আজ একজন কে খুব মনে পড়ছে। কালকের লেখাতেই বলেছিলাম যে আমাদের এমন কিছু মানুষের সাথে পরিচয় হয় যে যাদেরকে আমরা সারাজীবন মনের এককোনে ঠাঁই দেই নিজের অজান্তেই,নিজের অগোচরেই।

কখনোও ভাবিনি তাকে নিয়ে লিখব কিছু। অথচ আজ কেন জেনো মনে হচ্ছে তার মত একজন অসাধারন মানুষের কাছে সান্নিধ্য পেয়েছিলাম যা তখন বুঝিনি, আজ উপলবদ্ধি করছি।

সত্যি বলতে আমরা মানুষরাই মানুষের মূল্য দেই না। ভুল করে একবার যদি আমরা কাউকে বলি তুমি খুব ভালো বা তোমাকে আমার ভালো লাগে বা তোমার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করে,,,

আর যাবেন কোথায়, সে মেয়ে হোক বা ছেলে তার ভাব দেখে দ্বিতীয়বার কথা বলতে ইচ্ছে করলেও পিছেয়ে আসাটা উত্তম বলে মনে হয়।

এটাই হচ্ছে আমাদের মানুষের প্রধান বৈশিষ্ট্যময় গুনাবলি।।।।।

যাইহোক যার কথা বলছিলাম সে আমার আপন কেউ না অথচ খুব আপন।  এমন কিছু মানুষ থাকে যাকে খুব আপন মনে হয় কিন্তু সম্পর্কের উর্দ্ধে থাকে। সেই মানুষটিও তেমন।  সে জানবেও না আজ তাকে আমি খুঁজছি। জানবেও না আজ তাকে নিয়ে লিখছি।  জানবেও না আজ তার কথা ভাবছি।

আমি আজ জানিও না আজ সে কোথায় আছে , কেমন আছে, আজও কি সে আমার বাসার সামনে দিয়ে সেই সুরেলা বাঁশি বাজিয়ে হেটে যায় , সে কি বেঁচে আছে নাকি ?

তাকে আমি বাঁশিয়ালা দাদু বলেই সম্মোধন করতাম।…তার বাঁশির আওয়াজ এতটাই মধুর ছিল যে আমি ঘন্টার পর ঘন্টা তার সেই সুরেলা বাঁশি চুপচাপ শুনতে পারতাম। সে চলে গেলেও মনে হত তার বাঁশি যেন আমায় সম্মোহিত করে রেখেছে।

আল্লাহ কিছু কিছু মানুষকে এমন কিছু ক্ষমতা দিয়েছেন যা সত্যি প্রশংসা পাবার যোগ্য।

কিন্তু আমরা মানুষ কখনও অন্য মানুষকে মূল্যায়ন করতে পারি না।

আমার মনে হয় কাউকে ভালো লাগলে বলে দেওয়া উচিত। তোমাকে আমার ভালো লাগে।

তারও জানা উচিত তাকে কেউ পছন্দ করে।  এটা দোষের কিছু নয়।  ভালো লাগাটা প্রকাশ করা উচিত ভালোবাসাটা নয়।

সেই সূত্র ধরে আমিও বলেছিলাম বাঁশিয়ালা দাদু তোমাকে আমার ভীষণ ভালো লাগে। তুমি রোজ আমার সাথে কথা বলবে, রোজ আমায় দেখা দিবে।

সে আমায় নিরাশ করেনি রোজ না দেখা করতে পারলেও বৃদ্ধ দাদু চেষ্টা করত আমার ভালোলাগাটার সম্মান দিত।

দাদুটি আমার অন্ধ। চোখে দেখতে পেত না।  ছেলেমেয়েরাও তেমন দেখত না।  জীবিকার তাগিদে রাস্তায় রাস্তায় হাটত আর বাঁশি বাজাত।  আমাদের শহরের এমন কোন মানুষ নাই যে তাকে চিনে না।  সে যে কিভাবে অতি ভীরের রাস্তায় হেটে বেড়াত আমার কাছে আজও অজানা।  সে বলত মনের চোখ দিয়ে সে সব কিছু অনুভব করে। সত্যি কি মনের চোখ দিয়ে সব কিছু অনুভব করা যায় ?

দাদু জন্মগত অন্ধ নয়।  দাদু ছিল চোর।  গ্রামে চুরি করে বেড়ানো তার স্বভাব।  পড়াশুনা তার ভালো লাগত না ঠিক আমার মত।  একদিন মত্ববর এর বাড়ী চুরি করায় গ্রামের শালীসিতে তার চোখ উঠিয়ে নেয়।  তারপর থেকে সে অন্ধ। সে আমায় যা বলেছিল তাই লিখলাম।

তবে কি চুরি করেছিল এই মূর্হুতে মনে আসছে না।

সে আসলেই কিছু খেতে দিতাম আর মার কাছে থেকে টাকা নিয়ে কিছু টাকা দিতাম। আব্বাকে বলে ঈদে তার জামার ব্যবস্থাও করেছিলাম।  সে অনেক খুশি হয়েছিল।  একজন অসহায় বৃদ্ধ মানুষ খুশি হলে যে কতটা সুন্দর লাগে দেখতে তাকে একমাত্র সাক্ষী আমার এই দুটি চোখ।

চোখ সব কিছুর সাক্ষী হয়ে থাকে।  শুধু মনের গহীনে ধরে রাখতে পারি আমরা।  পারিনা শুধু ক্যামেরার লেন্সে তুলে রাখতে।

আমি যে দিন চলে আসব জানতে পারে সেদিন খুব কেঁদেছিল।  আজ মনে হয় সেই ভালোবাসাটা লাখ টাকা দিয়েও পাওয়া যাবে না।

দাদুকে যে বলেছিলাম তোমাকে আমার ভালো লাগে সে সেই ভালো লাগার শ্রদ্ধা করেছিল।

কিন্তু আজ যদি কাউকে আমরা বলি,  আপনাকে বা তোমাকে আমার ভালো লাগে, সে কি সেই মর্যাদা দিতে পারে /// হয়ত সে আর কথাই বলবে না,  হয়ত পাহাড় পরিমান অজুহাত সৃষ্টি করবে,  হয়ত এমন ভাব বৈশিষ্ট্যাবলী প্রকাশ করবে যে অগত্য আপনি নিজেই সরে আসবেন।

হয়ত এটাই হচ্ছে আমরা মানুষের প্রধান বৈশিষ্ট্যাবলী ****

আমরা অহংকারপূর্ণ জীবনে অভ্যস্ত। মানুষকে মূল্য দিতে আমরা সংকোচনীয় বোধ করি।

সত্যি বলতে আমাদের চারপাশে এমন কিছু মানুষ আছে যারা অতি অসাধারন হয়ে যায় তাদের কিছু কর্মফলের লক্ষ্যে।

অতি সাধারনের মাঝে অসাধারন এর প্রতিচ্ছায়া।।।

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন