পরশ্রীকাতরতা – যার আভিধানিক অর্থ হচ্ছে:-
পরশ্রীকাতর – [বিশেষণ পদ] পরের শ্রী ঐশ্বর্য বা উন্নতি দেখলে কাতর হয় এমন, ঈর্ষান্বিত। [বিশেষ্য পদ] পরশ্রীকাতরতা।,
একটি কঠিন বাংলা শব্দ। শব্দটা কঠিন হলেও এর অবাধ প্রচলন আমাদের সামাজিক জীবনে।
গ্রীষ্ম যাই যাই করছে, শীতের আগমনী বার্তা জানাচ্ছে “ফল” ।দৈনন্দিন জীবনযাত্রাও ধীরে ধীরে অন্তরমুখী হচ্ছে। সামাজিক আর সংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলির বাইরের আয়োজন এ বছরের মতন বিদায় নিয়েছে। শেষ হতে যাচ্ছে আরেকটা আন্নন্দ ঘন “সামারের”। “সামারের” প্রায় প্রতি সপ্তাহান্তিক কালে ছিলো বিভিন্ন সামাজিক আর সংস্কৃতিক সংঘটনগুলির একাধিক অনুষ্ঠান। যা মনের আনন্দে উপভোগ করেছেন টরোন্টোর বাংলাদেশী কমিউনিটি সবাই। এজন্য সাধুবাদ জানাই সকল আয়োজক বৃন্দদের। কারণ প্রতিটি আয়োজনের পিছনে ছিল সবার অক্লান্ত পরিশ্রম আর সময়। আর সবটাই কিন্তু ওনারা করেছেন আপনার আর আমার বিনোদনের জন্য।
কিন্তু অত্যান্ত দুঃখজনক হলেও এটি বাস্তব সত্যি যে সব কিছুর মধ্যে একটি জিনিস বিশেষ ভূমিকা রেখেছে , তা হচ্ছে “পরশ্রীকাতরতা”। প্রায় প্রতিটি অনুষ্টান শেষ হবার আগেই আমরা তার নেতিবাচক দিকটা নিয়ে টানা টানি শুরু করি। ভালো দিকটার প্রশংসা করতে সর্বদাই কার্পণ্য করি । এ কথার অর্থ এই নয় যে অনুষ্টানে কোনো ভুল ভ্রান্তি ছিল না। কিন্তু ভালোর দিকটাও তো ছিল , বরং ভালোর পরিমানটাই বেশি ছিল। তাহলে আমাদের মাঝে এই কার্পণ্যতা কেন ? আজ আমার অনুষ্ঠানকে আপনি খারাপ বলছেন , কালতো আপনার অনুষ্ঠান। আপনি কি আশা করতে পারেন আমার কাছ থেকে ? এর অর্থ এই নয় যে অনুষ্ঠানের মাঝে কোনো ব্যার্থতা নাই। কিন্তু গঠনমুলক সমালোচনার অবশ্যই একটা ইতিবাচক দিক আছে , তবে তা নির্ভর করে উপস্থাপনার উপর।
আমাদের মনে রাখা প্রয়োজন সমালোচনা যেন পরনিন্দার পর্যায়ে না পৌঁছায়। পরনিন্দা সাধারণত আসে পরশ্রীকাতরতা থেকে। সমালোচনা অবশ্যই থাকবে। তবে সেটা হতে হবে গঠন মূলক। লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন আপনার কথা যেন কারো মনোকষ্টের কারণ না হয়। আপনার সমালোচনা থেকে কেউ যেন কিছু শিখতে পারে বা তার ভুলটা শুধরে নিতে পারে। তবেই আপনার সমালোচনা সার্থক হবে। আপনার শিক্ষা,অভিজ্ঞতা আর জ্ঞান কে আমি শ্রদ্ধা করি। তাইতো আপনার কাছ থেকে গঠনমূলক সমালোচনা আশা করা অন্যায় নয়। সেই সাথে আমাদেরও সেই গঠনমূলক সমালোচনা গ্রহণ করার মতো মানসিকতা থাকতে হবে।” সন্মান পেতে হলে আগে সন্মান করা শিখতে হবে।”
আমার এই লেখার অর্থ এই নয় যে সবাই নেতিবাচক সমালোচনা করেন। অনেকেই বাস্তবতার আলোকে ভালো-মন্দ উভয়কেই তুলে আনেন বিচারের পাল্লায়। বাকিটা নির্ভর করে পাঠক-শ্রোতার উপর।
আমি গঠনমূলক সমালোচকদের প্রশংসা করি , কারণ তারা তাদের মূল্যবান সময় ব্যায় করে আলোচিত বিষয়টি মূল্যায়নের চেষ্টা করেন। আর যারা শুধুমাত্র প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য সমালোচনা করেন , তাদের উদ্যেশে বলতে চাই – “এটা কারোরই কাম্য নয়।”
আসুন না একটিবারের জন্য হলেও অন্যের দোষ – ত্রুটিটাকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখি।
সবাই ভালো থাকুন – শুভ রাত্রি।
(আমার এই লেখাটা কোনো নিদিষ্ট অনুষ্টান বা ব্যাক্তি বিশেষের বক্তব্যের সাথে সম্পৃক্ত নয় )