কোতয়ালপুরের সবুজ শ্যামল পথ, সবুজে ঘেরা বনুর বিল, আর
ধানের ডগায় চকচক করা শিশিরের জল দেখিনি কতদিন।
আরো অনেক অভিমানী ছেলেদের মতো আমিও দেশছাড়া সেই কতকাল ধরে।
বুকের ব্যথাগুলোকে চেপে ধরে হাসি মুখে বেঁচে থাকার বিশুদ্ধ অভিনয় করি প্রতিদিন।
ভালোভাবে বেঁচে থাকার অভিনয়ে আমরা অনেক পারদর্শীও বটে !
ছিমছাম গুছানো নরওয়ের গ্রাম, শহর আর রাস্তাঘাটগুলো জীবনটাকে সহজ আর কাব্যিক করে রাখলেও -বাংলার মাটি, বাংলার পথঘাট , আর স্নেহময়ী মা বাবাকে দূরে ফেলে রেখে আনন্দে কি বেঁচে থাকা যায় ?
বুকে হাত রেখে কেউ কি বলতে পারবে সে সত্যি সত্যি সুখে আছে ??
আমরাতো পাষান নোই, পরবাসে থাকা বাংলার ছেলেমেয়েরা পাষান হতে জানেনা।
জীবিকার তাগিদে দেশ ছেড়ে দূরে থাকা ,
তানভীরের মতো কেউবা থাকেন নিউ ইয়র্কের সুউচ্চ অট্টালিকায়, আর কাতারের মরুভূমিতে কারো কারো দিন কাটে নিতান্ত দারিদ্রতায়।
তবে
নিউইয়র্ক, বার্লিন, লন্ডন বা আমস্টার্ডামের বিলাসবহুল কটেজেই থাকি কিংবা ব্যবসা খুলে আব্দুল্লার মতো আফ্রিকার কোনো ভয়াল গ্রামেই থাকিনা কেন,,
বাংলা মা আমাদের হাতছানি দিয়ে ডাকে !
অভিমানী সন্তানেরা দেশ ছেড়েছে ঠিকই তবে বাংলা মা কে ভুলেনি কভু !
আর তাইতো
সবাই যে যার মতো করে নীরবে কাঁদি ,
কেউ কাঁদি নিবৃত্তে , কেউবা বৌয়ের আঁচল তলে মুখ ঢেকে, আর কেউবা দেশে ফেলে রেখে আসা ছেলে মেয়েদের কথা স্মরণ করে।
জানি একদিন ফেরা হবে দেশে।নাড়ির টানে ফিরে যেতে হয় সুরমার তীরে !
হিসাব করে ভালোবাসাগুলো গুনে গুনে নেবো সেইদিন।
মহুয়ার বনে ঝিঁঝি পোকাদের কলতান আর কাটাল চাপার নিচে দোয়েলের মিহি কণ্ঠের গান সবই শুনা হবে।
আমার মা , একাত্তরের চেতনা, আর জীবনানন্দের কবিতাগুলো সেদিন যেন থাকে।
বাঙালি হৃদয় আমার –
মা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, আর জীবনানন্দের কবিতা ছাড়া কি আর বাঁচতে পারে ??