মানুষকে আল্লাহ্পাক সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবেই পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। সৃষ্টির শ্রেষ্টত্ব প্রমানের জন্য অপরিমেয় ক্ষমতা ও দেয়া হয়েছে মানুষকে। মানুষ যাতে তার ইহজাগতিক ও পরজাগতিক সমস্যা নিরসন ও কল্যানের ইঙ্গিত খুঁজে পায়, সেজন্য নাজিল করা হয়েছে ঐশীগ্রন্থ পবিত্র কোরআন। সৃষ্টির সেরা হলেও অনেকেই আমরা সামান্যতেই বিচলিত হয়ে পড়ি, ডুবে যাই হতাশায় অথবা হারিয়ে ফেলি জীবনের লক্ষ্য। পরম করুনাময় আল্লাহ্পাক তখন মানুষের জন্য আশ্বাস ও অভয়বাণী নিয়ে হাজির হন পবিত্র কোরআনের পাতায়। মানুষের কিছু সাধারণ উপলব্দি এবং এবিষয়ে আল্লাহ্পাকের নির্দেশনা নিয়েই আজকের লেখা। সবিনয়ে বলে রাখি আয়াতগুলির সংকলন আমার নিজের নয়, এটি ইন্টারনেট থেকে পাওয়া। আমি চেষ্টা করেছি প্রত্যেকটি আয়াতের উৎস এবং নির্দিষ্ট বিষয়ের সাথে আয়াতগুলোর সংশ্লিষ্টতা পরীক্ষা করে বাংলায় উপস্থাপনা করার জন্য। ব্যক্তিগত ব্যাখ্যার চেষ্টা না করে সরাসরি আয়াতের অনুবাদ পেশ করা আমার কাছে বেশি যৌক্তিক মনে হয়েছে। পবিত্র কোরআনের ইঙ্গিত ও নির্দেশনা অনুধাবন এবং কোরআনকে ভালোভাবে জানার মধ্যে দিয়ে জীবনের অনেক জটিলতার নিরসন সম্ভব। অনেক সময় অনেক ভাবনা মাথায় আসে কিন্তু হয়তো জানিনা এই বিষয়ে আল্লাহপাকের নির্দেশনা কি। এরকম কিছু বিষয় উঠে এসেছে নিম্নের আলোচনায়।
মানুষ: আমি ব্যর্থ।
আল্লাহ: “বিশ্বাসীরাই প্রকৃত সফল.” ( সুরা মুমিনুন: আয়াত ১)
মানুষ: এটি খুব কষ্টকর কাজ।
আল্লাহ: “নিঃসন্দেহে প্রতিটি কষ্টের সাথেই রয়েছে স্বস্তি।” ( সুরা ইনশিরাহ: আয়াত ৬)
মানুষ: আমাকে সাহায্য করার কেউ নেই।
আল্লাহ: “আসলে বিশ্বাসীদের সাহায্য করা আমার দায়িত্ব।” ( সুরা রুম: আয়াত ৪৭)
মানুষ: আমার সাথে কেউ নেই।
আল্লাহ: “ভয় করোনা তোমাদের দুজনের সাথে আমি আছি। আমি সব দেখি, সব শুনি।” ( সুরা তাহা: আয়াত ৪৬)
মানুষ: আমি পাপে জর্জরিত।
আল্লাহ: “…..যারা তওবা করে ও পবিত্র থাকে, নিশ্চই আল্লাহ তাদের ভালোবাসেন।” ( সুরা বাকারা: আয়াত ২২২)
মানুষ: আমার কিছুই নেই।
আল্লাহ: “অতএব যারা বিশ্বাস স্থাপন ও সৎকর্ম করবে তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও সম্মানজনক জীবনোপকরণ।” ( সুরা হজ: আয়াত ৫০)
মানুষ: আমি দায়িত্ব ও কর্তব্যের ভারে ভারাক্রান্ত।
আল্লাহ: “আল্লাহ কারো উপরেই তার সাধ্যের অতিরিক্ত দায়িত্ব দেন না। ” (সুরা বাকারা: আয়াত ২৮৬)
মানুষ: আমি নিজেকে আর খুঁজে পাইনা।
আল্লাহ: “পথহারা অবস্থা থেকে তিনি কি তোমাকে সত্যপথের সন্ধান দেননি?” ( সূরা দোহা: আয়াত ৭)
মানুষ: আমার কোনো বাহ্যিক সৌন্দর্য নেই।
আল্লাহ: “আমি মানুষ সৃষ্টি করেছি সুন্দরতম অবকাঠামোয়।” ( সুরা আত তিন: আয়াত ৪)
মানুষ: আমি সর্বদাই অসুস্থ।
আল্লাহ: “কোরআন বিশ্বাসীদের জন্য নিরাময় ও রহমত আর জালেমদের ধ্বংসের পথ প্রশস্তকারক।” ( সুরা বনি ইসরাইল: আয়াত ৮২)
মানুষ: নিজেকে আমার খুব তুচ্ছ মনে হয়।
আল্লাহ: “আমি নিশ্চয়ই মানুষকে মর্যাদা দান করেছি। আমি তাদেরকে জলে স্থলে চলাচলের বাহন দিয়েছি. দিয়েছি উত্তম জীবনোপকরণ। আমার অনেক সৃষ্টির উপর তাদেরকে শ্রেষ্টত্ব দিয়েছি।” ( সূরা বনি ইসরাইল: আয়াত ৭০)
মানুষ: আল্লাহর সাহায্য মনে হয় অনেক দূরে।
আল্লাহ: “জেনে রাখো, আল্লাহর সাহায্য সব সময়ই খুব কাছে। ( সুরা বাকারা: আয়াত ২১৪)
এরকম আরো শত শত আয়াত রয়েছে যার মধ্যে আমাদের অনেক দৈনন্দিন জিজ্ঞাসার জবাব নিহিত। পবিত্র কোরআন আসলে এক বিষ্ময়কর গ্রন্থ। এর নিগূঢ় রহস্যভেদ মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। মাওলানা জালালুদ্দিন রুমির শিক্ষক এবং অনেক উচ্চস্তরের বুজুর্গ হজরত শামস তাবরিজ (রা) কে একবার কোরআন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল। উনার উত্তর ছিল অসাধারণ, “কোরআন আসলে বহমান নদীর মতো। দূর থেকে যারা একে দেখে তাদের কাছে মনে হবে এটি একটি মাত্র নদী। যারা এই নদীতে সাঁতার কাটে তারা এর মধ্যে দেখতে পায় কয়েকটি ভিন্ন স্রোত। কিছু মানুষ আমরা মাছের মতোই সাঁতার কাটি কুলের কাছাকাছি, আবার কেউ কেউ ডুব দেই গভীর পানিতে। যারা কুলের কাছাকাছি সাঁতার কাটে, তারা কোরআনের বাহ্যিক বা আক্ষরিক অর্থটাই বেশি বুঝে। দ্বিতীয় স্রোতটি গভীরতর কিন্তু এটিও কুলের কাছাকাছি। তোমার সচেতনতা যত বাড়বে, কোরআন আত্মস্থ করার ক্ষমতাও ততটা বাড়বে। কিন্তু এই ক্ষমতা বাড়াতে হলে ঝাঁপ দিতে হবে আরো গভীরে। আর এই তৃতীয় স্রোতটি হচ্ছে ‘বাতিনী’ যা শুধুমাত্র বিশেষভাবে দীক্ষিতরাই দেখতে পান। ” আমলের দিক থেকে এসব স্রোতের কোনোটারই কাছাকাছি যাওয়া হয়তো আমাদের পক্ষে সম্ভব না, কিন্তু পবিত্র কোরআনকে জানা এবং বুঝার সীমিত চেষ্টাও আমাদেরকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে অনেকদূর – ইহকাল ও পরকাল দুজগতেই।
সৈয়দ মসিউল হাসান
টরন্টো থেকে