monir5

টরন্টো থেকে:-

কানাডা বসবাসের জন্য খব ভালো দেশ।  মহান দেশ। সর্বত্র শান্তি শৃংখলা ও সুন্দর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশ। আজ প্রায় একযুগ হতে চললো আমি কানাডায় এসেছি। কিন্তু এত সব কিছুর পরেও অনেক সময়ই আমার মন পড়ে থাকে সেই বাড়িতে যেখানে  আমি বেড়ে উঠেছি। আমার শিশু ও শৈশবকালের অনেক সময় যেখানে কেটেছে। যেখানে কবরে শুয়ে আছেন আমার মা বাবা ও অন্যান্য  নিকট আত্তীয়। অতি সম্প্রতি আমি দেশ থেকে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য বেরিয়ে এসে আমার এ ‘হোম সিকনেস’  আবারও  কিছুটা বেড়ে গিয়েছিল। monir4

দেশে বাস্ত সময় কাটিয়ে যখন কাতার এয়ারওয়েজের বিমানে করে আরব সাগর পাড়ি দিচ্ছিলাম সেদিন স্মৃতির পাতায় ভিড় করে আসছিলো অনেক মুখ ,আত্তীয়, বন্ধু বান্ধব ও দেশের স্মৃতি। আমার নিজের বাড়ি, শ্বশুরবাড়ি ও মামাবাড়ির আশপাশ, গাছ পালা,রাস্তাঘাট। ঢাকার রাস্তাঘাট ,ভীড় ,যানজট ,আমার সাবেক কর্মস্থল। তাই ক্ষিধা থাকা সত্তেও প্লেনের সুস্বাদু খাবার বিস্বাদ লেগেছিলো। এ সময় মনে মনে ভাবছিলাম, এ ভাবে পরবাসী  হয়ে কি পেয়েছি বা কি হারিয়েছি ! যা এ পরবাসে অর্জন করেছি  তার থেকে বেশি কি হারিয়েছি ? এ প্রশ্ন নিজেকে করে তাতক্ষণিক কোন সদুত্তর পায়নি।

তবে সব সময় পজিটিভ চিন্তা করাই ভালো, এ বলে নিজেকে সান্তনা দিয়েছি। বাস্তবতার নিরিখে সব কিছু বিশ্লেষণ করেও দেখেছি । অন্ন বস্ত্র শিক্ষা সহ মানুষের সকল মৌলিক চাহিদা পূরণের নিশ্চয়তা, সামাজিক নিরাপত্তা ,উন্নত জীবন যাত্রা, ও সকল ক্ষেত্রে সময়োপযোগী ব্যবস্থাপনার  জন্য কানাডাকে ওয়েলফেয়ার স্টেট বলা হয়। সেজন্য এখানে এসে বড় ধরনের কোনো লোকসান হয়েছে বলেও মনে হয় না। তাই কানাডায় বসবাস করে এখন আর খুব একটা  খারাপ লাগে না। বরং এখন এদেশের সব কিছু উপভোগের জন্য পর্যাপ্ত সময় ও সুযোগ পেলাম না বলে মাঝে মাঝে আক্ষেপ করি।

এ দেশে এসে প্রথম কয়েক বছর উপযুক্ত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়নি। তবে নিজ দেশ ও  নিকট আত্বীয় স্বজন থেকে বিচ্ছিন্ন থাকার মানসিক কষ্ট থাকা সত্তেও নানা বর্ণের নানা ধর্মের বিচিত্র সব মানুষের মাঝে নিজের জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ করে নেয়া একটা চ্যালেঞ্জ বলে ধরে নিয়েছিলাম । নুতন মনোবল ও  উদ্দাম নিয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সচেষ্ট হয়েছিলাম। প্রথম এসে ভালো কোনো কাজ শুরু করতে পারি নাই। এদেশে ভালো কাজ পেতে হলে ভালো ইংরেজীর জ্ঞান ও সেই সাথে এ দেশের কলেজ ইউনিভার্সিটির ডিগ্রী থাকা প্রয়োজন। এ সব না থাকলেও অনেকে চাকরি বা ব্যবসায় ভালো করছেন। তবে এ জন্য যথেষ্ট সময় দিতে হয়েছে। অসীম  ধৈর্য ও চেষ্টা করে অনেকেই মোটামুটি একটা সম্মানজনক অবস্থানে পৌছেছেন। আমার ক্ষেত্রেও এর বেতিক্রম হয়নি। বিভিন্ন ধরনের কাজ কর্মের মধ্য দিয়ে ৭/৮ বছর চলে যাবার পর এখন কিছুটা ভালো পরিবেশে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি।

এখন একযুগ পরে এসে এসব মূল্যায়ন  করতে যেয়ে নিজেকে আর স্বজনহারা পরাজিত সৈনিক মনে হচ্ছে না।  মাঝে মাঝে মনে হয় ,জীবনের দুইত্রিতিয়াংশ সময়তো  ইতোমধ্যে পার করে এসেছি। জীবনের শেষ সময়ের বাকি দিনগুলি এখানে থাকলেও না খেয়ে বা বিনা চিকিত্সায় মরতে হবে না। কাজেই, আল্লাহ’র কাছে শুকরিয়া আদায় করা ও সেই সাথে  জীবনের বাকি সময়টা উপভোগ করতে দোষ  কি?

এ দেশে এসে অনেক সুন্দর সুন্দর মানুষের দেখা পেয়েছি। অনেক ভালো বন্ধু পেয়েছি। নিকট আত্তীয় না হওয়া সত্তেও আমরা পরস্পর এক অপরের প্রয়োজনে সব সময় পাশে পাই। এদের সাথে এখন উইক এন্ড এবং  সামারে ভালো সময় কাটে। সবাই মিলে একত্রে ঘুরে বেড়ানো ও আড্ডা দেয়ার মধ্য দিয়ে আমরা একে অপরের অনেক ঘনিষ্ট বন্ধুতে পরিনত হয়েছি।  স্ত্রী ও ছেলে আনন্দের সাথে দিন কাটাচ্ছে।fall

 বিচিত্র পরিবেশ ও আবহাওয়ার দেশ এই কানাডা। তিন ঋতুতে তিন ধরনের আবহাওয়া। আবহাওয়ার সাথে সাথে পরিবর্তন হয় চার পাশের পরিবেশ  ও প্রাকৃতিক দৃশাবলী। সারা বছর আমরা কাজ করি জীবন জীবিকার জন্য। এ দেশের সবাই তাই করে। আমাদের আত্তীয় বন্ধু বান্ধব সবাই অপেক্ষায় থাকি সামারের জন্য। বছরের নয় মাস কাজ করার পর সামার সিজন এলে সবার মধ্যে সাজ সাজ রব পড়ে যায়।  সামার মানে এ দেশে ছুটিছাটা,  বিনোদন ও সেই সাথে  দেশ বিদেশে বেড়ানোর সময়। সামারের তিন মাস আমরা অতিবাহিত করি বিভিন্ন স্থানে বেড়ানো ,ক্যাম্পিং করা ,আত্তীয় বন্ধুদের নিয়ে নিজ বাড়িতে বা বাহিরে একত্রে খাওয়া দাওয়া করা ইত্যাদি বিভিন্ন কর্মকান্ডের মধ্যদিয়ে।Pinery-Provincial-Park-Ontario

গত সামারে আমরা অনেক জায়গায় বেড়িয়েছি।  এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো হ্যামিলটনের আফ্রিকান লায়ন  সাফারী পরিদর্শন, পাইনারী প্রভিনশিয়াল পার্ক ও ওয়েথলি প্রভিনশিয়াল পার্কে ক্যাম্পিং, সাউথ সিমকো পার্ক ও সিনিক রেলওয়ে ভ্রমন, ইনিসফিল ও মিউফোর্ড বিচে স্নান করা, সিমকো  লেকে বোটে ভ্রমন ও লাঞ্চ করা, সফটভীল কান্ট্রি মার্কেটে লাইভ চিকেন কেনা ও ফারিন্তশ ফার্মে টাটকা শাকসব্জি কেনা । তার আগের বছর গুলিতেও আমরা অন্টারিও প্রভিন্সের বিখ্যাত সব দর্শনীয় পার্ক, বিচ ও শহরে ঘুরে বেরিয়েছি। সামারের ছুটির দিনগুলি উপভোগ করার জন্য এদেশের সরকার দেশের সব স্থানেই সুন্দর ব্যবস্থা করে রেখেছে।

তাই আসুন , যে দেশে বসবাস করছি , যেখানকার আলো বাতাস গ্রহণ করে জীবন যাপন করছি সেখানকার ভালো যা কিছু তার স্বাদ আস্বাদন করি।  নতুন নতুন  বন্ধু বান্ধব সৃষ্টি করি,  নতুন নতুন জায়গায় বেড়াতে যাই ও সব ক্ষেত্রে নতুন কিছু করি। বর্তমান কে সত্য জেনে অতীতকে স্মৃতির খাতে রেখে বর্তমান প্রেক্ষাপটে জীবন যাপনে সক্রিয় হই। তবেই আমরা এ ‘হোম সিকনেস’.থেকে মুক্তি পাব বলে মনে করি।

১ মন্তব্য

  1. Thank you Mr. Mohammad Moniruzzaman for an honest analysis about home sickness about Bangladesh and life in Canada. I find the article very objective. Please carry on …

আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন