প্রতিটি বাবা মায়ের ই স্বপ্ন থাকে তাদের সন্তান কলেজ বা ইউনিভার্সিটি যাবে। যেখানেই পড়তে যাক, সুন্দর সুস্থ্য আর নিরাপদ পরিবেশে যেন তারা থাকে। আমার তিনটি কন্যা যেহেতু ইউনিভার্সিটি গিয়েছে তাদের অভিজ্ঞতা থেকে আর দেখে অনেক কিছু শিখেছি। এখানে ১৮ বছরে গ্রেড ১২ পাশ করে ভার্সিটিতে যায়। এতোদিন সবাই বাসায় বাবা মায়ের কাছেই থাকে, এই প্রথম তারা বাড়ীর বাইরে যাবার জন্য প্রস্তুত।এটা বাবা মায়ের জন্য যেমন কষ্টের আর ছেলেমেয়েরা আগে যতই মুখে বলুক স্বাধীনতা পাবে কিন্তু সময় যতই ঘনিয়ে আসে ততোই চোখের পানি নাকের পানি এক হতে থাকে। যখন প্রথম হোস্টেলে থাকতে যায়।
বড় কন্যাকে যেদিন ম্যাকমাস্টারে দিতে গেলাম, সারারাত ঘুম য় নি কারো, সাথে কান্নাকাটি তো আছেই। তাদের পাঠানো লিস্ট ধরে বালিশ থেকে ছোট ফ্রিজ, প্রিন্টার ইত্যাদি সবই কিনতে হলো । বিভিন্ন জায়গা থেকেই স্টুডেন্টরা আসছে সাথে গার্জিয়ান।আমার মতো সবার চোখে মুখেই তার প্রিয়জনের জন্য উতকন্ঠা। গাড়ী দুরে পার্ক করেছি অনেকটা পথ হাটতে হবে। গিয়েই মনটা আনন্দে ভরে উঠল। বিভিন্ন রং এর ড্রেস পরে সেকেন্ড ইয়ার, থার্ড ইয়ারের ছাত্র/ছাত্রীরা পোস্টার নিয়ে দাড়িয়ে আছে নতুনদের বরন করে নেবার জন্য, সাথে গান বাজনা তো আছেই । তাদের বাক্স, ব্যাগ সবই তারা নিয়ে দিচ্ছে। রুম দেখিয়ে কি কি রতে হবে,কোথায় খেতে হবে সব যেন ওদেরই দায়িত্ব। কিভাবে এই নতুনদের ভালো রাখা যায় সেটাই তাদের চিন্তা।
প্রথম সপ্তাহে ওরিয়েন্টেশন চলে, শুধু ফান আর ফান বিভিন্ন প্রোগ্রাম আর সন্ধ্যায় কনসার্ট। এতো যেমন খারাপ করে সবাই যায়, কিন্তু এক সপ্তাহ পরেই দেখা যায় খুব খুশী, মানিয়ে নিয়েছে সব নতুন বন্ধুদের সাথে। দায়িত্ববোধ ও বেড়ে গেছে। তারপরইতো পুরোদমে ক্লাশ আর এসাইনমেন্ট শুরু হয়ে যায়।
এখানে হোস্টেল থাকে শুধু ফার্স্ট ইয়ারের ছাত্র/ছাত্রীদের জন্য। অন্য সবাই ভার্সিটির আশে পাশে বাসা নিয়ে থাকে। প্রত্যেক হোস্টেলে আগের বছরের একজন ছাত্র থাকে। তাকে CA (কমিউনিটি এডভাইজার) বলে। সে থাকবে তার ভালো রেজাল্ট,মেধা ও লিডিং কেপাসিটির জন্য। তার দায়িত্ব তাতক্ষনিক ভাবে ছাত্র/ছাত্রীদের অসুবিধা গুলো দেখা। আর হল সুপারকে জানানো। বিভিন্ন ইভেন্টগুলো অর্গানাইজ করা অন্য ভলান্টিয়ারদের সাথে নিয়ে।
আমার দুই মেয়েই ইউনিভার্সিটিতে সাউথ এশিয়ান স্টুডেন্ট এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট আর ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিল। খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে। তাদের কাজ ছিল সব কালচারাল অনুষ্ঠান অর্গানাইজ ও পরিচালনা করা। ডিবেট ক্লাব,রিডিংক্লাব এসব দেখা। যেমন খাটুনি দায়িত্ব ও অনেক পড়াশুনার পাশাপাশি। এখানে কোনভাবেই রাজনৈতিক, ধর্মীয় বায়াসড কোন কিছু গ্রহন যোগ্য নয়। ওরা ঈদ পূনর্মিলনী, দিউয়ালী,আর অন্যসব অনুষ্ঠান সবাইমিলে খুব উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে উদযাপন করেছে। আর এটাই নিয়মে পরিনত হয়েছে।No race,No age, you can’t judge anybody. Every one is equal. ইউনিভার্সিটিতে রাজনীতি নিষিদ্ধ। কেউ চাইলে পার্টি অফিসে যাবে। কিন্তু হলে এসে বা ভার্সিটিতে সেটা নিয়ে আলোচনা করতে পারবে না।
যেহেতু হাইস্কুলে কাজ করি, তাই স্টুডেন্ট কাউন্সিল নিয়ে বিস্তারিত লেখার ইচ্ছা আছে। স্টুডেন্টদের কাজ লেখাপড়ার পাশাপাশি দেশ গড়ার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করা।