আয়নাঘর শব্দের আক্ষরিক অর্থ “আয়নার ঘর”। আয়নাঘরের একজন বন্দী আয়নার মতো নিজেকে ছাড়া আর কাউকে দেখতে পায় না বলে এই নামকরণ করা হয়েছে । শেখ হাসিনার ১৬ বৎসরের শাসনামল ছিল ভয়ঙ্কর, রাজনৈতিক বিরোধীদের জোরপূর্বক গুম ও নির্যাতনের জন্য এখানে রেখে দিতো । এই আয়নাঘরে গত ১৬ বসরে কতলোক রাখা হয়েছিল , কতলোক ছাড়া পেয়েছে, কতলোক অত্যাচারের ফলে মারা গিয়েছে,কতলোক এখনও নিখোঁজ রয়েছেন তা বলা কঠিন। তবে হেফাজত ও নির্যাতনের অন্যতম রহস্যময় আখড়া ছিল ঢাকা সেনানিবাসের আয়নাঘর বা ‘আয়নার বাড়ি’। এ ছাড়া দেশের আরও বিভিন্ন গোপন স্থানে ও থাকতে পারে বলে অনেকের অভিমত। হাসিনার পতনের পর জনগণের (ফোকাস) নজর এই আয়নাঘর ও তার বন্দিদের দিকে । এই আয়নাঘরে ছোট ছোট কামরা এক একজন কয়েদির জন্য এক একটি ঘর , কোনও জানালা নেই, কারো সঙ্গে আলাপের সুযোগ নেই, সামান্য আলো, উঁচু সিলিং, দেয়ালে খোদাই করা প্রাক্তন বন্দীদের দুঃখের বার্তা রয়েছে । যে সব লোককে এই আয়নাঘরে জিজ্ঞাসাবাদ , নির্যাতন করা হতো তাদের অনেকের হাতের লেখা বিভিন্ন ধরণের মন্তব্য এই আয়নাঘরের দেয়ালে পাওয়া গেছে বলে খবরে প্রকাশ।
আয়নাঘর বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীর গোয়েন্দা শাখা, ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স (ডিজিএফআই) দ্বারা পরিচালিত একটি গোপন অন্তর্বর্তী কেন্দ্রের নাম। এই আয়নাঘরে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে যারা ছিলেন বলে জানা যায় তাদের মধ্যে :মীর আহমাদ বিন কাসেম, একজন বাংলাদেশী ব্যারিস্টার এবং জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর পুত্র।
আব্দুল্লাহিল আমান আযমী, সাবেক সামরিক জেনারেল ও জামায়াত নেতা গোলাম আযমের ছেলে,মাইকেল চাকমা, ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের নেতা । হয়তো আরও অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তি ও থাকতে পারে যাদের নাম জানা যায় নি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ দেশ গণতন্ত্রের নামে ৩০ লক্ষ শহীদের বিনিময়ে স্বাধীন করেছিলেন ; আর সে দেশে তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা আয়নাঘর তৈরী করে মানুষকে ধরে নিয়ে বিনা বিচারে অত্যাচার করেছেন,শুনতে আপনাদের কেমন লাগছে ?
কোনো লোক বিচারে দোষী প্রমান না হওয়া পর্যন্ত কোনো রকম শাস্তি দেয়া যায় না। কিন্তু বিভিন্ন দেশে স্বৈরাচারী সরকার নিজেদের ক্ষমতার বলে যে কোনো লোককে বিচারের পূর্বে অত্যাচার করে – এ রকম একটি দেশ লিবিয়া :
লিবিয়ার জেল হত্যাকান্ড :
লিবিয়ার লৌহ-মানব মোয়ামার- আল-গাদ্দাফি এক সময় বিশ্বের এক আলোচিত ব্যক্তি ,সে লিবিয়ার জনগণের জন্য অনেক কাজ করেছিলেন ; এ দেশে কোনো অভাবী লোক ছিল না। কিন্তু তিনি একজন স্বৈরশাসক ছিলেন। এ সম্পর্কে আমি ” তৃতীয় বিশ্বের গণতন্ত্রের রূপ ” এ লিখেছি, যে কি ভাবে একজন স্বৈরশাসকের উত্থান ও পতন হয়েছিল । ২০০৯ সালের এপ্রিলে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের লিবিয়ার বিচার সচিব এবং ২০০৯ সালের ১০ আগস্ট সাইফ আল-ইসলামের গাদ্দাফি ফাউন্ডেশন দাতব্য সংস্থার একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় যে কিভাবে জেলখানায় ১১৬৭ জন কয়েদিকে বিনা বিচারে হত্যা করেছে। এমন কি যে সব লোকদের হত্যা করা হয় তাদের লাশ পর্যন্ত গুম করা হয় এবং বহুদিন পর পরিবারকে তা জানানো হয়। মুয়াম্মার গাদ্দাফি ২০১১ সালের ২০ অক্টোবর মারা যান। ন্যাটোর বিমান হামলায় তার গাড়িবহরে আক্রমণ করে। গাদ্দাফিকে একটি ড্রেনেজ পাইপে লুকিয়ে থাকতে দেখা যায় এবং পরে বিদ্রোহী যোদ্ধারা তাকে ধরে নিয়ে যায় এবং মারধর করে। ধরা পড়ার কিছুক্ষণ পরই গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান তিনি।
বাংলাদেশে ঘৃণা ও বিদ্বেষমূলক অপরাধ :
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই দেশে ঘৃণা ও বিদ্বেষমূলক অপরাধ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। যদিও দেশটি স্বাধীন হয়েছে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে ; দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই একে অপরের প্রতিহিংসা এবং বিদ্বেষ সংক্রমক রোগ হিসাবে জাতির শিরায় শিরায় ছড়িয়ে পড়েছে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক বক্তব্য ও কার্যকারিতার কারণে এই বিদ্বেষ অধিক পরিমানে সংক্রমণ রোগ হিসাবে ছড়িয়ে পড়েছে।
পারিবারিক রাজনীতি ও একটা বড় কারণ। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই দেশ পারিবারিক রাজনীতি থেকে বের হয়ে আসতে পারেনি। এরা মনে করে দেশটা তাদের মালিকানা ; রাজনৈতিক দলগুলি যথা বিএনপি, জমাতে ইসলাম, হেফাজতে ইসলাম, শিবির,রাজাকার ও পাকিস্তানী পন্থী বলে কোনঠাসা করে রেখেছে।
সমাপ্ত