টরন্টো থেকে:-

sleep1

বন্ধুবর মনিরুজ্জামানের তুতিয়ার রহমানকে নিয়ে গতকালকের  লেখাটি পড়লাম।

মনিরুজ্জামান আমার  ছোট বেলার  বন্ধু। পরবর্তীতে আমার চাচাতো বোনকে বিয়ে করার সুবাদে সে আমার ভগ্নিপতীও বটে। ডাবোল রিলেশন যাকে বলে।

তার সাথে আমার প্রথম দেখা হয়েছিল ১৯৭১ এর স্বাধীনতার পর পর।যশোর শহরে। কর্মসূত্রে আমাদের  দুজনের বাবা ই পুলিশ  ডিপার্টমেন্টে  চাকরি  করতেন। তখন ওনাদের দুজনের কর্মস্থলই যশোর কোতয়ালী  থানা। মনির ছিল আমাদের প্রতিবেসী,  সেই  থাকে বন্ধুত্ব। দীর্ঘ   ৪৫/৪৬ বছরের কথা। সম্ভাবত ২/৩ বছর একসাথে ছিলাম , তারপর দুজনের বাবা দুই দিকে বদলি হয়েগল। তারপরেও মনিরের সাথে আমার বিভিন্ন সময় দেখা হতো বিভিন্ন স্থানে।এই ভাবে কেটে গেল অনেক  বছর।

এর পরে আবার দেখা বিশ্ববিদ্যালয়ের জহুরুল হক হলের ২৭০ নম্বর কক্ষে। বেশ কিছুদিন আমরা একসাথে ছিলাম। সেই থাকাটা ছিল অন্যরকম, তখন দুজনাই  তরুণ।  একটা ব্যাপারে  আমাদের খুব মিল  ছিলো , আমরা সবার নাম বিকৃত করতাম। হয়তো এইটা আমাদের বিকৃত চিন্তা ভাবনা ছিলো। কিন্তু তবুও  আমরা এইটা করতে খুব পছন্দ করতাম। আনন্দও  ও পেতাম। সেই উপাখ্যান নিয়েই  আজকের স্মৄতিচারন।

এই নাম পরিবর্তনের একটা উদহারণ এখানে দিতে চাই , একজনের নাম হয়ে গেল “গু” । তার আসল নাম ছিল “মাহবুব”। প্রথমে “মাহবুব” হয়ে গেলো “মাহাবুবুর রহমান গুই” (সেই সময়কার বাংলা সিনেমার ফাইটার) , সেখান থেকে শুধু “গুই”। তারপরে  “গুই” থেকে “গু”। আমরা তাকে ওই নামই ডাকতাম । এই  ভাবে ছিপু হয়ে গালো “কোব্বে” । সোনায়েত হয়ে গেলো “কাপায়েত “… আরো অনেক নাম “হিনো “, “ম্যাক” ,গিদ্দোয়া”, “মিয়া কিচা”, “সে লোক”.. আরো অনেক নাম- এই স্বল্প পরিসরে তা বলে শেষ করা যাবেনা। জানিনা এই  বিকৃতির জন্য কত পাপ কামিয়েছি জীবনে।…!!!

এর মাঝে আছে কিছু বিচিত্র চরিত্রও ছিলো।  তাদের মধ্যেএকজন “গোলাম এন আলম সেন্টু ভাই”।  আমদের খাতায় তার নাম হয়েগালো  “গুল গুল  এন  আলম সেন্টু ভাই” ।  নামটা তার শারীরিক গঠনের জন্যেই রাখা হয়েছিল ।  উনি যদিও ছাত্র ছিলেন না। থাকতেন বরিশাল এ । মাঝে মাঝে মন্ত্রী মিনিষ্টারদের তোষামোদের কাজে নিজের মক্কেলদের সাথে ঢাকা আসতেন তদবিরের  কাজে ।  এইটা ছিল উনার বাড়তি  আযের উত্স । থাকার খরচ বাচানোর জন্য উনি আমাদের রুমে থাকতেন। কারণ উনি আমাদের পূর্ব পরিচিত। দিনের বেলা উনি বেশীর ভাগ সময় বাইরে থাকতেন, শুধু রাত্রে রুমে আসতেন,ঘুমোবার জন্য।  আমদের খুব একটা অসুবিধা হতো না। তা ছাড়া বাড়তি সুযোগ হিসাবে আমরা উনাকে “সাইজ” করে খাওয়া-দাওয়া ও সিনেমার ব্যবস্থাও কতে নিতাম।   ভালোই চলত আমদের ব্যবসা। অবশ্য কিছু অসুবিধাও ছিল। ওনার শারীরিক গঠনার কারণে ওনার সাথে কেউ শেয়ার করে ঘুমাতে চাইতো না। ওনার একার জন্য একটা বিছানা দরকার হতো। আরও একটা কারণ ছিল ওনার ঘামের গন্ধ। তাই উনি আসলে আমি আর মনির নিচে ঘুমাতাম ।অবশ্য এই  নিচে ঘুমানোর পিছনে আরো একটা “বদ উদ্দেশ্য”  ছিলো । সেন্টু ভাইর মোজাতে খুব বাজে গন্ধ হতো । তাই উনি রুমে ঢোকার আগে ওনার জুতা  আর মোজা বাইরে রেখে আসতেন । এবং যথা রীতি  গোসল করতেন। তবুও আমরা ওনার  মোজার অত্যাচারে অতিষ্ট  ছিলাম । মধ্য  রাতের পরে সবাই শুয়ে  পাড়তো । আমি আর মনির সেন্টু ভাইয়ের চকির পাশে নিচে শুতাম । বিশাল শরীরটা বিছানায় পড়ার  একটু পরেই ওনার নাসিকা গর্জন শুরু হতো । সেকি প্রচন্ড গর্জন ! তার মধ্যে ঘুমের আশা করা  দুস্বপ্ন মনে হতো। তবে আমরা দুজন তখোনই ঘুমাতাম না । আপেক্ষা করতাম কখন ওনার ঘুমটা একটু গাড় হবে ।

তারপর আমাদের কার্যক্রম শুরু হতো। শোবার আগে আমরা  ওনার মোজাটা  একটা লাঠির মাথায় করে এনে চকির নিচে রাখতাম। এবার  ঐ মোজা লাঠির সহায্যে ওনার নাকের কাছে রাখতাম , আর অপেক্ষা করতাম । হঠাৎ  করিয়া শরীরে প্রচন্ড ঝাকুনি দিয়া ওনার নাসিকা গর্জন বন্ধ হইয়া যাইত  আর উনি উঠিয়া বসিতেন। ঊনি উঠিয়া বসিবার আগেই  আমরা লাঠি আর মোজা চকির নিচে রাখিয়া ঘুমের ভান কোরিয়া শুইয়া  পড়িতাম। উনি অন্ধকারে  কায়েকবার  এদিক ওদিক তাকাইয়া আবারও  শুইয়া পড়িতেন । আবার শুরু হইতো আমাদের অপেক্ষার পালা। ওনার ঘুমটা একটু কড়া  হইলে আবারও একই  পদ্ধতির পুনপ্রয়োগ। মোট  ২/৩ বার চলতো এই কার্যক্রম !!!

পরের দিন সকালে উঠার পর যখন সেন্টু ভাইকে গত রাতের ঘুমের কথা জিজ্ঞাসা করতাম, তখন উনি অভিযোগ করতেন আর বলতেন গতরাতে ওনার ভালো ঘুম হয় নাই।  কারণ উনি ঘুমের মধ্যেও নাকে ওনার মোজার গন্ধ পান।  আর তখন আমরা ওনাকে ডাক্তারের শরনাপন্ন হইবার পরামর্শ দিতাম। ওনাকে বুঝাইবার চেষ্টা করিতাম যে এটি একটি মানসিক রোগ !!! উনি অকপটে আমাদের কথা বিশ্বাস করতেন। এই ভাবেই  চলতো আমাদের “সেন্টু মিশন”।

সেন্টু ভাইয়ের মতো আর একটা চরিত্র ছিল, “কেটে”- পরবর্তীতে “কেটে” কাহিনী লেখার ইচ্ছা রইলো।

2 মন্তব্য

  1. ওহ হঃ হঃ হঃ। ……তুমি ক যে সব পর্দা ফাস করে দিলে। খোদা না করুন ,,যাদের নাম লেখায় এসেছে তারা জেনো এ লেখা পড়তে পারেন। সেই সাথে আল্লাহের কাছে মাফ চাই এ ধরনের নাম বিকৃতির পাপ মুক্তির জন্য…………

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন