‘রাজার দোষে রাজ্য নষ্ট, প্রজা কষ্ট পায়’
এই প্রবাদ বাক্য ছোটকাল থেকেই শুনে আসছি,তবে সে সময় ভালভাবে এর অর্থ উপলব্দি করি নি। আজকাল চারিদিকের অবস্থা দেখে তা হাড়ে হাড়ে উপলব্দি করি।আমরা ইতিহাসে পড়েছি “রাজার ত্রুটির জন্য প্রজাদের অনেক দুঃখকষ্ট হয় “। মধ্যপ্রাচ্য ব্যতিত আজকালকের জগতে খুব কম দেশেই রাজার শাসন রয়েছে , প্রায় সব দেশে- ই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রাজ্য পরিচালনা করা হয়। তবে এই গণতান্ত্রিক পদ্দতি কতটি দেশে সঠিকভাবে মেনে চলে, তা বিভিন্ন দেশের জনগণ যারা ভোক্তভোগী বলতে পারবেন। তৃতীয় বিশ্বের অনেক দেশেই নাম মাত্র সংসদীয় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা থাকলেও বাস্তবে আমলাতন্ত্র বা রাজা-প্রজার শাসন ব্যবস্থা অতিক্রম করতে পারে নি। যে সব দেশগুলি স্বৈরাচারী সরকারের নির্মম অত্যাচারের দরুন দেশের জনগণ নিপীড়ণের শিকার, দেশ ছেড়ে পলায়ন করেছে, তন্মধ্যে সুদান,সোমালিয়া,লিবিয়া, সিরিয়া ও অনেক দেশ। এ সব দেশের সরকার প্রধান বা তাদের আমলা দেশের ধনসম্পদ লুটপাট করে বিদেশে ব্যাংকে জমা,বিদেশে বিনিয়োগ করে দেশকে দারিদ্রের খাতায় নাম লিখিয়ে দেশ ত্যাগ করে। যাদের খুঁজে পাওয়া যায় এবং আইনের আওয়তায় আনা হয়, মোটা অংকের ঘুষ দিয়ে আইনের ফাঁকফোকর এর মাধ্যমে শাস্তির বিনিময়ে বহাল তবিয়তে বাকি জীবন সুখে শান্তিতে থাকে; সব সময় ভোগান্তি যত সব স্বাধারণ নিরীহ জনগণের।
২ ) বিদ্রোহী যোদ্ধা ও জনতা সিরিয়ার ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের বাবা হাফেজ আল-আসাদের সমাধি ও মূর্তি (স্ট্যাচু), ভেঙ্গে পুড়িয়ে দিয়েছে।দেশের জনগণ প্রেসিডেন্ট বাসার আসাদ পালিয়ে রাশিয়ায় চলে যাওয়ায় স্বস্তির নিঃশাস পেলেছে এবং আনন্দ মিছিল করতে দেখা যাচ্ছে। তিন দশক ধরে বাসার আসাদের পিত হাফেজ আল আসাদ সিরিয়া লৌহ মুষ্টি দিয়ে শাসন করেছে,মৃত্যুর পূর্বে ছেলে বাসার আসাদকে ক্ষমতায় বসানোর ব্যবস্থা পাকাপাকি করে শেষ নিঃশাস ত্যাগ করেন। আসাদের মৃত্যুর পর পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে ২৪ বছর সিরিয়ার নেতৃত্বে দিয়েছেন । বাসার আসাদের শেষ ১৩ বৎসর শাসন আমল হত্যাযজ্ঞ দিয়ে চিহ্নিত। পরিস্থিতি শেষে সামাল দিতে না পেরে অবশেষে রাতের অন্ধকারে পালতে বাধ্য হয় । জনগণকে উপেক্ষা করে বা কঠোর হস্তে দমন করে যত বেশি সময় গদিতে থাকুক না কেন,শেষ পরিণতি ভালো হয় না। সিরিয়া ১৯৬৭ সনে প্রতিবেশী ইসরাইলের সঙ্গে যুদ্ধে হেরে গিয়ে “গোলান হাইটস” বেদখল হয়ে যায় এবং ও থেকেই দুই দেশ চরম উত্তেজনার মধ্যে আছে। দেশের বর্তমান সংকট পরিস্থিতিকে আরও গুরুতর সংকটে নিয়ে যেতে পারে।
৩ ) লিবিয়ার নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফি একজন সত্যিকারের আফ্রিকান হিরো ছিলেন, আফ্রিকান অখণ্ডতার রক্ষক এবং আফ্রিকান ঐক্যের যোদ্ধা ছিলেন। আফ্রিকা রাতারাতি উন্নত দেশগুলির কাতারে চলে আসবে এটা অনেক পশ্চিমা দেশ সহ্য করতে পারতো না। দেশের জনগণের জন্য যত ভালো কাজই করুক না কেন,মানুষের বাক স্বাধীনতা ছিল না ।
মুয়াম্মার গাদ্দাফিকে কেন হত্যা করা হয়েছিল? বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি তার উত্তরাধিকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে এবং অনেকে ভাবছে যে তিনি একজন স্বৈরশাসক নায়ক ছিলেন, দেশের লোক তাঁর বিরুদ্ধে কথা বলার অধিকার ছিল না। যারাই তাঁর বিরুদ্ধে কথা বলতে গেছে,তারাই জেল,ফাঁসির স্বীকার হতে হয়েছে। কেউ তাঁর সমালোচনা করুক তা তিনি পছন্দ করতেন না। ১৯৭৪ সালের ৯ নভেম্বর এক ভাষণে গাদ্দাফি বলেছিলেন- “আমি যে কোনো মুহূর্তে তাদের গণআদালতে পাঠাতে পারি; গণআদালত আইনের উপর ভিত্তি করে মৃত্যুদণ্ড জারি করবে, যদি কোনো ব্যাক্তি বা গুষ্ঠি রাজনৈতিক দল গঠন করে, তার বা তাদের ভাগ্যে মৃত্যুদণ্ড ” । লিবিয়ার জনগণের বাকস্বাধীনতা ছিল না ,অপরদিকে আরব বিশ্বের জনগণ আজকাল রাজতন্ত্র বা স্বৈচারী সরকার চায় না। তারা দুনিয়ার সবার মতো স্বাধীন হতে চায়। কোনো দেশেই স্বরাচারী সরকার যুগের পর যুগ টিকে থাকে না,এক সময় জনগণ উচ্ছেদ করে।
সমাপ্ত