সারাদিনের কর্মব্যস্ততায় হয়নি খেয়াল
পিছন ফিরে তাকাবার
যখন গোধূলিলগ্নে ঘরে ফেরার পালা
বিশ্ব তখন মত্ত আলো আধারির খেলায়
আমি চোখ বুলিয়ে নিই আকাশ ও প্রান্তরে;
চারিদিকে তখন শুনশান নীরবতা
দূর থেকে ভেসে আসে পাখিদের কলকাকলি
ঝর্ণার কলতান আর খেলায় মত্ত শিশুদের উল্লাস
আমি পা বাড়াই সামনে
একটু এগুতেই চোখে পড়ে তোমাদের চলে যাওয়া।
তুমি কথা বলছো হাত নেড়ে নেড়ে
রাজ্যের বিস্ময় নিয়ে-
তোমার দিকে তাকিয়ে আছে তোমার সঙ্গী
আর অখণ্ড মনোযোগে তুমি এঁকে যাচ্ছো
একের পর এক সুখস্বপ্ন-
ছুঁয়ে থাকা বর্তমান আর না দেখা ভবিষ্যৎ।
তোমাদের চলার পথকে আরো মসৃণ
আরো সুশোভিত করেছে গাছে গাছে ফুটে থাকা
রংবেরঙের চেরী, লাইলাক আর গোলাপ
যেন ওরাও স্বাগত জানাচ্ছে তোমাদের।
পথের ওপর লুটিয়ে অনাকাঙ্খিত কিছু শুকনো পাপড়ি
দু’পায়ে দলে যাচ্ছ মচমচ
আর্তনাদে দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে হৃদয় তাদের
নীল কষ্ট শুকিয়ে খড়খড়ে শুকনো মাটির মতো
তোমাদের পায়ের নিচে পিষ্ট হচ্ছে, আর
অব্যক্ত ক্রন্দন উঠছে তাতে- শুনতে কি পাও?
মগডাল থেকে কচি পাতা শুকিয়ে পড়েছে ভূতলে
অথচ ওরও ছিল স্বপ্ন, আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন
লু হাওয়ায় আকাশ দেখা হয়নি ওর
স্থান হয়েছে তোমাদের জুতোর সুখতলায়
কেমন ছন্দ তুলে হেঁটে যাচ্ছ তুমি-তোমরা
এমন কান্না দেখে হয়তো কাঁদে না
তোমার-তোমাদের মন- কাঁদে কি?
এরই মধ্যে সূর্য গিয়েছে অস্তাচলে
জমাট বাঁধছে আঁধার
কিছুক্ষণেই অন্ধকার গ্রাস করবে সব
নিয়ন আলোতে তোমরা বসাবে গল্পের হাট
সেখানে কোনো কষ্ট থাকবে না
কোনো বেদনা উঁকি দেবেনা
তোমাদের ভরাট উঠোনে- বল দেবে কি?
ক্ষণকাল পরে-
আকাশের চাঁদটাকে ঢেকে দিল মেঘ
হোঁচট খেয়ে পড়তে পড়তে আমি
উঠে দাঁড়াই সোজা হয়ে
সামনে অন্ধকার পথ উঁচু-নিচু
সামলে নিই নিজেকে
এপথে যেতে হবে অনেক পথ- বহুদূর
শেষ কোথায় জানা নেই, তবু
হাঁটি নিজেই অজানা এক গন্তব্যের দিকে।