লেখক পরিচিতি: জাকারিয়া মুহাম্মদ ময়ীন উদ্দিন-

জাকারিয়া মুহাম্মদ ময়ীন উদ্দিন (জন্ম: ১৯৬৬ ), বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়ে উন্নয়ন কর্মী হয়ে দেশীয় ও আন্তজার্তিক অবাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে চাকুরী শুরু করেন এবং তখন থেকেই লেখালেখিতে মনোনিবেশ। তবে লেখালেখি শুরুটা ছিল সেই হাইস্কুল জীবনে পাড়ার বড় ভাইদের প্রকাশিত ম্যাগাজিন ‘অবসর’ নামক পত্রিকার মাধ্যমে। ২০০৩ সালে কানাডায় সপরিবারে স্থায়ী ভাবে বসবাস শুরু করে, আবারও পড়াশুনা, প্রথম Humber College থেকে সোশ্যাল সার্ভিস বিষয়ে দুই বছরের ডিপ্লোমা, পরে University of Guelph থেকে ফ্যামিলি & কমিউনিটি সোশ্যাল সার্ভিস বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করার পরে সেটেলমেন্ট কাউন্সিলর হিসেবে নিউকামারদের নিয়ে টরেন্টোতে একটি বেসরকারি সংস্থায় প্রায় তিন/চার বছর কাজ করেন। টরেন্টোর রাস্তাঘাটে হোমলেসদের দেখতে পেয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে হোমলেস ও মেন্টাল হেলথ সেক্টরে কাজ করার অভিপ্রায়ে তিনি জর্জ ব্রাউন কলেজ থেকে মেন্টাল হেলথ এর উপর পোষ্ট গ্রাজুয়েশন ডিপ্লো করেন এবং একই সঙ্গে দুটি নন-প্রফিট সংস্থায় মেন্টাল হেলথ কর্মী হিসাবে অদ্যাবধি কাজ করে আসছেন । লেখক জাকারিয়া The Ontario College of Social Workers and Social Service Workers (OCSWSSW) থেকে রেজিস্টার্ড কৃত একজন সোশ্যাল সার্ভিস ওয়ার্কার ।

প্রবাসীদের মাঝে সারা জাগানো ব্লগ পরবাসী ব্লগের জন্মলগ্ন থেকেই জাকারিয়া একজন নিয়মিত লেখক।  বেশ কিছু জনপ্রিয় ধারাবাহিক গল্প পরবাসী ব্লগ, কানাডা ভিত্তিক একটি সাপ্তাহিক বাংলামেইল পত্রিকায় এবং মাসমিডিয়াতে ব্যাপক সাড়া পাওয়ার পরে ঢাকায় ২০২৩ সালের একুশে বইমেলায় লেখকের তিনটি বই হোমলেস, সিঙ্গেল মাদার, জোসনা ম্যানশন এবং চলতি বছরের বইমেলায় হাউজ হাজব্যান্ড উপন্যাস আকারে প্রকাশিত হয়। এই বইগুলি লেখার সময় লেখক তার নিজের দীর্ঘ অভিবাসন অভিজ্ঞতা, চ্যালেঞ্জ এবং কানাডায় সমাজসেবা কর্মজীবনের অভিজ্ঞতা ব্যবহার করেছেন। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক লেখকের একটি জনপ্রিয় গল্প ‘শেকড়’ ২০২১ সালে বাংলাদেশের বুকল্যান্ড প্রকাশনা থেকে ৫০ লেখকের ভাবনা নিয়ে পঞ্চাশে বাংলাদেশ গ্রন্থে প্রকাশিত হয়েছিল। গল্প/উপন্যাসের পাশাপাশি কবিতা, প্রবন্ধ লেখা ছাড়াও খেলাধুলা নিয়েও লেখকের অনেক লেখা রয়েছে।

এ বছর ২০ জুলাই অনুষ্ঠিত কানাডীয় বাঙালি সাহিত্য উৎসবে বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার পুরস্কারপ্রাপ্ত কথাসাহিত্যিক সালমা বাণীর উপস্থাপনায় কথাসাহিত্য পর্বে অন্যান্য গুণী সাহিত্যিকগণের মাঝে জাকারিয়াও অংশ নিয়ে বাংলা সাহিত্য নিয়ে আলাপ করেন। কানাডার সবচেয়ে জনপ্রিয় বাংলা টিভি চ্যানেল এনআরবি এবং সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন বাংলা মেইল ২০২৩ সালে টরেন্টোতে একটি সাহিত্য উৎসবের আয়োজন করেছিল যেখানে জাকারিয়াসহ কানাডিয়ান বাঙালি ১৫ জন নতুন লেখককে সনদ বিতরণের মাধ্যমে স্বীকৃতি দেয়া হয়। একই বছরে জাকারিয়া কানাডিয়ান সাউথ এশিয়ান লিটারেসি ফেস্টিভালে আরও তিনজন বাঙালি লেখকের সাথে যোগ দেন এবং লেখার অভিজ্ঞতা নিয়ে আলোচনা করেন। বাংলাদেশী কানাডিয়ান কমিউনিটিতে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৩ সালে স্থানীয় এমপিপি কর্তৃক জাকারিয়াকে একটি স্বীকৃতি পত্র দিয়ে ভূষিত করা হয়েছে । লেখক ‘মানসিক স্বাস্থ্য’ নিয়ে একটি প্রবন্ধ লিখেছেন যা টরন্টো বাংলা স্কুল থেকে ‘বর্ণমালা’ পত্রিকায় ২০২১ সালে প্রকাশিত হয়েছিল।

প্রফেশনাল চাকরি, লেখালেখির পাশাপাশি কথা সাহিত্যকে জাকারিয়া মুহাম্মদ ময়ীন উদ্দিন প্রবাসে বাংলাদেশী কমিউনিটির নানাবিধ উৎসবে উপস্থিত থেকে নিজের এবং চারিপাশের মানুষের দৈনন্দিন ব্যস্তময় জীবনের একঘেঁয়েমি কাটিয়ে উঠতে হাসি ও আনন্দে মাতিয়ে রাখেন। প্রবাসে বাংলা ভাষী জনগোষ্ঠীকে সাহায্য করার প্রয়াসে জাকারিয়া সোশ্যাল ওয়ার্ক ব্যাকগ্রাউন্ড এর ছজন বাংলাভাষীদের নিয়ে Raising the Hope Community Services একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান (Nonprofit Organization ) গঠন করে এই প্রতিষ্ঠানের সেক্রেটারির দায়িত্বে পালন করে আসছেন। এই সংস্থাটি মানসিক স্বাস্থ্য, মাদকাসক্তি ও একাকীত্বও বা আইসোলেশন বিষয়ে সচেতনতা তৈরীতে ইতিমধ্যে টরেন্টোতে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে।

সাম্যবাদী কবি, প্রাবন্ধিক, ঔপন্যাসিক ও সমাজকর্মী জাকারিয়া সামাজিক গণমাধম্যে সমসাময়িক কর্মকান্ড নিয়ে অপ্টিমিস্টিক ও উৎসাহব্যাঞ্জক লেখালেখির মাধ্যমে একটি অখণ্ড বাংলাদেশী ন্যাশ্যালিটি গঠনে ভূমিকা রেখে আসছেন।

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন