এ দেশে ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা, মা বাবা বা খেলার সাথীদের থেকে হাঁসতে খেলতে ইংরেজী বলা শিখে । আমাদের দেশের ছেলে মেয়েরা ও   তার পারিপার্শিক লোক জন কে অনুসরণ  করে বাংলা কথা বলা শিখে । আমাদের গ্রামের লোক কোনো দিন কথা বলতে বাংলা ব্যাকরণ নিয়ে কি চিন্তা করে? তেমনি এ দেশে ও ছেলে মেয়েরা জন্ম গ্রহণের পর গ্রামার নিয়ে চিন্তা করে না । তবে আমরা যে সময় স্কুলে  পড়াশুনা করেছি, ইংরেজি  পড়তে গিয়ে,বলতে গিয়ে গ্রামার  সর্বদা খেয়াল রেখেছি । এ দেশে এত সব খেয়াল করে কেউ  কথা বলে না । মোটামোটি বুঝতে বা  বুঝাতে পারলেই হলো । আমাদের ছেলে মেয়েরা যারা উদ্যোগী, ইংরেজি শিখতে  চায় ,নিজেদের বন্ধুদের  মধ্যে কথোপকথনের মাধ্যমে দ্রুত শিখতে পারে ।  রেডিও,ইন্টারনেট , অথবা টেলিভশন থেকে অনায়াসে স্পোকেন, listening ইংরেজি  শিখতে এবং   বিবিসি, ভয়েস অফ আমেরিকা, ইংলিশ নিউস শুনে প্র্যাক্টিস করা যায়  । যারা দৈনিক ইংলিশ নিউস পেপার পড়ার প্রাকটিস করে,  তাদের লেখার ইংলিশ স্ট্যান্ডার্ড ভালো হবে । এ ভাবে প্রাকটিস করে ইংলিশ IELT টেস্ট দিলে ,তাদের স্কোর ভালো হওয়ার কথা । কারণ এই টেস্টে listening ,স্পোকেন এবং রাইটিং এই তিনটি অংশ রয়েছে ।যদি এ সব দেশে আসার ইচ্ছা থাকে,বারবার চেষ্টা করে  নিজেকে ইম্প্রোভ করিয়ে নিবেন । একবারে কেউ ভালো স্কোর করতে পারে না, বার বার টেস্ট দিয়ে স্কোর বাড়িয়ে নিতে হবে । এই টেস্টে পাস,ফেল নাই এবং শেষের স্কোর কাউন্ট হয় ।

টেকনিকাল নো (know ) হাউ : এ কথাটা ইতিপূর্বে অনেক বার   বলেছি,প্রতিটি লোকেরই কিছু না কিছু  টেকনিকাল নলেজ শিক্ষা দরকার । কম্পিউটার ও  বিভিন্ন প্রোগ্রামিং, ইলেকট্রিক, আর ও  অনেক হাতের কাজ যা বিদেশে কাজে লাগে ।
ভলান্টিয়ারিং: বাংলাদেশে বহু অর্গানিজশন আছে যেখানে  রিকোয়েস্ট  করে আমাদের ছেলে মেয়েরা বিনা বেতনে  কাজ শিখতে পারে ।
French-bilingualism:  যারা কানাডা আসার জন্য ইন্টারেস্টেড,তারা ইচ্ছা করলে বাংলাদেশে ফ্রেঞ্চ ল্যাঙ্গুয়েজ শিখতে পারে । ফ্রেঞ্চ এখানকার দ্বিতীয় ভাষা, জানা থাকলে ফেডারেল  গভর্নমেন্ট অথবা ক্যুবেক,মন্ট্রিয়েল  এবং অন্যান্য  প্রভিন্স এ কাজ পেতে সহজ হবে ।

Chinese বা Vietnamese  ছেলে মেয়েরা আমাদের ছেলে মেয়েদের চেয়ে ও ইংরেজিতে বেশ পিছিয়ে। ওরা অংকে এবং অন্যন্য বিষয়ে খুবই ভালো ।এখানে  শহরের প্রতিটি মহল্লায় বা রাস্তার মোড়ে Chinese  ব্যবসা প্রতিষ্টান নজরে পড়ে । এরা কাজ কর্মে খুবই পারদর্শী । গ্রোসারি স্টোরে ঢুকলে অবাক হতে হয়  হরেক রকমের জিনিস সবই নিজেদের দেশ থেকে নিয়ে এসে বিক্রি করে । জিনিস পত্র কম্পারেটিভলি  সস্তা । তবে  কোয়ালিটির দিক থেকে অনেক প্রশ্ন রয়েছে । অনেকে আবার একটু বেশি দাম দিয়ে  Lablaws ,মেট্রো,বা আরো অনেক দোকান  থেকে ফ্রেশ vegetable  বা মাছ,মাংস কিনে থাকে । এখানে ডলারমা , ডলার স্টোরে সব চেয়ে সস্তা জিনিস পাওয়া যায় এবং এদের ম্যাক্সিমাম প্রোডাকশন চীন থেকে আসে । তা ছাড়া সর্বত্রই Chinese  রেস্টুরেন্ট যেমন ম্যান্ডারিন, ড্রাগন, সাংহাই ,অসংখ, অসংখ  এখানে সেখানে রয়েছে । Chinese  তাদের ইনোভেটিভ ও মেধা দিয়ে সারা পৃথিবীর বাজার দখল করে নিয়েছে । যদিও তাদের দোকানে গেলে,ইংরেজিতে কোনো কিছু চাইলে ওরা ইন্টারপ্রেটার খুঁজে বেড়ায় বুঝানোর জন্য ।  কিন্তু Chinese  উৎপাদন  ও   উন্নয়ন  পলিসি সারা পৃথিবীকে হাবু ডুবু খাওয়াচ্ছে ।  আমাদের দেশের বড়ো বড়ো শহর গুলিতে রেস্টুরেন্ট এবং তরুণ ছেলে মেয়েদের এই খাবারের  প্রতি কতখানি আকর্ষণ  তা দেশে গেলে   আলাপ করলেই বুঝা যায় ।

কানাডা একটা শীত প্রধান দেশ । এ দেশে শীতের শেষের দিকে (মার্চ-এপ্রিল) গম চাষাবাদ করা হয় এবং অগাস্ট -সেপ্টেম্বর মাসের  দিকে ফসল উঠানো হয় । এখানে প্রচুর পরিমানে আলু উৎপাদন হয় । তবে চাউল ও অন্যান্য খাওয়া খাদ্য বিদেশ থেকে আমদানি করা হয় । বাকি সময় এ দেশে অত্যধিক শীত এবং  ইনডোর গার্ডেনিং এর মাধ্যমে খুবই সামান্য পরিমান চাহিদা পূরণ হয় ।এমন কোনো দেশ নাই যে Chinese  খাওয়া খাদ্য  পাওয়া যায় না ।  তা ছাড়া  আনাচে কানাচে এ  দেশে  রেস্টুরেন্ট রয়েছে । এ দেশের ছেলে মেয়েরা সব সময় বিভিন্ন দেশের ফুড, Chinese ,Vietnamese, ইন্ডিয়ান,এরাবিয়ান, Turkish  খাইতে ভালো বাসে ।

এবার   অন্য প্রসঙ্গে আসা যাক । ইতিপূর্বে আমি ,আমার নিজের সম্পর্কে কিছু কথা বলেছি । এখানে একটু বৃস্তিতি দিয়ে লিখবো বলে ভাবছি ।  ১৯৮১ এর জুলাই মাসে নাইজেরিয়ার একটি রিক্রুটিং টীম ঢাকা এসেছিলো  কিছু  লোক নেয়ার জন্য । আমি সিদ্ধান্ত নিলাম যে করে হোক আমার জব সংক্রান্ত সমস্যার একটা সমাধানে আসা দরকার । আমি অফিস থেকে কয়েক দিনের  ছুটি  নিয়ে ঢাকা গিয়ে সর্ব প্রথম পেপার দেখে নিলাম যদি কোনো সুইটেবল জব আমার জন্য  পাওয়া যায় ।  কমার্স ও ইকোনমিক্স এই দুই  সুইটেবল ফিল্ড আমার শিক্ষা ও কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে ।  আমার  কেস অন্যদের চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা । কয়েক শত লোক লেবার ডিরেক্টরেট বিল্ডিং এর সামনে ভিড় জমিয়েছে  ,বিল্ডিঙে ঢুকার মতো রাস্তা নাই,ভিড়ের মধ্যে কে কার কথা শুনে । আমি নাছোড় বান্দা,  যেহেতু আমি পূর্বেই জব লেটার পেয়েছি, সার্ভিস কমিশনকে বুঝানো দরকার যে আমাকে কেন টিকেট দেয়া হয়নি । কিন্তু এত ভিড়ে আমি হারিয়ে যাচ্ছি । দুইদিন অনবরত  অনেক চেষ্টা করে শেষ পয্যন্ত আমি একটা সুযোগ করে নিলাম । আমি ইন্টারভিউ বোর্ডে ঢুকার সুযোগ পাইলাম ।  আমাকে নাইজেরিয়ার এই চাকুরীটা পাইতে যে কত খানি কষ্ট পাইতে হয়েছে , তা বুঝানোর জন্য  আমি পাঠকদের  চেষ্টা করছি ।

আমি কমিশনের চেয়ারম্যান ও সেক্রেটারির সঙ্গে দেখা করলাম এবং ওদের কিছুটা নমনীয় অবস্থায় পেলাম ।  ওরা আমার পূর্বের চিঠি ও শিক্ষা সংক্রান্ত সার্টিফিকেটস ধৈর্য ধরে   দেখে আমাকে প্রশ্ন করলো,”মিনিস্ট্রি অফ এডুকেশন তোমাকে টিকেট পাঠায় নি  কেন?” আমি বললাম,” ওটাই তো আমার প্রশ্ন এবং তার জন্য আমি এখানে এসেছি । ” চেয়ারম্যান ও তাদের লোক আমার কাগজ ও জব লেটার বার বার দেখে তাদের ভাষায় কি কি বলতেছিলো বুঝতে পারলাম না ।  চেয়ারম্যান অনেক প্রশ্নের পর আমাকে বললো, তোমার ফিনান্স এর উপর অভিজ্ঞতা আছে এবং আমরা তোমাকে মিনিস্ট্রি অফ ফিনান্স, ইনকাম ট্যাক্স ডিপার্টমেন্টে  ওফার দিলে তুমি কি রাজি হবে? ”  আমি রাজি আছি বলে জানালাম. চেয়ারম্যান তার ভাষায় সেক্রেটারিকে কি বলেছে তা বুঝতে পারলাম না । আমাকে বললো,”তুমি সেক্রেটারির সঙ্গে যাও । ” আমি অন্য আর একটা কামরায় সেক্রেটারির   পেছনে পেছনে গেলে , সেক্রেটারি  প্রিন্টেড জব   লেটার তৈরী করে স্যালারি সংক্রান্ত ব্যাপারে আমাকে কিছু প্রশ্ন করে স্যালারি ঠিক করে,, আমাকে বসিয়ে লেটার নিয়ে চেয়ারম্যান কে দিয়ে দস্তখত করিয়ে   আমাকে এক কপি দিয়ে বিদায় দিলো এবং বললো এবার তুমি টিকেট পাবে । আমি খুশি হয়ে বোর্ডকে ধন্যবাদ জানিয়ে ইন্টারভিউ বোর্ড থেকে বের হলাম , অফিস থেকে ছুটি আছে বিধায় আমি বাসায় গিয়ে  আমার স্ত্রীকে এই চিঠি  দেখলাম এবং সে ও  অত্যন্ত খুশি হয়ে ছিল ।   আমি এতোই খুশি হলাম । ভাবছি,   এবার অনেকের সঙ্গে আমি যাচ্ছি ।এবার কি  কোনো রকম  ভুল হতে পারে? এই দলে সর্ব মোট ৪০/৪২ জন লোক নিয়োগ   করা হয়েছিল । এদের ম্যাক্সিমাম ইঞ্জিনিয়ার,আর্চিটেক্ট এবং টিচার । আমি ভিতরে ভিতরে প্রস্তুতি নিতে লাগলাম । কিন্তু দিন যায়,মাস যায়, লেবার ডিরেক্টরেট যেতে যেতে টিকেটের কোনো খবরই পাচ্ছি না । তিন বৎসরের ও অধিক চেষ্টার পর যা ও অনেকের সঙ্গে রিক্রুটমেন্ট পেলাম,তাও টিকেটের কোনো খবর নাই ।  মাঝে মধ্যে হতাশায় ভুগছি, যদি কোনো রকম সমস্যা হয় অভাবী সংসার ,প্রতিদিন ভাবি  ” কতদিন এ ভাবে আমি ধর্য্য ধরে সংগ্রাম করে টিকে থাকতে পারবো ?”

১৯৮১ শেষ হয়ে ১৯৮২ শুরু হয়েছে, কোনো খবর নাই । এক একটি মাস ,একটি বৎসরের মতো মনে হচ্ছে । এক এক মাস পার হচ্ছে, আর একটি মাস শুরু  করছি ।এই করে  ১৯৮২ জুনের দিকে আর একবার রিক্রুটিং টীম নাইজেরিয়া থেকে ঢাকা এসেছে । আমি এবার খোঁজ নিতে গেলাম, গিয়ে নিশ্চিত হলাম এরা আমাদের পূর্বের লোকজনের টিকেট নিয়ে এসেছে । সমস্যা হয়েছিল যে আমাদের দেশে নাইজেরিয়ান কোনো হাই কমিশন অফিস নাই । টিকেট দিল্লী নাইজেরিয়ান হাই কমিশন অফিসে পড়ে  ছিল এবং ওখান থেকে ওরা সময় মতো পাঠায় নি । জুলাই মাসের  প্রথম দিকে আমরা সবাই টিকেট পেয়ে   গেলাম । আমাদের টিকেট ঢাকা-দিল্লী-রোম-কানু (নাইজেরিয়া) । টিকেট পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যার যে ভাবে সুযোগ ছোট ছোট দলে  বিভক্ত হয়ে    চলে যাচ্ছিলো ।  আমাদের দলে দুইজন সড়ক ও পরিবহন বিভাগের   ইঞ্জিনিয়ার,তিনজন টিচার এবং আমি একমাত্র ফিন্যান্সের লোক ছিলাম । ঢাকা থেকে পূর্বেই   ইন্ডিয়া ও    ইতালির ভিসা নিয়ে ছিলাম   ।  দিল্লিতে গিয়ে সর্বপ্রথম এয়ারপোর্ট থেকে ইয়েলো ফিভার ইনজেকশন  নিতে হবে ।আমাদের দেশে ইয়েলো ফিভার ইনজেকশন নাই ।  ঢাকা এয়ারপোর্টে আমার ওয়াইফ ,এক বৎসরের ছেলে গালিব এবং আরও কয়েক জন আত্বিয় আমাকে বিদায় দিলো । ঢাকা থেকে দিল্লী তিন ঘন্টার জার্নি । আমরা দিল্লী পৌঁছার পর  এয়ারপোর্টে   ইনজেকশন নেয়া যাই কিনা খোঁজ নিলাম  । ওরা জানালো নেয়া যাবে । এয়ারপোর্টে  হেলথ ডিপার্টমেন্ট থেকে ইনজেকশন নিয়ে বাহিরে ট্যাক্সির জন্য অপেক্ষা করলাম । ট্যাক্সি ওয়ালাকে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলাম নাইজেরিয়ান হাই কমিশন এর নিকটবর্তী থাকার ঠিকানা । সে মতে  নাইজেরিয়ান হাই কমিশন অফিসের  নিকট একটা বাসায় উঠলাম ।

পরদিন আমরা হাই কমিশনে গিয়ে দেখি নাইজেরিয়ান স্টুডেন্টরা অনিদৃস্ট সময়ের জন্য ধর্মঘট করে অফিস বন্ধ করে দিয়েছে । দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলাম এই ভেবে যে কবে নাগাদ তারা হরতাল   উঠিয়ে নেবে । এখানে অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হয় যে আমাদের এই দলের দুইজন ইঞ্জিনিয়ার ও দুইজন টিচার দুনিয়া থেকে চির বিদায় নিয়েছে । ইঞ্জিনিয়ার দুইজন কানাডা ইমিগ্রেশন নিয়ে এসেছিলো এবং এখানে মারা গিয়েছে ।  সুলতান আহমেদ ও রোকেয়া আপা (এক মাত্র মহিলা টিচার) ঢাকা   মারা গিয়েছেন ।

৪/৫ দিন পর ওরা হরতাল  উঠিয়ে নিলে আমরা ভিসা নিয়ে এয়ার ইন্ডিয়া অফিস থেকে টিকেট বুকিং দিলাম ।  আরো দুইদিন আমাদের দিল্লিতে থাকতে হবে, যেহেতু দুইদিন পর আমাদের ফ্লাইট । সুলতান সাহেব, যে আজ আর জীবিত নাই,আমরা দুইজনে সিদ্ধান্ত নিলাম কুতুব মিনার,নিজাম উদ্দিন,লাল কেল্লা ও সেক্রেটারিয়েট বিল্ডিং ঘুরে ঘুরে দেখবো । দুইদিন আমরা বেশ ঘুরে ঘুরে পুরানো মুঘল আমলের স্মৃতি অবাক হয়ে দেখলাম ।   ফজলুল কবির, মাজহারুল হক দু’জন,আবু তাহের ,তার পরিবার ও রোকেয়া আপা আর এক দল যে যার মতো ঘুরে   ও কিছু কিছু কেনা কাটা করেছে । সেদিন  সকালে নাস্তার পর আমরা সবাই এয়ারপোর্ট গিয়ে যার যার লাগেজ বুকিং দিয়ে প্লেনের  জন্য অপেক্ষা করতে থাকলাম । সময় মতো প্লেনে উঠে যার যে সিট নিয়ে বসে পড়লাম ।  মনে অনেক আনন্দ , বহু দিনের  সাধনা, আজ সত্যি সত্যি  নাইজেরিয়া  যাচ্ছি ।

বিকাল তিনটার দিকে আমরা রোম পৌঁছে গেলাম এবং এয়ারপোর্ট ইমিগ্রেশন ও কাস্টম ক্লেয়ারেন্সের পর  এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়ে হোটেলের নিজস্য  ট্রান্সপোর্টে   সবাই হোটেলে পৌঁছি । রিসেপশন এন্ট্রি শেষে আমরা যার যেই চাবি নিয়ে রুমে গিয়ে দিনের লম্বা জার্নি করে ক্লান্ত অবস্থায় কিছু সময় রেস্ট নেই ।  সন্ধ্যায় সবাই একত্রে ডিনারের পর মাজরুল হক ও ফজলুল কবির সিদ্ধান্ত নিলো আমরা একটা মিনি ভ্যান দিয়ে রোম শহরের কিছু কিছু  নিদৃষ্ট এরিয়া ঘুরে বেড়াবো ।  আমরা সবাই রাজি হলাম । রোম শহর অত্যন্ত সুন্দর, ঘুরে খুব আনন্দ পেলাম ।  রাত   ১টার দিকে  হোটেলে পৌঁছলাম, সারা দিনের ক্লান্ত শরীর , কাপড় ছেড়ে সঙ্গে সঙ্গে ঘুমিয়ে পড়লাম ।

পরদিন সকালের ব্র্যাকফাস্টের পর আমরা এয়ারপোর্ট গিয়ে বুকিং দিয়ে সব কিছু ঠিক  করে নাইজেরিয়ান প্লেনের জন্য অপেক্ষা করতে থাকলাম । দুপুর ১২টার দিকে প্লেন এ উঠে সিট নিয়ে বসলাম । স্থানীয় সময়   বিকাল ৪টার দিকে কানু এয়ারপোর্ট পৌঁছলাম । ইম্মিগ্রাশনে আমাদের কিছু সমস্যা হয়েছিল । ওরা প্রশ্ন উঠিয়েছিলো ,” নিয়ম অনুযায়ী ইয়েলো ফিভার ইনজেকশন নেয়ার পর তোমাদের এক মাস দেশে থাকা  ।” আমরা বুঝিয়ে বললাম,বাংলাদেশে ইয়েলো ফিভার নাই বা ইনজেকশন পাওয়া যায় না । সে যাই  হোক,পুরা দলের একই অবস্থা, তাই ওরা আমাদের ইমিগ্রেশন দিয়ে দিলো ।  ইমিগ্রেশন ও কাস্টম ক্লিয়ার করার পর আমরা বাহিরে এসে ট্যাক্সি নিয়ে বাউচি স্টেটের (চাকুরীর স্থল) দিকে রওয়ানা হলাম । এটা অগাস্ট মাস, এ সময় নাইজেরিয়াতে  প্রচুর বৃষ্টি হয় । চারদিকে সবুজ গাছ আর মাঠ,দেখতে দেখতে আমরা বাউচি পৌঁছে  গেলাম ।   কানু থেকে বাউচি ২০০ কিলোমিটার এবং বিকাল ৭টার দিকে বাউচি  আওয়ালও  হোটেল কাউন্টারে  পৌঁছলাম ।  রিসেপশনে রিপোর্ট করার পর আমরা যার যেই রুমে গিয়ে লাগেজ রেখে ফ্রেস হয়ে ডাইনিং টেবিলে গিয়ে রাতের ডিনার শেষে রুমে গিয়ে ক্লান্ত অবস্থায় শুয়ে পড়ি ।

জীবন একটা জার্নি । এ জার্নির শেষ কোথায়?  আমার জীবনের কিছু অভিজ্ঞতা এখানে তুলে ধরলাম পাঠকদের জন্য ।
(ক্রমশঃ)

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅফিস
পরবর্তী নিবন্ধতুমি আর ফিরবে না জানি !
নজরুল ইসলাম
নজরুল ইসলাম - জন্ম:- ১৯৪৮ সাল । এনায়েতপুর, কচুয়া, চাঁদপুর, বাংলাদেশ। শিক্ষা:- এম, কম ( ব্যাবস্থাপনা ), ঢাকা ইউনিভার্সিটি। এম, এ (অর্থনীতি ) জগন্নাথ ইউনিভার্সিটি। চাকুরী জীবন:-ইসলামাবাদ, পাকিস্তান,বাংলাদেশ, নাইজেরিয়া,আমেরিকা ও কানাডা। বর্তমানে :- অবসর জীবন- কানাডাতে। ছাত্রজীবন থেকেই লেখালেখির শুরু। প্রকাশিত বই:-আমার সংগ্রামী জীবন,সাদা ঘোড়া,জীবন চক্র,শুচিতা ও জীবনের মুখোমুখি।

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন