১ )   যেদিনই ফেস বুক বা বাংলা নিউজ পেপার  খুলি,  নানাহ ধরণের হতাশাজনক  খবর পড়ে সে-দিনের  মতো মন খারাপ হয়ে যায়।মাবাবা টাকা পয়সা খরচ করে ছেলেমেয়েদের পড়াশুনা দিয়ে ও বিপদমুক্ত না।  দেশে কোথায় ও কাজ পাওয়া  যাচ্ছে না, নিরুপায় হয়ে  লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে আমেরিকা,ইউরোপ গিয়ে ও কোনোরকম কাজ না পেয়ে হতাশায় ভোগছে।   বিভিন্ন উপায়ে অনেক ছেলে মেয়ে আমেরিকায় এসে যেখানে যা পাচ্ছে তাই করে দেশে ঋণের টাকা ও মাবাবা কে সাহায্য করে।  এদের অনেকেই রাতের অন্ধকারে বিভিন্ন ধরণের কাজ করে।  ১০-১২ ঘন্টার নিচে তো কেউ দৈনিক কাজ করে না,  তাও  ইমিগ্রেশন সমস্যা, কাজের অনুমতি নেই,লুকিয়ে কাজ করে ।  এদের অনেকেই বাংলাদেশে উনিভার্সিটি থেকে বড় বড় ডিগ্রিধারী, দেশে বেকার সমস্যা,মাবাবা ছেলে-মেয়েদের পড়াশুনা দিয়েও শান্তি নেই,শেষে জমিজমা বিক্রি করে বিদেশে পাঠায়।  এদিকে আমেরিকার  বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল ট্রাম্প আদেশ দিয়েছেন দেশের বেআইনি লোকদের দেশ থেকে বিতাড়িত করবেন ।  শুনা যাচ্ছে ৩০,০০০ বেআইনি প্রবেশদারি লোক   কিউবার দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে অবস্থিত ”গুয়ান্তানামো”  নৌঘাঁটি (কুখ্যাত বন্দী শিবিরে) পাঠানো হবে বা ইতিমধ্যে পাঠানো শুরু করেছেন । লক্ষ লক্ষ বেআইনি লোক আমেরিকার রেস্টুরেন্টে ক্লিনার,ঝাড়ুদার  (১০-১২ ঘন্টা ) কাজ করে,তাও   নূন্যতম মজুরি ,  সারা বিশ্বের শিক্ষিত ছেলেমেয়েরা এ দেশে এসে জড়ো হয়েছে,  কৃষি কাজ করে,রাস্তায় বরফের মধ্যে দাঁড়িয়ে হটডগ বিক্রি করে , ঘুমানোর জায়গা নেই,অনেকে বাংকবেডে ঘুমায়, কেউ কেউ রাতে ঘুমায়,দিনে বেড ছেড়ে দিয়ে অন্যকে সাহায্য করে,এইতো হলো ইউরোপ বা আমেরিকার অবস্থা।

   ২)   গত সপ্তাহে খবরে প্রকাশ,২০-২২  জন বাংলাদেশী লিবিয়ার পূর্ব উপকূলে ভূমধ্যসাগরে একটি নৌকায় ট্র্যাজেডিতে মারা গেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে মানব পাচারকারীরা লিবিয়ার বিশৃঙ্খলা থেকে উপকৃত হয়েছে,  অভিবাসীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাবার নৌকা ও জাহাজ দিয়ে   সমুদ্র পথে  যাত্রা  করে।  পূর্বে ও বাংলাদেশী অনেকে এর শিকার হয়েছে ।  পাচারকারীরা ইউরোপের  ইতালির সিসিলি ও আর আর দ্বীপে মোটা অংকের টাকার  বিনিময়ে এ সব লোকদের ছেড়ে দিয়ে থাকে।  ফলে  অভিবাসীরা ইতালির মাধ্যমে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে গিয়ে ভিড় জমাচ্ছে।   বাংলাদেশ থেকে একজাতীয় দালাল এ সবের সঙ্গে জড়িত এবং লোকদের বিভিন্ন দ্বীপে নিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকার জন্য চাপ দিলে মাবাবা জমিজমা বা ব্যাঙ্ক থেকে লোন নিয়ে দালালদের দিয়ে ও রেহাই পায় না।  এ সব ছেলেমেয়েদের লিবিয়ার বিভিন্ন স্থানে ধরে রেখে অত্যাচার করে পুনরায় টাকা আদায় করে বলে জানা গেছে।

৩)  আমেরিকা এবং কানাডায়  প্রতি বৎসর হাজার হাজার অভিবাসী বিভিন্ন পথে এসে জড়ো হচ্ছে, “আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্র একটি আশীর্বাদ পূর্ণ দেশ”, এ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের আবহাওয়া  বিভিন্ন রকম, কানাডার সঙ্গে অঞ্চলগুলিতে অতিরিক্ত ঠান্ডা,তবে ফ্লোরিডা, টেক্সাস   ও অন্যান্য অঞ্চলে  শীত কম থাকে, কৃষি ও শিল্পে উপযোগী ।  তবে কানাডা সেপ্টেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত বাহিরে ঠান্ডা ও বরফ থাকায় এখানে ফসলাদি তেমন হয় না।  এ সময়  গ্রিনহাউস -এ অপর্যাপ্ত পরিমান কৃষি উৎপাদন হয় যা চাহিদার চেয়ে স্বল্প ,সারা বৎসরই আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্র বা অপরাপর দেশ থেকে খাওয়াখাদ্য আমদানি করতে হয়।  এ ছাড়া ও অতিরিক্ত শীতের জন্য  দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শিল্প ও গড়ে উঠে নি।  অভিবাসীদের অধিকাংশই টরন্টো,মন্ট্রিয়েল,আলবার্টা,সাস্কাচুয়ান  ও ভ্যাঙ্কুবার এর বাহিরে যেতে চায় না।  কানাডা অতিরিক্ত ঠান্ডা,যদিও শান্তিপূর্ণ দেশ,  সারা পৃথিবী থেকে লোকজন এসে পড়াশুনা করে চাকুরী,বৈধ হয়ে ব্যবসা,বা কাজ করে  এক-দুই বৎসরের মধ্যে বাড়ি -গাড়ি কিনে প্রতিষ্ঠিত হয়। অতিরিক্ত ঠান্ডা হলে ও প্রচন্ড শীতে ধুলাবালি বা পোকামাকড় বা রোগবালাই  থাকে না।  সে জন্য এ দেশে কঠোর পরিশ্রম করলে ও লোকজন আমাদের দেশের মতো হাঁফিয়ে উঠে না এবং অসুখ-বিসুখ কম।  তা ছাড়া বাড়ি,গাড়ি,কর্মস্থল -সর্বত্রই হিট বা (গরম) থাকে। 

৪) বাংলাদেশের দামাল ছেলেরা সারা বিশ্বের প্রতিটি দেশেই কঠোর পরিশ্রম করে দেশে রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশকে এগিয়ে নিচ্ছে, চোর বাটপার- রা ও এই ডলার নিয়ে ছিনিমিনি খেলতেছে,   বাংলাদেশে এয়ারপোর্টে  গেলেই যন্ত্রনা শুরু হয়।  আমার মনে পড়ে ১৯৯১  সনে কানাডার পাসপোর্টে প্রথম ঢাকা গিয়েছিলাম, আমি সাধারণতঃ দেশে গেলে তেমন কিছু নেই না।  সেবার আমার বৃদ্ধ মাবাবার জন্য এক কার্টুন জুস নিয়েছিলাম যার মূল্য  সে সময় $৩০-৩৫ ডলার হতে পারে।  কাস্টমের এক লোক আমাকে বলে এর জন্য ডিউটি দিতে হবে।  আমি হতবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে বললাম, এর মূল্য বড়োজোর $৩০-৩৫ ডলার,তার জন্য ডিউটি দিতে হবে ? কাস্টমার  দুইজন লোক কিছু দিতে হবে কি না তাও বলে না,এদিকে যাইতে ও দেয় না।  শেষে আমি বললাম   এক কাজ করেন “Better  keep  these  juice  for  you.”।  একেতো লম্বা (২২-২৪ ঘন্টার )জার্নি, তাছাড়া  ওদের  আচরণে আমি বিরক্ত, শেষে বলে যান।  ও সময় কানাডার পাসপোর্টে খুব কম লোকই দেশে যাতায়াত করতো, আসার প্রাক্কালে আমি ঢাকা ইম্মিগ্রাশনে পাসপোর্ট দিলাম-বলে পাইছি !  আমাকে না বলে পাসপোর্ট নিয়ে কোথায় চলে যাচ্ছে, আমি  রাগান্বিত স্বরে  চিৎকারে  করে বলি এই  আমার পাসপোর্ট নিয়ে কোথায় যাচ্ছেন ? আমি রাগে বিড়বিড় করতেছি দেখে আর  একজন বলে  মানুষের চোখের দিকে তাকাও না ? পাসপোর্টে এয়ারপোর্টের সীল না দিয়েই আমাকে ছেড়ে দিয়েছে।  আমি জিজ্ঞেস করলাম   “তোমার বস কোথায় ? ” আর  একজন পাসপোর্টে সীল দিয়ে বলে স্যার, যান। সে যুগে  এইতো ছিল ঢাকা এয়ারপোর্টের দুরবস্থা।  আজকাল কিছুটা উন্নত হয়েছে । মিডল ঈস্টের (মধ্যপ্রাচ্য) লোক  হলে  তো কথাই নেই,হয়রানির পর হয়রানি।  প্রবাসীদের রেমিট্যান্সের অর্থ নিয়ে আমাদের সাহেবরা কি না করতেছে ?

৫ ) বাংলাদেশের বর্তমান লোকসংখ্যা প্রায় ১৭ কোটি যা আমেরিকার(৩৬ কুটি ) অর্ধেক।  দেশে উন্নতি হয়নি আমি তা বলবো না, আমাদের সে যুগে (১৯৬০-১৯৭০ ) বৃহত্তর কুমিল্লায় ৪ টি কলেজ যথা চাঁদপুর,কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কুমিল্লা মহিলা কলেজ ছিল ,বর্তমানে একমাত্র কচুয়া উপজেলায় ৫-৭ টি কলেজ  ও দুটি টেকনিকাল স্কুল হয়েছে।  পড়াশুনার পরিবর্তন আশান্বিত হয় নি,আমাদের ছেলেমেয়েরা যোগ্যতা না বাড়িয়ে সার্টিফিকেটের পিছনে দৌড়াচ্ছে ; গতানুগতিক পড়াশুনা,অটোপাস  সার্টিফিকেট দিয়ে কি হবে ? আমাদের প্রতিবেশীরা টেকনোলজিতে নিজেদের অনেক এগিয়ে নিয়েছে,ওরা আমেরিকার বড় বড় পদে কাজ করে    – আমাদের ছেলেমেয়েদের চোখ খুলে দুনিয়ার ও নিজের দেশের অবস্থা বুঝে  তৈরী করতে হবে যাতে যে কোনো দেশে , যে কোনো পরিস্থিতে নিজেকে প্রতিযোগী হিসাবে দাঁড় করাতে পারে।   দেশের অতিরিক্ত জনসংখ্যা সমস্যা নয়,সমস্যা আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা।  সেদিন ফেসবুকে দেখলাম বাংলাদেশে (যদিও আমার বিশ্বাস হয় নি) একজন পিএইচডি প্রাপ্ত লোক সবজি বিক্রি করতেছে -এতে লজ্জার কি আছে ? আমাদের শিক্ষিত  বিভিন্ন পেশার লোক কানাডা,ইউরোপ, বা মিডল ইস্টের  রাস্তা পরিষ্কার করে,দেশে ডলার পাঠায়,সেই ডলার আমাদের চোর বাটপার বিদেশে নিয়ে স্থিত হচ্ছে   । কাজে কাউকে ছোট করে না , মানসিকতার পরিবর্তন করতে না পারলে -উন্নতি নেই।  একটা ছোট্ট কাহিনী বলছি  – অনেকদিন আগে (১৯৭৫-১৯৭৬ ) আমি ঢাকা থাকি।  আমার পরিচিত এক বড় ভাই লন্ডন থেকে ঢাকা এসেছেন  -বিয়ে করবেন ।   আমার স্ত্রীর এক বান্ধবীকে  (কোনো ব্যাংকের অফিসার) দেখানো হলো, মহিলা সরাসরি জিজ্ঞেস করে “আপনি লন্ডন  কি কাজ করেন ? ভদ্রলোক চুপটি মেরে রয়েছে  -মুখ খুলছেন না।…  কানাডার বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর বাবা প্রধানমন্ত্রী পিয়ার এলিয়ট ট্রুডো  এক সময় রেস্টুরেন্টে কাজ করতেন এবং জীবিত থাকাকালীন সময় ওই রেস্টুরেন্টে মাঝেমধ্যে খেতে যাইতেন।

“ওবামা যখন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট,তাঁর মেয়ে সাশা ওবামা  সামারে দিনে চার ঘণ্টা করে মার্থা’স ভাইনইয়ার্ডের একটি সামুদ্রিক খাবারের রেস্তোরাঁয় কাজ করতেন।”  তাঁর কি পয়সার অভাব ছিল ? কাজে মানুষের ইজ্জত যায় না, বরং দক্ষতা বাড়ায়।

সমাপ্ত  

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন