ভারতীয় হিন্দি সিনেমা জগতের সম্রাট অমিতাভ বাচ্চনকে এক মহিলা  প্রশ্ন করেছিল: “সে যুগে তোমাদের স্কুলজীবন কেমন ছিল ? ” সে জবাবে বলেছিলো “আমাদের স্কুল জীবন হালাত  বহুত-হি  খারাবা  থা -বেত,থাপ্পড়,বেঞ্চে দাঁড়ানো,নীলডাউন, কান ধরে উঠ- বস করান- এ সব-হি থা। ”  শুনে অগণিত শ্রোতা  চিৎকার করে হাঁসতে থাকে । 

সে যুগের স্কুল জীবন কেমন ছিল, এ সম্পর্কে লিখতে গেলে এখনও আমার  ভয় হয়,যদি ও আমি পড়াশুনা না করে কখনও শ্রেণী কক্ষে যাইতাম  না।  আমাদের স্কুল জীবন প্রাথমিক বা  উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণী কক্ষে  শিক্ষকের হাতে বেত থাকবে না,এটা অকল্পনীয়  ।     হেডমাস্টার সাহেব স্কুল কক্ষের সামনে দিয়ে বেত নিয়ে ঘোরাঘুরি করলে ছেলেমেয়েরা ভীত হয়ে পড়তো , প্রতিটি শ্রেণীকক্ষে  টেবিলে বেত থাকা -ওটাই ছিল নিয়ম।  আমাদের সময় শ্রেণীকক্ষে একজন টিচার আসতেন হাতে বেত নিয়ে, তাঁকে দেখেই আমরা ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে এদিক সেদিক না তাকিয়ে বই খুলে নিচের দিকে তাকিয়ে থাকতাম।  অন্যদের পড়াশুনা না করলে ও এই শিক্ষকের পড়া না শেষ করে আমি রাতে ঘুমাতে যেতাম না।  উনি ক্লাসে ঢুকেই হাতের লেখা দেখতেন, কেউ লেখা না আনলে ওর পড়াই আগে  শুনতেন , পড়া শিখে নাই,অমনি বেতের শাসন শুরু হয়ে গেলো।  এমন ভাবে বেতের পিটানি-  দুই চারদিন জ্বরে ভুগতে হতো ।  তাছাড়া বেঞ্চে  দাঁড় করানো সে আর এক ধরণের শাস্তি।কানে ধরে উঠ-বস, নীলডাউন, এ  ধরণের শাস্তি যা ছিল কষ্টকর ও  অন্য্ ছাত্রদের সামনে লজ্জা দেয়া ।

সে যুগে ম্যাট্রিকুলেশন  পরীক্ষায় পাশ করা কঠিন ছিল,যারাই ফেল করতো তারা দ্বিতীয়বার,বা তার অধিক, পরীক্ষা দিতে হতো।  আমরা অনেকেই আদু ভাইয়ের গল্প শুনেছি, তবে সে সময়ের সঙ্গে এর মিল ছিল। ১৯৬২ এর পর থেকে পড়াশুনা ও পরীক্ষা সিস্টেম পরিবর্তন হওয়াতে অনেক ছেলেমেয়ে পাশ করার সুযোগ পেয়েছে ।

একজন হুজুর ছিলেন,ওনাকে ঢিলাঢালা হুজুর বলা হতো, লম্বা পাঞ্জাবি ও লুঙ্গি পড়তেন ,ছেলেরা ওনাকে মানতেন না, শ্রেণীকক্ষে  বেশি শোরগোল হতো , উনি পাঞ্জাবির নিচে বেত লুকিয়ে শ্রেণীকক্ষে  যাইতেন।  উনি বেতের  সদ্ব্যবহার করলে ও কোনো ফল হতোনা, ছেলেরা কথা শুনতো না ।  

তবে সে সময় যারাই স্কুলে পড়াশুনা করেছে, নিজেদের চেষ্টায়, বাড়িতে কোনো শিক্ষকের সাহায্য নেয়া,সম্ভব হতো না।  আমি অনেক সময় কোনো কিছু না বুঝলে অনেকদূর হেঁটে উপরের শ্রেণীর কোনো ছাত্রের নিকট গিয়ে জানতে চেষ্টা করতাম।  

সমাপ্ত  

 

পূর্ববর্তী নিবন্ধমেন্টাল হেলথ প্রাকটিস কেস স্টাডি
পরবর্তী নিবন্ধ“জেন-জি”: এ জার্নি ফ্রম এক্স টু জেড- পর্ব ৭
নজরুল ইসলাম
নজরুল ইসলাম - জন্ম:- ১৯৪৮ সাল । এনায়েতপুর, কচুয়া, চাঁদপুর, বাংলাদেশ। শিক্ষা:- এম, কম ( ব্যাবস্থাপনা ), ঢাকা ইউনিভার্সিটি। এম, এ (অর্থনীতি ) জগন্নাথ ইউনিভার্সিটি। চাকুরী জীবন:-ইসলামাবাদ, পাকিস্তান,বাংলাদেশ, নাইজেরিয়া,আমেরিকা ও কানাডা। বর্তমানে :- অবসর জীবন- কানাডাতে। ছাত্রজীবন থেকেই লেখালেখির শুরু। প্রকাশিত বই:-আমার সংগ্রামী জীবন,সাদা ঘোড়া,জীবন চক্র,শুচিতা ও জীবনের মুখোমুখি।

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন