টরন্টোতে গ্রীষ্মকালীন সবজি চাষের মৌসুম শুরু হয়েছে। প্রতি বছর এই সবজি চাষের প্রতি মানুষের আগ্রহ বেড়েই চলেছে। ঘরের আঙিনা থেকে শুরু করে ফ্ল্যাটের ব্যালকনিতে হচ্ছে সবজি চাষ। সবজি চাষের সঠিক পদ্ধতি আর পরিচর্যা নিয়ে হচ্ছে ওয়ার্ক শপ। এই বিষয়ে অগ্রনী ভূমিকা রেখেছেন অবাকান। অবাকানের একটি ওয়ার্ক শপে আমার পরিচয় হয় কৃষিবিদ জনাব কুতুব উদ্দিনের সাথে।
জনাব কুতুব উদ্দিন ১৯৮৭ সালে ময়মনসিংহের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতোকত্তর ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯৯১ সালে কেয়ার আর একটা প্রজেক্টয়ে প্রথম চাকরী শুরু করেন। ওই বছর সাইক্লোনের পরে কোস্টাল এরিয়ায় উইন্ড বেরিয়ার তৈরির কাজ করছিলো ওই প্রজেক্টটি। সেখানে ১টি হোমে ১০টি ফ্যামিলির জন্য ১০০টি করে ১০০০টি চারা বিতরন করা হয়েছিল।এই রূপে ১০টি Homestead Nursery নার্সারি করা হয়েছিল। ১৯৯৩ সালে মাস্টার ডিগ্রী লাভ করেন,এর পরে ১৯৯৫ সালে DAE (Department of Agricultural Extension ) এ Horticulturist হিসাবে কাজে যোগদেন। ১৯৯৫ থাকে ১৯৯৭ পর্যন্ত ঢাকার আসাদগেটে “ফলবীথি ” মিউজিয়ামের দায়িত্বে ছিলেন একই সময় গুলশানের Horticulture Center আর দায়িত্বও পালন করেন তিনি। ১৯৯৭ সালে ডেপুটি ডিরেক্টর হিসাবে সীডস সার্টিফিকেশন এজেন্সিতে যোগ দেন। তারপরে ২০০১ সালে সপরিবারে কানাডার উদ্দেশ্যে দেশ ছাড়েন।
২০০২ সালে হর্টিকালটারিস্ট হিসাবে টরন্টো zoo তে কাজে যোগদেন। সার্থকতার সাথে Zoo তে কাজ করার পরে City অফ Toronto তে হর্টিকালটারিস্ট হিসাবে কাজে যোগদেন আর অদ্যবদি সেখানে কাজ করছেন।
কথা হচ্ছিলো জনাব কুতুব উদ্দিন সাহেবের ব্যাক ইয়ার্ডে বসে। জানতে চাইলাম “কেন এই কৃষিবিদের পেশা বাঁচে নিলেন ?”
বললেন, তিনি ছোটবেলা থেকেই বৃক্ষ – প্ৰেমিক ছিলেন। মূলত ওনার দাদার অনুসারিত পথ ধরেই আজ একজন সার্থক কৃষিবিদ। ক্লাস সেভেন থেকেই শুরু করেন সবজির বাগান। শুরুতে টমেটো , কাঁচা মরিচ আর ধনে পাতা দিয়ে শুরু হয়েছিল এই কৃষিবিদের পথযাত্ৰা। ১৯৮৫ সালে পেপে গাছের চারা দিয়ে বাড়ীর আঙিনায় শুরু করেন প্রথম নার্সারী। ১৯৮৫ সালে ময়মনসিংহের গৌরীপুরে ৫ একার জমির উপর ১৮০০০ নারিকেল চারা লাগিয়ে শুরু করেন তার মেগা প্রজেক্ট। বর্তমানে প্রতিটি নারিকেল গাছেই ফলন হচ্ছে।
২০০৬ সালে আগ্রহি হলেন-কি ভাবে এদেশে বাংলাদেশী সবজির চাষ করা যায়। শুরু করেছিলেন শুধুমাত্র লাল শাক দিয়ে। তখন বাংলাদেশী দোকান গুলির ৮০% লাল শাক উনিই সরবরাহ করতেন বলে জানালেন। সেই থাকে শুরু আর চলছে আজ অবদি । তবে এখন আর তা লাল শাকের মধ্যে সীমাবধ্য নয়। আছে নানা প্রকার দেশী সবজি আর ফল। প্রতি বছর সিটিকে বরাদ্ধকৃত জমিতে চাষ করছেন এই সকল সবজির।
জানালেন চারা রোপনের পরে তার পরিচর্যা অত্তান্ত জরুরি। জানালেন ক্যামিকেল সারের পরিবর্তে সিটি থেকে বিনামূল্যে সরবরাহকৃত কম্পোস্ট বেশি উপকারী।
জানতে চাইলাম বীজ থাকে চারা তৈরির উপযুক্ত সময় কোনটি ?
বললেন , মূলত এইটা নির্ভর করে নিদিষ্ট ফসলের উপর। যেমন লাউ ছাড়া রোপন থেকে ফুল হোকে সময় লাগে ১২০-১৪০ দিন।
ওনার বীজতলায় অনেক রকম দেশি সবজির চারা দেখলাম। সবগুলোই বিক্রয়ের জন্য রাখা। এখান থেকে চারা সরবরাহ করেন বিভিন্ন বাংলাদেশী দোকানগুলিতে।আপনি চাইলে ওনার বাসা থেকেই কিনতে পারেন এই সব চারা। ছাড়া কেনার সময় উনি তার পালন আর পরিচর্যার বিষয় উনি পরামর্শও দিয়ে থাকেন। এ ছাড়াও পারিশ্রমিকের বিনিময়ে আপনার বাসায় এসে আপনার জমিন পরীক্ষা করে , তার উপযোগী সবজি চাষের বিষয়ে পরমার্শ দিয়ে থাকেন। এ জন্য উনি ৪০ ডলার চার্জ করেন।
চারা সংগ্রহের জন্য বা পরামর্শের জন্য যোগাযোগ করুন : –
কৃষিবিদ কুতুব উদ্দিন শামীম
ফোন :- ৪১৬ ৯৩৯ ৮৬১৯
কৃষি বিষয়ে চমৎকার লেখা. শামীম ভাই কে নিয়ে লেখাটির জন্য ধন্যবাদ হাফিজুর রহমান ভাই. শামীম ভাই-এর কল্যানে প্রবাসে সবজি বাগান আরো প্রসারিত হোক, এই কামনা করি.