বিদ্রোহের অনেক রূপ, ,সবচেয়ে বড় বিদ্রোহ হলো আত্মবিদ্রোহ। আত্মবিদ্রোহীরা নিরাপদ, শ্লোগান দেয় না, পিকেটিং করে না, নেশা করে না, কাউকে বিরক্ত করে না । আন্দোলন তার নিজের সাথে, নিভৃতে নিরবে।রাশেদ আত্মবিদ্রোহী।
বুদ্ধিমানরা আত্মবিদ্রোহী হয় না, সমস্যা দুঃখ কষ্ট টোকা দিয়ে ঝেড়ে ফেলে, হঠাৎ কাপড়ে লেগে যাওয়া ঝুলকালির মতো। বোকারা হয়। সব বোকারা জানে না , সে বোকা, কিন্তু রাশেদ জানে সে বোকা ।।।
…..মধ্যরাত, বিদ্রোহী রাশেদ রাজপথে। একদিকে রমনা পার্ক অন্যদিকে শহীদ সরোয়ার্দী উদ্দ্যান । একদিকে প্রেম অন্যদিকে বিদ্রোহ, মাঝখানে রাস্তা।
রাশেদ হাঁটছে। গভীর রাতে পৃথিবীর রূপ অন্য রকম, নিরব শান্ত। কেউ কি জানে ? দিনের পৃথিবী বর্তমান কে নিয়ে হৈ চৈ করে, আর রাতের পৃথিবী কাঁদে তাদের জন্য, যারা একসময় তার বুকে ছুটে বেড়াতো স্বপ্ন ভরা জীবন নিয়ে।
চারজন টহল পুলিশ তাকে উপেক্ষা করে পাশ কেটে চলে গেল। ওরাও হয়তো জানে সে বোকা, বোকারা পুলিশের কার্যক্রমের আওতায় পড়ে না । অপরাধীরা বুদ্ধিমান হয়। ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট সামনে ওভারব্রিজের নিচে আসতেই একজন এগিয়ে এলো, যাবেন স্যার?
-কোথায় ?
* ঐ যে ওভারব্রিজের উপরে। এক্কেরে কম বয়স। খুশি হয়ে যা দেন।
রাশেদ নিরুত্তর। একটা রুক্ষ নারী কন্ঠ ব্রীজের এপ্রোসে দাঁড়িয়ে চাপা চিৎকার দিল, ছাইড়া দে, ওডা মফিজ ।
রাশেদ হাঁটছে আর ভাবছে, নারী কন্ঠ ওকে মফিজ বললো কেন? মফিজ মানে কি বোকা ?
মৎস্য ভবন মোড়। সাদা একটা মাইক্রোবাস দাঁড়িয়ে, মাঝের দরজা খোলা, ভিতরে কয়েকজন। সামনের দরজা খুলে একজন নেমে পথ আটকালো, তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে প্রশ্ন করলো কোথায় যাবেন ? …জানিনা। গাড়িতে উঠুন। রাশেদ গাড়িতে উঠলো, ভরাট কন্ঠ চালককে হুকুম দিলো… চলো।
গাড়ি চলছে, ওয়াকিটকির সাংকেতিক ভাষা শুনে রাশেদের মাথাটা ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। দুইজন দুপাশে, মাঝে সে …ঠিক সামনেই আরো দুজন ফিসফিস করছে।কেমন একটা ঘোরলাগা পরিবেশ,ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ে অশনি সংকেত, তার সঙ্গে কি বন্দুক যুদ্ধ হবে? সকালে খবরের কাগজে বের হবে, পুলিশের সাথে বন্দুক যুদ্ধে নেপথ্য গড ফাদার রাশেদ নিহত!!!!
…..আশ্চর্য!! গাড়িটা ঠিক তার বাসার গেটে থামলো।… নেমে আসুন, ভদ্রলোক হাত বাড়িয়ে হাতটা ধরে বললেন, এত বোকামী করিস্ কেন ? যা বাসায় যা,পারলে জীবটা বদলে ফেল।…আমি আসি।
ওরা চলে গেছে। লিফট বন্ধ, রাশেদ সিঁড়ি বেয়ে উঠছে আর ভাবছে, কে এই পুলিশ কর্মকর্তা? তাকে “তুই” করে বললো কেন ? তার বাসা চিনলো কিভাবে ? সিঁড়িতে হালকা হোঁচট খেয়ে চিন্তাটা ছিন্ন হলো …….।
লক খুলে ফ্ল্যাটে ঢুকে সোজা কিচেনে। বেশ সময় নিয়ে দুই মগ কফি বানালো।
সেন্টার টেবিলের উপর দু’মগ কফি বাষ্প হয়ে উড়ছে, ক্লান্ত শরীর সোফায় এলিয়ে তন্দ্রায় হারালো রাশেদ। কেমন একটা সাদাকালো স্বপ্ন,, গোয়েন্দা পুলিশ কর্মকর্তা বন্ধু রফিক কে চিনতে পারলো। সহপাঠী রফিক, শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন ছিলো, মানুষ গড়ার কারিগর হবে। এখন নষ্ট মানুষ নিয়ে ঘাটাঘাটি করে।…ফিক হাসছে, পুলিশ হলেও হাসিটা সুন্দর।
….কি রে তুই দুই মগ কফি বানাইলি ক্যান ?,
……মলিন হেসে রাশেদ বললো,
বোকারাই দুই মগ কফি বানায় ,,,,,,,
বোকারা কখনো জীবন বদলায় না ,,,,
নিয়তি বদলানো যায় না, ,,,,,,,,,
তুই আমি সে তিনি, ,,সব পূর্ব নির্ধারিত ।।।