সকাল বেলায় বাংলাদেশে ক্রিকেট ধর্মঘটের কি হলো জানার জন্য অধীর আগ্রহ নিয়ে অনলাইনে বাংলাদেশের পত্রিকা খুলেই চোখ গেলো শিশু জান্নাতের নির্মম মৃত্যুর খবর। আরোও পড়লাম সৌদি আরব প্রবাসী আবিরন এর মৃত্যুর খবর। আমরা যারা প্রবাসে বসবাস করি এসব খবর আমাদের হৃদয়ে নাড়া দেয়, আমাদেরকে ব্যাথিত করে। ফেসবুকের সুবিধা থাকায় নিজের মনের কথা, প্রানভরে লিখি, নিজের আত্মতুষ্টির জন্য পাশাপাশি আমাদের মূল্যবোধকে আরো কিছুটা শানিত করার জন্য। মনে সুক্ষ একটি ভোঁতা অনুভূতি থেকে যায় একটি সুন্দর মূল্যবোধের চর্চার ক্ষেত্র যদি আমাদের পরের প্রজন্মদের জন্য করে যেতে পারি ওঁরা হয়তো এই জাতিকে ঠিক ঠিক একদিন ঘষে মেজে চক চকে করতে সক্ষম হবে।
বাংলা সাহিত্যে স্বদেশ নিয়ে, মূল্যবোধ নিয়ে এক ধরণের প্রচেষ্টা আমরা অনেক আগেও দেখেছি. হাইস্কুলে থাকতে পাঠ্য বইয়ে দিন দীনবন্ধু রচিত নীলদর্পণ পড়েছি, নজরুলের কারার ঐ লৌহকপাট, শিকল-পরা ছল গান গেয়ে উজ্জীবিত হয়েছি. আমরা এও দেখেছি রবি ঠাকুরের ‘জুতা আবিষ্কার অথবা সত্যজিৎ রায় পরিচালিত ‘হীরক রাজার দেশে’ । আমাদের প্রচলিত রাষ্ট্রনীতিকে কটাক্ষ করে অনেক কিছু বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে। আমার আজকের এই লেখার উদ্দেশ্য হচ্ছে আমাদের ব্যক্তি মূল্যবোধকে আরো জাগিয়ে তোলা। আমার ধারণা, আত্মশুদ্ধির মধ্য দিয়ে একদিন এই একেকটি পরিশোধিত ‘আমি ‘ মিলে একটি রুচিশীল উন্নত জাতি নির্মিত হবে।
আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করা হলো, গৃহকর্তী দ্বারা নির্যাতিত শিশু জান্নাতের নির্মম মৃত্যু হলো (গৃহকর্তীকে এরেষ্ট করা হয়েছে অফিসিয়ালি এখনো উনার সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হয়নি ), সৌদিআরব প্রবাসী আবিরন লাশ হয়ে ঘরে ফিরলো। খেয়াল করে দেখুন,এই প্রতিটি হত্যাকারী এক বা একধিক মানুষ। আর সব মানুষের মতো এদের হাত, পা, মাথা, মস্তিষ্ক ইত্যাদি আছে। নাই শুধু মূল্যবোধ। আমাদেরমতো এদেরও আছে বাবা, মা, ভাই/বোন , পরিবার। কিন্তু, পরিবারের মধ্যে হয়তো মূল্যবোধের প্রাকটিস নেই। আমাদের প্রত্যেক বাবা/মায়ের সোচ্চার হতে হবে ঘরে-বাইরে আমরা ও আমাদের বাচ্চারা যেন সঠিক মূল্যবোধের পরিচয় দেয় সে দিকে খেয়াল করার এখনই সময়।
আমি এই প্রবাসে বসে হতবাক হয়ে লক্ষো করেছি, আমরা অনেকেই এমনকি ফেসবুকে কেউ যখন কোনো পোষ্ট করেন ব্যাক্তিগতভাবে আক্রমণকরে অনেকে কুরুচি সম্পন্ন মন্তব্য করেন। এটা কোন ধরণের মূল্যবোধের পরিচয়? আপনি সমালোচনা করবেন, গালি গালাজ দিবেন সে খেত্রেও অনেক রুচিশীল শব্দ রয়েছে,, এগুলি প্রয়োগ করুন। আপনি একবারও খেয়াল করেছেন আপনার কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য, কথা, ব্যাবহার আপনাকে যেমন ছোট করে, আপনার পরিবারকেও ছোট করে. আপনার মা.বাবা বা পরিবারকে ছোট করার অধিকার আপনাকে দেয়ও হয়নি।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যদি বলি, বাসা-বাড়ির কাজের মানুষের উপর অত্যাচার আগেও হয়েছে, এখনো হচ্ছে. চুলুন একটু দেখা যাক আমাদের মূল্যবোধের খতিয়ান। আমরা, এই কাজের মানুষদের মানুষ হিসাবে কতটুকু ভাবতে শিখেছি। আমরা চোখের সামনে দেখেছি যাদের উপর নির্মম অত্যাচার। এই কাজের মানুষেরা এরা কখনো বা শিশু, কোনো, প্রাপ্ত বয়স্ক, কখনো বৃদ্ধ/বৃদ্ধা.এরা সকাল থেকে রাত অবধি খেটে মরেন, আর এনাদের খাওয়া-দাওয়ার ব্যাবস্থা করা হয় সবার শেষে, রান্নার ঘরের এক কোনায় মাটিতে বসে। রাতে ঘুমানোর জন্য একটি ছেঁড়া কাঁথা, একটি নোংরা বালিশ ও শতছিন্ন মশারি. এই হচ্ছে আমাদের মূল্যবোধ. ভাগ্যগুনে প্রবাসে এসেছিলাম বলে এখানে এসে দেখলাম বাংলাদেশে যাদেরকে কাজের মানুষ বলা হয় এখানে এধরণের কাজ করতে স্কুল/কলেজের নির্দিষ্ট কোর্স সম্পন্ন শেষে লাইসেন্স থাকতে হয়. এনাদেরকে বলা হয় পার্সোনাল সাপোর্ট ওয়ার্কার।এখানে দেখেছি অনেক উচ্চ ঘরের শিক্ষিত পরিবারেও অনেকে এরকম পার্সোনাল সাপোর্ট ওয়ার্কার হিসাবে কোনো প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বাসা বাড়িতে কাজ করছেন। বেতন নেহায়েত কম না. কম পক্ষে ঘন্টায় ২৫/৩০ ডলার. এখানে কোনো পার্সোনাল সাপোর্ট ওয়ার্কার-এর উপর কোনো নির্যাতন হয়েছে এরকম খবর এখনো শুনিনি. এর কারণ অবশ্য এখানকার মানুষের মূল্যবোধ এবং আইনের প্রয়োগ।
আমাদের মূল্যবোধকে আরো শানিত করতে হবে, বাচ্চাদেরকে শেখাতে হবে যেকোনো পেষার, যেকোনো ধর্মের, যেকোনো বয়সের সকল মানুষকে সম্মান করার কথা. বাচ্চাদেরকে শেখাতে হবে পাপীকে না, পাপকে ঘৃণা করার কথা ,বাচ্চাদেরকে শেখাতে হবে জীবনের লক্ষ্য অর্থ না, মনুষত্ব অর্জন।
‘আমরা যদি না জাগি মা কেমনে সকাল হবে?
তোমার ছেলে উঠলে গো মা রাত পোহাবে তবে!’–…….” কাজী নজরুল ইসলাম.