যাযাবরের জীবন। দেশ ছেড়েছি আজ ৩০ বছর। অনেকটা সময় আর অনেকটা পথ পাড়ি দিয়ে এসেছি। অনেক কথা অনেক বিষয় হারিয়ে গেছে জীবন থেকে।

কোনো একটা জাতীয় নির্বাচনের সময়। সাল বা কোন সরকারের নির্বাচন তা ঠিক মনে নেই। ভোটার দিন সব প্রাথীর প্রচরণা খুব জোরেশোরই চলে। ভোটারদেরকে কেন্দ্রে নেবার জন্য সব ধরনের ব্যাবস্থাই থাকে তাদের কাছে। তা ছাড়া ভোট কেন্দ্রের বাইরে থাকে প্রার্থীর নির্বাচনী অফিস। সেখানে থাকে অনেক রকম আয়োজন। বসার জন্য চেয়ার , ঠান্ডা পানীয় আর মিস্টি সহ হালকা নাস্তার ব্যবস্থা।
ভোটার দিন দুপুরে কড়া রোদের মধ্যে একজন বৃদ্ধ দাদু ভোটার জন্য ভোট কেন্দ্রে হাজির হলেন। দুপুরের কড়া রোদ , অনেকটা পথ হেটে আসার কারণে খুবই ক্লান্ত আর তৃষ্ণাত্ব। বসলেন একটা নির্বাচনী অফিসের সামনের বেঞ্চিতে। কষ্টে হাঁপাচ্ছিলেন , এই সময় নির্বাচনকারী ওই প্রার্থী বাইরে এসে বললেন :
-“চাচা , ভোটটা কাকে দিবেন ?”
বৃদ্ধ বললেন: ” জানিনা বাবা , কারে ভোটটা দিমু। মরার আগের ভোটটা কাউরে দিতে চাই ” বৃদ্ধ ব্যাক্তি আরো বলনেন “বাবা, একটু পানি খাওয়াবেন?”
ওই প্রার্থী উঁচু স্বরে কাউকে হুকুম দিলেন ” চাচারে একটা ঠান্ডা দে। ”
সাথে সাথে একজন একটা ঠান্ডা সেভেন আপ এর বোতল নিয়ে হাজির। বোতলটা খুলে ওই বৃদ্ধকে দিলো।
বোতলটা খোলার সময় “ফস” করে একটা শব্দ হলো। বৃদ্ধ অবাক হয়ে বোতলটা দেখছিলো।
বৃদ্ধ বোতলে চুমুক দিলেন , ঠান্ডা সেভেন-আপ। আর আগে সে কখনো আর স্বাদ গ্রহণ করেন নাই। অনেক তৃপ্তির সাথে জীবনের প্রথম সেভেন-আপ পান করলেন। একটা লম্বা ঢেঁকুর তুলে ধন্যবাদ জানালেন ওই নির্বাচনী প্রার্থীকে।
নির্বাচনী প্রার্থী বললেন ” চাচা , ভিতরে গিয়ে ভোটটা আমারে দিয়েন। ”
চাচা সম্মতি সূচক মাথা নেড়ে ভোট দিতে চলে গেলেন।
কিছুক্ষন পরে ভোট দেয়া শেষ বৃদ্ধ ফিরে এসে ওই বেঞ্চিতে আবারো বসলেন। এই বার কিন্তু কেউ তার কাছে আসলেন না। অনেকক্ষন বসে থাকার পর বৃদ্ধ একজনের কাছে পানি পানের আশা ব্যাক্ত করলেন। ভিতর থেকে কেউ একজন এক গ্লাস পানি এনে তাকে দিলো। গ্লাসের পানি দেখে বৃদ্ধ নিরাশ হয়ে বললেন: “বাবা, ওই পানিটা নাই। খোলার পর ফস করে। ”
ছেলেটা হেসে বললো ” চাচা , ভোটের পরে আর ফস করে না। ”

সপ্তাহিক ছুটির দিন। একটা বই পড়ছিলাম , হঠাৎ সেল ফোনটা বাজে উঠলো। রাফিক ভাইয়ের ফোন। এখানেই পরিচয় রফিক ভাইয়ের সাথে , ধীরে ধীরে ঘনিষ্ঠতা। ফোনটা রিসিভ করতেই জানতে চাইলেন ব্যাস্ত কিনা।
বললাম “না, একটা বই নাড়া চাড়া করছিলাম আর কি ”
বললেন ” তাহলে বেশি সময় নিবোনা , কিছুদিন আগে আমি একটা ফেসবুক গ্রূপে যোগ দিয়েছি। একজন নতুন সদস্য হিসাবে আমাকে ২০-২৫জন সদস্য সংগ্রহের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আপনিতো জানেন আমার পরিচিত বন্ধুর সংখ্যা সীমিত। তাই আপনার অপওি না থাকলে আপনার নামটা যোগ করতে চাই ”
রফিক ভাইকে সম্মতি দিতে হলো। জানতে চাইলাম: “আমার ভূমিকা বা করনীয় কি ?”
রফিক ভাই বললেন ” আপনার কিছুই করতে হবে না। বাড়তি সুযোগ হিসাবে আপনি আপনার মতামত এখানে তুলে ধরতে পারবেন। আপনার সমস্যাগুলো আলোচনা করতে পারবেন। ”
বললাম “খুবই ভালো কথা । “. ফোনটা রাখে বইটাতে মনোযোগ দিলাম।

তারপর অনেক দিন কেটে গেছে। ঐ গ্রূপের কথা ভুলেই গিয়ে ছিলাম। কোনো একটা বিষয়ে কাজের জন্য ওই ফেসবুক গ্রূপের শরন্নাপন্ন হলাম। আমার সমস্যার কতাটা লিখলাম। এইবার শুরু হলো অপেক্ষার পালা। ৩/৪ দিনেও লেখাটা পোস্ট হলো না। আবারো লেখা পাঠালাম , শুরু হলো আবারো অপেক্ষার পালা। ৩/৪ দিন পর আমার ইনবক্সে জানানো হলো “আমার লেখাটা ছাপানো সম্ভব না , কারণ এই গ্রুপ অন্য কাউকে প্রচার করে না।  ”
এই যুক্তির পিছনে যুক্তিকতা কতোটুকু তা আমার কাছে বোধগম্য নয়। সেই একই ফেসবুকে আজকাল অনেকের বৌয়ের বেগুন ভাজির  ছবি সহ গুণ-কেত্তন ছাপা হয়। (এটা কিন্তু কোন প্রচারনা নয়) ।
মনেপড়ে গেল সেই বৃদ্ধ চাচার কথা “ভোটের পরে আর  ফস করে না। ”

 

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন