আবরারের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে আমাদের অনেক কিছুই নতুন করে ভাবতে হচ্ছে । তার মধ্যে র্যাগিং একটি।
র্যাগিং মানে পরিচিত হওয়া। প্রতি বছর নতুন ছাত্র/ছাত্রীরা যখন বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল কলেজ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয় তখন পুরাতন বা সিনিয়ররা তাদের হোমসিক দুর করার জন্য সার্বিক ভাবে সহায়তা করার কথা। আর এই প্রথাটাই রেগিং।
একজন নতুন ছাত্রের কাছে স্বাভাবিকভাবে অনেক কিছু অজানা থাকে। মা বাবা কে ছেড়ে এক নতুন পরিবেশ, এখানে কিভাবে চলতে হবে সিনিয়রদের সে ব্যাপারে খেয়াল রাখার কথা, সহায়তা করার কথা কিন্তু বাস্তবে হচ্ছে কি!!!???
বাংলাদেশে প্রায় প্রতিটি ভার্সিটিতে, মেডিক্যাল কলেজে র্যাগিং এর প্রচলন আছে। একটা ইয়ারের সব স্টুডেন্টরা র্যাগ দেয় না কিছু নির্ধারিত সিনিয়ররা যারা প্রথম বর্ষে র্যাগিং এর স্বীকার হয় তারাই এর নেতৃত্ব নেয়!!
এখানে যা হয়ঃ
সাধারণত ছেলেরা বেশী র্যাগিং এর স্বীকার হয়। এমন সব ঘটনা ঘটানো হয় যা রীতিমতো গা শিউরে ওঠার মতো। অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ, অশ্লীল অংগভংগী, শারিরীক নির্যাতন। শুনেছি অনেক ছাত্রকে সারারাত বা অর্ধেক রাত জেগে কাটাতে হয়। অনেকে নির্যাতনে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।
একজন ছাত্র যেখানে জ্ঞান বিজ্ঞান,সাহিত্য সংস্কৃতি,খেলাধুলা ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা আর রিসার্চ করবে, কিন্তু সে যখন হলে এসে দেখে ক্যান্টিনে খাবার নাই। সিনিয়ররা ফ্রিতে খায়। ক্যান্টিন চলছে না, ফ্রি খাবার যোগান দিতে দিতে। আর জুনিয়র তাদের যেতে হয় দূরে কোথাও খাবার খেতে, এটা যেমন নিরাপদ নয় আর দূর্ঘটনার স্বীকার হচ্ছে এরা অনেকেই। এসব কি দেখার কেউ নেই???
জুনিয়র ছাত্ররা যারা র্যাগিং এর ভয়াবহতার স্বীকার তারা প্রক্টরকে জানাতেও ভয় পায়। কারন ওই সিনিয়ররা যদি জানতে পারে তবে তার প্রান নিয়ে শংকা আছে।
আর সবাই জানি প্রতিটি হলে থাকে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রনেতাদের আধিপত্য। সে যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে।
অনেক স্বপ্ন ও সাধনা করে যখন কোন একজন ছাত্র এসব শিক্ষাংগনে ভর্তি হয় আর জীবনের এই অধ্যায়ের শুরুতেই এভাবে লাঞ্চনার স্বীকার হয়, সবার কি এসব সহ্য করার মতো ক্ষমতা থাকে?? তাই অনেকে বাবা মাকে কিছু বলতে পারে না। ভিতরে প্রতিশোধ নেবার প্রতিজ্ঞা করে, আর তখনই অপশক্তির সাথে যোগ দেয়। আর না হয় আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।
র্যাগিং কোন ভাবেই গ্রহণ যোগ্য নয়।
এই কারনে সন্তান হারানোর বাবা মায়ের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এমন এক হতভাগ্য বাবা মা প্রিয়া ও রাজেন্দ্র কাচুরী। তাদের একমাত্র সন্তান আমানকে ভর্তি করেন ভারতের হিমাচল প্রদেশের টান্ডা মেডিক্যাল কলেজে। কিন্তু নির্মম র্যাগিং এর স্বীকার আমান। ২০০৯ সালে এক রাতে সিনিয়রদের হাতে নি র্মম ভাবে আহত আমান মৃত্যুর কোলে ঢ লে প রে। কিন্তু মারা যাবার এক ঘ ন্টা আগে জবান বন্দী দিয়ে যায়। তুলে ধ রে সেই স্বৈরাচারীদের নি র্যাত নের কাহিনী। তারপর থেকে সন্তানহারা রাজেন্দ্র কাচুরী আর যাতে কোন বাবা মাকে সন্তান হারা না হতে হয় সে জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। ভারতের উচ্চ আদালতে মামলা করেছেন এই র্যাগিং বন্ধের।
আমাদের আগামী প্রজন্ম সুন্দর সুষ্ঠ পরিবেশে লেখাপড়া করবে। বাবা মা যেন নিশ্চিত থাকেন তার সন্তান নিরাপদে আছে।
বিশ্ববিদ্যালয় ভিসি/ প্রিন্সিপাল, হল প্রভোস্ট আর দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ দলীয় স্বার্থের ঊর্ধে উঠে ছাত্রদের স্বার্থ দেখুন। না হলে যা ঘটছে তার দায়িত্ব এড়াবেন কিভাবে ?
আজ যে সব ছাত্রদের জীবন ধবংস হলো কিছু রাজনৈতিক সুবিধাবাদীদের ক্ষমতায় টিকে থাকার মোহে। তাদের বিপথে যাবার জন্যভ আপনারাও দায়ী থাকবেন । আপনারা এই দায় থেকে মুক্তি পেতে পারেন না! আপনি হল প্রভোস্ট হয়ে যদি না জানেন সেখানে হচ্ছে টা কি!? তা হলে ওসব পদে আছেন কেন?
আজ আবরারের মতো একজন অত্যন্ত মেধাবী ছাত্রের নির্মমতার স্বীকার হয়ে জীবন দিতে হলো তার জন্য যারা সরাসরি জড়িত তাদের সাথে যারা তাকে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ তাদেরও আইনের আওতায় আনা উচিৎ।
র্যাগিং এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হউন। আপনার সন্তান যেন কোন অপশক্তির খপ্পরে না পরে খেয়াল রাখুন।
রাজনীতি মুক্ত,র্যাগিং মুক্ত, ধুমপান ও মাদকমুক্ত শিক্ষাংগন চাই।
এমন নতুন দিনের অপেক্ষায়।
(ছবি: সৌজন্যে Facebook)