মিসিগন থেকে:-
সে অনেক আগের কথা।
মাত্র চার বছরের বাপ মরা একমাত্র ছেলে সন্তান নিয়ে কষ্টেশিষ্টে দিন যাপন করে আসছিলো জরিনা। ছেলের বয়স এখন ষোল পার, বাপে সখ করে নাম রেখেছিলো রাজা। নয়ে যার সুখ হয়না, তার নব্বইতেও হয়না। জরিনার সেই অবস্থা। রাজার বাপের একটা নিড়ানি ছিলো। রাজা নিড়ানি দিয়ে খেলার ছলে লাউগাছ, সীম গাছ সহ অন্যান্য চারা গাছের গোড়া কেটে দিতো। প্রথমে রাজার মা এটাকে ছেলের খেলা হিসাবেই নিতো। এই খেলাই রাজা আর রাজার মায়ের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ালো। গাছের গোঁড়া কাটা রাজার নেশা হয়ে গেলো। সে নিড়ানি হাতে গ্রামে ঘোরে আর গ্রামবাসীর গাছের গোড়া কাটে। অতিষ্ঠ গ্রামবাসী নালিশ সালিশ মারধর করেও রাজাকে ভাল করতে পারলো না। অবশেষে পঞ্চায়েত কমিটির সিদ্ধান্তে রাজা আর রাজার মাকে গ্রাম ছাড়ার হুকুম দেয়া হলো। সামান্য যা ভিটেবাড়ি তা পঞ্চায়েত কমিটির হেফাজতে থাকবে। যদি কখনো রাজা ভাল হয়ে ফেরে তবে ফেরৎ পাবে।
প্রভাতের সূর্য আস্তে আস্তে আলো ছড়াচ্ছে। জরিনা ছেলের হাত ধরে আঁচলে মুখ চেপে কাঁদতে কাঁদতে একটু আশ্রয়ের আশায় বাপের বাড়ির দিকে রওয়ানা হলো।
ছোট্ট গ্রামের শেষ মাথায় এসে রাজা দাঁড়িয়ে গেলো,,,
– কিরে থামলি ক্যান?
* আমরা কই যামু?
– তোর নানার বাড়ি, চল দেরি করিস না অনেক পথ,,
* মাগো একখান কতা কই?
– ক, আর কত জ্বালাবি আমারে? তোর লাইগা সওয়ামীর ভিটা ছাড়া হইলাম।
* আইচ্ছা মা, নানাগো বাড়িতেও তো নিড়ানি আছে, গেরামে গাছও আছে। হেয়ানেও তো আমি গাছের গোঁড়া কাটুম।
ও আল্লা রে বলে গগনবিদারী চিৎকার দিয়ে মাটিতে বসে পড়লো জরিনা, মাটিতে পা ছড়িয়ে হাউমাউ করে কাঁদছে । ক্ষণকাল পরে মাকে জড়িয়ে ধরে রাজা বললো, মাগো ফিরে চলো আমি আর গাছের গোঁড়া কাটুম না।
—
তারপর জরিনা আর রাজার কি হয়েছিল, এই লেখকের তা জানা নেই।