প্রবাসে ‘অখন্ড অবসর’ শব্দটি মনে হয় খুবই বেমানান । ঘরে বাইরে হাজারো ব্যস্ততার মাঝে একান্তই নিজের জন্য অবসর বের করা এবং তা অখণ্ড ভোগ করা এখানে প্রায় বিলাসিতার পর্যায়েই পড়ে । অথচ আমাদের যান্ত্রিক জীবনকে চলমান রাখতে এর প্রয়োজনীয়তাও অস্বীকার করার উপায় নেই । এমনি এক দুর্লভ অবসরে শুনছিলাম পন্ডিত অজয় চক্রবর্তীর প্রিয় একটি গান,
“কুল ছেড়ে এসে মাঝ দরিয়ায়
পিছনের পানে চাই,
ফেলে আসা তীরে কি মায়া যে টানে
মন বলে ফিরে যাই ——-“
জীবন, জীবিকার তাগিদে আমরা ছেড়ে আসি মায়াভরা, স্মৃতিঘেরা জন্মভূমি । সব কষ্ট, দুঃখ, বিপত্তি আড়াল করে পরম মমতায় জীবনভর যারা আগলে রাখেন আমাদেরকে, সম্মৃদ্ধ এক জীবনের প্রত্যাশায় আমরা ফেলে আসি তাদেরকেও । শুরু হয় দৌড়ের জীবন । অর্থ, বিত্ত, সম্পদের মোহে দিবানিশি ছুটতে ছুটতে সমৃদ্ধি হয়তো এক সময় আসে, কিন্তু ততো দিনে জীবন সায়াহ্নের গান শুরু হয়ে যায় । আমাদের আর ফেরা হয়না । অনেকটা বৃদ্ধ নিবাসের বাসিন্দাদের মতোই ।
শারীরিক প্রতিবন্দিতা, অসুস্স্থতা,বয়স এবং স্বাস্থগত কারণে একাকী স্বাভাবিক জীবন যাপনে অক্ষম মানুষদের জন্য কানাডায় মোটামুটি পাঁচ ধরণের আবাসিক সহায়তার ব্যবস্থা রয়েছে । এগুলো হচ্ছে যথাক্রমে Assisted Living, Adult Day Program, Supportive Housing, Retirement Home এবং Long Term Care Home । প্রথম চারটি মূলত বয়োবৃদ্ধদের জন্য । লং টার্ম কেয়ার হোমে যুবক, বৃদ্ধ যে কেউ আবেদন করতে পারেন যদি তাদের স্বাস্থগত সেবার প্রয়োজন বাসায় অথবা কমিউনিটিতে মিটানো সম্ভব না হয় । একটি বহুমুখী মূল্যায়নে উক্তির্ণরাই এই সুবিধা পেয়ে থাকেন । এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে যে যোগ্য বিবেচিত হলে কেউই এই সেবা (লং টার্ম কেয়ার হোম ) থেকে প্রত্যাখ্যাত হবেন না । সিনিয়র বা বৃদ্ধ মানুষদের জন্য কানাডায় যে সুযুগ সুবিধা এবং সেবা রয়েছে তা নিঃসন্দেহে তুলনাহীন । ভবিষ্যতে এই বিষয়ে বিশদ ভাবে লেখার ইচ্ছা আছে ।
পেশাগত কারণে কেস ম্যানেজমেন্ট সাপোর্ট এর অংশ হিসেবে লং টার্ম কেয়ার এবং অন্যান্য সিনিয়র হোমে প্রায়ই যেতে হয় । এই যাওয়ার পিছনে উদ্দেশ্য থাকে সেখানকার বাসিন্দা কারো সাথে সেবা সমন্বয় (Care Coordination) বিষয়ক আলোচনা অথবা বাসিন্দাদের তালিকায় নাম লিখাতে ইচ্ছুক কারো যাত্রার প্রাথমিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করা । এখানকার বৃদ্ধনিবাস গুলো জরাজীর্ণ নয় । সার্বক্ষণিক নার্সিং সেবা নিশ্চিত করা সহ এখানে বসবাসরত সবার শারীরিক, মানসিক সুরক্ষা, নিরাপত্তার দিক গুলোকে বিশেষ গুরুত্ব সহকারে দেখা হয় । এছাড়াও তাদের আত্মিক চাহিদা (Spiritual Need ) পূরণের জন্য প্রার্থনার ব্যবস্থা এবং বিনোদনের জন্য বিভিন্ন রকমের কর্মসূচি প্রায় প্রতিটি বৃদ্ধনিবাসেই রয়েছে । মোটকথা সহজ, স্বাভাবিক জীবন যাপনের সব আয়োজনই নিশ্চিত করা থাকে । নার্সিং হোম বা কানাডার লং টার্ম কেয়ার হোমে এই আয়োজন আরো বেশি । কিন্তু এতো কিছুর পরেও যা থাকেনা তা হলো উদ্দীপনা এবং প্রাণচাঞ্চল্য । দেখা যায়না কিন্তু অনুভব করা যায় “কোথাও কেউ নেই” এর মতো অদ্ভুত এক শূন্যতা । বিকল্প সেবা, সুরক্ষার ব্যবস্থা না থাকলেই এ জায়গায় আসতে হয় । হাসিমুখে, জীবনের জয়গান গাইতে গাইতে কেউ বৃদ্ধনিবাসে এসেছেন বলে মনে পড়ে না । যখনই যাই, কিছুটা বিস্মিত হয়ে লক্ষ্য করি একসময়ে দুর্দান্ত জীবন কাটানো এই মানুষগুলো বয়স, অসুস্থতা তথা জীবনের ভারে এখন কতটা ম্রিয়মান । প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির হিসেব মিলাতে মিলাতে উনাদের জীবনের ব্যালান্স শিট এখন ঝাপসা হয়ে আসছে । ভঙ্গুর শরীর আর বিষাদ মাখা মুখ নিয়ে হুইলচেয়ারে বসে অধীর আগ্রহে উনারা অপেক্ষা করেন প্রিয়জনের আশায় । অনেক সময় এই প্রতীক্ষা অব্যাহত থাকে জীবনের শেষদিন পর্যন্ত । সময় মানুষকে এমনি ভাবে অসহায় করে তুলে। অনেক চরাই উৎরাই পেরিয়ে প্রতীক্ষিত অখণ্ড অবসর যখন আসে, সেটা উপভোগ করার সময় ও সামর্থ তখন কোনোটাই থাকে না।
জানি, প্রিয়জনদেরকে যারা এরকম জায়গায় পাঠান, তাদের অন্য কোনো গত্যন্তর থাকে না । কিন্তু আমি ব্যক্তিগত ভাবে এটি মানতে নারাজ নিখাদ ভালোবাসার আবরণে সারা জীবন যারা আমাদেরকে জড়িয়ে রাখেন, নিঃস্বার্থভাবে প্রশান্তির ছায়া দিয়ে যান জীবনভর, জীবনের শেষ পর্যায়ে তারাই তখন আমাদের ভালোবাসার কাঙাল হয়ে পড়েন । ঠিক এই সময়টায় সংকটময়, জটিল সেবার (Critical, Complex Care Condition) অবস্থা ছাড়া তাদেরকে বৃদ্ধাশ্রমে স্থানান্তর কোন ভালোবাসার পরিচায়ক তা আমার বোধগম্য নয় । কে জানে, একসময় হয়তো আমাদেরও ঠাই হবে এরকম বৃদ্ধাশ্রমেই । বেলাশেষের এই গান একদিন হয়তো আমাদেরকেও গাইতে হবে । হয়তো আমরাও প্রতীক্ষার প্রহর গুনবো প্রিয়জনদের আশায় কিংবা উদাস চোখে খুঁজে বেড়াবো জীবন সায়াহ্নে জীবনের রূপ ।
সৈয়দ মসিউল হাসান
টরন্টো থেকে
Informative and emotional as well. I did my Masters research on ” Comparative Elderly Care in Finland, China and Bangladesh” and it turned out very good. In order to do that we had to do lots of case studies among those countries. Also my major being Comparative Nordic Welfare States I had to do lots of field works and studies in Scandinavian Welfare Countries. What I had found there is the concept of old care home, long term care home, nursing home etc. are different than Bangladesh and here; there it is their choice and they love to be alone in their later life, alone does not mean they are isolated, they just do not want to live with their children or relatives and be a burden, rather they like to live by themselves and stay connected with the loved one. Not to mention their elderly care system is way better than Canada or America, the same level of few old care homes i can see in Canada only in the private sector and those are very expensive yet I am not sure if the residence choose to stay there. If I ever get 647, it’s my dream that I would make a wonderful elderly care home Bangladesh and change the concept of so called Bangladeshi ” বৃদ্ধাশ্রম”, seems like dumping ground. If that wildest dream ever comes true instead of scaring our seniors would love to go there and stay with love and dignity in their later life.
Keep up Hasan bhai, and I will call you if i ever hit the jack pot!
Thanks Mukul bhai for sharing your insights. The concept of welfare state is actually borrowed from Scandinavian countries. Therefore, countries like Canada, USA are lagging far behind when it comes to providing quality care for the elderly and the vulnerable people in general. Having said that as you also know the initiative for need based care in Canada especially for seniors and children with physical, developmental and psychological challenges are still far better than many developed countries. Though there are still room for improvement. There are two sides of the senior care issue. One is the entitlements and services. Other one is the psychological vulnerability, abuse, neglect and a very powerful sense of emptiness deeper inside their mind. I wanted to touch on that part of their life. Thanks again.