জনাব হিশাম চিশতী, ব্যক্তিগত জীবনে একজন Realtor । ছোটবেলা আর শিক্ষা জীবন কেটেছে ঢাকাতে । ঢাকা থেকে B.Com BBA আর পোস্ট গ্রাজুয়েশন শেষ করে ২০০৪ সালে পাড়ি জমান কানাডাতে । শুরুর জীবনটা খুব একটা সুখকর ছিল না , ।অনেক ঘাত-প্রতিঘাত সহ্য করে আজকের এই অবস্থায় পৌঁছেছেন । কাজের ফাঁকে ফাঁকে পড়াশুনা করতেন, শুরুতে World Financial Group এ কিছুদিন কাজ করেছেন । তারপর রিয়েল এস্টেট এর লাইসেন্স করে ব্যবসা শুরু করেন ।আর আজ তিনি একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী । এছাড়াও সক্রিয়ভাবে জড়িত আছেন বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সাথে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য বর্তমানে ডাইরেক্টর ইয়ুথ কারনিভাল নর্থ আমেরিকা, ডাইরেক্টর CUBA এবং YC BCCB এর একজন এডমিন । একজন সার্থক ব্যবসায়ীর সাথে সাথে ব্যক্তিগত জীবনে একজন ব্যস্ত সার্থক সমাজসেবকও।
কানাডা আসার পর থেকেই তার মাঝে সমাজ সেবার প্রত্রি আগ্রহের সৃষ্টি হয় । আর সেই আগ্রহের কারণেই বিভিন্ন সময় সমাজের নানাবিধ প্রতিকূল মুহূর্তে সহযোগিতার জন্য বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন । তারই প্রতিফলন দেখা যায় রোহিঙ্গাদের জন্য অর্থ সংগ্রহ করা,.বন্যার্তদের সাহায্য করা, শীতের সময় শীতবস্ত্র সংগ্রহ করে দেশে পাঠানোর মতো কার্যক্রমে সক্রিয় অংশগ্রহণ। নিজের কর্মব্যস্ত জীবনের মাঝে সমাজসেবা কে সমান গুরুত্ব দিয়ে তার প্রতি দায়িত্ব পালনে কখনো পিছপা হননি । তার পেশা আর সমাজসেবা দুটোই তার কাছে সমান গুরুত্বপূর্ণ বলে তিনি মনে করেন ।সমাজসেবার প্রতি তার সেই দায়িত্ববোধ আর ভালোবাসার কারণেই আজ তিনি Scarborough South West থেকে কাউন্সিলার পদে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
কথা হচ্ছিল জনাব চিশতীর সাথে তার Birchmount রোডের নির্বাচনী কার্যালয়ে। জানতে চাইলাম বাঙালি পড়ার প্রাণকেন্দ্র ডানফোর্থ রেখে এখানে কেন নির্বাচনী প্রচারণার অফিসটি করলেন ?
জবাবে বললেন, “এটাই আমার নির্বাচনী এলাকা ।আমি এলাকাবাসীর মধ্যে থেকেই তাদের সাথে কথা বলতে চাই , শুনতে চাই তাদের কথা । শুনতে চাই তাদের অভাব অভিযোগ ,দেখতে চাই সেগুলিকে আরো কাছ থেকে, আর এজন্য আমি তাদের সাথেই থাকতে চাই । ইনশাল্লাহ আগামীতেও আমি তাদের সাথে থাকব এটাও আমার একটা নির্বাচনী অঙ্গীকার ।যে কোন বিপদের মুহূর্তে তারা যেন বিনা বাধায় আমার কাছে পৌঁছতে পারে সেই কারণে আমি তাদের মাঝে থাকি এবং থাকবো । আমি বিশ্বাস করি কমিউনিটির থেকে দূরে থেকে কখনো কমিউনিটির সেবা করা যায় না । তাইতো আমি তাদের কাছের মানুষ হয়ে থেকে তাদের সাথে সবসময় বিপদে-আপদে তাদের পাশে দাঁড়াতে চাই। আমি এলাকাবাসীর কাছে “অতিথি পাখি” হয়ে আসতে চাই না।“
জানতে চাইলাম মূল ধারার রাজনীতি বনাম দেশীয় রাজনীতির মধ্য থেকে মূল ধারার রাজনীতি কে কেন বেছে নিলেন আর কেনই বা সমাজ সেবার পথে আসলেন?
বললেন,” দেশীয় রাজনীতিতে একটা সীমাবদ্ধতা আছে ,এখানে বসে দেশীয় রাজনীতি চর্চা করে সমাজের জন্য কোন কিছুই করা সম্ভব না । তাই সাধারন মানুষের স্বার্থের জন্য সমাজসেবার কাজটি বেছে নিয়ে মূল ধারার রাজনীতিতে সংযুক্ত হয়েছি, কারণ আমি সমাজসেবা কে সবসময় আমার জীবনের একটা অংশ হিসেবে মনে করি । সবসময় বিপদগ্রস্তদের পাশে এসে দাঁড়াবো এটাই আমার ইচ্ছা।
আপনার নির্বাচনী অঙ্গীকার কি?
বললেন,” আমাদের এই নির্বাচনী এলাকায় পর্যাপ্ত পরিমাণ Senior Home নাই । আর যাও একটি আছে সেটাও সাধারণ মানুষের সামর্থের বাইরে ।তাই আমি নির্বাচিত হলে সিনিয়রদের জন্য একটি সিনিয়র হোম করবো যেটা কিন সবার জন্য affordable হয়। আমি আমার নির্বাচনী এলাকায় Senior দের জন্য প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য বীমার নিশ্চয়তার জন্য কাজ করবো । এই এলাকায় Day Care গুলি মধ্যবিও পরিবারগুলির জন্য খুব ব্যয়বহুল। এটা তাদের অনেকেরই সাধ্যের বাইরে । আমার একটি অন্যতম লক্ষ্য এই সব Day Care গুলির জন্য সিটি থেকে অনুদানের ব্যবস্থা করা । এছাড়াও এই এলাকায় public transit ফ্রিকোয়েন্সি যাতে বাড়ানো যায় সেজন্য প্রয়োজনীয় কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলবো এবং ttc মাধ্যমে এই অঞ্চলে Blue Night সংযোজন করা যায় কি না সে ব্যাপারেও চেষ্টা করবো। যেটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার আমার কাছে মনে হয় তা হচ্ছে অত্র এলাকায় সিটির বাজেট, অন্য এলাকার চাইতে আমাদের এই এলাকায় সিটির বাজেট খুবই কম এ ব্যাপারে আমি অবশ্যই যথাসাধ্য লড়বো সিটির সাথে, বাজেটের পরিমানটা যাতে বাড়ান যায়।“
প্রশ্ন রাখলাম সিটি কাউন্সিলর এর সংখ্যা ৪৭ থেকে ২৫ করার পক্ষে আমাদের প্রাদেশিক সরকারের সিদ্ধান্ত আর এর স্বপক্ষে তারা বলছেন সিটির বাজেট থেকে ২৫ মিলিয়ন ডলার খরচ তারা বাচাবেন। এ ব্যাপারে আপনার বক্তব্য কি?
বললেন ” সিটির বাজেট ১২থেকে ১৩ বিলিয়ন ডলারের । তুলনামূলক ভাবে এই বাজেটের সামনে ২৫ মিলিয়ন খুব একটা বড় সংখ্যা নয় কিন্তু এই পরিবর্তনের কারণে সিটি কাউন্সিলরদের কাজের চাপ বৃদ্ধি পাবে এবং তাদের কাজগুলি একটা বড় রকমের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হবে। প্রয়োজনীয় সহযোগিতা নিয়ে তারা এলাকাবাসীর কাছে হয়ো সময়মতো পৌঁছতে পারবেন না । আর এজন্যই হয়তো এলাকাবাসী অনেক ক্ষেত্রে সাহায্য থেকে বঞ্চিত হবেন । সেই সাথে আমার প্রশ্ন সরকারের কাছে এই ২৫ মিলিয়ন ডলার কোন খাতে খরচ করা হবে সেটাও জানানো হোক”
প্রশ্ন করলাম এই নির্বাচনী এলাকায় মোট ৫ জন বাংলাদেশী প্রার্থী এতে কি আমাদের দেশী ভোটগুলো ভাগ হয়ে যাবে না আর তার সুবিধা হয়তো অন্য কেউ নিতে পারে। এ ব্যাপারে আপনার পর্যবেক্ষণ কি?
বললেন “এটা একটা আশঙ্কার কারণ ।হয়তো এতে আমরা সবাই কম বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবো তাই আমি উন্মুক্ত আহ্বান জানাচ্ছি বাকি চারজন প্রার্থীকে, আসুন আমরা এক জায়গায় বসে আলোচনার মধ্যে দিয়ে একজন যোগ্য প্রার্থীকে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত করি। আমি প্রস্তাব রাখছি যার এজেন্ডা বেশি স্ট্রং তাকেই আমরা চূড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে সমর্থন দেব এই নির্বাচনী এলাকায় প্রায় ৭৪ হাজার ভোটার আর মধ্যে বাঙালি ভোটারের সংখ্যা প্রায় ৯ হাজার ।মোট ভোটারের ৮ ভাগের এক ভাগ এই বাংলাদেশি ভোটারের সংখ্যা। আর এই ভোট যদি পাঁচ ভাগে ভাগ হয় তাহলে সকল প্রার্থী কম বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে । আমি সবার সাথে বসতে চাই আমার উদ্দেশ্য একটাই আমাদেরকে অবশ্যই মূল ধারার রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে আসতে হবে। আমার মনে হয় মূল ধারার রাজনীতিতে এ দেশে আমরা এখনো অনেক পিছনে পড়ে আছি । এটা দুঃখজনক হলেও একটি কঠিন বাস্তব আর । এ থেকে বেরিয়ে আসার জন্য আমি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। তাইতো চাই সিটি নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে একজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থী জয়লাভ করুক , এভাবেই এক সময় আমরা প্রাদেশিক বা কেন্দ্রীয় পর্যায়ে মূল ধারার রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে পারব ।”
– এই সমাজসেবা আর মূল ধারার রাজনীতির মধ্যে দিয়ে ভবিষ্যতে নিজেকে কোথায় দেখতে চান?
বললেন “এই নির্বাচন করতে এসে আমি অনেকের প্রাণঢালা ভালোবাসা পেয়েছি। সমর্থন পেয়েছি অনেক সম্মানিত বড় ভাইদের । সমাজ সেবার কারণে আমি শুধু বাংলাদেশ কমিউনিটিতেই সমাদৃত নই, ইতিমধ্যে ভিনদেশী দুই বা ততোধিক জনগোষ্ঠি আমার প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। যদি এইবার আমি নির্বাচিত হই ইনশাল্লাহ আগামীতে প্রাদেশিক সরকার পর্যায়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবো। আমি বিশ্বাস করি আপনাদের ভালোবাসা আর সহযোগিতা থাকলে এই পথ যতই বন্ধুর হোক না কেন আমি সফলকাম হবো।“
-জানতে চাইলাম এ দেশে এখনো কেন আমরা মূল ধারার রাজনীতিতে এতটা পিছনে পড়ে আছি?
বললেন,” এখানে অনেক রাজনীতি সচেতন ব্যক্তিত্ব আছেন , শিক্ষিত গুণীজন আছেন যারা অনেকেই হয়তো মূল ধারার রাজনীতিতে আসতে পারেন।হয়তো কোন প্রকার আগ্রহী হীনতার কারনে উনারা আসতে চান না । আমার মনে হয় বর্তমানে আমরা যারা সমাজসেবা বা মুলধারর রাজনীতির সাথে জড়িত আমাদের উচিত তাদের সাথে একটা যোগসুত্র স্থাপন করে তাদেরকেও মূল ধারার রাজনীতিতে আসার জন্য উৎসাহিত করা । তাহলে এ দেশের মূল ধারার রাজনীতিতে আমাদের অবস্থান আরো শক্ত হবে এবং এভাবেই হয়তো সবার অংশগ্রহণের মাধ্যমে আমরা প্রাদেশিক এবং সেনট্রাল গভমেন্টের নির্বাচনগুলিতে সক্রিয়ভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবো।“
আমাদের নতুন প্রজন্মের মধ্য থেকে leadership তৈরি করার জন্য কী প্রয়োজন বলে আপনি মনে করেন?
বললেন,,”তরুনদের আরো বেশি করে আমাদের সামাজিক কর্মকান্ডের সাথে যুক্ত করতে হবে ।যাতে তারা এই পথযাত্রার সিড়ি গুলো খুব কাছ থেকে দেখতে পায় আর সমস্যাগুলোকে উপলব্ধি করতে পারে। আর সেই সাথে সমাধানের পথ গুলোকে অনেক কাছ থেকে দেখতে পারবে যাতে করে সে বুঝতে পারে সমস্যা গুলোর কারণ আর দেখতে পারো এর প্রতিকারের পথ। এটাই হবে তাদের জন্য ব্যবহারিক অভিজ্ঞতা। এই ভাবে যে ভালো আর মন্দের পার্থক্যটা বুঝতে পারবে ।এভাবে একদিন সেও সক্রিয়ভাবে সমাজ সেবার কাজে উৎসাহিত হবে এরাই হবে আগামী আগামী দিনের Leader”
জিজ্ঞাসা করলাম ভোটারদের উদ্দেশে কিছু বলার আছে কে?
বললেন,” সর্বপ্রথম আমি অনুরোধ করবো তারা যেন যোগ্যতার মাপকাঠিতে বিচার করে সঠিক ব্যক্তিকে ভোট টা দেন। তাদের এই মূল্যবান ভোটটা যেন নষ্ট না করেন। ভোটারদের বাস্তবতার আলোকে দেখতে হবে সমাজের প্রতি কার কতটুকু অবদান আছে, বিপদের সময় কাকে কাছে পাওয়া যাবে । ভোট যুদ্ধে যখন নেমেছি যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে ।তবে যোগ্যতার মাপকাঠিতে হিসাব করতে গেলে নিজেকে অবশ্যই একজন যোগ্য প্রার্থী হিসাবে মনে করি। শেষে একটাই অনুরোধ সঠিক মানুষকে ভোট দেন আর অনুরোধ করবো ভোটের দিনে যেন ভোট কেন্দ্রে আসেন।”
আলোচনা শেষে নির্বাচনের সাফল্য আর শুভকামনা জানিয়ে বিদায় নিলাম।