মানুষকে সত্যিকার অর্থে স্নেহ করলে ভালোবাসা দিলে, সবাই মনে না রাখলেও কিছু কিছু মানুষ আছে তারা তা মনে রাখে, ২০১৬ সালে যখন মান্ডালে দোকান খুলি, মোহাম্মদ তখন নরওয়েতে নতুন, সিরিয়ার যুদ্ধ ওদের সব তছনছ করে দিয়েছিলো তাই মানসিকভাবেও ও ছিল বিষণ্ণ, ভগ্ন। আমি ওকে কাজ দিয়েছিলাম, আমার বাসায় থাকবার জায়গা করে দিয়েছিলাম.. আমি যেখানেই যেতাম সব সময় ওকে সাথে সাথে রাখতাম, ওর যা প্রয়োজন তা দেখে রাখতাম। পৃথিবীতে মোহাম্মদের মতো হাজার হাজার মানুষ আছে, আশপাশেও ওই সময়ে হয়তোবা ওর চেয়ে খারাপ অবস্থায় আরো অনেকেই ছিল , তার পরও ওকেই কাজে নেবার, ওকেই সাথে সাথে রাখার একটাই কারণ ছিল, ও খুবই লয়াল, আজকাল লয়াল, সত্যবাদি, এবং মালিকের প্রয়োজনে বুক পেতে দেয়া কর্মী খুব কমই মিলে। দুধ কলা দিয়ে অনেককেই অনেক উপরে তুলার পর দেখা যায়, প্রয়োজনের সময় ঠিকই ফাঁকি দিয়ে চলে যায়।
আমাকে দেখা শুনা করে রাখা থেকে শুরু করে সব কিছু ও করতো, যা বলতাম তার সবকিছু দ্বিধাহীন ভাবে পালন করতে কুন্ঠাবোধ করতোনা।
ওর সবচেয়ে বড়ো আরো একটা গুন্ হচ্ছে, পড়ালেখা না জানলেও ও খুব ভালো ইলেক্ট্রিশিয়ান আমার বাসা, আমার দোকান সব জায়গায় ইলেক্ট্রিকাল কোনো সমস্যা হলেই ও নিমিষে সমস্যা বের করে ফেলতে পারে।
এখন সে নরওয়েতে স্থায়ী, নরওয়েজিয়ান অন্য একটা রেস্টুরেন্টের পাশাপাশি আমার দোকানেও কাজ করে, নিজের বাড়া করা বাড়িতে থাকে , নিজের গাড়ি চালায়, আমাকেও প্রয়োজনে যেকোনো জায়গায় নিয়ে যায়। ওর দিন আগের থেকে অনেক বদলে গেছে, প্রতি মাসে নিয়ম করে বাড়িতে মা বাবাকে ও টাকা পাঠায় যা আগে ওর পক্ষে সম্ভব ছিলোনা।
এখন সে আমার ওখানে ১০০% কাজ না করলেও আমার সব প্রয়োজনে সব সময় আমার পাশে ছায়া হয়ে থাকে। আমাকে সুন্দর সুন্দর জায়গায় বেড়াতে নিয়ে যায়। নরওয়ের প্রথমদিকের কষ্টের দিনগুলোতে আমি যে ওর পাশে ছিলাম তা আজও মনে রেখেছে, আর তাইতো আমার যেকোনো প্রয়োজনে, সবকিছু ফেলে রেখে মোহাম্মদ সব সময় আমার পাশে ছুটে আসে।
জীবনে উন্নতি করতে হলে, যোগ্যতা, কঠোর পরিশ্রম, সঠিক পথে চলা আর যেসব মানুষ বিপদের সময় পাশে ছিল সে সব মানুষদের প্রতি সৎ থাকার কোনো বিকল্প নাই।