নরওয়ে থেকে:-
ছোটবেলায় ক্রিকেটের একটা বল কিনতে পারলে বুকের মাঝে রাজ্যের সুখ অনুভব হতো , এখন লক্ষ টাকা দামের কোনো কিছু কিনেও সে সুখটা পাইনা। ছোট বেলায় মা-বাবা ভাই-বোন সবাই মিলে গাদাগাদি করে প্রাইভেসিহীন ভাবে ছোট্ট একটা ঘরে বসবাস করার মাঝে যে আত্মতৃপ্তি ছিল, আজ অনেক বৎসর হয় সাজানো গুছানো বিরাট ঘরগুলোতে নিজের মতো করে একাকী থেকেও সে আত্মতৃপ্তির লেশ মাত্র পাইনা। আগে বিয়ে বাড়িতে এক টুকরো মুরগির রোস্টের মাঝে যে সাধ মিলতো,এখন নামিদামি কোনো রেস্টুরেন্টে বসে নিজের পছন্দমতো যা ইচ্ছে তা খেয়েও তার সামান্যতম সাধ মিলেনা।
২০০৫ সালের দিকে প্রায় সময় মনে হতো বাংলাদেশ থেকে বের হয়ে যেতে পারলেই এক জীবনে দুনিয়ার সব সুখ এসে দেখা দেবে, এখন পৃথিবীর সবচে সুখী দেশগুলোর অন্যতম একটা দেশে থেকেও নিজেকে কেমন যেন অসুখী অসুখী মনে হয়। জীবনের প্রথম চাকরি এবং সে চাকরি থেকে উপার্জিত সামান্য যে টাকাটা পেয়েছিলাম তার জন্য যে সুখানুভুতি , যে গর্ব হয়েছিল ।বিগত ৪ বৎসর যাবৎ বেতন হিসেবে অনেক কে যে লক্ষ লক্ষ টাকা দিয়েছি তার জন্য সে সুখানুভূতির, সে গর্বের এতটুকুও হয়নি, কেন হয়নি তা ঠিক জানিনা , হয়তোবা ঠিক মতো বলতেও পারবোনা। তবে একটা কথা ভালো করে জানি আর তা হচ্ছে দিন শেষে কেন জানি ফেলে আসা শরৎকাল আর বনুয়া বিলের জন্য প্রাণ কাঁদে। প্রাণ কাঁদে বাপ্ দাদার কবর দেখতে না পারার দুঃখে। প্রাণ কাঁদে যখন কোনো প্রিয়জন হারিয়ে যায় কিন্তু তাকে শেষ দেখা না দেখতে পারি বলে ।
মানুষ হিসেবে আমাদের আকাঙ্খার কোনো শেষ নাই, তাই অনেক কিছু পেয়েও মাঝে মাঝে আমরা অসুখী রয়ে যাই। আমার অসুখ আমার ফেলে আসা মা, ভাই বোন, ফেলে আসা প্রিয় বনুয়ার বিল, চিরচেনা প্রিয় মুখগুলো আর ফেলে আসা গর্বিত বাংলাদেশ।
আপনি সবার সাথে মিথ্যা বলতে পারেন, সবার সাথে নির্ধিদায় অভিনয় করতে পারেন, কিন্তু নিজের সাথে কি পারেন ??
পারবেন না, আর তাই মিথ্যা আর অভিনয়ের জীবন ছেড়ে , আপনার যা আছে , আপনি যা করতে পারেন, তা নিয়েই বেঁচে থাকুন।
বিলাসবহুল হোক আর গরিবের জীবন হোক, যাই হোক না কেন, মানুষিকভাবে অন্তত সুখে থাকতে পারবেন।
মা, মাটি, আর স্বদেশকে ভালোবাসুন, কেননা শেকড় আর আত্মপরিচয়হীন আপনি যত বড়ো, যত মহানই হোন না কেন ,দিনশেষে অন্যদের কাছে আপনার এক পয়সার দাম থাকবেনা।