গত ১৬ই নভেম্বর ২০২১ইং সনে টরেন্টোর ড্যানফোর্থ এলাকায় অবস্থিত উন্নয়ন সংস্থা , বাংলাদেশী কানাডিয়ান
কম্যুনিটি সার্ভিসেস (বি.সি.এস) তাঁদের নূতন “জেন্ডার ইক্যুয়ালিটি প্রকল্প ” (Gender Equality Project) “ফাইটিং মিসাজেনি এন্ড ষ্ট্যারিওটাইপস এগেন্টস রেসিয়ালাইজড উইমেন এন্ড গার্লস ইন টরেন্টো”
( “Fighting Misogyny and Stereotypes against Racialized Women and Girls in Toronto”/ Fighting Misogyny” জুম্ (Zoom) মাধ্যমে “প্রকল্প উদ্বোধন” সভা করেন।
সভার প্রারম্ভে বি.সি,এস এর নির্বাহী পরিচালক ড: নাসিমা আক্তার সকলকে স্বাগতম জানান। তিনি সকল আমন্ত্রিত অতিথি, প্রকল্পের পার্টনার, স্ট্যাক হোল্ডার, কম্যুনিটি থেকে আগত নারী পুরুষ ও কিশোর .কিশোরী এই সভায় যোগ দেবার জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
তিনি বি.সি.এস এর কর্মকান্ডের মাধ্যমে অর্জিত অভিজ্ঞতা থেকে কোভিড-১৯ এর সময় বিভিন্ন বর্ন ও লিঙ্গের উপর যে সমস্যা সৃস্টী হয়েছে তা ব্যক্ত করেন এবং সে বিষয়ে যথাযথ কাজ করার জন্য বিভিন্ন পার্টনারদের সহায়তায় এই “ফাইটিং মিসাজেনি “ প্রকল্প সফল ভাবে বাস্তবায়ন করার বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে তাঁর বক্তব্য শেষ করেন।
উক্ত সভায় স্থানীয় নারী,পুরুষ কম্যুনিটি,বিভিন্ন বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধি,এম.পি, এম,পি.পি, মেম্বার অব ওয়েজ(WAGE) কানাডা, প্রকল্প টীম এবং কিশোর ও কিশোরী মিলে সর্বমোট বিরানব্বই (৯২) জন অংশ গ্রহন করেন।
স্বাগত বক্তব্যের পর, ড:মাহবুব হাছান,সোস্যাল ওয়ার্কার ও এ্যাডুকেটর এই ফাইটিং মিসাজানি প্রকল্পের লক্ষ্য উদ্দেশ্য, প্রকল্প কর্মকান্ড এবং এসপেকটেড ফলাফলের উপরে একটি সংক্ষিপ্ত উপস্থাপন করেন, তিনি বলেন এই প্রকল্পের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে এই ১৮ মাসের প্রকল্পটি মূলত: নারীর সমঅধিকার অর্জন ও চলমান কোভিড-১৯ এর নারীর উপর নেতিবাচক প্রভাব দূরীকরনের নিমিত্তে নিয়মতান্ত্রিক পরিবর্তনের জন্য কাজ করবে।
এই উদ্দ্যেশ্যে প্রথমত: বিভিন্ন বর্ন থেকে নিয়োগ কৃত ৩০ জন নারী ,পুরুষ ,কিশোর এবং .কিশোরীদের নিরাপদ
পরিবেশে যথাযথ প্রশিক্ষনের মাধ্যমে ” ফ্যামিনিস্ট লীডার ” হিসাবে কাজ করার জন্য প্রশিক্ষিত করা হবে।
ফ্যামিনিস্ট লীডারগন প্রকল্পের কর্ম এলাকায় নারী পুরুষ,কিশোর এবং কিশোরীদের মাঝে বিরাজমান অসম
অধিকার ও কোভিড-১৯ এর বিরূপ প্রভাব এর উপর গনসচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দ্যেশ্যে ৩০০ অভীস্ট জনগোস্টী,
কিছু শিক্ষা প্রতিস্ঠান, স্থIনীয় নেতা এবং নীতি নির্ধারকদের সাথে মিটিং, আলাপ আলোচনা, এবং পরামর্শ
সভা পরিচালনা.করবেন ।
এসময়ে ৩ (তিন) জন কিশোরী সায়রা,তাসনিয়া, মাইসা মাহবুব এবং ১ (এক) জন কিশোর (মো:কাইয়ূম)
মিসাজেনি বিষয়ে তাদের সংক্ষিপ্ত অভিজ্ঞতা ও এই বিষয়ে ভবিষ্যতে যুক্ত হয়ে কাজকরার ব্যাপারে তাদের
আগ্রহ ও প্রত্যয়ের কথা প্রকাশ করেন। এখানে উল্লেখ্য যে এরা ক্লাশ IX ও X গ্রেড এর ছাত্র ছাত্রী।
বিসেস ইস্ট ইয়র্ক এর এম.পি নেথানিয়েল ইরকসান- স্মীথ(Nathaniel Erskine Smith) প্রকল্প উদ্বোধন করেন, এ সময়ে তিনি বলেন–এই প্রকল্প একটি গুরুত্বপূর্ন প্রকল্প যা কানাডিয়ান সরকারের জেন্ডার ইক্যুয়ালিটির প্রতিশ্রুতি রক্ষার জন্য কাজ করবে। তিনি তাঁর সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বি.সি.এস কে সার্বিক সহযোগীতা প্রদানের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।
ড: হাছান ও কিশোর কিশোরীদের বক্তব্যের পর, রীনা সেনগুপ্তা- সোসাল ডেভলপমেন্ট ও জেন্ডার বিশেষজ্ঞ
” ফাইটিং মিসাজেনি” : সোসিও ইকোনমিক প্রেক্ষিত ও প্রকল্পের ভিশন ” এর উপর বক্তব্য রাখেনI তিনি বলেন, দক্ষিন এশিয়ার প্রায় দেশ গুলোতে মান, মর্যাদা ও অধিকারে নারী এবং পুরুষ সমান অবস্থানে (Equal Status) নেই। বৈষম্য মুলক আচরন (Discriminatory Behavior) কিশোর কিশোরী ও নারী পুরুষের মধ্যে পার্থক্য সৃস্টী (Difference) করে। এই পার্থক্য থেকেই তাদের মধ্যে দূরত্ব /ব্যবধান (Disparity) তৈরী হয়। যার ফলশ্রুতিতে কিশোর কিশোরী এবং নারী পুরুষের অধ:স্তনতার (Lower Status) বিষয়টি সৃষ্টি হয়। পরিবারে , শিক্ষা প্রতিস্ঠানে ও কর্মস্থলে নারী পুরুষ মান,মর্য্যাদা ও অধিকার নিয়ে জীবন যাপন করার গুরুত্বের বিষয়টির উপর তিনি বিশেষভাবে উল্লেখ করেন। পরিবারে, শিক্ষা প্রতিস্ঠানে ও কর্মস্থলে নারী পুরুষ মান,মর্য্Iদা ও অধিকার নিয়ে জীবন যাপন করার গুরুত্বের বিষয়টির উপর তিনি বিশেষভাবে উল্লেখ করেন। বিশেষ বক্তাদের বক্তব্যে যে বিষয় গুলো গুরুত্ব পেয়েছে তা নিম্নরূপ:
সামিয়া হাসান (CASSA) তার বক্তব্যে তিনি বি.সি.এস ও তাদের বিভিন্ন যৌথ প্রকল্পের বিষয় উল্লেখ করেন।
ভবিষ্যতেও এই প্রকল্পে পার্টনার শীপে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন।
Access Alliance -এর প্রতিনিধি কম্যুনিটি প্রোগ্রাম কর্মকর্তা জেসমিন থিবুল্ট Access Alliance -এর দুইটি প্রকল্প বাস্তবায়নের বিষয়ে তাদের জেন্ডার ইক্যুয়ালিটির ক্ষেত্রে যে বৈষম্যের বিষয়ে যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন তা
সকলের উদ্দেশ্যে বর্ননা করেন ।
জেরিনা সিরাজী, এবং সোরিয়া খলিলী (SAAFSSF) প্রতিনিধি তার বক্তব্যে “মিসাজেনি” এর বিষয়ের তাত্ত্বিক ধারনা, লক্ষন এবং সমাজে এর বিরাজমান ভয়াবহতা অবস্থানের বিষয়ে অভিজ্ঞতা উপস্থাপন করেন।
এম.পি.পি ডলি বেগম বি.সি.এস এর সমাজ ও নারী উন্নয়ন কর্মকান্ডের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি তাঁর বক্তব্যে বেতন বা পারিশ্রমিক কানাডিয়ান ১৫ ডলার প্রদান বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি আরও বলেন – যেই যেই সেক্টরে বেতন /পারশ্রমিক ঘন্টা প্রতি ১৫ ডলার তার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিভিন্ন বর্নের জন গোস্টি কাজ করেন। তিনি এ বিষয়ের পরিবর্তনের জন্য নিজেদের প্রচেস্টার কথাও উল্লেখ করেন।
এম.পি.পি রীমা বার্ন একই বিষয়ে তাঁর অসন্তুস্টির বিষয়টি তুলে ধরেন। তিনি আশা করেন বি.সি.এস এর এই প্রকল্প সমাজ ও নারী উন্নয়নে সহায়ক হবে।
সুলতানা জাহাঙ্গীর সরো (SAWRO)প্রতিনিধি তার বলিস্ট বক্তব্যে তীব্রভাবে বিরাজমান বিসিস্টেমেটিক বৈষম্যের বিষয়টি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এই সিস্টেমেটিক বৈষম্য পলিসি,নীতি গুলোই নারীর সমঅধিকার অর্জনে বিশেষ বাধারসৃস্টী করে। তিনি ক্ষমতাবান পুরুষদেরকে নিজের পাশের খালি চেয়ারটা তে একজন নারী প্রতিনিধি পাবার জন্য চেস্টা করতে অনুরোধ করেন।
বালদেব মুত্তা, Punjabi Community Health Services প্রতিনিধি বলেন মানসিক সমস্যা নিয়ে কাজ করার জন্য কম্যুনিটির চাহিদা অনুযায়ী সার্ভিস /সেবার অভাব।কিশোর ও কিশোরীদের এমন ভাবে সামাজিকরন করা দরকার যাতে ওরা মানুষের মান, মর্য্যদা ও অধিকার রক্ষার বিষয়টি বড্ হয়ে নিশ্চিত করার জন্য চেস্টা করবে।
সম্মানিত প্রতিনিধি বৃন্দের মূল্যবান বক্তব্যের পর, ড: নাসিমা আক্তার, নির্বাহী পরিচালক ,বি.সি,এস আবারও সকলকে এই মহতী “প্রকল্প উদ্বোধনী” সভায় যোগ দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ প্রদানের মাধ্যমে সভার সমাপ্তি
ঘোষনা করেন।