বেশ কয়েকবছর আগের থেকে New Year’s Resulation জিনিষটা বাদ দিয়েছি, কারণ গতানুগতিক resulationএ কোনো ফল বয়ে আনেনি। যদিও পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে নতুন বছর already শুরু হয়ে গেছে, আমাদের টরোন্টোতে এখনো কয়েকঘণ্টা বাকি আছে। সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছার সাথে সাথে পরমকরুণাময়ের কাছে আমার নিজের পরিবারসহ পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে সংকটাপন্ন মানুষদের জন্য দোয়া চাইছি। বিশেষ করে আমরা বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ার দাবানলের কথা সবাই খবরে দেখছি। জীবন বাঁচাতে মানুষ ঘর ছেড়ে সমুদ্রের বিচে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। যেই বিচ সাধারণত মানুষের বিনোদনের কেন্দ্র থাকে, সেটি এখন মানুষের আশ্রয় কেন্দ্র। সৃষ্টিকর্তা তাদের মঙ্গোল করুন এবং তাদের এই বিপদের আশু সমাধান করুন।
হাঁ, New Year’s Resulationএর কথা বলছিলাম। আমি এখন যেটা করি সেটি হলো বছরের যে কোনো সময় কোনো একটি ব্যক্তিগত প্রজেক্ট শুরু করলে, বছর শেষে তার evaluation করি এবং সেটির continuation বা consistency যাতে থাকে সেই বিষয়েই detremind থাকা হলো আমার New Year’s Resulation. গত বছর শুরু করেছিলাম দুটি বিষয় নিয়ে। এক হলো প্লাস্টিক বোতল বর্জন এবং সারাদিনে বেশি বেশি পানি পান করা। দ্বিতীয়টি হলো ২/৩টি না পড়া বই পড়ে শেষ করে। হাঁ, আল্লাহর রহমতে এ বছরে এসে দুটিতেই পুরাপুরি সফলতা অর্জন করতে পেরেছি। বিশেষ করে আপনাদের কাছে এই প্লাস্টিক বোতল বর্জন কত সহজ কাজ তা আমি জানি না, তবে আমার কাছে এটি ছিল অত্তান্ত কঠিন একটি কাজ, কিন্তু সেটিকে জয় করেছি। বইগুলি শেষ করতে খুব বেশি সমস্যা হয়নি।
এই বছরে অর্থ্যাৎ ২০১৯ তাহলে কি শুরু করেছি এবং ২০২০ তে কিসের continuation এবং সফলতা আশা করছি। এবার বিশেষ বিষয়গুলি হলো বাজারে প্লাস্টিক ব্যাগ বর্জন, প্রতিদিন সকাল ৫:৩০এ ঘুম থেকে উঠা, সকালের নামাজ না মিস করা, সকালে ২০ মিনিট exercise এবং মেডিটেশন করা, এবং ২০ মিনিট নতুন কিছু শেখা, সেটি পড়ার মাধ্যমে বা শোনার মাধ্যমে। এবং মনের মধ্যে কোনো মানুষে র্প্রতি কোনো ক্ষোভ থাকলে সেটি মাফ করে দেওয়া/ভুলে যাওয়া।
সৃষ্টিকর্তার রহমতে এবং আপনাদের দোয়ায় গত ৬/৭ মাস আগের থেকে শুরু করলেও গত ৬/৭ সপ্তাহ ধরে একেবারে রেগুলার করতে পারছি, আর সেই জন্য আমার ২০২০ এর প্রত্যাশা এই রেগুলারিটি যেন আগামী প্রতিটি দিনে থাকে। সবার কাছে সেই দোয়া চাই। শুনতে সহজ হলেও, কাজগুলি বেশ কঠিন ছিল, অন্তত আমার জন্য। আশা করি বেঁচে থাকলে ২০২০ এর শেষে আপনাদেরকে আপডেট করবো।
এবার বিগত বছরের প্রাপ্তি/অপ্রাপ্তি, চাওয়া/পাওয়া, সুখ/দুঃখ অর্থ্যাৎ হিসাব নিকাশ নিয়ে কিছু কথা।
আপনারা যারা আমাকে চিনেন বা আমার অপেশাদার এবং অদক্ষ হাতের লেখার মাধ্যমে মাঝে মধ্যে আমাকে ফলো করে থাকেন, তারা হয়তো আমার ভালো সময়ের জিনিষগুলিই দেখেছেন। কারণ সামাজিক মাধ্যমে তো আর সব সময় হাড়ির খবর দেওয়া যায় না। এই সব ভালো সময়ের মাঝেও ছিল অনেক বিষাদময় মুহূর্ত। আয়ুব বাচ্চুর গানের মতো। “হাসতে দেখ গাইতে দেখ অনেক কথায় মুখোর আমায় দেখ, দেখ না কেউ হাসির শেষে নীরবতা” তবে যত বিষাদ, বিপদ বা সংকট থাকুক না কেন, সবশেষে আমি এখনো বলবো ” Life is beautiful and God is marciful”.
আসুন তাহলে দেখি ২/১টি অনাকাঙ্খিত ঘটনা। এ বছরের সব থেকে এবং একেবারে অপ্রত্যাশিত ঘটনা ছিল কোনো একটি পরিবারকে কিছুটা সাহায্য করতে গিয়ে বিরাট এক ঝামেলায় পড়া। উক্ত পরিবারের বাচ্চাদের জন্যই মূলত ওই সহযোগিতা করতে যাওয়া। এবং এই ঝামেলায় পড়ার খেসারত আমাকে প্রায় পুরা বছরটা ধরে দিতে হয়েছে। এর কারণে মানসিক, পারিবারিক এবং অর্থনৈতিক সব দিক থেকেই পুরাটা বছর ভীষণ টেনশনের মধ্যে কেটেছে। এটি এমনিই বিষয় যে সবার সাথে শেয়ার করা যায় না। অনেক রাত না ঘুমিয়ে কেটেছে। এক রাতে হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে পর্যন্ত যেতে হয়েছে, যাহোক আল্লাহর রহমতে অবশেষে দীর্ঘ ১০/১১ মাস পরে সমস্যাটির সমাধান হয়েছে।
সামারে বাসার সিঁড়ি দিয়ে নেমে অফিসে যাওয়ার সময় পড়ে গিয়ে পাঁজরের হাড় ফেটে যায় এবং বেশ কয়েকদিন প্রচন্ড ব্যথায় ভুগে আল্লাহর ইচ্ছায় ডাক্তারের দেওয়া নির্ধারিত সময়ের একটু আগেই ভালো হয়ে যাই।
বেশ কয়েকজন কাছের আত্মীয় মৃত্যুবরন করেন। এবং একেবারে বছরের শেষে এসে আমার বেঁচে থাকা একমাত্র চাচার সড়ক দুর্ঘটনায় এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
উপরোক্ত ঘটনাগুলির পরেও আমি চলে যাওয়া বছরটির জন্য আক্ষেপ করি না কারণ যেটি বলেছি, Life is still beautiful and I am happy .
জীবনে যত দুঃখ কষ্ট বা ঝামেলা থাকুক না কেন, জীবনের কোন এক কোনে কিন্তু কিছু না কিছু পজিটিভ জিনিস লুকিয়ে থাকে, যেগুলি সংকটকালীন সময়ে চোখে পড়ে না, তাই সেগুলিকে খুঁজতে হয়। যাহোক, আমার বা আমার পরিবারে সমস্ত সংকটের মধ্যেও ভালো কিছু বিষয় ছিল, আর সেই বিষয়গুলিকেই স্মরণ করে সামনে আগাতে চাই।
যেমন ধরুন, প্রিয় ভাতিজা এবং ভাগ্নের সুস্থ এবং সুন্দরভাবে গ্রাজুয়েশন শেষ করা এবং ৪/৫ মাসের মধ্যে কাজে যোগ দেওয়া। ওদের বাবা-মা যথেষ্ট স্যাক্রিফাইস করেছে ওদের জন্য। ইদানিং সমাজে যুবকদের derialment হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকার পরেও ওরা সৎ এবং সুন্দরভাবে জীবনের বড়ো একটি পর্ব পার করলো।
অনেক চেষ্টার পর আমার শাশুড়ির ভিসা হওয়া এবং এখানে আশা। বিশেষ করে উনার মেয়েরা এব্যাপারে অনেক খেটেছেন। আমার ১৫/২০ বছরের আশা কানাডার East Coast এর সর্ব উত্তরে ক্যাবট ট্রেইল ধরে Meat Cove যাওয়া এবং সমুদ্রে গিয়ে wild তিমি মাছের খেলা দেখা। Tidal Bore রাফটিং করার ইচ্ছাও অনেক আগের ছিল। সেটিও হয়েছে। পুরা এক যুগ পরে আমার এক ক্লায়েন্ট এর মুখ থেকে শোনা ” Mukul I am happy now”. এবং সংকট ও ব্যস্ততার মধ্যেও সামারে ক্যাম্পিংয়ে যাওয়া হয়েছে। প্লাস্টিক বোতল বর্জন, এবং আরো বেশ কিছু মানুষকে উদ্দীপনা দেওয়া, প্রায় ২০০ ঘন্টার মতো কমিউনিটিতে ভলান্টারি করা। প্রায় ১০/১২ জন দেশি/বিদেশী ইম্মিগ্রান্টকে মেন্টরিংএর মাধ্যমে তাদের প্রফেশনাল চাকরি পাওয়াতে সাহায্য করা। সব থেকে খুশির বিষয় হলো, আমার বাবাহারা ভাগ্নের সাফল্যের সাথে পঞ্চম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হওয়া।
এইতো, জীবনে চ্যালেঞ্জ থাকবেই। নিজের উপর আস্থা এবং সৃষ্টিকর্তার উপর ভরসা রেখে আগাতে থাকুন, দেখবেন আস্তে আস্তে আপনার গন্তব্যে পৌঁছাবেন। আমি গান্ধীর “In the midst of darkness, light persists” উক্তিটি মর্মে মর্মে বিশ্বাস করি। এই জিনিসটি আমি শুধু নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি না। বিগত ১২/১৩ বছর ধরে সমাজের একেবারে দুস্থ, নিপীড়িত, পরিত্যাক্ত, আশাহীন মানুষের সাথে কাজ করে এর যথেষ্ট প্রমান পেয়েছি।
এই লেখাটিতে মূলত আমার বা আমার পরিবারের নিজের গানই গাইলাম। তার কারণ হলো, আপনাদেরকে জানানো যে কেউই একেবারে নির্ঝঞ্জাট না, সবার জীবনেই চ্যালেঞ্জ আছে। এক এক জনের এক এক রকম। সেই হুমায়ুন আহমেদের গানের মতো, এই দুনিয়ার সবাই গরিব।
“কেহ গরীব অর্থের জন্যে কেহ গরীব রূপে
এই দুনিয়ার সবাই গরীব কান্দে চুপে চুপে
যে রাজার হাজার দুয়ার লক্ষ কুঠুরী
তাহার ঘরেই বসত করে অভাব নামের বুড়ি
রূপার খাটে বইসা গো বুড়ি মজা গোয়া খায়
ধনে মান্য রাজার সনে অভাব কিচ্ছা গায়…”
সবাই ভালো থাকবেন। সবাই সবার জন্য শুভ কামনা করবেন।
শুভ ইংরেজি নববর্ষ।
মুকুল।
টরন্টো।
ডিসেন্বর ৩১, ২০১৯।