আবেগপ্রবণ জাতি হিসেবে আমাদের আলাদা একটি পরিচিতি  আছে। এই আবেগের পরিমান বেড়ে যায় কয়েকগুন, বিষয়বস্তু যখন আবর্তিত হয় জন্মভূমি, ধর্ম এবং রাজনীতি নিয়ে। টরোন্টোতে সপ্তাহান্তের “দাওয়াতে” খাওয়া দাওয়ার পূর্বে এবং পরে এই বিষয়গুলো নিয়ে চায়ের কাপে ‘তুফান’ না উঠলেও অন্তত ‘বৃষ্টি’ যে হয় তাতে কোনো সন্দেহ নেই।  অনেককেই আফসোস করতে দেখি এজন্য যে কানাডার জনপ্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে ভারতীয়, পাকিস্তানী, শ্রীলংকা এমনকি আফগানিস্তানের জনপ্রতিনিধিত্বও একেবারে কম নয়। সেই তুলনায় বাংলাদেশিদের প্রতিনিধিত্ব শূণ্যের কোটায়। নিতান্তই যৌক্তিক আক্ষেপ। একই সাথে এটিও ভেবে দেখা দরকার প্রায় লক্ষাধিক বাংলাদেশীর (সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই।  কানাডার বাংলাদেশ হাই কমিশনের তথ্য অনুসারে একলক্ষ) বসবাস কানাডায় হলেও কেন এখন পর্যন্ত পৌর, প্রাদেশিক বা ফেডারেল পর্যায়ে একজন বাংলাদেশী জনপ্রতিনিধিও আমরা নির্বাচিত করতে পারিনি। অথচ আমাদের কমিউনিটিতে সত্যিকার অর্থেই জনপ্রশাসনে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো যোগ্য মানুষ যথেষ্টই আছেন। বুঝা কঠিন এটি কি আমাদের উদ্যোগের অভাব না চিন্তার দৈনতা। মজার বিষয় হচ্ছে বাংলাদেশে দলীয় রাজনীতির আকাশে বৃষ্টি হলে আমরা টরোন্টোর রাস্তায় ছাতা ধরি।  বাংলাদেশের দলীয় রাজনীতির শাখা, প্রশাখা, উপশাখা নিয়ে ঈদ পুনর্মিলনী. ইফতার পার্টি করি। এতে দোষের কিছু নেই। কিন্তু একই চিন্তা, আবেগ, উদ্যোগ ও সম্পৃক্ততা এখানে নিয়োজিত করলে এতদিনে কানাডার মূলধারার রাজনীতিতে অনেক বাংলাদেশিকেই দেখা যেত। দুঃখজনক হলেও বাস্তবতা হচ্ছে এখন পর্যন্ত নির্বাচিত একজন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত জনপ্রতিনিধিও আমাদের নেই। মূলধারার রাজনীতিতে বাংলাদেশীদের অংশগ্রহণের এই খরা ঘুচে যেতে পারে আগামী সাতই জুন, অন্টারিওর প্রাদেশিক সংসদীয় নির্বাচনে। অমিত সম্ভাবনা জাগিয়ে তুলেছেন টরোন্টোতে বসবাসরত বাংলাদেশের মেয়ে ডলি বেগম।

আর দশটি অভিবাসী পরিবারের মতো ডলি বেগমও কানাডায় এসেছিলেন তার বাবা মার  সাথে। ফলে অভিবাসী জীবনের টানাপোড়েন, প্রতিকূলতা সম্পর্কে তিনি বাস্তব অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ। অদম্য মনোবল আর একাগ্রতা নিয়ে সব প্রতিকূলতা দুহাতে ঠেলে তিনি সগৌরবে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছেন নিজের চেষ্টায়। নিজেকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করেছেন ইউনিভার্সিটি অফ টরন্টো এবং ইউনিভার্সিটি কলেজ, লন্ডন, ইংল্যান্ড  থেকে। বিচরণ করেছেন টরোন্টোর সামাজিক উন্নয়নের বিভিন্ন শাখা প্রশাখায়। সফল নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন জনকল্যানমুখী বিভিন্ন অর্থ সামাজিক উদ্যোগে। নেতৃত্বের যোগ্যতা, জননীতি (Public Policy) পরিবর্তন সংক্রান্ত উদ্যোগের সাথে সম্পৃক্ত থাকার অভিজ্ঞতা, সাধারণ নাগরিকদের হয়ে এডভোকেসি করার দক্ষতা, এসব বিরল গুনের সংমিশ্রণ রয়েছে ডলি বেগমের মধ্যে। এমন একজন যোগ্য মানুষকে অন্টারিওর প্রাদেশিক সংসদে দাঁড়িয়ে আমাদের পক্ষে কথা বলার সুযোগ না দেয়ার কোন কারণ আমার জানা নেই।   আসুন আঞ্চলিকতা, ধর্ম, ব্যক্তিগত দলীয় অবস্থান ভুলে সবচাইতে যোগ্য প্রার্থী এবং বাংলাদেশী হিসেবে সবাই ডলি বেগমের পাশে দাঁড়াই, যে যার জায়গা থেকে তাকে সহায়তার চেষ্টা করি। এর মধ্য দিয়েই কানাডার রাজনীতিতে বাংলাদেশী কানাডিয়ান এবং কানাডিয়ান বাংলাদেশিদের নুতন দিগন্ত উন্মোচিত হবে, সৃষ্টি হবে নুতন ইতিহাস। গৌরবময় এরখম একটি মুহূর্তের জন্য আমরা অপেক্ষা করছি কয়েক দশক ধরে।

 

সৈয়দ মসিউল হাসান

টরন্টো থেকে

 

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন