গত ৫ই নভেম্বর,২০২৪ সনে শান্তিপূর্ণ ভাবে যুক্তরাষ্ট্রের (আমেরিকা) নির্বাচন হয়ে গেলো। রাত ৮টার দিকে নির্বাচন শেষ হলে ও ফলাফল জানতে রাত ৪ টা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছিল। অনেক জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে শেষ পর্যন্ত ডোনালড ট্রাম বিপুল ভোটে জয়ী হলেন। গত কয়েক সপ্তাহে ট্রাম্প ও হারিসের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই এবং কে যে জয়ী হবে এ নিয়ে বিশেষ সংশয় দেখা দিয়েছিলো । রাত ৪.৩০ আর দিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেকে জয়ী বলে ঘোষণা দিলে অগণিত শ্রোতার মধ্যে উল্লাসের ধ্বনি শুনা যায়। পরদিন কমলা হারিস ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অভিনন্দন বার্তায় জয়ী হিসাবে ঘোষণা দিয়ে নিজের দলের সমর্থকদের ধন্যবাদ জানিয়ে বক্তব্য রাখেন। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন অভিনন্দন বার্তা দিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হোয়াইট হাউস এসে ক্ষমতা হস্তান্তর সংক্রান্ত কাজে সহায়তা করতে অনুরোধ করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের এবারকার নির্বাচন সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ ভাবে হয়েছে। কমলা হারিস ও প্রেসিডেন্ট বাইডেন দেশের জনগণকে শান্তনা সূচক বার্তা দিয়েছেন এবং কোথায় ও কোনোরকম প্রতিক্রিয়া দেখা যায় নি। এ হলো একটি সভ্য দেশের গণতন্ত্রের উদাহরণ।
জানুয়ারি ২০, ২০২৫ অর্থাৎ আজ থেকে দুই মাস ১৫ দিন পর ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় বারের মতো প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেবেন, তখন তিনি তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারলে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে আমূল পরিবর্তন আসবে বলে অনেকের ধারণা ।ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির মধ্যে রয়েছে :
১) ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনী প্রচারণার প্রথম দিক থেকেই বলে আসছেন যে পাশ করলে ইউক্রেন ও রাশিয়ার যুদ্ধ তড়িৎ গতিতে বন্ধ করে দেবেন।নির্বাচনী প্রচারণার পুরোটা সময় জুড়েই রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট এবং তার রানিং মেট জেডি ভ্যান্স কিয়েভের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি অব্যাহত রাখার বিষয়ে দৃঢ় সন্দেহ প্রকাশ করেছেন,এমন কি এও বলেছেন যে পাশ করলে দ্রুত এর সমাপ্তি করে দেবেন ।
২ ) ট্রাম্প তাঁর প্রচারণি বার্তায় ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, তিনি চান গাজা উপত্যকায় হামাস এবং লেবাননে হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে ইসরায়েলের যুদ্ধ জানুয়ারিতে দায়িত্ব গ্রহণের আগেই শেষ হোক। সারা বিশ্বের লোক এর একটা দ্রুত সমাধান চায়।
৩ ) পূর্বের টার্মে মিস্টার ট্রাম্প চীনা তৈরি পণ্যগুলিতে আমদানির উপর উচ্চ শুল্কের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন এবং এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে টানাপোড়ন দেখা যায় ,এবার আশা করি এ ধরণের তেমন কিছু হবে।
৪ ) নর্থ আমেরিকান ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট (NAFTA ) সর্ব প্রথম প্রেসিডেন্ট রিগেন এর সময় কানাডা,আমেরিকা ও মেক্সিকোর সঙ্গে হয়েছিল এবং গত টার্মে এ নিয়ে দফায় দফায় আলোচনা করে পুনরায় সংশোধনীয় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়,এবার এ নিয়ে কোনো রদবদল হবে না বা হতে ও পারে। তিনি বিভিন্ন ধরণের নতুন শুল্কও প্রবর্তনের কথা উল্লেখ করেছেন – কখনও মার্কিন বাণিজ্য অংশীদারদের উপর ২০ শতাংশের বেশি নতুন কর আরোপের আহ্বান জানিয়েছেন এবং সম্প্রতি মার্কিন পণ্যগুলির জন্য মার্কিন বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার মেক্সিকোতে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন। এ মুহূর্তে এ সবের কোনো পরিবর্তন হবে কিনা বলা যায় না, তবে কানাডা সরকার আশ্বাস দিয়েছেন যে দু-দেশের মধ্যে সু-সম্পর্ক বজায় রেখে চলতে হবে -কানাডার ৮০% ব্যবসা আমেরিকার সঙ্গে হয়ে থাকে।
৫ ) ট্রাম্প বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতো জাতিসংঘের সংস্থাগুলির সাথে মার্কিন সহযোগিতা সীমাবদ্ধ করতে পারেন যা তার পূর্ব প্রশাসন সমালোচিত ছিল।
৬ ) নব-নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যার লক্ষ্য তার প্রথম মেয়াদের কঠোর পদক্ষেপগুলো আরও জোরদার করা।নির্বাচনী প্রচারণার সময় ট্রাম্প লাখ লাখ মানুষের গণহারে বিতাড়ন শুরু করতে চান, এমন একটি প্রকল্প যা কর্মক্ষেত্রে ব্যাপক অভিযান এবং মার্কিন সামরিক বাহিনীর জড়িত থাকার মাধ্যমে চিহ্নিত হতে পারে বলে ধারণা করছেন ।
৭ ) সীমানা প্রাচীর সম্প্রসারণ :
সীমান্ত প্রাচীর সম্প্রসারণ ও শক্তিশালী করা ট্রাম্পের অভিবাসন এজেন্ডার আরেকটি ভিত্তি, এটি একটি প্রতিশ্রুতি যা তার ভিত্তির সাথে গভীরভাবে অনুরণিত ।
যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তের দৈর্ঘ্য প্রায় দুই হাজার মাইল। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে, মার্কিন সরকার ৫০০ মাইলেরও কম সীমান্ত প্রাচীর নির্মাণ করেছিল। এবার কি ধরণের পদক্ষেপ নেবেন তা বলা যায় না। আমেরিকার জনগণ ডোনাল্ড ট্রাম্প ও জেডি ভান্সকে শক্তিশালী মেন্ডেট দিয়েছেন এবং আশা করা যায় এবার দেশের ও বিশ্বের জনগণের জন্য কিছু ভালো কাজ করে দেখাবেন।
সমাপ্ত