দূরেই তো আছি
দূরেই তো থাকি
যতটা দূরে থাকলে
হৃদয়ে ওঠে হাহাকার
যতটা দূরে থাকলে
তোর দেহ উপকূলের ললিত ঢেউয়ে
কবিতার দেখি জাগরণ
যতটা দূরে থাকলে গ্রীবার আঘ্রাণে
উদাসী দুপুর হয় চঞ্চল কামাতুর
যে দূরত্ব মনের সীমান্ত সদা ছুঁই ছুঁই
যে দূরত্ব আকাশ সমান অরণ্য আদিম
যে দূরত্ব কিছু বলি বলি করেও
নীরবতায় ঢাকে চারপাশ
যে দূরত্ব আনমনা কাগজের খসড়ায়
বারবার লিখে শুধু প্রেমিকারই নাম
এমনই দূরত্ব আমার
চন্দ্র নিশার বিষণ্ণতায় বুকের আগুনে তোলে ঝড়
এমনই দূরত্ব আমার
সীমানা পেরোলেই কলঙ্ক হয় অমৃতের নহর
ভালোবাসি
কাছে আসি
তবু
দূরত্বের এক রেখাই আমার জীবনের সম্পাত
দূরত্বের এক রেখাই আমার ঝাঁঝালো দিনের অফুরান পথ
দূরত্বের এক রেখাই আমার বেদনার তারে সিম্ফনি সুর
এ আমার জন্ম কথা, এ আমার তারুণ্যের গাঁথা
এ আমার প্রহর ভাঙা আলোর স্রোতে বর্ণালী ব্যাথার তীব্র স্ফুরণ
এ দূরত্ব আমার
তোর মুখোমুখি দাঁড়ানো
অগোছালো সব শব্দের কোলাজ
মেঘের আব্রু ভেদ করে
নক্ষত্রকে ছুঁড়ে দেয়া স্বগোতক্তির মালা
এ দূরত্ব আমার
করতলে ধরে রাখা রাতভর
এক অসাহসী কলমের নীরব আর্তনাদ
এ দূরত্ব আমার
নিদারুণ খরায় বিরান শস্যক্ষেতে লাঙলের ফলা
কিষাণী বধুর স্বেদ বিন্দুর ঘ্রাণ
এ দূরত্ব আমার
বাজীকরের হাতে শেষের কড়ি
তমসের রথে পলাতক জীবনের খেয়া
এ দূরত্ব আমার
শরীরের মাঝে অনুক্ষণ জেগে থাকা
তোর অশরীরী ছায়া
মহুয়ার নেশায় মাতালের ঘুম
প্রাচীর ভাঙা স্বপ্নের ঘোরে
পাশাপাশি বসা নিবিড় আয়োজন
এ দূরত্ব তোর মেহেদী রাঙা নকশী পায়ে
দুর্বিনীত চুমুর ওষ্ঠ লিখন
জড়িয়ে ধরে বেতস লতার তনু
হঠাৎ নামা বেহায়া বৃষ্টির মুখে গড়া
আমার শক্ত প্রতিরোধ
এ দূরত্ব আমার
স্বপ্ন কুড়ানো দিনের শেষে
নৈবেদ্যের ডালা, নিভৃত নিরঞ্জনা
মোমের আলোয় ধীরে পোড়ানো কষ্টের ধূপ
এ দূরত্ব আমার জীবন
এ দূরত্ব আমার তুই.. “নীলিমা”
তান্ত্রিক পদাবলীতে শোভিত তোর অঙ্গের কিনারে কিনারে
এ দূরত্ব আমার মহন্ত হাতের অবাধ বিচরণ!!
ফরিদ তালুকদার / ফেব্রুয়ারী ৬, ২০২০