লেখকের কথা:
প্রবাসে হোমলেস দেখতে পাওয়া যায় সাধারণত ডাউন টাউনের অলি গলিতে অথবা শহরতলীর হাইওয়ের এক্সজিটের কাছে। এনাদের নিয়ে আমাদের মানে এই তথাকথিত ভদ্র লোকেরা বিভিন্ন তত্ত্ব দিয়ে নিজেদের দায়িত্বকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি। প্রবাসী জীবনে এই হোমলেস দের নিয়ে কাজকরা আমার নেশা ও পেশা। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এনাদের হয় মানসিক সমস্যা অথবা মাদকাসক্ত সমস্যা থাকে। আর দশজন মানুষের মতো এনাদের থাকে অনেক সুখের, অনেক দুঃখের কথা। সত্যি কথাবলতে কি প্রবাসে পথেঘাটে এখনো বাংলাদেশি হোমলেস চেখে পরেনি । তবে শেল্টারে অল্প কিছু বাংলাদেশি দেখতে পাওয়া যায় । লেখক কল্পনিকভাবে নিজাম উদ্দিন নামক সম্পূর্ণ কাল্পনিক চরিত্রকে মূলত এখানকার কোনো হোমলেস সাজিয়ে আরো রং মাধুরী মিশিয়ে কিছুটা উওপন্যাসের ঢঙে চিত্রিত করতে চেয়েছে।

জাকারিয়া মুহাম্মদ ময়ীনউদ্দিন.
রেজিস্টার্ড সোস্যাল সার্ভিস ওয়ার্কার, টরেন্টো, কানাডা, নভেম্বর ৩০, ২০১ ৯
———————

আগের পর্বগুলির সারাংশ :

মানসিক ভারসাম্যহীন হোমলেস নিজাম উদ্দিন আজকে থেকে প্রায় ৩৬ বছর আগে অর্থাৎ ১৯৮৩ সাল থেকে কানাডার টরেন্ট শহরে বসবাস করে আসছে। প্রায় বছর পাঁচেক পর বাংলাদেশ থেকে রুপা নাম একটি মেয়ে কে বিয়ে করে নিয়ে আসে । বিয়ের দুই বছরের মাথায় ছেলে রিফাত ও আরোও ৫ বছর পরে মেয়ের নাজমার জন্ম হয় । বিয়ের আগে নিজাম উদ্দিন যখন টরেন্ট শহরে ব্যাচেলর জীবন যাপন করতো তখন শৈশবের বন্ধু একরামের সাথেই থাকতো ডানফোর্থ এলাকার বাঙালি পাড়ারই এক মেসে । এই একরামর হাত ধরেই নিজাম উদ্দিনের সুন্দরী স্ত্রী রুপা এক কাপড়ে পালিয়ে বিয়ে করে । স্ত্রী হারা দিশেহারা নিজাম উদ্দিনের সিজোফ্রেনিয়া রোগের উপস্বর্গ দিনের পর দিন ঔষুধ না খাওয়ায় অনেক বেড়ে যায় । একসময় নিজাম উদ্দিন এলকোহল আসক্ত হয়ে পরে ও বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় । ছেলে মেয়ে যে যার মতো নিজ চেষ্টায় পড়াশুনা করতে থাকে । রিফাত কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে পরে আমেরিকাতে পারি জমায় ও সেখানে এক বাঙালি মেয়েকে বিয়ে করে সংসার শুরু করে । নাজমা সবেমাত্র পড়াশুনা শেষ করে একটি বাসার বেসমেন্টে থাকে। মাত্র গতকালই ইসতিয়াক নাম এক পাকিস্তানী বংশোভূত ইঞ্জিনিয়ার ছেলের সাথে নাজমার বিয়ে হয় । ঘটনাচক্রে নিজাম উদ্দিন বিয়েতে ওদের সাথে জড়িয়ে পরে ও চমৎকার সময় কাটায় ।

মাত্র কয়েক ঘন্টা আগেই হোমলেস নিজাম উদ্দিনের বেশ চমৎকার সময় কেটেছিল সদ্যবিবাহিত মেয়ে নাজমার বেসমেন্টের বাসায় ৷ কিন্তু সুশৃঙ্খল পারিবারিক জীবনের প্রতি চরম অনীহা থাকায় ওখান থেকে পালিয়ে এসেছে গভীর রাতে। নিজাম উদ্দিন মাঝ রাত্রে ডাউনটাউনের বারে যেয়ে কয়েক ঢোক মদ গিলে ফিঞ্চের কাছে পুরাতন ডেরায় ফিরে এসেছিলো ৷ কিন্তু আর না। যেহেতু মেয়ে এই ডেরা চিনে ফেলেছে, তাই ভোরের আলো ফোটার আগেই মাত্র কিছুক্ষন আগে অজানা গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে হোমলেস নিজাম উদ্দিন।
——————————-

আজকের পর্ব :
নিজাম উদ্দিনের এবারের পরিকল্পনা হলো টরেন্ট থেকে বেশ দূরে কোথাও যেয়ে সেটেল্ড হওয়া ৷ এক জন মেন্টাল হেলথ হোমলেসের সেটেল্ড হওয়ার অর্থ হচ্ছে মোটামুটি আয়-রোজগার হয় এমন জায়গায় ঘাপটি মেরে থেকে টেনে টুনে দিন পার করা ৷ পুলিশি ঝামেলার মধ্যে জড়ালে কোনো সেল্টারে ক্ষণস্থায়ী ভাবে কয়েক মাস থাকা ৷ তার পর, আবার সেই রাস্তায় নেমে পরা ৷ আর যদি সেল্টারে নিয়মের মধ্যে থেকে, নিয়মিত ঔষূধ -পত্র খেয়ে যদি মন চায় কিছুটা শৃঙ্ক্ষলতার সাথে জীবন যাপন করতে তবে, সেল্টার কর্মীর সাহায্য নিয়ে বিভিন্ন কমিউনিটি বেসড অর্গানাইজেশন দ্বারা পরিচালিত সাপোর্টিভ হাউজিং এও থাকা যায়৷ এই হচ্ছে মোটামুটিভাবে একজন মেন্টাল হেলথ হোমলেসের সেটেলমেন্ট ৷ নিজাম উদ্দিনের ক্ষেত্রে অবশ্য দ্বিতীয় সম্ভাবনাটি খুবই ক্ষীণ কারন একবার সংসার থেকে বের হয়ে শৃঙ্খল জীবনে ফিরে যাওয়া প্রশ্নেই আসে না ৷ তার উপর আবার সিজোফ্রেনিয়া রোগের উপস্বর্গ ৷

টরেন্টো শহর ছেড়ে যাওয়ার আগে একবার নায়াগ্রা ফলস এর দিকে গেলে কেমন হয়? এ জীবনে হয়তো ওদিকটায় আর যাওয়া হবে না৷ যা ভাবা তাই কাজ৷ কাক ভোরে টরেন্টোর ডাউন-টাউন এলাকা থেকে বাসে করে নায়াগ্রার দিকে যাত্রা করে হোমলেস নিজাম উদ্দিন৷ একা থাকার মজাই আলাদা৷ যখন যা খুশি তাই করা যায়৷

দূরত্ব অনুযায়ী বাস ভাড়া তেমন বেশি না ৷ মাত্র ১৯ ডলার ৷ ওয়ান ওয়ে ৷ অর্থাৎ ফেরার সময় আবার ১৯ ডলার দিয়ে ফিরতে হবে৷ ফেরার কোনো তাড়া নেই নিজাম উদ্দিনের ৷ ২/১ দিন এখানে থেকে কিছুটা আয় রোজগার করে, পরে টরেন্ট থেকে দূরে কোথাও যাওয়া যেতে পারে ৷ তবে নায়াগ্রা হচ্ছে টুরিস্ট এলাকা ৷ তাই, কিছুটা ঝুঁকি আছে ৷ পরিচিত কেউ দেখে ফেলতে পারে ৷ অবশ্য বয়সের কারণে ও ভবঘুরে হোমলেস জীবনযাপনের কারণে নিজাম উদ্দিনের চেহারা মূল চেহারা থেকে অনেক বিবর্তিত হওয়ায় কিছুটা রক্ষা ৷ খুব কাছের মানুষ ছাড়া সহজে কারো চেনার কথা না ৷

ঘড়ি ধরে ঠিক সাড়ে সাতটায় গ্রে-হাউন্ড বাস ছাড়লো৷ বাসের মধ্যে যাত্রী তেমন নেই৷ সামনের দিকে হাতে গোনা কয়েকটি ফ্যামিলি, মাঝের দিক থেকে পুরো বাস প্রায় খালি ৷ নিজাম উদ্দিন যে দিকটা বসেছে তার বামের সারিতে দুজন সম্ভবত বৃদ্ধ দম্পতি কানে হেড ফোন লাগিয়ে ঝিমুচ্ছে ৷ বাসের মৃদু ঝাকুনিতে নিজাম উদ্দিনেরও কিছুটা তন্দ্রা ভাব লাগে ৷ রাতে ভালো করে ঘুমাতে পারেনি ৷ গত রাতে সদ্য বিয়ে করা মেয়ের বাসা থেকে পালিয়ে এসেছে. তারপর, পেটে পরেছে বেশ কয়েক বোতল কড়া রেড ওয়াইন ৷ বাসে বন্ধ জানালার এক পাশে কাত হয়ে নাক ডাকতে থেকে নিজাম উদ্দিন ৷ এমনকি ছোটোখাটো একটি স্বপ্নও দেখে ফেলে ৷ হাইস্কুলের সহপাঠী একরামের সাথে স্কুল থেকে পালিয়ে সিনেমা দেখতে গিয়েছে৷ হাফ টাইমে বাতি যখন জ্বলে উঠে দেখে পাশের সিটে গায়ের সাথে গা লাগিয়ে বসে আছে এসিস্ট্যানন্ট হেড স্যার ৷ একরাম ভয় পেয়ে ঝড় ঝড় করে প্যাণ্ট ভিজে ফেলে ৷ নিজাম উদ্দিন ভয় পেয়ে দৌড় দিতে যাবে কিন্তু কিছুতেই নড়তে পাচ্ছেনা ৷ পা যেন আঠার মতো মেঝের সাথে লেপ্টে আছে ৷ নিজাম উদ্দিন চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে হচ্ছে ” স্যার আমার কোনো দোষ নেই, একরাম আমাকে ভুলিয়ে ভালিয়ে সিনেমা দেখতে নিয়ে এসেছে” ৷ কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো মুখ দিয়ে কোনো কোথায় বেরুচ্ছেনা ৷ মুখ দিয়ে কেবল গোঁ গোঁ শব্দ হচ্ছে ৷ কাঁধের কাছে পাশের বৃদ্ধ যাত্রীর আলতো করে ছোঁওয়া স্পর্শে চোখ মেলে নিজাম উদ্দিন ৷ বৃদ্ধটি মৃদু হেসে বলে:

‘আর ইউ আল রাইট? এনিথিং প্রব্লেম?”
নিজাম উদ্দিনও পাল্টা মৃদু হেসে উত্তর দেয়, ” ইটস ওকে . ডিডন্ট স্লীপ ওয়েল লাস্ট নাইট৷”

বাস ততক্ষনে টরন্টো শহর পেরিয়ে মিসিসাগা, হ্যামিলটনকে পাশ কাটিয়ে বার্লিংটনের স্কাই ওয়ে ব্রিজের উপর দিয়ে যাচ্ছে৷ অনেক উঁচু থেকে অন্টারিও লেক এর বিশাল জলরাশি কি চমৎকার লাগছে৷ বহু বছর আগের কথা মনে পরে যায় নিজাম উদ্দিনের৷ ছেলে রিফাত তখন গ্রেড নাইনে পড়ে৷ মেয়ে নাজমা পড়ে গ্রেড ফাইভে৷ নিজাম উদ্দিন স্বপরিবারে বেচেলর একরামের সাত সিটের ভ্যানে করে নায়াগ্রা ফলস দেখতে যাচ্ছে৷ সঙ্গে আরেকটি ফ্যামিলি ছিল৷ একরামের এক দূর সম্পর্কের খালাতো বোন, তার জামাই তাদের চার বছরের একটি মেয়ে৷ নিজাম উদ্দিন এর আগে বহুবার নায়াগ্রা ফলস দেখতে এসেছে, তবে স্ত্রী রুপার ক্ষত্রে এটা তৃতীয় বারের মতো যাওয়া ৷ নিজাম উদ্দিনের স্পষ্ট মনে আছে সেবার যখন ওঁরা এই স্কাই ওয়ে ব্রিজের উপর উঠেছিল, রুপা বাচ্চাদের মতো আঁনন্দে চিৎকার করছিলো ৷ উৎসাহী একরাম ব্রিজ পেরিয়ে এমার্জেন্সি লাইট দিয়ে গাড়ি থামিয়ে সবাইকে এই মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখার সুযোগ করে দিয়ে রুপাকে উদ্দেশ্য করে বলে: “ভাবি, নেমে পড়েন, এখানকার একটি ছবি তুলি”৷ রুপা সুবোধ বালিকার মতো মেয়ে নাজমাকে নিয়ে দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে পরে ৷ একরাম ওঁর দামি ক্যামেরার ব্যাবহার যত্ন করে শিখিয়ে দিতে থাকে রুপাকে, মনোযোগ দিয়ে রুপাও আঁনন্দে আত্মহারা হয়ে একের পর এক ছবি তুলতে থাকে ৷ সঙ্গে রুপার খালাতো বোন ও তার পরিবারও গ্রূপ ছবি তুলছে ৷ নিজাম উদ্দিন ছেলে রিফাত সহ ঠাই বসে থেকে গাড়ির মধ্যে ৷ কানের কাছে একবার আসে রুপা কর্তব্যের খাতিরে একবার হালকা করে বলছে, ‘এই, এদিকে নেমে আসোনা, কি বেরসিকের মতো বসে আছ”৷নিজাম উদ্দিন, রুপার সেই মৃদু প্রস্তাবে সারা দেয়না ৷ নিজাম উদ্দিন খেয়াল করে ছেলে রিফাত গাড়ির জানালার অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে বাহিরের দিকে গোমড়া মুখে তাকিয়ে আছে ৷ ছেলে বড় হয়েছে ৷ নিশ্চয় ছেলের চোখেও মায়ের এসব আদিক্ষেতাপনা ভালো লাগছেনা ৷ নিজাম উদ্দিন গাড়ির জানলা দিয়ে কাঠের পুতুলের মতো ওদের রং তামাশা দেখতে থেকে ৷ আসলে, সমাজে কিছু বিচিত্র পুরুষ মানুষ থাকে যারা মেয়ে দেখলেই জোঁকের মতো লেগে থাকে ৷ মজার ব্যাপার হচ্ছে অবুঝ সহজ সরল মেয়েরা অদ্ভুত কারণে এসব মেয়ে ঘেঁষা পুরুষদের প্রশ্রয় দিয়ে থেকে, ওদের সান্নিধ্য বেশ উপভোগ করে ৷ ওদের সস্তা হাসির কোথায় হেসে গড়াগড়ি করে, অর্থ্যাৎ ওদের প্রেমে হাবুডুবু খেতে থাকে ৷ যেমনটি ঘটেছিলো নিজাম উদ্দিনের জীবনে৷

দুপুরের সূর্য অনেকটাই হেলে পড়েছে পশ্চিমে ৷ এক স্লাইস পিজা দিয়ে বেশ আয়েশের সাথে নিজাম উদ্দিন দুপুরের লাঞ্চ সেরে ফেলেছে ৷ এদিক ওদিক হাত পেতে প্রায় ২৩ ডলারের মতো কামাই হয়েছে ৷ পিজা স্লাইস কিনতে ৬ ডলার খরচ হয়েছে ৷ হাতে এখনো ১৭ ডলার আছে, টরেন্ট ফিরতে আরোও ২ ডলার লাগবে ৷

নিজাম উদ্দিন নায়াগ্রা ফলস এর এক কোনায় আয়েশ করে বসে জলপ্রপাতের বিশাল জলরাশির দিকে তাকিয়ে সিগারেট টানতে থাকে আর বিস্ময়ে ভাবতে থাকে এই এত এত জলরাশি এত উপর থেকে পড়ছে, এই পানির উৎস কোথায়? জলপ্রপাত এর আশেপাশে অনেকটা কুয়াশার মতো মনে হয়৷ হালকা জলের ঝাপ্টা বৃষ্টির মতো গায়ে এসে পরে ৷ নিজাম উদ্দিনের কিছুটা শীত শীত লাগে ৷ জলপ্রপাতের ওপারেই আমেরিকা ৷ এই পার থেকেই স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে আমেরিকান লোকজন ওদিক থেকেও জলপ্রপাত দেখছে ৷ অতি উৎসাহী কিছু টুরিস্ট বিশেষ জ্যাকেট গায়ে নৌকায় উঠে কাছ থেকে ঠিক যে জায়গায় জলপ্রপাতের পানি পড়ছে সেই খানে সৌন্দর্য উপভোগে ব্যাস্ত ৷ কানাডা ও আমেরিকার জন্য ভিন্ন ভিন্ন নৌকার ব্যাবস্থা ৷ নিজাম উদ্দিনের মনে পরে অনেকটা বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলের কোথায় যেন দেখেছিলো একটি ছোট্ট নদীর অপারে ইন্ডিয়া আর এপারে বাংলাদেশ ৷ নদীতে দুই ভিন্ন দেশের দুই ধরণের পতাকাবাহী নৌকা ৷ আহা!! এই পৃথিবীর কি অদ্ভুৎ নিয়ম ৷ জলে, স্থলে ও আকাশে ভিন্ন ভিন্ন দেশ নিজ নিজ কর্তৃত্ব নিয়মকরে মেনে চলে ৷ সিগারেটে লম্বা টান দিয়ে দার্শনিকের মতো নিজাম উদ্দিন ভাবতে থাকে কোনো সীমারেখাহীন, বিভেদহীন এক নতুন পৃথিবীর কথা ৷

অক্টোবর মাস৷ এখনো সামারের মতো ওয়েদার৷ তাপমাত্রা এখনো ১০ ডিগ্রির কাছে৷ তবে রাতে কিছুটা ঠান্ডা পরে৷ আর কিছুদিনের মধ্যেই হয়তো শীত নেমে যাবে৷ রবিবারের বিকেল৷ উপচে পড়া মানুষের ঢল ক্রমশই বাড়ছে৷ হয়তো সন্ধ্যার পর থেকে কিছুটা কমতে থাকবে৷ নিজাম উদ্দিন হটাৎ খেয়াল করে একটি বাংলাদেশে দম্পতি নিজাম উদ্দিনের প্রায় গা ঘেঁষে বাংলায় কথা বলতে বলতে একটি ফুটফুটে বাচ্চা ছেলেকে স্ট্রোলারে করে নিয়ে হেটে হেটে যাচ্ছে৷ নিজাম উদ্দিন সতর্ক হয়ে যায়৷ আরে!!! ছেলেটাকে চেনা চেনা লাগছে৷ আরে এত তারই ছেলে রিফাত ! প্রায় ৮/৯ বছর পরে দেখা৷ মাথায় এখনোও ঝাঁকড়া চুল আগেরমত করে ব্যাক-ব্রাশ ব্রাশ করে আঁচড়ানো৷ মায়ের মতো বড় বড় চোখ, খাড়া নাক৷ গতকালই মেয়ের সাথে রেস্টুরেন্টে ডিনারের সময় মেয়ের কল্যাণে ভিডিও -কলে ছেলের সাথে কথা হয়েছিল ৷ অনেক বছর পরে ছেলেকে লাইভ দেখেছিলো ৷ আইজ সামনা সামনি ছেলেকে চিনতে মোটেই ভুল হয়না নিজাম উদ্দিনের ৷ নিজাম উদ্দিন ভীষণ সমস্যায় পরে যায় ৷ ছেলেকে ডাকবে না ডাকবেনা ৷ ছেলের বৌ নিশ্চয় তার হোমলেস শুশুর মশাইকে দেখে খুশি হবেনা ৷ কিন্তু, ফুটফুটে নাতির কথা ভেবে নিজাম উদ্দিন ছেলের নাম ধরে চিৎকার করে ডাকে ৷ চমকে যায় রিফাত ৷ “বাবা তুমি?”

“তোমার সাথে কালকেইতো কথা হলো, তুমি একবারও তো বল্লেনা তুমি এখানে আসবে!
নিজাম উদ্দিন ছেলের দিকে তাকিয়ে নিচু স্বরে বলে – “তুইও তো বলিসনি”৷
আসলে, আমাদের একেবারেই প্ল্যান ছিলোনা বাবা ৷ টুম্পা চেপে ধরলো আমেরিকার সীমান্ত পেরিয়ে কানাডার নায়াগ্রা ফলস দেখবে৷ তাই , প্রায় ৮ ঘন্টা গাড়ি ড্রাইভ করে এখানে এসেছি৷ ও আচ্ছা, বাবা তোমার সাথে পরিচয়ায় করে দেই , এ হচ্ছে, টুম্পা , তোমার বৌমা ৷ টুম্পা, ইনি হচ্ছে আমার বাবা৷

টুম্পা হকচকিয়ে যায়. বিস্ময়ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে একজন হোমলেস শুশুর মশাইয়ের দিকে৷ টুম্পার জন্ম আমেরিকাতে হলেও বাংলাদেশী বাবা -মা. তাই বাংলাদেশী কালচারেই বেড়ে উঠেছে ৷ তাৎক্ষণিক মাথায় ওড়না টেনে শশুরকে পা ছুঁয়ে ছালাম করে ৷ নিজাম উদ্দিনের চোখে পানি এসে যায় ৷ নিজাম উদ্দিন বৌমার মাথায় হাত দিয়ে দোয়া করে ৷ ময়লা শার্টের কোনা দিয়ে চোখের পানি মুছে নাতিকে কোলে তুলে নেয় ৷ নাতির চিবুক ধরে আদর করে ৷ নিজাম উদ্দিন পেকেট থেকে তার সারাদিনের আয়ের অবশিষ্ট পুরো ১৭ ডলার ছেলের হাতে গুঁজে দিয়ে বলে নাতিকে কিছু একটা কিনে দিতে ৷ রিফাত ভালো করেই জানে বাবার এই টাকার উৎস, তবুও বাবার থেকে খুচরা পয়সা ও টাকাগুলি নিয়ে যত্ন করে বুক পকেটে রেখে দেয় ৷ রিফাতের কাছে বাবার কাছ থেকে টাকা না নিয়ে বাবাকে কষ্ট দেয়ার চেয়ে টাকা নিয়ে বাবাকে কষ্ট দেয়া শ্রেয় মনে হয় ৷

টুম্পা পেনসিলভানিয়ার একটি কলেজ থেকে নার্সিং এর উপর ডিপ্লোমা করে একটি হাসপাতালে চাকরি করে ৷ পড়াশুনা ও কাজের মাধ্যমে হোমলেস সম্পর্কে ভালোই ধারণা আছে ৷ তবুও একজন শশুর হোমলেসকে কাছে পেয়ে কিছুটা হকচকিয়ে গেলেও নিজিকে সামলে নেয় ৷ নিজাম উদ্দিনের হাত ধরে বলে ” বাবা চলো আমরা এক সাথে ডিনার ও খেতে খেতে গল্প করবো ৷ “. নিজাম উদ্দিন আপত্তি করেনা ৷

নায়াগ্রা ডাউনটাউনের এক ইন্ডিয়ান রেষ্টুরেন্টে পিছনের দিকের টেবিল জুড়ে নিজাম উদ্দিনের পারিবারিক আড্ডা জমে উঠে ৷ বাহিরে মুসল ধারে বৃষ্টি পরছে ৷ শহরের সহস্র লাল/সাদা/হলুদাভ আলোর ঝলকানি বৃষ্টির পানির সাথে মিশে রাতের নায়াগ্রা মুক্তার মতো জ্বলে উঠেছে ৷ রেষ্টুরেন্টের ওয়ালে বিশাল টেলিভিশনের স্ক্রিনে শারুখ খান কোনো এক নায়িকাকে নিয়ে উদ্দাম নেচে চলেছে ৷ নিজাম উদ্দিনকে আজ কথায় পেয়েছে ৷ হর হর করে সমানে বলে যাচ্ছে রিফাতের ছোট্টবেলার গল্প ৷ টুম্পা প্রবল আগ্রহ নিয়ে শুনে যাচ্ছে ৷ রিফাতের ছেলে ফিডার মুখে দিয়েই স্ট্রোলারের এক দিকে কাত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে ৷ টুম্পা জেদ ধরে শশুরকে সঙ্গে করে নিয়ে যেতে ৷ কানাডিয়ানদের আমেরিকা যেতে কোনো ভিসা লাগেনা ৷ কিন্তু নিজাম উদ্দিনের সাথে পাসপোর্ট তো অনেক দূরের কথা, নিজাম উদ্দিনেরতো কোনো আইডিই নেই ৷ পকেট আছে এক হেলথ কার্ড তায়ও অনেক আগেই এক্সপায়ার্ড ৷ সুতরাং, নিজাম উদ্দিনের আমেরিকা যাওয়ার প্রশ্নেই আসেনা ৷ রিফাত ও টুম্পা নিজাম উদ্দিনকে বুঝাতে থাকে টরেন্টোতে ফিরে যেয়ে মেয়ে নাজমার সাথে থাকতে ৷ বাবাকে দুজন মিলে বুঝাতে থাকে ডাক্তারের সাথে দেখা করে আবার নতুনকরে ঔষধপত্র শুরু করতে ৷ চতুর নিজাম উদ্দিন মন দিয়ে ওদের কথা শুনলেও মনে মনে ভাবতে থাকে অন্য কথা ৷ অনেক হয়েছে আর না ৷ দ্রুত এখান থেকে সটকে পরতে হবে৷ রিফাত টরেন্টোতে থাকা ছোটবোন নাজমাকে ফোন করে বাবার কথা জানায়৷ নাজমা তার সদ্য বিয়ে করা স্বামী ইশতিয়াককে নিয়ে দ্রুত নায়াগ্রার উদ্দেশ্যে রওনা দেয় ৷ প্রমাদ গুনতে থাকে নিজাম উদ্দিন ৷ একফাকে, বাথরুমে যাওয়ার নামকরে , রেষ্টুরেন্টের পিছনে কিচেন এর সাইড ডোর দিয়ে নির্বিকারভাবে পালিয়ে যায় ৷

আধা ঘন্টা খানিক অপেক্ষা করেও যখন নিজাম উদ্দিন বাথরুম থেকে ফিরে আসেনা টুম্পা এদিক ওদিক তাকিয়ে খুঁজতে থাকে শশুরকে ৷ বাহিরে বৃষ্টি থিম গেলেও এখনোও টিপটিপ করে পরছে ৷ রিফাত মুখ লম্বা করে শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে বাহিরের দিকে ৷ গাড়ি নিয়ে বাহিরে খুঁজলেও বাবাকে পাওয়া যাবেনা ৷ বাবা হয়তো কোথাও আত্মগোপন করে আছে ৷ রিফাত ইচ্ছা করলে বাবাকে খুঁজতে পুলিশের সাহায্যোনিতে পারতো ৷ কিন্তু রিফাত ভালো ভাবেই জানে বাবা বাবার পথেই এগুবে ৷ এই সমাজের , এই সংসারের মায়া জালে বাবাকে আটকে রাখার সাধ্য তার নেই ৷ তাই, রিফাত বাবার ইচ্ছাকে সম্মান জানিয়ে আর পুলিশি ঝামেলায় যায়না ৷

নিজাম উদ্দিন রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে আঁকাবাঁকা পথে প্রায় ঘন্টা খানিক হেটে বোটানিক্যাল গার্ডেন পার হয়ে জমাট অঙ্গকারের দিকে হাটতে থাকে ৷ পাশেই একটি উঁচু ঢিবির মাথায় একটি প্রকান্ড ঘড়ি ৷ এটা আসলে ‘ফ্লোরাল ক্লক’৷ একটি উঁচু ঢিবিকে রকমারি ফুল দিয়ে সাজিয়ে বাগানের মতকরে বানিয়ে মাঝখানে কায়দাকরে ঘড়িরকাঁটা বসিয়ে দেয়া হয়েছে ৷ নিজাম উদ্দিন শুনেছে, এখানেই এই ঘড়ির পাশেই বাংলাদেশের দূরদর্শন নামের এক বাংলা সিনেমার শুটিং হয়েছিল ৷ তবে, বাংলাদেশ থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে আজ এই ২০০১৯ সালে ফ্লোরাল ক্লোকের পাশে বাংলাদেশের এক প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে উঠে আসা নিজাম উদ্দিনের বিচিত্র জীবন নিয়ে যে জীবন্ত ছবি-র শুটিং চলছে সেখানে কোনো ক্যামেরাম্যান এর দরকার হয়না ৷

জমাট অন্ধকারের মাঝে নিজাম উদ্দিন হেটে চলে ৷ অন্তত ২/৩ ঘন্টা শহরমুখী হওয়া যাবেনা, পাছে ছেলে/মেয়েরা আবার ধরে নিয়ে যায় ৷ ফ্লোরাল ক্লোকের পাশ দিয়ে এই রাস্তাটি নায়াগ্রা-অন-দা-লেক’ নামক আরেকটি সিটির দিকে চলে গেছে ৷ এখন থেকে সেই সিটি প্রায় ২০/২১ কি মি পথ ৷ মাঝারি ভাবে হাঁটলে ঘন্টা চারেক লাগার কথা ৷ নিজাম উদ্দিন আর নায়াগ্রা শহরের দিকে না যেয়ে এই পথেই নিশ্চিন্তে এগুতে থাকে ৷ হয়তো রিফাত পরিবার নিয়ে হোটেলে ফিরে গাছে ৷ নাজমা/ইসতিয়াক হয়তো বাবার আবার পালিয়ে যাওয়ার কথা শুনে টরেন্টোর পথে ফিরে গেছে ৷ নিজাম উদ্দিন পকেট থেকে আগের নেভানো সিগারেট জ্বালিয়ে আনমনে হাটতে থাকে আর পরিবার থেকে তার পলাতক জীবনের কথা ভাবতে থাকে ৷ নিঃসঙ্গতা কাটিয়ে উঠতে নিজাম উদ্দিন আপনমনে কথা বলতে থাকে ৷ আপনমনে কথাবলা নিজাম উদ্দিনের একটি প্রিয় খেলা ৷ কথা বলতে বলতে একেবারে হারিয়ে যাওয়া যায় ৷ আজ নিজাম উদ্দিন কথা কথা বলে স্ত্রী রুপার সাথে:
– “রুপা, তুমি কি রাগ করেছো?”
-“কেন বলতো? নতুন করে আবার কি হলো?
– “না মানে, এই যে রিফাত, ওর পরিবার রেখে এ ভাবে পালিয়ে এলাম যে ?”
-“তোমার মতো উম্মাদের পক্ষে এটাইতো স্বাভাবিক”.
– “রুপা, প্লিজ আর যাই বোলো, উম্মাদ বলবেনা ৷ আমার যদি মাথার দোষই থাকে, তবে এর জন্য কি আমি দায়ী? সৃষ্টি সৃষ্টিকর্তা আমাকে এই মাথা দিয়ে দুনিয়ায় পাঠালো কেন?”
– “খবরদার, সৃষ্টিকর্তাকে দোষ দিবেনা ৷ তুমি ঔষুধ খাবে না, ডাক্তারের কাছে যাবে না, রাস্তায় -“রাস্তায় ঘুরবে আর সৃষ্টি কর্তাকে দোষ দিবে?”
-“আমিতো এই জীবন চাইনি ৷ তুমি একরামর হাত ধরে আমাদের একা ফেলে ছেলে/মেয়েদের কথা ভুলে পালিয়ে গেলে কেন?”

রুপা এমনি খুব মুখ কাটা স্বভাবের ৷ সব কথার পিঠে পটাপট কাটা কাটা কথা বলে ৷ কিন্তু, নিজাম উদ্দিনের এই প্রশ্নের উত্তরে একেবারে নিশ্চুপ হয়ে যায়. আসলেইতো, যে মানুষটা তাকে বিয়ে করে স্পন্সর করে এই চমৎকার কানাডাতে নিয়ে এল, সে কি করে পারলো মানুষটাকে ছেড়ে আরেকজনের হাত ধরে পালিয়ে যাওয়া ৷

-“রুপা! , কি কথা বলছোনা কেন?”
রুপা কৌশলে চালাকিকরে কথা ঘুরিয়ে দেয়, : “একবার প্রচন্ড শীতে নায়াগ্রা ফলস দেখতে এসেছিলাম মনে আছে?”
-“হ্যাঁ, মনে আছে. নিজাম উদ্দিন দ্রুত উত্তর দেয়. ” তখন টেম্পারেচার ছিল প্রায় মাইনাস ১২ ডিগ্রি ৷ নায়াগ্রা ফলসে সব পানি জমে বরফ হয়ে ছিল ৷ ছোট ছোট ঢেউগুলো বরফ হয়ে স্থির হয়েছিল. তুমি আঁনন্দে চিৎকার করছিলে” ৷
-“হ্যাঁ,, আমারও স্পষ্ট মনে আছে ৷ টুম্পা মুখে রহস্যাবৃত হাসি মাখা মুখে বলে: ” আমি সেদিন তোমার কিনে দেয়া লাল ওভারকোট ফিরেছিলাম ৷ তুমি খুম পছন্দ করতে. ওভারকোট পরে, মাথায় টুপে পড়লে তুমি আমাকে “লাল মেম সাহেব বলতে” ৷
রুপা হঠাৎকরে নিচু গলায় বলে, ” জানো, একরাম একেবারে বদলেগেছে ৷ আমাকে প্রায়ই মারধর করে ৷
এবার, নিজাম উদ্দিন চুপকরে থাকে ৷ নিজাম উদ্দিন অবাক হয়ে এই পরিবর্তনশীল পৃথিবোৰ কথা ভাবতে থাকে ৷ কোনো এক জায়গায় পড়েছিল “মানুষ মরে গেলে পচে যায় , বেঁচে থাকলে বদলায় , কারণে অকারণে বদলায়”। মানুষের এই বহুরূপ দেখে নিজম উদ্দিন অবাক হয় ৷ এক সময়. রাগে শরীর জ্বলতে থাকে ৷ নিজাম উদ্দিনের এই রাগ রুপা ও একরামের উভয়ের প্রতি ৷ এই পর্যায়ে নিজাম উদ্দিন একটি ম্যাপল লিফ গাছে হেলান দিয়ে বসে খানিকটা জিরিয়ে নেয় ৷ পোটলা থেকে একটি বিয়ারের ক্যান বের করে ঢোক ঢোক করে প্রায় পুরোটা খেয়ে ফেলে ৷ এদিকটা বেশ অন্ধকার ৷ বাংলাদেশ হলে জোনাকি পোকারা আলো জ্বালিয়ে উল্লাস করতো ৷ এখানে নিজাম উদ্দিন জোনাকি এখনো ও দেখি নি ৷তবে থাকলেও থাকতে পারে ৷ বৃষ্টি অনেক আগেই থেমে গেছে ৷ আকাশে কৃষ্ণ পক্ষের ক্ষয়িষ্ণু এক ফালি চাদ যেন নিজাম উদ্দিনের লাইফ -হিস্ট্রি নিয়ে পরিহাস করছে ৷ একটি বন-বিড়াল জাতীয় প্রাণী রাস্তার এপার থেকে হেলেদুলে ওপারে পার হ ৷ প্রাণীটির চোখ দুটি অন্ধকারে জ্বল জ্বল করতে থাকে ৷ নিজাম উদ্দিন একটি সিগারেট শেষ করে একই আগুন দিয়ে আরেক টি সিগারেট ধরায় ৷ কুন্ডলি পাকিয়ে সিগারেটের ধুমগুলি উপরের দিকে উঠতে থাকে৷মানুষিক ভারসাম্যহীন নিজাম উদ্দিন চারিপাশের রুপা, একরাম প্রভৃতি মানসিক ভারসাম্য বিশিষ্ট সুস্থ মানুষদের অসুস্থতা নিয়ে ভাবতে ভাবতে বাকি রাত কাটিয়ে দেয় ৷ (চলবে )

পূর্ববর্তী নিবন্ধড. তাবারক হোসেনের ‘অণু’ গ্রন্থের প্রকাশনা অনুষ্ঠান সম্পন্ন..
পরবর্তী নিবন্ধ“মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গেলে-১ম পর্ব “
জাকারিয়া মুহাম্মদ ময়ীন উদ্দিন
জাকারিয়া মুহাম্মদ ময়ীন উদ্দিন (জন্ম: ১৯৬৬ ), বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়ে উন্নয়ন কর্মী হয়ে দেশীয় ও আন্তজার্তিক অবাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে চাকুরী শুরু করেন এবং তখন থেকেই লেখালেখিতে মনোনিবেশ। তবে লেখালেখি শুরুটা ছিল সেই হাইস্কুল জীবনে পাড়ার বড় ভাইদের প্রকাশিত ম্যাগাজিন 'অবসর' নামক পত্রিকার মাধ্যমে। ২০০৩ সালে কানাডায় সপরিবারে স্থায়ী ভাবে বসবাস শুরু করে, আবারও পড়াশুনা, প্রথম Humber College থেকে সোশ্যাল সার্ভিস বিষয়ে দুই বছরের ডিপ্লোমা, পরে University of Guelph থেকে ফ্যামিলি & কমিউনিটি সোশ্যাল সার্ভিস বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি নিয়ে আবারও উন্নয়ন কর্মী হিসাবে রেজিস্টার্ড সোশ্যাল সার্ভিস ওয়ার্কার হিসাবে ২০১০ সাল থেকে অদ্যাবধি টরেন্ট ভিত্তিক বিভিন্ন অবাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে চাকুরীর করছেন । লেখকের কয়েকটি জনপ্রিয় ধারাবাহিক গল্পপ্রবাসী ব্লগ, কানাডা ভিত্তিক একটি সাপ্তাহিক বাংলামেইল পত্রিকায় এবং মাসমিডিয়াতে ব্যাপক সাড়া পাওয়ার পরে ঢাকায় ২০২৩ সালের একুশে বইমেলায় লেখকের তিনটি বই হোমলেস, সিঙ্গেল মাদার, জোসনা ম্যানশন উপন্যাস আকারে প্রকাশিত হয় । বর্তমানে হাউজ হাজব্যান্ড নামে লেখকের আরেকটি জনপ্রিয় ধারাবাহিক কে উপন্যাস হিসাবে ২০২৪ সালের ঢাকা একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হওয়ার অপেক্ষায় আছে । মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক লেখকের একটি জনপ্রিয় গল্প 'শেকড়' ২০২১ সালে বাংলাদেশের বুকল্যান্ড প্রকাশনা থেকে ৫০ লেখকের ভাবনা নিয়ে পঞ্চাশে বাংলাদেশ গ্রন্থে প্রকাশিত হয়েছিল। গল্প/উপন্যাসের পাশাপাশি কবিতা, প্রবন্ধ লেখা ছাড়াও খেলাধুলা নিয়েও লেখকের অনেক লেখা রয়েছে।

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন