টরন্টো থেকে:-
আমরা যারা বাংলাদেশ বা দক্ষিন এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে কানাডায় এসেছি, সৌজন্যবোধ জনিত কিছু রিফ্লেক্স আমাদের মধ্যে সব সময় কাজ করে। তার একটি হলো সিনিয়র কাউকে দেখলে চেয়ার থেকে উঠে দাড়ানো. ২০০৮ সাল. তখন কাজ করি অন্টারিও মিনিস্ট্রি অফ হেলথ প্রমোশন এর স্ট্রাটেজিক হিউমান রিসোর্সে ডিপার্টমেন্টএ, জুনিয়র পলিসি এনালিস্ট হিসেবে । ৭৭৭ বে স্ট্রীটের সাত তলার পুরো ফ্লোর জুড়ে অফিস । কাজে যোগ দেবার আগ পর্যন্ত বুঝিনি যে মিনিস্ট্রি অফ হেলথ এন্ড লং টার্ম কেয়ার ছাড়াও আরো একটি মন্ত্রনালয় রয়েছে যাদের কাজ হচ্ছে preventive হেলথ কেয়ার সাপোর্ট । যাহোক, সদ্য জয়েন করেছি, সুতরাং আগ্রহ এবং একনিষ্টথা প্রমানের চেষ্টার অন্ত ছিলনা। সব মনোযোগ ঢেলে একদিন কাজ করছি মাননীয় প্রতি মন্ত্রীর Presentation এর জন্য. বিষয় হলো “Strategic Diversity Framework” যা মন্ত্রনালয়ের সব বিভাগে অনুসৃত হবে। হঠাৎ দরজায় টোকা শুনে তাকিয়ে দেখি প্রতিমন্ত্রী নিজেই হাজির জরুরি কিছু নির্দেশনা দেবার জন্য। দক্ষিন এশিয়ার কোন দেশ হলে প্রতিমন্ত্রীর পিছনে হয়ত আমলাদের একটি বাহিনী থাকত. আমার মত একজন সাধারণ স্টাফের কাছে প্রতিমন্ত্রী সরাসরি চলে আসার বিষয় নিয়ে বিতর্কের ঝড় উঠত।কিন্তু না, তিনি একাই এসেছেন। এরপর তিনি আরো কয়েকবার এসেছেন একই বিষয়ের জন্য. যত বার সামনে আসেন, আমি ততবারই চেয়ার ছেড়ে ওঠে দাড়াই। বিষয়টি বুঝতে পেরে প্রতিমন্ত্রী সহাস্স্যে বলেন, “Hasan , i understand where it is coming from, but you don’t need to do it. Perhaps unlearning certain things may help you feel more comfortable”. আমার কিছুটা ঘাবড়ে যাওয়া অবস্থাকে সহজ করার জন্য প্রশংসাসূচক কিছু মন্তব্য করে এবং আরো কিছু বিষয় অন্তর্ভুক্তির নির্দেশনা দিয়ে প্রতিমন্ত্রী তার অফিসে ফিরে যান।
বাঙালি স্বভাবজাত সৌজন্যবোধ unlearn করা বা ভুলে যাওয়া কতটুকু সম্ভব জানিনা, কিন্তু একজন সাধারণ স্টাফের সাথে একটি মন্ত্রনালয়ের সর্বোচ্চ পদবিধারী একজন কর্মকর্তার অতি সাধারণ, সৌজন্য মূলক আচরণ আজ ও শ্রদ্ধার সাথে সরণ করি। কফির জন্য কলেজ পার্কের টিম হর্টনের লাইনে দাড়ানো অসীম ক্ষমতাবান এসব মানুষের জন্য বিশেষ কোনো ব্যবস্তা নেই, নেই সব মানুষের রাস্তা বন্ধ করে নিজে অফিসএ যাবার সুরক্ষিত আয়োজন। ক্ষমতার আধার হয়েও অপব্যবহারের কোন প্রয়াস কখনো দেখিনি। পদবির দাপট, রাজনৈতিক লেজুরবৃত্তি, তদ্বিরবাজদের ভিড় এসবের কিছুই চোখে পড়েনি. সবকিছুই চলছে নিয়ম মাফিক। সবাই করে যাচ্চে যার যার নির্ধারিত কাজ। নিজের কাজ বাদ দিয়ে দলীয় পদলেহনের সুযোগ এবং প্রশ্রয় কোনটাই নেই. দীর্ঘশাস ছেড়ে ভাবি, প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশে সুশাসনের এই ভিত কবে তৈরী হবে. কবে আমরা দুর্নীতি এবং রাজনৈতিক কালিমা, পংকিলতার আবর্ত থেকে বেরিয়ে এসে একটি অনন্য দেশ হিসেবে মাথা তুলে দাড়াব. হয়তবা তা অনেক দুরের পথ কিংবা হয়তবা সেই দিন বেশি দুরে নয়. হাজার হাজার মাইল দুরে বসে আমরা প্রতিক্ষার প্রহর গুনি সেই দিনের আশায়।