“ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে এল খুশির ঈদ, তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে শোন্, আসমানী তাগিদ । ”
নজরুল ইসলামের এই গজল শুনলে প্রতিটি বাংলাভাষী মুসলমানের দু’চোখ জলে সিক্ত হয়ে উঠে । ঈদের দিনে প্রতিটি বাংলাভাষী মুসলমান দূর দূরান্ত থেকে বাংলাদেশের টেলিভিশন চ্যানেল খুলে ছোট্ট ছেলে মেয়েদের সুন্দর ড্রেস পরে এই গজল পরিবেশনা উপভোগ করে,সে কি চমৎকার দৃশ্য , তা প্রশংসার যোগ্য এবং সত্যি উপলব্ধি করার মতো । আমার দু‘ চোখ জলে সিক্ত হয়ে উঠে এবং ভাবি ওই মুহূর্তেই দেশে গিয়ে নিজেদের লোকজনের সঙ্গে সামিল হয়ে আনন্দ করি।
কিন্তু বাস্তবে কি তা সম্ভব?
অনেক সময় আমার ছেলে মেয়েরা দেখে আমি দুই হাত দিয়ে সিক্ত চোখ মুছে কাঁদো কাঁদো চোখে টেলিভিশনের পর্দায় তাকিয়ে থাকি। রুটি রোজগারের জন্য আমরা হাজার হাজার মাইল দূরে এসে অনেক কিছুই দেশের মিস করি।
আমরা টেলিভশন খুলে দেশের এসব অনুষ্টান পরিবার পরিজনদের নিয়ে উপভোগ করি । যদিও বহুদূরে তথাপি মনে হয় আমরা বাংলাদেশে সবার সঙ্গে রয়েছি ।
আমাদের গ্রামের বা শহরের মসজিদে রমজানের শেষের ১০ দিন মুসল্লিরা ইতেকাফে বসে এবং কোরান পড়া, মহান আল্লাহকে স্বরণ করে সময় অতিবাহিত করে। শেষের ১০ দিনের যে কোনো বেজোড় রাতে লাইলাতুল কাদর পাওয়া অর্থাৎ অনেক (ফজিলত) নেক আমল করা । আমি নিজেও দুই/এক বার দেশে থাকাকালীন সময় মুসল্লিদের সঙ্গে ইতেকাফে বসেছি।
দেশে নিজের গ্রামের বা এলাকার লোকের সঙ্গে নামাজ পড়া সম্পূর্ণ আলাদা আনন্দ এবং উপভোগ করার মতো। মূলত: সে জন্যই লক্ষ লক্ষ লোক এত এত যন্ত্রনা সহ্য করে ও নিজের গ্রামে প্রাণের আবেগে পরিবারের নিকট চলে যায়। কিন্তু ভুলে যায় ভয়াবহ জার্নি ও মহামারী করোনার আক্রমণের কথা।
ঈদের জামাতের শুরুতে জোরে জোরে তাকবীর… আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার লাইলাহা ইল্লাল্লাহ ওয়ালিল্লাহিল হাম্দ.. সোবহানাল্লাহ ওয়ালহামদুলিল্লাহে লাইলাহা ইল্লাল্লাহ আল্লাহুআকবার… । ঈদের জমাতে সমস্ত মুসল্লি জোরে জোরে ধ্বনি করে এই দোআ পড়ে মাঠকে মুখরিত করে। রাসূলুল্লার নির্দেশ ,” মাঠে ময়দানে জামাত করে নামাজ পড়বে। তবে ঝড়, বৃষ্টি হলে মসজিদে নামাজ পড়বে।“সে নির্দেশ মেনে মুসল্লীগণ মাঠে জায়নামাজ নিয়ে নামাজ আদায় করে।
মনে পড়ে স্মৃতিতে ধরে রাখা আমাদের ছোট্ট সময়ের কথা, সন্ধ্যার হওয়ার পূর্বেই ছোট বড়ো মিলে চাঁদ দেখার আনন্দে মেতে উঠতাম ।চাঁদ দেখার জন্য পশ্চিম আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকা ,যেই না চাঁদ দেখা হতো ,সে কি হৈ চৈ মহা উল্লাস আর আনন্দ। সারা গ্রামে ঈদের আনন্দে হৈ চৈ চিৎকার শুরু হতো । আবার অনেক সময় মেঘলা আকাশের জন্য চাঁদ দেখা না গেলে দেশের প্রচলিত হেলাল কমিটির উপর নির্ভর করতে হতো । আমাদের ছোট বেলায় এমনটিও অনেক সময় হয়েছে,যে পূর্ব পাকিস্তানে কোথায় ও চাঁদ দেখা যায়নি , নির্ভর করতে হতো পশ্চিম পাকিস্তানের উপর, রাতে খবর পাওয়া গেল যে পশ্চিম পাকিস্তানে ,লাহোর, শিয়ালকোট বা পেশাওয়ার চাঁদ দেখেছে । সুতরাং সরকারি আদেশ অনুযায়ী পর দিন ঈদ হবে ।
আজকাল মুসল্লিরা দুই ভাগ হয়ে এক ভাগ সৌদি আরবের খবর অনুযায়ী রোজা ও ঈদ করে এবং আর এক গ্রুপ চাঁদ দেখে বা হেলাল কমিটির সিদ্ধান্ত অনুসরণ করে থাকে।
ছোটকালের দেশের সেই আনন্দ কি ভুলে যাওয়ার?
মা চাচিদের রাতে ঘুম নেই, সারা রাত জেগে, হরেক রকমের পিঠা, সেমাই, পোলাউ, খিচুড়ি, মাংস ও অন্যান্য সুস্বাধু খাবার তৈরি করে রাখতো । গ্রামের বাড়িতে সকাল হতেই সবাই পুকুরে গোসল শেষে ঘরে এসে সেমাই,হালুয়া বা ঘরে তৈরি বিভিন্ন রং বেরঙের মিষ্টি ও পিঠা খেয়ে নুতন কাপড়, নুতন টুপী পরে হাতে আতর লাগিয়ে নামাজের জায়নামাজ নিয়ে ছোট বড়ো সবাই গ্রামের ঈদগাহ মাঠে একত্রিত হয়ে নামাজের জন্য উপস্থিত হতাম।
মেয়েরা ঈদের সুন্দর সুন্দর কাপড় পরে সেজে নিজেদের বন্ধু, মা- চাচিদের সঙ্গে ঈদের আনন্দে মেতে উঠতো।
ঈদের ময়দানে কি গরিব,কি ধনী আজ সবাই এক সারিতে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করবো । আজ প্রতিটি মানুষ সমান,নাই কোনো ভেদাভেদ,একমাত্র আল্লাহকে স্বরণ করে সাজদাহ করবো । মনে আজ সীমাহীন আনন্দ ,আমরা এক মাস রমজানের রোজা রেখেছি এবং নামাজের শেষের দৃশ্য,সে তো অপূর্ব ! প্রতিটি মানুষ একে ওপরের সঙ্গে কোলাকুলি করে আনন্দ (ইসলামে নেই কোনো ভেদাভেদ) প্রকাশ করা ।
ইসলাম ধর্ম বললে ও আমরা কি ইসলামিক দৃষ্টিতে সবাই সমান?
যদি তাই হয়, সমাজে কেন মানুষে মানুষে এই ভেদাভেদ?
কেউ বড়ো লোক, কেউ টোকাই, কেউ সৎ, কেউ অসৎ, কেউ অট্টালিকায়, কেউ গাছ তলায় বা কারও বিল্ডিং এর নিচে বা বস্তিতে বা পার্কে ঘুমাবে । কেউ হাজার হাজার কুটি টাকা আত্মসাৎ করে, কেউ গার্বেজ থেকে উচ্ছিষ্ট কারো খাবার তুলে খাবে ।
এই প্রশ্ন- গুলির জবাব যদি সমাজের প্রতিটি মানুষ দিতে পারতো, তাহলে আমাদের দেশে কোনো সমস্যাই থাকতো না, প্রতিটি মানুষই হতো ফেরেস্তার মতো ।
এবার অন্য প্রসঙ্গে আসা যাক । সে যুগে আমাদের ঈদের নামাজের শেষে এনায়েতপুর গ্রামের মুরুব্বি মরহুম জমিরউদ্দিন প্রধানিয়া সাহেব দাঁড়িয়ে উপস্থিত সব মুসুল্লীকে বলতেন, “ মুসিল্লগণ, আপনারা সবাই আমাদের বাড়িতে আমন্ত্রিত, প্রধানিয়া সাহেবের বাড়ির উঠানে বসিয়ে ঈদের সব মুসুল্লীকে খিসুরি খাওয়াতেন ।” প্রধানিয়া সাহেব আজ আর জীবিত নাই, তবে তার স্মৃতি আজ ও আমাদের মধ্যে জাগ্রত । যতদূর শুনেছি, আজ ও আমাদের গ্রামের সেই চিরাচরিত খাওয়া দাওয়ার নিয়ম রয়েছে । নামাজ ও খাওয়ার পরে, বাড়ি বাড়ি গিয়ে লোকদের সঙ্গে দেখা করে ঈদের শভেচ্ছা বিনিময় করা ছিলো ঈদের বিশেষ আনন্দ । ছেলে মেয়েরা এই ঘরে,সেই ঘরে, গিয়ে সালাম করে ঈদের বকশিস আদায় করতো ,খেয়ে দেয়ে আনন্দ করে, বাড়ি বাড়ি ঘুরে বেড়াতো, তা কি ভুলে যাবার?
আজ বহু বৎসর আমি দেশের বাইরে,১৯৮২ থেকে ১৯৮৫ নাইজেরিয়াতে চাকুরী নিয়ে থেকেছি । সেখানেও দেখেছি দলে দলে নাইজেরিয়ান মুসলমান ঈদের দিন সকালে লম্বা জামা ও টুপী পড়ে,মাঠে একত্রিত হয়ে ঈদের নামাজ আদায় করে ,কি পরিচিত বা অপরিচিত একই প্রকারে আলিঙ্গন করে আনন্দ উৎসবে মেতে উঠে । সারাদিন এই বাড়ি সেই বাড়ি, দেশি -বিদেশিকে গিয়ে “ঈদ মুবারক ” বলে ঈদের শুভেচ্ছা জানাতো । ইসলামে গরিব, ধনি, ছোট/বড়ো বা সাদা/কালোর কোনো ভেদা ভেদ নেই, এটাই তৌহিদের মূল মন্ত্র ।
১৯৮৬ সনে আমি তখন নিউ জার্সি ,USA কয়েকজন বাংলাদেশি একত্রিত মেস করে থাকি । ধারে কাছে কোনো মুসলমান বা মসজিদ আছে কিনা কারোই জানা নেই । রোজার মাস,সারাদিন হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে ,ঘরে এসে ইফতার করি ।আমাদের মধ্যে বয়োজেষ্ঠ মিস্টার নুরুল আলম,ভালো ইফতারি ও রান্না জানতো । ইফতারের সময় আমরা ওর স্বরণাপন্ন হতাম । তাকে আমরা চিটাগংএর বড়দা বলে সবাই সম্মান করতাম । এক মাস রোজা রাখার পর ঈদুল ফিতর , বরফ ও অতিরিক্ত ঠান্ডা আবহাওয়া , কোথায় নামাজ পড়তে যাবো, কিছুই জানিনা । সিদ্বান্ত হলো ভোরে সবাই মিলে বেরিয়ে পড়বো,যেখানেই হোক,নামাজ পড়বো । সকালে ঘুম থেকে উঠে সবাই মিলে গাড়ি নিয়ে অনেকদূর যাওয়ার পর রাস্তার পার্শে কয়েকজন আফ্রিকান মুসলমান দেখে আমরা তাদের সঙ্গে যোগ দিলাম । যদিও এদেশে খোলা মাঠে ঈদের নামাজ পড়া হয়না, (মসজিদ বা কমিউনিটি সেন্টারে),কিন্তু এই পরিস্থিতে সবাই সিদ্ধান্ত নিলো এখানে রাস্তায় নামাজ পড়া হবে । নামাজ আদায় করে একে ওপরের সঙ্গে আলিঙ্গন করা ,৮/১০ জন মুসলমান ,কেউ নাইজেরিয়ান,কেউ বা মিসোরিও ,কেউ লিবিয়ান ,ঘানিয়ান,কোলাকোলি করে ঈদের আনন্দ আর ভাই ভাইয়ের মিলনকে সুদৃঢ় করে ঘরে ফিরে মিস্টার নুরুল আলমের তৈরী ঈদের খাবার খেয়ে দেশে পরিবার পরিজনকে ঈদের শুভেচ্ছা জানানোর জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা টেলেফোনে চেষ্টা করেছি । তাও ল্যান্ড ফোন,আবার বাংলাদেশে সবার বাসায় কানেকশন নেই ।
সারা দুনিয়ার মুসলমান ভাই ভাই ,তবে আজ আমাদের মধ্যে এত বিভেদ, হানাহানি, লক্ষ লক্ষ মুসলমান কেন এত রক্ত দিচ্ছে ?
আজ সারা পৃথিবীতে মানুষে মানুষে হানাহানি, প্যালেসটিন, সিরিয়া ,ইরাক,ইমেন ,আফগানিস্তান,লিবিয়া এদের প্রতিটি দেশে ধ্বংসযজ্ঞ চলছে, ধর্মের নামে চলছে শুধু হানাহানি । লক্ষ লক্ষ রেফিউজি নিকটতম তুরুস্কে,ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশগুলিতে অন্যের দ্বারস্থ,যার অধিকাংশ আহত,বিকলাঙ্গ, মা,বাবা,ভাই,বোন হারিয়ে অসহ অবস্থায় দিনের পর দিন তাঁবুর নিচে ভিক্ষুকের মতো বেঁচে আছে । শুধু ধর্মের নামে কত লক্ষ মানুষ হতাহত হয়েছে বা হচ্ছে তার হিসাব নাই বা দিলাম । যারা বেঁচে আছে তারা আজ অসহায়, অত্যন্ত অবহেলিত মানুষ । পরের কাছে হাত পেতে যা পায় তাই অথবা নর্দমা থেকে উচ্ছিষ্ট খাবার খেয়ে দিনের পর দিন কোনো রকমে বেঁচে আছে । লক্ষ লক্ষ মা বোন, সম্মানীয় ঘরের মহিলারা , আজ ফকির, নিজেদের অস্তিত্ব হারিয়ে অন্যের অনুগ্রহের উপর কোনো রকমে বেঁচে আছে ।
যে ইরাক ,সিরিয়া,লিবিয়া আমাদের দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ গিয়ে কাজ করেছে,আজ সে সব দেশের মানুষ অন্য দেশে করুনার পাত্র হয়ে আছে, দ্বারে দ্বারে ভিক্ষুকের মতো তাকিয়ে থাকে কখন সাহায্য আসবে । আজ কোথায় তাদের ঈদ আর কোথায় তাদের আনন্দ?
এবার অন্য প্রসঙ্গে আসা যাক, কানাডা অতি সুন্দর দেশ ,এখানকার সরকার আমাদের ধর্মীয় সব ধরণের সুযোগ সুবিধা ভোগ করার সুযোগ করে দিয়েছে । এখানকার মসজিদগুলি রমজান মাসে মুসুল্লীতে ভরপুর থাকে । আমাদের বাংলাদেশের মসজিদ আর এখানকার মসজিদগুলোর মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে । এখানকার মসজিদগুলিকে কমিউনিটি সেন্টার ও বলা যেতে পারে, মসজিদ গুলিতে সারা বৎসর ধর্মীয় ও সামাজিক বিবিধ প্রোগ্রামের ব্যবস্থা রয়েছে । বিশেষ করে রমজান মাসে প্রতিটি পরিবার ছেলে মেয়ে নিয়ে মসজিদে ইফতার , নামাজ ও খাওয়াদাওয়া করে । রমজান মাসে কিছু কিছু মসজিদে পাঁচ শত শত লোক ইফতার ও খাওয়াদাওয়া করে । নিজেদের পরিবার নিয়ে যার যে টেবিল পছন্দ বসে, কোরান,হাদিস ও ধর্ম নিয়ে পারিবারিক বা সমষ্টি গত ভাবে চর্চা করে এবং নিজেদের খেয়াল খসি মতো ইফতারি ও খাওয়া সেরে তারাবি পড়ে যার যেই বাসায় ফিরে । এখানে প্রতিটি মুসলমান hospitable এবং সবাই মসজিদে সাহায্য সহযোগিতা করে । রমজানের শেষ দশ দিন মসজিদ থাকে মুসুল্লীতে ভরপুর । সবে কদরের রাতে মসজিদে মুসুল্লি ও তাদের পরিবার নিয়ে সারারাত থেকে এবাদত, ফাঁকে ফাঁকে ব্র্যাক ও এন্টারটেইনমেন্ট করে কাটায় । এখানে ছেলেমেয়েরা ও মা বাবার সঙ্গে রাত জেগে থাকতে bore হয়না বরং উপভোগ করে । কানাডা মুসলমান দেশ নয়,কিন্তু এখানকার নিয়ম কানুন মনে হবে আমরা যেন একটা মুসলিম দেশে বাস করি । এখানে হাসপাতাল,কমিউনিটি সেন্টারে,কর্মস্থল সর্বত্র নামাজের ব্যবস্থা আছে । প্রতিটি মহল্লায় হালাল মাংসের দোকান রয়েছে, মুসলমানরা নিজেদের পছন্দ মতো হালাল উপায়ে কোরবানি দিতে পারে ।
কোভিড –১৯ ও আমরা:
গত দুই বৎসরের রমজান সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরণের । গত বৎসর এবং এ বার আমরা কোরোনার কারণে মসজিদে নামাজ পড়তে পারি নি । সারা পৃথিবীতে কোরোনার কারণে সব কিছু অচল । সারা কানাডার প্রতিটি মসজিদ, মন্দির,চার্চ, অন্যান্য দর্মালম্বীদের উপসনাস্থল গুলি লক ডাউনের কারণে বন্ধ । সারা পৃথিবীর ব্যবসা বাণিজ্য ,যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ, নিজ নিজ isolation এ গৃহে অবস্থান করছে । গত দুই বৎসর ক্যানাডায় মূলতঃ সব কিছুই লক ডাউন । কিছু কিছু জরুরি দোকান যেমন গ্রোসারি স্টোর, ফার্মেসী দূরত্ব বজায় রেখে খোলা রেখেছে। কল কারখানা, ব্যবসা বাণিজ্য হয় বন্ধ, না হয় সীমিত আকারে খোলা রয়েছে।
অফিস, স্কুল কলেজে ইউনিভার্সিটি অন লাইনে সীমিত অবস্থায় চালু রয়েছে। আমার দুই ছেলে মেয়ে প্রতিদিন ঘরে বসে কম্পিউটারে অন লাইনে কাজ করে।
কানাডায় ২৪ হাজারের ও বেশি লোক (কোভিড –১৯) এ পয্যন্ত মারা গিয়েছে । ঈদের নামাজ বা আনন্দ বলতে কোথায় ও কিছু হচ্ছে না । ঈদে আত্মীয় কি বন্ধুদের বাড়ি গিয়ে এবং পরবর্তী গেট টোগেদার হয়ে যে আনন্দ করা হতো, সব-ই কোবিদের কারণে বন্ধ রয়েছে। এখানে মানুষ স্ট্রিক্টলি আইনকানুন মেনে চলে।
সারা পৃথিবীতেই কোবিদ–১৯ এর কারণে ভয়াবহ পরিস্থিতি বিরাজমান। যদি ও ক্যানাডায় দ্রুত গতিতে ভ্যাকসিন দেয়া শুরু করেছে, কিন্তু এই মারাত্মক ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে আসছে না।
বাংলাদেশে লোকসংখ্যার হারে এই রোগ এ পয্যন্ত ততোটা ছড়ায় নি। কিন্তু ঈদের বাজার এবং সরকারের আদেশ অমান্য করে লক্ষ লক্ষ জনতা যেভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গ্রামে ঈদ উদযাপন করতে যাচ্ছে এতে করে এই ভাইরাস নিয়ন্ত্রনের বাহিরে যেতে পারে।
এই মাত্র খবরে দেখলাম বাংলাদেশের মাদারীপুর জেলার পুলিশ বলছে মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া থেকে মাদারীপুরের বাংলাবাজারের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া দুটি ফেরিতে প্রচণ্ড ভিড় আর গরমে হিট স্ট্রোক আক্রান্ত হয়ে অন্তত ১৫ জন গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ার পর তাদের মধ্যে ৫ জন মারা গেছে ।
এত লোক এক সঙ্গে গ্রামের বাড়িতে যাওয়া কতখানি ঝুঁকি পূর্ণ ?
এক সঙ্গে রওয়ানা হওয়া, ট্রেন, বাস, লঞ্চ, ফেরি পাওয়া ও কঠিন। কিন্তু বাড়িতে যেতেই হবে?
কিছু কিছু মানুষ মনে করে কোবিদ-১৯ করোনা ভাইরাস কিছুই না, এটা সর্দি কাশির মতো । এত হালকা ভাবে দেখা ঠিক না ।তাছাড়া বাংলাদেশে ভ্যাকসিনের সরবরাহ অনেক কম । সারা পৃথিবীতে ভ্যাকসিনের সংকট দেখা দিয়েছে। বড়ো বড়ো দেশগুলি নিজেদের দেশে এ পয্যন্ত ভ্যাকসিন দেয়া শেষ করতে পারে নি। নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বাহিরের দেশকে সরবরাহ দেয়া সময় স্বাপেক্ষ ।
এ অবস্থায় জনগণ মাস্ক এবং দূরত্ব বজায় রেখে সতর্ক থাকার প্রয়োজন । বাংলাদেশের প্রতিবেশী ভারতে এই ভাইরাস জটিল আকার ধারণ করেছে এবং যে কোনো সময় (সতর্ক না হলে) এই রোগ বাংলাদেশে অসহায় মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে। ।
আল্লাহ’র কাছে প্রাথনা করি,আল্লাহ যেন এই বিপদ থেকে সারা পৃথিবীর মানুষকে মুক্তি দেন, আমীন ।