পার্থ, অস্ট্রেলিয়া থেকে
আজ ভোরে আমার তন্দ্রাচ্ছন্নতায় ট্রাম্প সাহেব হাজির – খুঁজতে খুঁজতে তিনি আমার সাক্ষাত পেলেন ।
বললেন, “ফারুক, তোমাকে আমার দরকার । দুষ্টু লোকেরা আমার পেছনে লাগছে – আমার ওয়েবসাইট হ্যাক করছে । মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার খরচা করি আইটি লোকজনের পেছনে কিন্তু এরা কোন কাজের না ।”
আমি বললাম, “কিন্তু স্যার আমি তো আইটি কাজ ছেড়ে দিয়েছি বছর খানেক । আমি এখন ব্যাগ বেচি ।”
“সে খবর আমি না নিয়া আসি নাই । ব্যাগ তুমি পরে বেচতে পারবা । আগে আমার সমস্যা সমাধান করে দেও ।” তাকে বেশ উদভ্রান্ত মনে হলো । “দরকার হইলে আমি তোমার সব ব্যাগ কিনে নিব, আমার সমস্যা সমাধান করিয়া দেও ।”
“স্যার ব্যাগ দিয়া আপনি কি করবেন? আপনার ব্যবসায় তো ব্যাগ লাগে না ।”
“সাগরে ফালাইয়া দিব । চল আমার সাথে ।”
তিনি আমাকে তার প্রাইভেট জেটে উঠালেন । লোক মোটে তিনজন – পাইলট, ট্রাম্প সাহেব এবং আমি । প্লেনের দুই পাশে সিটের সারি – এক সিটের সারি । দুই সারির মাঝে করিডোর । পাইলটের পেছনে ট্রাম্প সাহেব বাম সিটে, মাঝে করিডোর, ডান পাশে আমি । প্লেন উড়ে চলছে – কিন্তু বাম দিকে কাত হয়ে হেলে । ভয় ভয় লাগছে, ক্রাশ করবে না তো ! এই বিপদের মধ্যে ট্রাম্প সাহেব নিশ্চিন্তে নাক ডেকে ঘুমাচ্ছেন ।
পাইলটকে জিজ্ঞাসা করলাম, “পাইলট সাব, প্লেন কাইত হইয়া চলে ক্যান?”
পাইলট বলে “স্যারের ওজন অতি বেশি । আপনার ওজন অতিমাত্রায় কম । প্লেন ব্যালান্স হচ্ছে না ।”
কি সর্বনাশ !
“পাইলট সাব, টুল নাই? একটা টুল দিয়া স্যারকে মাঝে বসাইয়া দিলেই তো সমস্যা সমাধান !”
পাইলট রেগে যায়, “আপনার দেশের আরিচার বাস পাইছেন নাকি ! প্লেনে টুল থাকে না ।”
“টুল থাকলে কিন্তু এখন কাজে লাগতো “, আমি বললাম ।
“লাভ হইতো না । টুলে সিট্ বেল্ট লাগাইতে পারবেন না ।”, পাইলট বিজয়ের হাসি দেয় ।
পাইলটের হাসিকে নিউটনের মধ্যাকর্ষণ সূত্র দিয়ে বিলীন করে দেই – “স্যারের যা ভর (mass) আর আপনি যদি প্লেন একটু নিচ দিয়া চালান ভূমির দূরত্ব কমানোর জন্য, তাইলে যতো ঝাকিই লাগুক ওই দেহ নড়াচড়া করবে না – ঠায় টুলের উপর বসে থাকবে ।”
আমার জ্ঞানের গভীরতা দেখে পাইলট আমাকে স্যার সম্বোধন করলেন , “কিন্তু স্যার এখানে নিউটনের থার্ড ল’ অব মোশন যদি কাজ করে? তাহলে তো জার্কিং হইলে স্যারের মাথা উপরে গিয়া হিট করবে । বুঝতে পারছি না কোন সুত্রটা কাজ করবে ।”
এতো কথায় ট্রাম্প সাহেবের ঘুম ভেঙ্গে গেল । চোখ কচলাতে কচলাতে বললেন, “তোমরা কি আলাপ করছিলা?”
পাইলট জবাব দেয়, “স্যার আমেরিকান পলিটিক্স নিয়া কথা বলছিলাম । দেশটাতে সত্তর বছর ধরে কোন যোগ্য প্রেসিডেন্ট আসলো না । সব পাপেট । রুজভেল্ট আর ট্রুম্যান সাহেবের পর আর কোন নেতা আসলো না – সব পুতুল । এইবার স্যারের উপরেই আমেরিক্যানদের ভরসা ।”
“কিন্তু নিউটন সাহেবের নাম কানে আসলো যে!”
“ওহ ! নিউটন স্যারের ওই থিওরি নিয়া আলোচনা করছিলাম – For every action, there is an equal and opposite reaction.”
ট্রাম্প সাহেব প্রশংসা করলেন, “চমত্কার কথা বলে গেছেন নিউটন সাহেব । আচ্ছা নিউটন সাহেব কি লিংকন সাহেবের আগের নাকি পরের প্রেসিডেন্ট ছিলেন ?”
পাইলট সাব চুপ । আমিও চুপ । ক’সেকেন্ড বাদে পাইলট গলা পরিষ্কার করে বলে, “স্যার প্লেন ল্যান্ড করেই তথ্যটা আপনাকে দেব ।”
“ঠিক আছে । ফারুক কোন অসুবিধা হচ্ছে না তো ? একটা ঘুম দিতে পারো । বাই দ্য ওয়ে তোমার পুরা নাম কি?”
“ফারুক আহমেদ স্যার ।”
পাইলট অবাক, “স্যার, আর ইউ মোজলেম (Muslim)?”
ট্রাম্প সাহেব আরো অবাক, “তুমি কিভাবে বুঝলা সে মোজলেম? ডাটাবেজে তো ওর নাম পাওয়া যায় নাই ।”
“স্যার, আহমেদ নামের সব লোক মোজলেম ।”
“আইটি র সবগুলা অকাজের দেখছি ! মোজলেমদের একটা সঠিক ডাটাবেজ তৈয়ার করতে পারে না ! ফারুক আর ইউ মোজলেম?”
আমি বললাম, “স্যার আহমেদ নাম যে মুসলিম এইটাই আপনি জানেন না, মুসলিমদের জানা তো দূরের কথা । না জেনেই আপনার মুসলিমদের উপর রাগের কারণ কি?”
“টেল মি, আর ইউ মোজলেম?”
“ইয়েস আই’ম”
“পাইলট প্লেন থামাও, যেখানে পারো – এইটারে নামাইয়া দিয়া যাও ।”
ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে গেলো । যদি ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় ! ভয়ে তন্দ্রা ভেঙ্গে গেল । জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখি পরিষ্কার আকাশ, রোদেলা সকাল । গোলাপ বাগান নতুন কুঁড়িতে ভরে গেছে – লাল, গোলাপী, সাদা, হলুদ ।
নতুন একটা দিন পেলাম আলহামদুলিল্লাহ । লাইফ ইজ বিউটিফুল ।
ধন্যবাদ ফারুক ভাই. ট্রাম্প সাহেবের জ্ঞানের বহর, প্রগ্জ্ঞার কিছুটা প্রতিফলন আপনার লেখায় উঠে এসেছে. বরাবরের মতই উপভোগ্য লেখা. ভালো থাকুন.
ভালো ! খুবই ভালো একটা গল্প !! আশা করি এ ধরনের আরো লেখা পাঠাবেন।