অনেক দিন আগের কথা।
আমি তখন সবে মাত্র দুবাই এসেছি । তখন আমি আমার চাচার বাসায় থাকি। বাড়িতে চাচা চাচী ছাড়া আমার ৩/৪ বছরের চাচাতো বোন সামিয়া থাকতো। সামিয়ার বান্ধবী বাসানিয়া , আমাদের মাদ্রাজি প্রতিবেশীর মেয়ে। একে অপরের খেলার সাথী। বাসানিয়ার মামা কুমার থাকতো ওর বোনের বাসায়। কুমার আমার মতো নবাগত। দুজনার অবস্থা একই। অবস্থাক্রমে কুমার হয়ে গেল আমার বন্ধু। আমরা রোজ বিকেলে নিচে গার্ডেনে বসে আড্ডা দিতাম। অনেক সময় সামিয়া আর বাসানিয়া দুজনে গার্ডেনে আসত আমাদের সাথে। আর ওরা ওদের মতো খেলা করত। এই ভাবেই কাটত আমাদের সন্ধাটা ।
মাঝে মাঝে সামিয়া বাসানিয়াদের বাসায় যেতো খেলা করতে। প্রায়স আসার সময় সামিয়া ওদের বাসা থেকে কলা নিয়া আসত। প্রথমে আমি বাপারটা তেমন গুরুত্ব দেইনি। কিন্তু যখন এটা প্রায় রোজ হতে লাগলো তখন এটা আমার কাছে একটা প্রশ্ন দাড়ালো। ওরা কি রোজই সামিয়াকে শুধু কলা খেতে দেয় ? এটাই বা কেমন কথা। রোজ একই জিনিস খেতে দেওয়া। কি আছে এই কলা ত্বওের পিছনে ? ভাবলাম অপেক্ষা করে দেখা যাক।
একটা ছুটির দিনে আমি আর কুমার ওদের বাসায় বসে হিন্দি ছবি দেখছিলাম। সামিয়া আর বাসানিয়া খেলা করছিলো। ওরা দুজন বান্ধবী হলেও ওদের মধ্যে ভাষাগত সমস্যা ছিলো। সামিয়া বলতো বাংলা আর ভাঙ্গা ভাঙ্গা ইংলিশ আর বসনিয়া বলতো মাদ্রাজী আর ইংলিশ। খেলার মধ্যে বাসানিয়া খেলা রেখে মাঝে মাঝে ভিতরের ঘরে যাচ্ছিলো। তখন সামিয়া বারে বারে বাসানিয়াকে খেলার জন্য “খেলা ” “খেলা ” বলে চিত্কার করে ডাকছিলো। ঐ মুহুর্তে কুমার উঠে কিচেন গিয়ে কলা এনে সামিয়াকে দিলো। বাপারটা আমি প্রথমে বুঝতে পারি নাই। আবারও কিছুক্ষণ পরে সামিয়া “খেলা ” “খেলা ” বলে চিত্কার করে বাসনিয়াকে ডাকলো। আবারও কুমার উঠে গিয়ে কলা নিয়া আসলো আর সামিয়াকে দিলো।
এবার আমার কাছে খটকা লাগলো। আমি কুমারকে জিজ্ঞাসা করলাম ও কেন বার বার সামিয়াকে কলা আনে দিচ্ছে । জবাবে কুমার বললো , কেন সামিয়াইতো বারে বারে কলা খেত চাচ্ছিলো। আমি ওকে জিজ্ঞাসা করলাম, তোকে কে বলেছে? উত্তরে কুমার বললো, কেন, ওইতো বারে বারে “কেলা ” “কেলা ” বলে চিত্কার করছিলো।
এইবার আমি বুঝলাম কলা ত্বত্তের রহস্য।
হিন্দিতে “কলা ” কে “কেলা” বলে। সামিয়ার “খেলা” কে কুমারের কাছে ” কেলা” মনে হয়েছে , তাই বার বার ও সামিয়ার জন্য কলা নিয়ে আসছিলো।
বাংলার “খেলা” মাদ্রাজির কাছে হয়ে গেল “কলা “।
🙂 😀
এরকম লেখা আরো আশা করছি. অনেক ধন্যবাদ