মাঝরাতে হঠাৎ করেই কেন জানি ঘুমটা ভেঙ্গে গেল..
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি রাত ১২:৩৪..
হঠাৎ কেন যেন মনে হলো ঘড়িটা চলছে না…ভালো করে পরখ করতেই বুঝলাম ঘড়ির ব্যাটারি শেষ,,ঘড়িটা আসলে চলছে না…
একরাশ বিরক্তি প্রকাশ পেল চোখে মুখে..বেড সাইড টেবিলের উপরে মোবাইলটা হাতড়াতে লাগলাম..কিন্তু সেখানে কোন মোবাইল খুঁজে পেলাম না..
আস্তে আস্তে বিছানা থেকে নামলাম..
মুখটা কেন যেন তেতো লাগছে..পানির বোতলে একফোঁটাও পানি পেলাম না,,তাই নেমে গিয়ে ডাইনিং রুমের দিকে হাঁটতে লাগলাম..
কেমন যেন একটা বিষণ্ণ গুমোট ভাব রুমগুলোতে আজ ভর করেছে..আবছা আবছা আলোছায়া চোখে পড়ছে..ইলেকট্রিসিটি নেই মনে হয়,,মুখ দিয়ে খিস্তি বের হতে চাইলো কেন জানি…চন্ডাল রাগের মূহুর্তে
আজ কত তারিখ মনে করতে পারলাম না..
ঘুম থেকে উঠার পর মাথাটা যেন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে..
আমি কি অনেকক্ষণ ঘুমিয়েছি নাকি অনেকদিন ধরে ঘুমিয়েছি সেটাও মনে করতে পারলাম না…ডাইনিং রুমের পাশে কিচেনে গেলাম..আধো আলোতে হাতড়াতে হাতড়াতে চুলার পাশে গিয়ে চুলা জ্বালানোর জন্য চেষ্টা করলাম..কয়েকবার চুলার চাবিটাকে ঘুরানোর চেষ্টা চলছে তবুও জ্বললো না…পরে বুঝতে পারলাম যে গ্যাস নেই চুলোয়..
কি একটা অবস্থা…!!গ্লাসে নেই, জগে নেই পানি, নেই গ্যাস আমি কি মরুভূমিতে নাকি,,নিজেকে নিজেই জিজ্ঞেস করলাম…
আবারো আমার রুমে চলে আসলাম..
আমার ঘরটা মনে হচ্ছে কবরস্থানের পাশেই।আমার চেনা পরিচিত কবরস্থান। এটা কানাডার বিশাল জায়গা জুড়ে সমানতর না।এটা মাটির ঢিপি করা একটু উঁচু করে কবর দেওয়া চারপাশে। এটা তো সেই চেনা জায়গা আমার যেখানে সবার অগোচরে একা লুকিয়ে যেতাম। টুটপাড়া কবরস্থান। আমার ঘর এখানে কেমন করে…
আমার রুম এবং সেদিকে মুখ করা যে জানালাটি সেটির পর্দাগুলো দুহাত দিয়ে সরিয়ে দিলাম..চাঁদের সাদাটে আলো আমার রুমে যেন আবছা নীলের আবেশ তৈরি করছে… সাদাটে দূর করে,,
আমার ঠিক পিছনেই আমার বিছানা,,সেদিকে তাকিয়ে দেখলাম আমার ভিতর দিয়ে যেন চুঁইয়ে চুঁইয়ে আলো প্রবেশ করছে..
ব্যাপারটা ঠিক বুঝতে পারলাম না আমি…
আমি কি মরে ভূত হয়ে গিয়েছি নাকি…?
কারণ হঠাৎ মনে পড়লো,,
আত্মা বা অশরীরীর ভিতর দিয়েই আলো ছেদ করে চলে যেতে পারে..হি হি হি আজ কি তবে আমি থ্রিলার মুভি দেখেছি???
আপন মনেই হাসা শুরু করে দিলাম আমি..
যাহ,,এইটা আবার হয় নাকি…?
নাকি ঘুমের আগে আমি মাতাল হয়ে তারপর ঘুমিয়েছি..?
মাতাল কিভাবে হলাম,,, মাতাল হবার সাধ যে রয়েই গেলো আজীবন ভালোবাসার ছলে… হতে চেয়েও পাইনি হতে উদ্দাম মাতাল,,,
বিছানার দিকে এগোতে গিয়েই,,আমার চোখ গরম হয়ে গেলো,
গায়ের লোমগুলো হিড়হিড় করে দাঁড়িয়ে পড়লো হঠাৎ করেই..
মুখ দিয়ে বীভৎস এক চিৎকার বের হয়ে গেল আমার অজান্তেই,,কিন্তু কোন আওয়াজই বের হলো না..
একটা রক্তাক্ত লাশ পড়ে আছে আমার বিছানার উপরে..
গলাটা দুফাঁক হয়ে হাঁ হয়ে আছে..চোখ রক্ত বর্ণ..
সাদা চাদরে এখানে সেখানে ছোপ ছোপ কালচে রক্ত দিয়ে যেন নকশা রঞ্জিত করেছে..
গলার ডান পাশ দিয়ে গলগল করে এখনো রক্ত বের হচ্ছে,,আমি কি এতোক্ষণ লাশের পাশেই ঘুমিয়েছি…?
আমার পাশের ঘুমের সঙ্গী ছিল কী,,
রক্তাক্ত একটা লাশ…? চিনতে পারছি না কেনো আমি? এ কে ??? আমি কি তবে খুন করেছি…? আমি কি তবে খুনি ? খুনের নেশায় কি আমি দিশেহারা?
মুখ দিয়ে বমি বের হতে চাইলো কেন যেন..!! উফ্ কি ভয়ংকর উদ্ভট উটকো গন্ধ,,,
বিছানায় লাশের পাশেই মোবাইলটি দেখতে পেলাম..
৯১১ এ কল দিয়ে ইমার্জেন্সি সাহায্য চাইবো পুলিশের কাছে…ঠিক হবে কি,,, হাতে মোবাইল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। প্রচন্ড শীত লাগছে, সারা শরীর কেমন লাগছে, আমি কি আমাকে ধরে রাখতে অক্ষম? পুলিশ ডাকবো? কানাডার পুলিশ গুলোকে দেখলেই কেমন ভালো লাগা অনুভূতি হয়। পুলিশ দেখলে বিরক্ত লাগে আমাদের দেশের। এক একটা চুনোপুঁটি। এমনি আমি কেনো জানি সর্ট টাইপ দেখতে পারি না। তার মধ্যে পেট মোটা গোলগোল। মনে হয় গাছের ডাল ভেঙে ধাওয়া করি। এরা সামনে আসলে গ্যালিভার মনে হয়, তারপরও চোখ বলে তাকিয়ে থাক যতক্ষণ পারিস। আচ্ছা কল করবো???
কিছুক্ষণ পর দূরে সাইরেনের আওয়াজ শুনতে পেলাম..বুঝতে পারলাম পুলিশের গাড়ী আসছে..সাথে এম্বুলেন্স, তার সাথে ফায়ার সার্ভিস এর গাড়িও। এদের এই এক কিম্ভুত কান্ডকারখানা। একজন কে ডাকলে তিন জন এসে হাজির।
সদর দরজার ওপাশে ঘ্যাঁচ করে ব্রেক কষার আওয়াজ শুনে মনটা কিছুটা হলেও শান্ত হলো…
ইংরেজিতে কি সব বললো, মাথায় ঢুকছে না, ঘাবড়ে গেলে আমার মাথায় কিছু ঢুকেও না, মুখ থেকেও কিছু বের হয় না। মনে হয় বলছে,
— স্যার ফোনের লোকেশনে এবং লোকটার বলা ঠিকানাটা কিন্তু এই বাড়ীটাকেই নির্দেশ করছে..
~~ কিন্তু এটা তো অসম্ভব,,কারণ দু সপ্তাহ আগেই এই বাড়ী থেকেই একজন পুরুষের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে বাড়ীটাকে সিলগালা করে দিয়েছিলাম..
তাহলে কিভাবে এই স্থান থেকে ফোন আসতে পারে…?
সেকেন্ড অফিসার নির্দেশ দিলো সবাইকে,,
বাড়ীর চারপাশে ঘুরে দেখতে এবং তালাগুলো সিল করা আছে নাকি তাও চেক করে নিতে…
কিন্তু কোন পুলিশ সদস্যই কোন প্রকার ত্রুটি খুঁজে পেল না কোথাও…
এই নিয়ে চারবার হলো,,
এমন ভূতূড়ে ফোনকলে সাহায্য চাইছে কেউ,,
কিন্তু এই সাহায্যটা একমাত্র এই পরিত্যাক্ত বাড়ীটা থেকেই চাওয়া হয়…
আর কেসটা এখনও অমীমাংসিত হয়ে পড়ে আছে,,
ক্লোজড হয়নি বা করতে পারে নি..
— অফিসার যেন নিজেকে নিজেই জিজ্ঞেস করে উঠলো,,
এই ফোন কলগুলো তাহলে করে কে মেয়েলি কন্ঠ।
আত্মা বা অশরীরী বলে আসলেই কি কিছু আছে…?কিন্তু মেয়েটি কে… নিজে ই বলে খুন করেছি আমি, আবার নিজেই সাহায্য চায় বাঁচার,,, কে সে…
— বিছানার চাদর সম্পূর্ণভাবে ঘামে ভেজা। কেউ পানি ঢেলে দিয়েছে এমন। অবচেতন মনের হয়ত কোন একটা প্রতিশোধ বারে বারে হানা দেয় স্বপ্নের রাজত্বে…
—- তাকিয়ে দেখে সঠিক সময় ভোর রাত ৪ঃ৪৫ মিনিট
****কোন একজন সাইকোপ্যাথিক**** ®
নীলিকা নীলাচল***