এক
রাফি অফিসের কাজ শেষ করে ৫টার দিকে মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকা থেকে পূর্বাণী হোটেল পার হতেই এক ছিন্নমূল রুগ্ন ৩০/৩৫ বয়স্কা মহিলা ও তার ছেলে মেয়ের সামনে পড়ে। মহিলার পরনে ছেড়া বস্ত্র, মনে হয় বহু দিন না খেয়ে শরীরে শক্তি নাই । খানিক দাঁড়িয়ে থেকে লক্ষ করলো, হোটেল পূর্বাণীর (গার্বেজ বিন ) আবর্জনা থেকে কি যেন তুলে খাচ্ছে ও ছেলে মেয়েদের দিচ্ছে । সে একটু দাঁড়িয়ে দেখলো ছেলে মেয়েরা তৃপ্তি সহকারে হাড়ও উচ্ছিষ্ট খাবার তুলে খাচ্ছে । রাফি খানিকটা দীর্ঘ নিঃশাস পেলে পকেট থেকে দু’টা টাকা বের করে মহিলার দিকে এগিয়ে গেলো এবং তার মেয়ে হাত বাড়ায়, ওর হাতে দিয়ে আস্তে আস্তে স্টাডিয়ামের পূর্ব গেট দিয়ে ঢুকে । স্টেডিয়াম ভর্তি বিভিন্ন দোকান এবং লোকজনের ভিড় ঠেলে সে আস্তে আস্তে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। আজ একটু তাড়া,সাদিয়া বাজারের ফর্দ দিয়েছে। পশ্চিম গেট দিয়ে বের হয়ে সে বংগো বনন্ধু এভিনিউ দিয়ে নবাবপুরের দিকে হাটতে শুরু করলো । স্টেডিয়ামে আজ মুহাম্মাদান ও আবহানীর খেলা এবং খেলার ভক্তরা লাইন ধরে ভিতরে ঢুকছে। রাফির ওই দিকে কোনো খেয়াল নেই,তার মনে ব্যথা অনুভব হচ্ছে এবং ওই মহিলা এবং তার দুই বাচ্চার স্মৃতি বার বার চোখের সামনে ভেসে উঠছে। স্টেডিয়ামের রেস্টুরেন্ট ও অন্যান্য দোকানপাট এবং বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ দিকের এই জায়গাটা সব সময় ভিড় থাকে, রাস্তার দু’ পাশে আরও কঙ্কাল সার লোক যারা প্রতি দিন এখানে পড়ে থাকে,কে কার খবর রাখে? কিছু সংখক লোক হাত ভাঙা,পা ভাঙা এ জাতীয় লোকদের নিয়ে পয়সা উঠায় এবং এটা তাদের এক জাতীয় ব্যবসা । রাস্তার পশ্চিম পার্শে গুলিস্তান সিনেমা হলের ওই দিকটায় আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের একটা গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে, মনে হয় হয়তো কোনো লাশ নিতে এসেছে । সে ঐদিকে খেয়াল না করেই এগিয়ে যাচ্ছে ঠাটারী বাজারের উত্তর গেটের দিকে । সাদিয়ার দেয়া বাজারের ফর্দটা পকেট থেকে বের করে আর একবার দেখে নিল। বাজার করে গেলে,সাদিয়া রান্না করবে,সাদিয়া বাসা থেকে লিখে ফর্দ দিয়েছে চাল,এক হালি ডিম্,মাছ ও কিছু সবজি নিতে । ঐদিকে খেয়াল নাই,ঘুরতে ঘুরতে এবং ভাবতে ভাবতে কিছুটা দেরি হয়ে গেলো । বাসায় গেলেই প্রশ্ন হবে ,” তোমার মতিঝিল থেকে অফিস সেরে বাজার করে আসতে এত দেরি কেন হলো?” সাদিয়া জানে রাফি কখন ও অযথা দেরি করে না, হয়তো ভাববে অফিসের বড়ো সাহেব কোনো কাজে পাঠিয়েছে । রাফি ঠাটারী বাজারের উত্তর গেট দিয়ে ঢুকে প্রথমে চাল, পরে এক হালি ডিম্, কই মাছ ,কাছ কলা এবং কিছু ফুই শাক কিনে একটা রিক্সা নিয়ে রেঙ্কিং স্ট্রিট দিয়ে বাসার দিকে রওয়ানা হলো । মনে তখন ও দোলা দিতেছিল রাস্তার সে সব দৃশ্য যা তাকে সচরাচর ব্যাথিত করে। টিপু সুলতান রোড পার হয়ে গুপিবাগ, একটু পূর্ব দিকে গিয়ে মসজিদের কাছে নেমে সরু লেন দিয়ে হেটে যেতে পাঁচ মিনিট লাগবে । ওই সরু লেন দিয়ে কোনো রকমে দুইটা লোক পাশা পাশি হাটতে পারে কিন্তু এত সরু যে একটা রিক্সা যেতে পারে না । এই মহল্লার সরু লেন গুলিতে এমন ভাবে দুই দিকে বিল্ডিং উঠানো হয়েছে যে মানুষের স্বাভাবিক চলাচলের জন্য ফাঁকা জায়গা রাখা হয়নি।
রিক্সা বিদায় করে রাফি সরু লেন দিয়ে বাসার লোহার গেটে পৌঁছতেই থমকে দাঁড়ালো,ভিতরে কিছু লোক এবং মেয়েলি কান্নার আওয়াজ শুনা যাচ্ছে । কিছু লোক তার বাসার সামনে জড়ো হয়ে কি যেন কি আলাপ করতেছে । সে ভিড় ঠেলে বাসায় ঢুকে দেখে সাদিয়া কাঁদতেছে । ওকে দেখে সাদিয়া জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো ,”বাবা এক্সিডেন্ট করেছে!” ও আর কিছুই বলতে পারছে না । রাফি সাদিয়াকে জড়িয়ে ধরে শান্তনা দিতে চেষ্টা করলো। কিন্তু সাদিয়া চিকৎকার করতেছে, বাড়িওয়ালি ফুলজান বেগম সাদিয়াকে থামানোর চেষ্টা করতেছে । ফুলজান বেগম ওকে সান্তনা দেবার চেষ্টা এবং তার মাথায় একটু পানি ও তেল দিয়ে বিছানায় নিয়ে শুয়ে রাখার ব্যর্থ চেষ্টা করতেছে। কিন্তু তার চিৎকার থামানো যাচ্ছে না। ” বাবা তুমি আমাকে একা রেখে যেও না । ” বিনিয়ে বিনিয়ে কাঁদতেছে । কিছুক্ষন পর আস্তে আস্তে সে শান্ত হয়ে বলে যে তার বাবা তেজগাঁও অফিসের কাজ শেষ করে বাসে উঠতে গিয়ে ধাক্কা ধাক্কিতে নিজেকে সামলাতে পারেনি । পা পিছলে পড়ে গিয়ে মাথায় প্রচন্ড আঘাত পায় ,অজ্ঞান অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ইমার্জেন্সিতে নেয়া হয়েছে । তার এক সহ কর্মী সাকিব ওকে হাসপাতালে রেখে বাসায় এসে বাড়িওয়ালির ছেলে ওয়াজেদকে আকসিডেন্টের খবর দিয়ে পুনরায় হাসপাতালে চলে গিয়েছে, এখন কি অবস্থায় আছে কেউ কিছু বলতে পারে না । রাফি হাতের বাজার ফুলজান বেগমকে দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে মেডিক্যালের দিকে রওয়ানা দিলে বাড়িওয়ালির ছেলে তাকে শান্ত করিয়ে বলে,” তুমি চুপ করে বস এবং সাদিয়াকে নিয়ে বাসায় থাকো এবং পরে যাও” এই বলে ওয়াজেদ এবং তার ছোট ভাই নাসিম হাসপাতালে চলে গিয়েছে । রাফি জানে ,সাদিয়া মা হারানো মেয়ে,তাকে যে কোনো পরিস্থিতে সামলানো কঠিন হবে। খানিকটা রেস্ট নিয়ে সাদিয়াকে বলে,চলো হাসপাতালে যাব। ঘন্টাখানেক শান্ত হওয়ার পর রাফি সাদিয়াকে নিয়ে হাসপাতালে গিয়ে সাকিবকে পেয়ে জানতে পারে যে রেদওয়ান আহমেদ কিছুক্ষন হয় দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছে। সাদিয়ার কান্না থামানো কঠিন,” বাবা তুমি ও আমাকে একা রেখে চলে গেলে! ”
রেদওয়ান আহমেদ করাচী,তদানীন্তন পশ্চিম পাকিস্তানে কাজ করতো । তার স্ত্রী ও এক ছেলে পূর্ব পাকিস্তানে রেখে একা করাচী ছিল । রেদওয়ান আহমেদ করাচিতে থাকা কালীন সময় ফৌজিয়া নামে এক মহিলাকে বিয়ে করে । সেখানে তার এই মেয়ে সাদিয়ার জন্ম । ১৯৭১, পূর্ব পাকিস্তান আলাদা হয়ে বাংলাদেশ নামে জন্ম হয়। দেশ সবে মাত্র ভাগ হয়েছে এবং সে অবস্থায় রেদওয়ান আহমেদ কি সিদ্ধান্ত নেবে দেশে চলে আসবে অথবা করাচি, পাকিস্তানে তার স্ত্রী ফৌজিয়া এবং কন্যাকে নিয়ে থাকবে ? এ দিকে তার আর এক স্ত্রী,ছেলে এবং মা বাবা বাংলাদেশে । এই ছোট্ট মেয়ে সাদিয়াকে যে ভাবে স্নেহ মায়া মমতা দিয়েছে , তাকে ছাড়া তার একমুহূর্ত ও থাকা সম্ভব নয়। সে প্রথমে তার স্ত্রী ফৌজিয়া এবং তার আত্মীয় স্বজনকে বুঝাতে চেষ্টা করেছে যে সে বাংলাদেশে চলে যাবে, ফৌজিয়া এবং একমাত্র মেয়ে সাদিয়াকে করাচিতে রেখে যাবে না। কিন্তু উর্দু ভাষী ফৌজিয়া কোনো মতেই করাচী ছেড়ে ঢাকা আসতে রাজি নয় বরং তারা তাকে করাচী থাকতে বাধ্য করতে চেষ্টা করেছে। উপায়ন্তর না দেখে রেদওয়ান সিদ্ধান্ত নিলো যে সে না বলে তার মেয়েকে নিয়ে ঢাকা চলে আসবে ।
যেই সিদ্ধান্ত, সেই কাজ, তাই সে রেড ক্রসে সাদিয়া ও নিজের নাম রেজিস্ট্রেশন করিয়ে দিয়ে ফৌজিয়া অথবা তার আত্মীয় কাউকে না বলে একদিন করাচি এয়ারপোর্টে রিপোর্ট করে । মেয়ে বার বার বাবাকে জিগ্যেস করে,” আব্বু কেদার জায়েগা?” ও সত্যি কথা না বলে সাদিয়াকে নিয়ে ঢাকা চলে আসে এবং তার বোন আফিয়া বেগমের ঢাকার বাসায় গিয়ে উঠে। তার বোন ও আত্মীয় স্বজনরা বুঝতে পারলে ও সাদিয়াকে শান্ত করা ছিল খুবই কঠিন । সাদিয়া বহুদিন কান্নাকাটি করে তার মায়ের জন্যে । এ দিকে পরিবারে রেদওয়ান আহমেদকে নিয়ে তুমুল সংঘর্ষ এবং তার স্ত্রী ও অন্যান্যরা এই মেয়েকে গ্রহণ করতে রাজি নয় । একমাত্র রেদওয়ানের বোন ভাইয়ের সাহায্যে এগিয়ে আসে এবং মেয়েকে আশ্রয় দেয় । এই মেয়ে বাবাকে পাগলের মতো আকড়িয়ে ধরে রাখে এবং কোথায় ও এক মুহূর্তের জন্য ও যাইতে দেয় না । রেদওয়ান আহমেদ মেয়েকে নিয়ে অনেক সমস্যার মধ্যে পড়ে। সাদিয়া মা ছাড়া বাবাকে চোখের আড়াল হতে দিতো না। তা ছাড়া সে এক শব্দ ও বাংলা জানতো না । তার চিৎকার “আব্বু,চলো মাম্মিকো পাস্ যাউজ্ঞা । ” “তাকে ফেলে এক মুহূর্তের জন্য আমি কাজে যাইতে পারি না । আমার বোন যে ভাবে সাদিয়ার সঙ্গ দিয়েছে,তা আমি কোনো দিন ভুলতে পারবো না ।” আমি তাকে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিলে প্রতিটি টিচার আমার মেয়েকে স্পেশাল খেয়াল রাখতো এবং সবার প্রচেষ্টায় সে আস্তে আস্তে শান্ত হয়ে উঠে । আমি তাকে প্রতিজ্ঞা করেছি যে একবার তার মায়ের নিকট নিয়ে যাবো । ইন্টারমিডিয়েট করার পরে সাদিয়া কে আমি রাজশাহী ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি করিয়ে এবং হল টিউটরকে তার প্রতি স্পেশাল খেয়াল নেয়ার জন্য অনুরোধ করি । অনেক মেয়ে টিচার মেয়ের মতো তাকে আদর করতো । সাদিয়া পড়া শুনা শেষ করলে আমি তাকে বিয়ের ব্যবস্থা করে দেই । সাদিয়া জীবন যুদ্ধে হেরে যায়নি ,তার মতো আরো অসংখ লোক সংগ্রাম করে বেঁচে আছে।
দুই
আমি সচরাচর ছেলেমেয়েদের জন্য কিছু না কিছু লিখে থাকি এবং সে জন্য এই অংশে ইনফরমেশন টেকনোলজি নিয়ে কিছু লিখার ইচ্ছা রেখেছি ।
ইনফরমেশন টেকনোলজি সারা পৃথিবীকে নেটের মধ্যে নিয়ে এসেছে । সফটওয়্যার আর হার্ডওয়্যার ডেভেলপ করে সারা পৃথিবীতে ব্যবসা করা খুবই সহজ করা হয়েছে । পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে অতি তড়িৎ গতিতে যোগাযোগ এবং ব্যবসা বাণিজ্য করা যায় এই সিস্টেমের মাধ্যমে। সুদূর পাকিস্তান বা লন্ডন থেকে টরন্টো কানাডা অন লাইনে ছেলে মেয়ে বা বয়স্ক লোকদের কোরান,হাদিস, নামাজ এবং মসলা মাসায়েল শিখানো হয়ে থাকে । তা ছাড়া অন লাইনে ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে মাসিক টিউশন ফিস লেনদেন হয়ে থাকে । ভাবতে কেমন লাগছে,একজন লোক সুদূর পাকিস্তান ,ইন্ডিয়া বা লন্ডন থেকে টরন্টো, কানাডা ছাত্র/ছাত্রীদের অন লাইন পড়াশুনা করাচ্ছে ।
১৯৮৬/১৯৮৭ আমেরিকা বা কানাডা থেকে পোস্ট অফিসে গিয়ে মানি অর্ডার করে অথবা ব্যাঙ্ক থেকে ড্রাফট তৈরী করে বাংলাদেশে পাঠানো হতো । সে টাকা পেতে অনেক সময় এক/দুই মাস ও লাগতো ,তা ছাড়া এনভেলপ থেকে ড্রাফট প্রায়ই হারানো যেত । তাই ড্রাফটের পেছন দিকে প্রাপকের নাম,ব্যাঙ্ক, একাউন্ট নম্বর লিখে দিতাম। তাতে ও চিঠি পেয়েছে এবং ড্রাফট মিসিং হয়েছে। আমাদের ছোট সময়ে পোস্ট অফিসের মাধ্যমে টাকা পয়সা লেন/দেন হতো। অনেক সময় বলতে শুনেছি যে পোস্ট মাস্টার লোকজনের টাকা না দিয়ে ব্যবসা বাণিজ্য করত। খোঁজ নিয়ে হয়রান হয়ে যেতাম,একদিন হটাৎ করে পোস্ট মাস্টার বলতে শুনেছি,মানি অর্ডার ফর্ম এসেছে ,তবে টাকা সাব পোস্ট অফিস থেকে আসে নি। সে আরো কিছুদিন ঘুরিয়ে অবশেষে প্রাপককে দিত। কিন্তু আজকাল সিস্টেম এত দ্রুত ডেভেলপ করা হয়েছে যে কয়েক মিনিটের মধ্যে আপনার আত্মীয়স্বজন বা বন্ধুর অক্কোউন্টে টাকা পৌঁছে দিতে পারেন ।
ইলেকট্রনিক বিসনেস (e-business)যা ওয়েব, ইন্টারনেট, ইন্ট্রানেট/এক্সট্রানেট ব্যবহার করে ব্যবসা বাণিজ্য করা হয় । ক্রেতা/বিক্রেতা যোগাযোগ করে ব্যবসা বাণিজ্য করে, এরা ওয়েব সাইড এ জিনিস পত্র দেখে মার্কেট যাচাই করে পছন্দ করে এবং ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে পেমেন্ট করার পর দ্রুত মাল পৌঁছানো হয়ে থাকে ।
সে দিন একজন বলতেছিলো,তার মা বাবা বাংলাদেশে থাকে,মা বাবাকে এক বেলা খাওয়াতে চেয়েছিলো । সে বাংলাদেশে কোন এক রেস্টুরেন্টে অর্ডার দিয়ে অন লাইনে পেমেন্ট করে বাসায় খাওয়া পাঠিয়ে দিয়েছে । মা বাবা খাইতেছে, ও এখান থেকে কথা ও গল্প করতেছিল। এখানে বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট যেমন ম্যান্ডারিন,হাক্কা,পিজা পিজা আরও কত রকম রেস্টুরেন্টস রয়েছে তাদের অন লাইন অর্ডার দিয়ে কয়েক মিনিটের মধ্যে ক্রেডিট কার্ডে পে করে ঘরে নিজ অথবা অনেক লোকদের আপ্পায়ন (খাওয়ানো) একদম সহজ। লোকজন আজকাল কেউ রান্না করার ঝামেলা নিতে চায় না। লোকজন বাসায় আসে গল্প গুজব করে আর খাওয়া অর্ডার অনুযায়ী পৌঁছে, খেয়ে দিয়ে চলে যায়।
আমরা বাংলাদেশে অথবা অন্য কোথায় ও ছুটিতে যাইতে চাইলে , অন লাইনে টিকেট বা হোটেল বুকিং দিয়ে থাকি ক্রেডিট কার্ড দিয়ে । সঙ্গে ডলার বা টাকা না নিলে ও হয়,শুধু প্লাষ্টিক কার্ডই যথেষ্ট। আগের দিনে আমাদেরকে ব্যাংকে গিয়ে ডলার উঠাতে হতো,আজকাল তা দরকার হয় না । আমাদের ছেলে মেয়েরা আজকাল এয়ারলাইন্স অফিসে না গিয়ে অন লাইনে বাসা থেকে টিকেট বুকিং দিয়ে প্রিন্টআউট নিয়ে এয়ারপোর্ট যায়। আমাদের সে যুগে এয়ারলাইন্স অফিসে গিয়ে বসে থাকতাম টিকেটের জন্য।
এইতো কিছুক্ষন পূর্বে শুনলাম, আমার এক পরিচিতের আত্মীয়ের মেয়ে টরন্টো উনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছে,আজই আসতেছে । কোবিদ-১৯ এর কারণে সে এক সেমিস্টার বাংলাদেশ থেকে অন লাইনে করেছে । আজকাল পৃথিবী অনেক অ্যাডভান্স এবং এর সঙ্গে সবাইকে অর্থাৎ আপনাকে তাল মিলিয়ে চলতে হবে । যদি আপনি বা আপনারা সমান ভাবে তাল মিলিয়ে চলতে বার্থ হন,তবে অনেক অনেক পিছিয়ে যাবেন।
ভোর হলেই বাসায় কল আসা শুরু হয়,” আপনার বাড়ির ভ্যাকুয়াম ক্লিনিং(duct cleaning) করে দিতে পারি?আপনার ছেলে মেয়েদের অন লাইনে কোরান শিক্ষা দিতে পারি?আপনার বাড়ি কি রিপেয়ার ,রেনোভেশন দরকার? আপনার বাড়ির দরজা বা জানালা কি পরিবর্তন করবেন ? প্রতিদিন মেইল বাক্স ভর্তি ফ্লায়ারস আসতে থাকে, কোন দোকানে কোন জিনিস সস্তা, বাড়ি বিক্রি করবেন ? যে সব লোকেরা বাসায় কল দিয়ে থাকে,তারা সাধারণত ইংলিশ নাম ব্যবহার করে, যেমন হ্যারি,মাইক, মার্টিন,জর্জ ইত্যাদি । কিন্তু একটা মজার ব্যাপার হলো যে তাদের ইংলিশ বলার ধরণ আমাদের তৃতীয় বিশ্বের । এ সব লোক এখানকার টেলি মার্কেটিং কোম্পানির কাজ করে এবং এদের অধিকাংশ লোক বাহিরের দেশ থেকে টেলিফোনে জিনিস বা সার্ভিস বিক্রি করে। অনেক প্রশ্ন করলে দুই একজন সত্য কথা বলে যে তারা বাহিরের কোনো দেশ থেকে টেলিফোন ব্যবহার করে কল দিয়ে থাকে, এখানকার লোকাল টেলিফোনে নম্বর ব্যবহার করে।
ই-কমার্স বা ই-বিসনেস ডেভেলপ করে আজকাল মানুষ ব্যবসা বাণিজ্য করে। তবে এর জন্য আপনাকে বা আপনাদেরকে পড়াশুনা করতে হবে।
হ্যাকার্স বা প্রতারকের হাত থেকে রক্ষা পেতে হবে। অপরিচিত নম্বর বা লোক টেলিফোন বা ইন্টারনেটে অথবা ফেসবুকে আপনার ক্ষতি করতে পারে,এ সব প্রতাকদের থেকে দূরে থাকবেন । আপনারা শুনে থাকবেন হ্যাকার্স কি ভাবে ফায়ার ওয়াল ব্র্যাক করে ব্যাংকে গচ্ছিত টাকা চুরি করে এবং সিক্রেট ইনফরমেশন বের করে। এখানে প্রতি নিয়ত টেলিফোন করে লোকজনকে বলে ,”তোমার বিরুদ্ধে কেস আছে,অতিসত্তর যোগাযোগ করো। ” আপনি সহজ সরল মানুষ হলে বিপদে পড়ার সম্ভবনা আছে।
আজকালকার কাজের ধরণ অনেক পরিবর্তন হয়েছে । আজকাল অনেক ধরণের ক্রিয়েটিভ কাজ শিখতে হয় । ফাস্ট ফুড রেস্টুরেন্ট, টেলিফোন সার্ভিসের মাধ্যমে অর্ডার নেবেন, ডেলিভারি দিবেন। আপনি একজন রাইটার এবং লোকজনের জীবন বৃত্তান্ত বা বই লিখে দিবেন , একজন painter, মিষ্টির কারখানা খুলবেন এবং বিভিন্ন দোকানে মিষ্টি সরবরাহ করবেন, বিসনেস প্লানার : আপনি লোকজনের জন্য বিসনেস প্ল্যান তৈরী করে দিতে পারেন এবং ব্যাবসায়ী প্ল্যান সাবমিট করে ব্যাঙ্ক থেকে লোন নিয়ে ব্যবসা শুরু করতে পারে । আপনি অনেক ধরণের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতে পারেন।
এ যুগে আপনি নকল করে অনেক নম্বর নিয়ে পরীক্ষা পাস্ করতে পারেন,তবে এই প্রতিযোগিতার বাজারে আপনি টিকে থাকতে পারবেন কিনা চিন্তা করে দেখবেন। মনে রাখবেন ,আপনার উন্নতির সঙ্গে আপনার পরিবার জড়িত এবং তাদের ভরণ পোষণের দিয়ীত্ব আপনার ।