাসা বদলি করেছি?
না, তোমরা তো আমাকে কিছু বলো নি । আমরা বাসা চেঞ্জ করে পাশের বিল্ডিং এ এসেছি, তুমি এসে একবার আমাদের দেখে যাবে ।
সুমিত কেমন আছে?
ও গতকাল হাসপাতালে গিয়েছে এবং ডাক্তার ওকে মেডিসিন দিয়েছে এবং বলেছে এক মাস পরে যেতে ।
শুচিতা টেলিফোন রেখে দিয়ে বলে মা , সুলতা আমাকে কল দিয়েছে এবং বলে যে ওরা বাসা চেঞ্জ করেছে । আমি জানি এ ব্যাপারে ওদের কোনো কিছু বলিনি । ভালো করেছো, না হয় ওরা বলবে কোত্থেকে শুনেছ,ইত্যাদি ইত্যাদি । তার চেয়ে কিছু না বলে থাকা ভালো । ওরা প্রয়োজন মনে করলে বলবে, না বলে চুপ করে থাকবে ।
প্রীতম বলে সুলতা কে বলতে পারতে, একবার এসে দ্রুবকে দেখে যাওয়ার জন্য । শুচিতা বলে বাবা আমি চাই না ওরা এখানে এসে আমার সঙ্গে ঝামেলা করুক । ওরা ওদের ভাবে থাকুক এবং আমি আমার ভাবে থাকি ।
কত দিন এভাবে থাকবে?
যে কতদিন থাকতে পারি থাকবো, না পারি একটা কিছু করবো । এখন এ ঝামেলা থেকে দূরে থাকা ভালো । কমলের বিরুদ্ধে পুলিশ কেস এবং ওকে অ্যারেস্ট করেছে, এ দিকে তাদের ইমিগ্রেশন কেস এ পয্যন্ত মীমাংসা হয়নি ।
এতে কি কেসের উপর কোনো প্রভাব পড়তে পারে?
না, বাবা এটাতো ক্রিমিনাল কেস না, কাজেই কোনো অসুবিধা হবে বলে মনে হয় না । তবে সব ধরণের ঝামেলা থেকে দূরে থাকা ভালো । সে যাই হোক, ভালোয় ভালোয় তাদের কেস মীমাংসা হলে-ই হলো ।
সুমিত কি ডাক্তারের কাছে গিয়েছে?
শুনেছি গিয়েছে তবে তার রিপোর্ট সম্পর্কে কিছু বলতে পারি না,আমি ওকে জিজ্ঞেস করি নি । ওরা কেউ আজকাল আমাদের খোঁজ খবর নেয় না, তাছাড়া ওরা নানাহ ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েছে ।
ক্রমশ :