একমাত্র নির্মম, নিষ্ঠূর বা পৈষাচিক কিছু না হলে উনাদের টনক নড়ে না।

ইদানিং দেশে দুটি জিনিস বেশ লক্ষ করার মতো। এক হলো, প্রধান মন্ত্রীকে যেন প্রায়ই রাখালের ভূমিকা পালন করতে হয়। দেশ পরিচালনার জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আছে, এবং তাদের দায়িত্বও খুব পরিষ্কার ভাবে উল্লেখ করা আছে, কিন্তু দেখা যাচ্ছে প্রায়সই প্রধানমন্ত্রীকে তাদের সেই দায়িত্বর কথা স্বরণ করিয়ে দিতে হয়। ঘটনাটা কি? ওই সমস্ত প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্ত লোকজন কি অথর্ব, কুড়ে নাকি বিকলাঙ্গ হয়ে গেছে যে সব কাজেই কমান্ডার ইন চিপ এর ঠেলা লাগবে।
এইতো ঠিক আবরার হত্যার সময়ই কানাডার, অন্টারিওর হ্যামিলটন শহরে কিছু টিন-এজ পোলাপান তাদের এক সহপাঠীকে তার মায়ের সামনে কুপিয়ে মেরেছে (চাকুমেরে). ছেলেটি নাকি আগে থেকেই বুলিং এর শিকার ছিলো। যাহোক পুলিশ তার কাজ সঙ্গে সঙ্গে শুরু করে দিয়েছে। স্কুল কর্তৃপক্ষেরও জ্যাবদিহি করতে হচ্ছে। কিন্তু কোই পুলিশ বা আইন প্রোয়গকারী সংস্থার লোকজনকে তো এখানকার প্রধানমন্ত্রীর তাড়া দেওয়া লাগেনি। শুধু এই দেশ নয়, অন্য অনেক দেশেও তাদের দেশ কর্তাকে প্রতি কাজে তাগাদা দেওয়া লাগে না।

আমার বাবা পুলিশের একজন সাধারণ ওসি ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ সহ প্রায় ৩০ বছর দেশকে সেবা করে গেছেন। উনার চাকরিকালীন সময়ে অনেক নৃশংস বা নির্মম হত্যা বা অপরাধের কেস হ্যান্ডেল করতে হয়েছে, কিন্তু উনাকে তো কখনো প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের অপেক্ষায় থাকতে দেখিনি। উল্লেখ, উনি বঙ্গবন্ধু শেইখ মুজিব, জিয়াউর রহমান এবং এরশাদের সময় কাজ করেছেন। কিন্তু এখন কেনো প্রতিক্ষেত্রে এদের দেশকর্তার তাগাদা লাগে?

যাহোক দ্বিতীয় বিষয়টি হলো। সবজাগাতেই বিরাট বড়ো একটা কিছু না ঘটলে সমাজের জঞ্জালগুলি উনাদের চোখে পড়ে না। কোনো এক জূজূ বুড়ির ভয়ে কেন যেন এরা জেনেও না জানার ভান করে থাকেন। তারপর যখন ভয়ঙ্কর কিছু ঘটে তখন হতদন্ত হয়ে লোকদেখানো কিছু করেন। তারপর গরম ভাব থেমে গেলে পুকুরের শেওলার মতো আবার যা তাই হয়ে যায়। যেমন ধরুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কথাই ধরা যাক। একটি ছাত্র বা ছাত্রী নৃশংসভাবে হত্যা না হওয়ার আগে কি কর্তাব্যক্তিরা দেখেন না কারা নাঠের গুরু, কারা ধান্দাবাজ বা কারা সন্ত্রাসী। এগুলি জানার জন্য সব সময় গোয়েন্দাগিরির দরকার হয় না।

যেমন ধরুন আমি ২০/২৫ বছর আগের ঘটনায় যাই। বিনপি এবং জাসদের গোলাগুলিতে ছাত্র নিহত হওয়ার আগে কি কর্তৃপক্ষ জানতো না যে কারা সন্ত্রাসী। অবশই জানতেন। তার প্রমান ওই দুই দলের যারা বহিস্কার হয়েছিল তারা যে সন্ত্রাসী তা সকলেই জানতেন, কিন্তু আগে কোনো কিছু করেন নাই। আবার দেখুন ওই দুই দলের বাইরেও অন্য দলে আরো সন্ত্রাসী ছিল কিন্তু তাদেরকে কিছু করা হলো না। যাহোক, সে অনেক দিনের কথা, তারপর সামরিক সরকার গেছে, গণতান্ত্রিক সরাকর এসেছে, অনেক কিছুর উন্নতি হচ্ছে কিন্তু কর্তাব্যক্তিদের চোখের ছানি কেন পরিষ্কার হচ্ছে না। মানুষের মনের উন্নতি যে কেন হচ্ছে না। দেশে যখন যাই, ধরুন বাস/ট্রেনএ যাচ্ছি। যাত্রাপথে অনেক নতুন রাস্তা, বড়ো বড়ো বিল্ডিং, আধুনিক শপিং মল এগুলি দেখে ভালো লাগে। কিন্তু যখন দেখবেন বাসের মধ্যে আপনারই দুছিট্ পরে বসা লোকটি হটাৎ করে অন্য কারো কথা চিন্তা না করে একটি সিগারেট ধরিয়ে টানতে লাগলো অথবা হটাৎ করে আপনার বাসটি থেমে গেলো কারণ সামনে মহা ক্ষমতাধারী একজন সার্জন কোনো এক টেম্পুওয়ালাকে একেবারে রাস্তার মাঝখানে আটকে ঘন্টাখানিক কাটিয়ে দিলো তখন ঐসমস্ত উন্নয়নের কথা ভুলে গিয়ে আপনার মুখ দিয়ে না বের হলেও মনের থেকে একটি গালি অথবা ধিক্ষার বের হয়ে আসবে।

আবরারকে হত্যাকারী খুনি গুলোই কি শুধু সমাজের জঞ্জাল। ঢাকা বিশ্ববিদ্দালয় সহ অন্নান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কি বুয়েটের থেকে খুব ভালো, সেখানে কি কোনো সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, ধান্দাবাজ ইত্যাদি নেই। সেইগুলিকে পরবর্তী কোনো খুনাখুনির আগে কেন ধরা হচ্ছে না। যাহোক আমার এই প্রশ্ন কিন্তু শুধু মাত্র বর্তমান সরকারের কাছে নয়। চলমান অবস্থায় অন্য কোনো সরকার থাকলেও আমার এই প্রশ্নগুলি থাকতো।
স্বাধীনতার পর থেকে অনেক দিন গেলো, অনেক সরকার বদল হলো অনেক ঘটনা ঘটলো, কিন্তু কেউই দর্শিতান্তমূলক কিছু করলেন না। শুধু নিজেদের অপকর্ম বা অপারগতাকে অন্যের অপকর্ম বা অপারগতার সাথে তুলনা করেই পুলকিত হচ্ছেন।

এগুলি নিয়ে ভাবতে ভালো লাগে না। তারপরেও ভাবতে হয় কারণ, দেশটাতো আমাদের জন্মভূমি, এবং আমার কিছু খুব কাছের লোকজন ওখানে থাকেন এবং থাকবেন, তাই মাঝে মাঝে এই বিলাপ পাড়া। আর কি !
সবাই ভালো থাকবেন।
ফররুখ আহমেদ এর কবিতার একটি লাইন দিয়ে শেষ করছি।
“রাত পোহাবার কত দেরি পাঞ্জেরী”

মুকুল

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন