গত শনিবার ২৭ এপ্রিল কানাডায় বাংলাদেশীদের অভিবাসন ও অভিবাসী জীবন নিয়ে মাহমুদা নাসরিনের লেখা ‘কানাডা-বাংলাদেশ ডায়াস্পোরা জীবন’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হলো, টরন্টোর বাংলাদেশী অধ্যুষিত এলাকা ডানফোর্থের “বাংলাদেশ সেন্টার এন্ড কমিউনিটি সার্ভিসেস” এর মিলনায়তনে। টরন্টোর বাংলাদেশ কমুনিটির বিভিন্ন পেশার উল্লোখযোগ্য সংখ্যক দর্শকের উপস্থিতিতে হলটি পূর্ণ ছিল। এবছর ঢাকায় ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২৪’-এ গ্রন্থটি প্রকাশিত হয় ।
মাহমুদা নাসরিন সাবেক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও বর্তমানে কানাডায় বসবাসকারী সনদপ্রাপ্ত অভিবাসন পরামর্শক হিসাবে দীর্ঘদিন সাফল্য ও সুখ্যাতির সাথে কাজ করছেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে কানাডা ও বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত বাজানো হয়। স্বাগত ভাষণ দিয়ে অনুষ্ঠানটি উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট রিয়ালেটর আমিনুল ইসলাম। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সামিনা নাসরিন চৌধুরী। অনুষ্ঠানের এক পর্বে লেখিকা মাহমুদা নাসরিন বইটির বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন এবং পাঠকের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন কানাডার হাউস অব কমন্স সদস্য সালমা জাহিদ এমপি, অন্টারিও প্রাদেশি আইনসভার সদস্য অ্যান্ড্রিয়া হ্যাজেল ও টরন্টো সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিল পার্থি কান্ডাভেল। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ডক্টর জসিম উদ্দিন আহমদ।
বইটি পাঠক-মূল্যায়ন পর্বের আলোচনা পর্বে অংশগ্রহণ করেন, মোসাম্মাদ বদরুন্নেসা সোশ্যাল ওয়ার্কার , সিটি অফ টরন্টো। নতুন দেশ পত্রিকার প্রধান সম্পাদক শওগাত আলী সাগর এবং বেতার ও টেলিভিশনের সম্প্রচারক সৈকত রুশদী।
বইটি ইতিমধ্যেই পাঠকদের মাঝে ব্যাপক সমাদৃত হয়েছে। বইটি সংগ্রহ করতে চাইলে মাহমুদা নাসরিনের ডানফোর্থ অফিসে (CanBangla Immigration Services ,3098 Danforth Ave) যোগাযোগ করুন।
লেখিকার পরিচিতি-
মাহমুদা নাসরিন, প্রিন্সিপাল কনসালটেন্ট, ক্যানবাংলা ইমিগ্র্যাশন সার্ভিসেস, আরসিআইসি, এন্ড কমিশনের অফ ওৎস, টরেন্টো, কানাডা। মাহমুদা নাসরিন টিই এসএল অন্টারিও সার্টিফাইড ইংলিশ টিচার, অন্টারিও সার্টিফাইড সোশ্যাল সার্ভিস ওয়ার্কার, এবং টরন্টো ভিত্তিক ইউটার্ন্স কমিউনিটি অর্গানাইজেশন এবং বাংলাদেশ অর্গানাইজেশন অফ কানাডার পরিচালক।
মাহমুদা নাসরিনের জন্ম যশোরের খড়কিতে নানার বাড়িতে। নানা সোবহান বকশ ছিলেন তৎকালীন যশোর জেলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক। বাইশ দিন বয়সে বাবা জনাব মুহাম্মদ আক্কাস আলী যিনি ইস্ট পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসএ কর্মরত ছিলেন তাঁর কর্মস্থল নওগাঁ চলে যান। বাবার কর্মসূত্রে মাহমুদা নাসরিন বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় স্কুলে পড়াশুনা করেন। সাতক্ষীরা সরকারী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ থেকে এইসএসসি পাশ করেন। মাহমুদা নাসরিনের মা হোসনেআরা বেগম নজরুলনগর গার্লস হাই স্কুল, খুলনার প্রধান শিক্ষিকা হিসাবে অবসর গ্রহণ করেন। মাহমুদা নাসরিন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স এবং মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে মাহমুদা নাসরিন বাংলাদেশ টেলিভিশনে নিয়মিত বিতর্ক, উপস্থিত বক্তৃতা এবং সংবাদ পাঠ করতেন। মাহমুদা নাসরিনের চাকরী জীবন শুরু হয় ময়মনসিং গার্লস ক্যাডেট কলেজে ইংরেজী বিষয়ের প্রভাষিকা হিসাবে। পরবর্তীতে তিনি ষোড়শ বিসিএসের মাধ্যমে শিক্ষা ক্যাডারে যোগদান করেন। মাগুরা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, বিএল বিশ্ববিদ্যালয়-দৌলতপুর খুলনা, সোহরাওয়ার্দী কলেজ লক্ষীবাজার, ঢাকাতে ইংরেজি বিষয়ে শিক্ষকতা করেন। পরবর্তীতে অষ্টাদশ বিসিএসের মাধ্যমে ইনফরমেশন ক্যাডারে ঢাকাতে এপয়েন্টমেন্ট এবং অস্ট্রেলিয়া সরকার এবং বাংলাদেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অস্ট্রেলিয়াতে ইংরেজি ভাষা শিক্ষক ট্রেনিং এ এম. এ. করার বৃত্তি একই সময়ে পান। তখন ইনফরমেশন ক্যাডারে জয়েন না করে অস্ট্রেলিয়াতে স্বামী ও কন্যাসহ বৃত্তি নিয়ে পড়তে চলে যান। তিনি অস্ট্রেলিয়ান এবং বাংলাদেশের বৃত্তি নিয়ে ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজি, সিডনি, অস্ট্রেলিয়া থেকে ইংলিশ টিচার ট্রেনিং টেসল এ দ্বিতীয় মাস্টার্স করেন। তিনি ইংল্যান্ড থেকে ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজে টিচিং এ ডিপ্লোমা করেন। তিনি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ এবং কিং খালিদ বিশ্ববিদ্যালয়, সৌদি আরবে ইংরেজির অধ্যাপিকা হিসাবে কাজ করেন। ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ টিচিং, ল্যাঙ্গুয়েজ পলিসি এন্ড প্ল্যানিং, সেকেন্ড ল্যাঙ্গুয়েজ একুইজিশন, ইংলিশ ল্যাংগুয়েজ টিচিং মেথডোলজি নিয়ে মাহমুদা নাসরিনের একাডেমিক প্রকাশনা বাংলাদেশ, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া,সাউথ আফ্রিকা, সৌদি আরব থেকে বিভিন্ন একাডেমিক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। দুই হাজার দশ সালে কানাডায় ইমিগ্রেশন নিয়ে আসার পরে কানাডার ইমিগ্রেশন আইনে নিয়ে পড়াশুনা করেন এবং কানাডার ইমিগ্রেশন কনসালটেন্ট হিসাবে কাজ শুরু করেন। তিনি ক্যানবাংলা ইমিগ্রেশন সার্ভিসেস, টরেন্টোর কর্ণধার। ক্যানবাংলা ইমিগ্রেশন কানাডিয়ান ভিসা এবং ইমিগ্রেশনের সকল ক্ষেত্রেই সহায়তা প্রদান করে থাকে। তিনি কানাডিয়ান ইমিগ্রেশন নিয়ে লেখালেখিও করেন। এই বইটিতে অনেক লেখাই কানাডিয়ান ভিসা এবং ইমিগ্র্যাশন সংক্রান্ত। মাহমুদা নাসরিনের সঙ্গে ইমেইলে যোগাযোগ করতে পারেন। [email protected]
ব্যক্তিগত জীবনে মাহমুদা নাসরিন বিবাহিতা। তাঁর স্বামী সৈয়দ আমিনুল ইসলাম বর্তমানে টরেন্টোতে রিয়েল স্টেট ব্যবসায়ে অত্যন্ত সুনাম অর্জন করেছেন। এছাড়াও তিনি কানাডার মূলধারার রাজনীতির সঙ্গে অত্যন্ত সক্রিয় ভাবে জড়িত। তিনি বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এন্ড কলেজ রিয়াদের প্রাক্তন অধ্যক্ষ এবং শহীদ স্মৃতি ডিগ্রী কলেজ বাগেরহাটের প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল ছিলেন। মাহমুদা নাসরিনের কন্যা আহেলী নিখাঁদ সেমন্তী (শ্রেয়া) এবং পুত্র সৈয়দ তাশদীদ ইসলাম (কাঙ্খিত)। শ্রেয়া ইউনিভার্সিটি অফ টরেন্টো থেকে হাই অনার্সসহ ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে বর্তমানে রজার্স এ কর্মরত। শ্রেয়ার স্বামী রায়ান আল মামুন বিজনেস এনালিস্ট হিসাবে ইন্সুরেন্স কোম্পানি, টরেন্টোতে কর্মরত। কাঙ্খিত গ্রেড টুয়েলভে আর এইচ কিং একাডেমী, টরেন্টোতে অধ্যায়নরত।
অনুষ্ঠানের শেষে লেখিকার সাথে একটি সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎকার এখানে তুলে ধরা হলো –
প্রশ্নঃ- আপনিতো বাংলাদেশে ও সৌদি আরবে দীর্ঘদিন শিক্ষাকতা করেছেন তখনও কি লেখালেখি করতেন? নাকি এটাই প্রথম? কি কারনে আপনি এই বইটি লেখার জন্য উৎসাহিত হলেন?
মাহমুদা নাসরিনঃ-ধন্যবাদ হাফিজ ভাই পুরোনো দিনের কথা মনে করিয়ে দেয়ার জন্যে। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় এবং চাকরির শুরুতেও বাংলাদেশের নামকরা সব বাংলা পত্রিকায় লিখতাম। তারপর আমি আসলে বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য পড়াতাম। আর তাই আমার ইংরেজি ভাষাতত্ত্ব এবং ইংরেজি শিক্ষক প্রশিক্ষণ নিয়ে ইংরেজিতেই গবেষণা এবং একাডেমিক প্রকাশনা নিয়ে বেশি ব্যস্ত থাকতে হয়েছে। আমার একাডেমিক পাবলিকেশন্স বাংলাদেশ, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, সাউথ আফ্রিকা এবং সৌদি আরবের বিভিন্ন একাডেমিক জার্নালে বেরিয়েছে। কিন্তু তাই বলে আমার মাতৃ ভাষা বাংলায় লেখা থেমে থাকেনি- আমার ডায়রীতে বাংলা লেখা চলতো যদিও আবার প্রকাশিত হওয়া শুরু করেছে টরেন্টোতে এসে।
আমার এই বইটির লেখাগুলো মূলত ২০১৪ সাল থেকে শুরু হয়েছে। এই লেখাগুলো প্রথম আলো, আপনাদের পরবাসী ব্লগ , প্রবাসী কণ্ঠ, বাংলা কাগজ, বাংলা মেইল সহ বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় দীর্ঘদিন ধরে লেখাগুলো প্রকাশিত হয়েছে। লেখাগুলো আসলে লেখা হয়েছে এক ধরণের দায়বদ্ধতা থেকে। রাসকিন যেমন বলেছিলেন- মানুষ দায়বদ্ধ স্রষ্টার কাছে, পিতামাতার কাছে এবং সমগ্র মানবজাতির কাছে। আমি মনে করি আমরা যারা লিখি, আমরাও একধরণের দায়বদ্ধতা থেকে লিখি। আর তাই আমার লেখাগুলো আমার পেশা, আমার অভিবাসী জীবন, মাতৃভূমি বাংলাদেশের প্রতি আমার মমত্ব এসব নিয়েই আবর্তিত।
প্রশ্নঃ- মূলত কোন বিষয়টি এই বইটিতে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন এবং কেন ?
মাহমুদা নাসরিনঃ-আমি ক্যানবাংলা ইমিগ্রেশনের প্রিন্সিপাল কনসালটেন্ট। পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ কানাডায় সমগ্র বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বেড়াতে, পড়তে, কাজ করতে, স্কীলড ইমিগ্রান্ট হিসাবে , ফ্যামিলি স্পনসরশিপ নিয়ে, শরণার্থী হিসাবে, বিজনেস ইমিগ্রান্ট হিসাবে আসতে চায়। আর তাঁরা জব অফারের নামে, ইনভাইটেশন লেটার এর নামে, স্পন্সরশিপের নামে, বিজনেস ইমিগ্রেশনের নামে বিভিন্ন ধরণের প্রতারণার শিকার হয়। তাঁরা যখন আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে, তখন আমি একধরণের দায়বদ্ধতা থেকে কানাডার ভিসা এবং ইমিগ্র্যাশন পলিসি নিয়ে লেখালেখি করেছি। আমার উদ্দেশ্য ছিল সহজ কথায় প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল কানাডার ভিসা এবং ইমিগ্রেশনের নিয়ম কানুন গুলো সকলকে জানিয়ে দেয়া।
কানাডার ভিসা এবং ইমিগ্র্যাশন খুব নিয়মতান্ত্রিক একটি দীর্ঘ মেয়াদী প্রক্রিয়া। বিশাল দেশ কানাডায় জনসংখ্যা যতই কম থাকুক না কেন কানাডায় আসতে হলে নিয়ম মাফিক যোগ্য হয়েই আসতে হবে। তাই এইবইটিতে চেষ্টা করেছি কিভাবে কানাডাতে যোগ্য হয়েই আসা যায়।
এছাড়া কানাডায় আমাদের জীবন এবং বাস্তবতা, বাংলা ভাষা এবং সংস্কৃতি ধরে রাখার আমাদের যে আকুলতা এসব ই ফুটে উঠেছে আমার এই বইটির সব লেখা গুলোতে। বাংলাদেশে কর্মক্ষেত্রে নারীরা যেসমস্ত প্রতিকূলতার মুখে পড়ে আর কানাডায় নারীদের যেসব সুযোগ সুবিধা দেয়া হয় এসব আমার লেখায় ফুটে উঠেছে।
প্রশ্নঃ- আগামীতে আরো নতুন কোনো বিষয় নিয়ে লেখার ইচ্ছা আছে কি?
মাহমুদা নাসরিনঃ-এই বইটি বের হওয়ার পর বাংলাদেশ এবং কানাডায় সবাই যেভাবে বইটির প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করেছেন তাতে আমি ধন্য এবং কৃতজ্ঞ। আপনাদের ভালোবাসা এবং ভালোলাগা আমাকে আরো বই লেখার প্রেরণা জুগিয়েছে। আশা করি আপনাদের দোয়ায় আবারো বই লিখতে পারবো এবং আরো ভালো বই লিখতে পারবো।
(অনুষ্ঠানের ছবির এলবামের জন্য আমাদের গ্রুপ ফেসবুক পেজ https://www.facebook.com/groups/parobashiblog ভিসিট করুন)