হেড অফিসঃ এই যে— বলছি ক’টা বাজে তার খবর আছে? আজ শনিবার এখনো যে ট্যাবলেট এর পর্দায় ই বুঁদ হয়ে আছো?
আমিঃ আরে ক’টা বাজে এটা দেখে লাভ কি? ঘরে ঘড়ি থাকলে তো বাজবেই। তোমাকে একটা অনুরোধ করলে শুনবা?
হেড অফিসঃ কি সেটা শুনি আগে–?
আমিঃ এই মানে বলছিলাম যে, তুমি তো আর কখনো যাবে না🤭, তাই অনুগ্রহ করে যদি ঘর থেকে ঘড়ি গুলো সব ফেলে দাও!
হেড অফিসঃ তার মানে 😡?
আমিঃ মানে অতি সহজ, তাহলে প্রতি ছুটির দিন সকালে এই বাজাবাজির বিষয়টা আর থাকবে না!
হেড অফিসঃ আহ্ হা—বাজাবাজির বিষয়টা আর থাকবে না। আমার তাতে বয়েই গেলো? বাজারে না গেলে দুপুরে পোড়া মরিচ ডলে খেতে হবে বলে দিলাম।
আমিঃ পোড়া মরিচ!? আরে সে তো মহা উপাদেয়, অন্তত তোমার চেয়ে অনেক–🤭 (গলা খাকারি) ওহ্– না বলছিলাম যে একটু নিশ্চিত করে দেখ তো ওটা আছে কি-না?
হেড অফিসঃ বহুবার দেখা হয়ে গেছে, একি এক দু’বছরের কতা! এতোগুলা বছর… মুখে যতোসব বড়ো বড়ো কতা। খেতে বসলে তো সব সময় এটা নাই ওটা নাই…। ট্যাবলেট ফেলে এখন বাজারে যাও বলছি—😠
আমিঃ আরে যাচ্ছি যাচ্ছি— হাতের লেখাটা একটু শেষ করেনি?
হেড অফিসঃ কি এমন তোমার গুরুত্বপূর্ণ লেখা? তোমার ঐ ছাই ভস্ম কেউ পড়বে নাকি?
আমিঃ আরে বলছো কি তুমি? পড়বে না মানে!? এমন দুর্ধর্ষ এক প্রেম কাহিনী, একবার অনলাইনে দিলেই দেখো বাজার মাত! বুঝলে—
হেড অফিসঃ কি বললে? দুর্ধর্ষ প্রেম কাহিনী? বলি প্রেমিক কি ডাকাত না ছিনতাইকারি?
আমিঃ আরে না না তা হতে যাবে কেন? আরে প্রেমিক এতোই সিরিয়াস যে প্রেমিকার হৃদয়ে ঢুকে গিয়ে একেবারে তছনছ— নাহ্—ও তুমি বুঝবে না–!
হেড অফিসঃ ও আর আমাকে বুঝতেও হবে না, জিজ্ঞেস করছি তোমার বয়স কতো হলো?
আমিঃ আরে এই সাজ সকালে আবার বয়স নিয়া টানাটানি কেন? প্রেম কাহিনীর সাথে বয়সের কি সম্পর্ক?
হেড অফিসঃ প্রেম কাহিনীর সাথে বয়সের কি সম্পর্ক সেটাই বুঝতে পারছো না অথচ প্রেম কাহিনী লিখছো? বলিহারি–! এতো বয়স হয়ে যাওয়ার পরেও জীবনে যার একটা প্রেম ও হলো না সে লিখবে প্রেম কাহিনী! আবার বলে বাজার মাত করবে! ভীমরতি কাকে বলে—!?
আমিঃ ওহ্– এই কথা! আরে তা তুমি বুঝবে কি করে? ঐ যে– দারুণ একখান প্রেম যখন মাত্র আসছে আসছে করছে ঠিক তখনই তো এই ভাঙা কপালটায় তুমি এসে হোঁচট খেলে! তা না হলে কবে সেই রঙিন প্রেমের জমজমাট উপাখ্যান হয়ে যেতো। লোকে এখনো মুখে মুখে সে গল্প আওরাতো! হ্যাঁ—
হেড অফিসঃ আমি হোঁচট খেয়েছি?😡 তোমার চৌদ্দ পুরুষের কেউ কোথাও পূণ্যি করেছিলো দেখে এমন ব্যাটার কপালে বউ জুটেছে! তা না হলে—
আমিঃ আরে ওটাও তুমি বেমালুম ভুল বকছো! পূণ্যি না পূণ্যি না, বরং উল্টো! এই উনিশ বছর ধরে আমি সেটাই খুঁজে চলেছি বুঝলে–? আমার পূর্ব পুরুষের কে এমন পাপটা করেছিলো যে আমাকে তার সুদ সমেত–😌! বেড় করতে পারলে শুধু হাড্ডি নয়, একেবারে ফসিল খুঁড়ে এনে জিজ্ঞেস করতাম সে এমন কি করেছিলো যে আমার এখন–😌
হেড অফিসঃ আরে হয়েছে হয়েছে, শুধু শূণ্য হাঁড়ির আস্ফালন! এখন উঠে বাজারে যাও😠। আমি আবারও বলছি তোমার দ্বারা প্রেম কাহিনী হবে না। বেহুদা সময় নষ্ট। যারা এটা পারে তারা নিজেরাই প্রেম করতে পারে।
আমিঃ আবারও বেমালুম ভুল বকছো তুমি। সিনেমায় দেখোনা? নায়ক-নায়িকা যারা প্রেম করে তারা কি লেখে নাকি? লেখে তো কাহিনীকাররা।
হেড অফিসঃ জীবনটা সিনেমা না মশাই, হুঁশে আও—😠!
আমিঃ বেশ হুঁশে আছি আমি। সিনেমা না মানে? সিনেমা না হলে কি আমার জীবনে এমন ট্র্যাজেডি আসে? আমার জীবনটা নিশ্চিত এক সস্তা বাংলা কাহিনীকারের হাতে লেখা😥 ঈশ্বরের হাতে হলে এমন ট্র্যাজিক হতো না তা আমি হলফ করে বলতে পারি। সবাই বলে ঈশ্বরের অনেক দয়ার শরীর!?
হেড অফিসঃ এই যে– এতোক্ষণে তুমি একটা ঠিক কতা বললে বুঝলে? ঈশ্বর অনেক দয়ালু বলেই এই উনিশ বছর আমি এমন অকম্মার সাথে ট্যাগ হয়ে আছি😥 আর এখনো সামনে দাঁড়িয়ে এই চেহারা দেখতে হচ্ছে😭! এবার বাজারে গিয়ে কিছুক্ষণের জন্যে হলেও আমাকে নিষ্কৃতি দাও! তাতেও ঈশ্বরও নির্ঘাত খুশী হবেন–!?
______ ফরিদ তালুকদার / ফেব্রুয়ারী ৮, ২০২১