গত ২১শে অক্টোবর কানাডায় হয়ে গেল ফেডারেল ইলেকশন। তার আগের সপ্তাহে এডভান্স পোলিং এ ভোট হয়েছে যারা ওই দিন ভোট দিতে পারবেন না বা ডিউটি আছে।
এবার প্রথম এই ইলেকশনে রেজিষ্ট্রেশন অফিসার হিসেবে কাজ করেছি। তার আগে একদিন ওরিয়েন্টেশন হয়েছে পুরা ইলেকশন সিস্টেম আর কার কি দায়িত্ব সেটার উপর। information officer, Registration officer, Dro, polling officer আর সবার কাজের দায়িত্ব যার উপর CPS, আর তাদের কাজ সুষ্ঠ ভাবে পরিচালনা করার দায়িত্বে Returning officer.
প্রথমেই যেটা বলা হলো নির্বাচন পরিচালনায় যারা নিয়োজিত তারা কোন পার্টিকে রিপ্রেজেন্ট করে এই রং এর কোন পোষাক পরতে পারবে না। সুতরাং সবাই সাদা পোষাক পরাই ভালো বা অন্য কোন কালার। লাল,নীল, কমলা, ডিপ নীল সবুজ বাদে।১৪/১৬ ঘন্টা ডিউটি করতে হবে, নির্দিষ্ট কোন লাঞ্চ টাইম নাই, কিন্তু মুখে হাসি থাকতেই হবে করতে হবে সবার সাথে সুন্দর ব্যবহার। No age, No Race সবাই সমান।
ভোট গ্রহণ শুরু হবার ২ ঘন্টা আগে আমরা কেন্দ্রে হাজির হয়ে নিজেদের টেবিল সেট করলাম CPS কতৃক প্রদত্ত গাইড লাইন ও প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র দিয়ে। পোলিংঅফিসার তাদের টেবিল সেট করলেন আমাদের সামনে। ঢোকার পথেই দাড়াবেন ইনফরমেশন অফিসার যারা ভোটার আইডেন্টি কার্ড দেখে নির্দিষ্ট পোলিং বুথ নাম্বার অনুযায়ী পাঠিয়ে দিচ্ছেন। আর যাদের ভোটার আইডেন্টি কার্ড নাই বা নতুন ভোটার হবে বা তাদের ভোট কোন কেন্দ্রে দিবেন তাদের সমস্যার সমাধান করবেন রেজিষ্ট্রেশন অফিসার। আর যেকোনো প্রব্লেম ফেস করার জন্য সেন্ট্রাল পুল অফিসার বা CPS তো আছেন ই।
এখানে ভোট হয় সব স্কুলের জিমন্যাস্টিতে বিশাল বড় জিম। আর একদম স্কুলের সামনে থেকে সাইন দেখিয়ে ওয়েলকাম জানান ইনফরমেশন অফিসাররা। যাতে কোন ভোটারের অসুবিধা না হয়।
ভোট শুরু হলো ভোটাররা ভোট দিচ্ছেন। টেবিলের পিছনে হার্ড বোর্ড দিয়ে আটকানো খুব বেশী হলে তিন ফুট কাভার করা। সেখানে ব্যালটে সীল দিয়ে, পোলিং অফিসারদের হাতে দিচ্ছেন। তারা নাম্বারটা ছিড়ে রেখে ব্যালট ভোটারের হাতে দিয়ে দিচ্ছেন, তখন ভোটার কাগজের বাক্সের মধ্যে ব্যালট ফেলে যাচ্ছেন। আর ওই নাম্বার গুলো একটা প্লাস্টিক সি থ্রু ব্যাগে রাখছেন। দু’জন করে পোলিং অফিসার এক একটা টেবিলে। নির্দিষ্ট বুথেই ভোট দিতে হবে, সিরিয়াল অনুযায়ী। ৫ টা পোলিং বুথ থাকে সাধারণত।
প্রতি ঘন্টায় কত গুলোভোট পরলো সেগুলো বুথ নাম্বার অনুযায়ী লিস্ট ফাইলে রাখছেন DRO যাতে ক্যান্ডিডেট এর রিপ্রেজেনটেটিভ রা ছবি তুলে নিতে পারেন। তারাই শুধু সেল ফোন ইউজ করতে পারবেন অন্য কেউ না। তারা বসতে পারবেন রেজিষ্ট্রেশন অফিসারদের পাশে কিন্তু লিস্ট চাইতে পারবেন না।
যত গুলো ব্যালট নাম্বার আছে সি থ্রু ব্যাগে ঠিক ততগুলো ভোট ই বাক্সে থাকবে।
ভোট যখন শেষ তখন পোলিং অফিসাররা কাগজের বাক্স থেকে ব্যালট গুলো প্যাকেটে ভরে সীল করে নির্বাচন কমিশনে নিয়ে গেলেন। সেখানে ভোট গগনা হলো। সাথে ক্যান্ডিডেটের রিপ্রেজেনটেটিভরা যেতে পারে।
প্রতিটি পদক্ষেপ আমি অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে অনূধাবন করছিলাম। একটা দেশ সুন্দর হবে না কেন? নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ স্বাধীন। কারোও সাধ্য নাই এখানে এতটুকু প্রভাব খাটানোর। নাই কোন আর্মি,পুলিশ পাহাড়া। নো মাসলম্যান। যত বড় ক্ষমতাশালী হোক লাইনে দাড়িয়ে ভোট দিয়ে চলে যাবে, কোন এক্সট্রা খাতির নাই।
জনগন তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করে, আর নির্বাচিত প্রতিনিধি জনগনকে জবাবদিহি করতে বাধ্য। একটা দেশের বিচার বিভাগ আর নির্বাচন কমিশন স্বাধীন ভাবে কাজ করার সুযোগ পেলে সেই দেশ হবে সভ্য আর সভ্যতা, সৌন্দর্য্যে ভরে যাবে দেশের প্রতিটি কোনা।
বাংলাদেশের জন্য সেই পথ আর কতদূর!!