টরন্টো থেকে:-
পরবাসী ব্লগ এ লেখার জন্য বেশ কিছু দিন আগে থেকে ভাবছিলাম। তবে সময় ও সুযোগ হয়ে উঠেনি। সম্প্রতি আমার PC তে বাংলা টাইপ করার সুযোগ পেয়ে এবার কিছু লিখব ঠিক করেছি ।লেখার হাত আমার খুব একটা ভালো নয়। আমি ভালো লিখতে পারিনা বলে একটা শংকা সব সময় আমার মধ্যে কাজ করে। তা সত্তেও আজ আমার বর্তমান কর্মজীবনের কিছু বিষয়ে লেখার প্রস্তুতি নিয়েছি । যে বিষয়টি নিয়ে আজ লিখবো তা হয়ত সকলেরই জানা আছে। তবুও আমি আমার মত করে একবার নিজের কথা লিখবো।
এবার বাংলাদেশে যেয়ে গ্রামের বাড়িতে জমিজমা নিয়ে বাস্ত সময় কাটায়ে ফেরার পথে ঢাকায় ২/৩ দিন ছিলাম। এ সময়ের মধ্যে সাবেক কর্মস্থল গণযোগাযোগ অধিদফ্তরে গিয়াছিলাম কিছু সময়ের জন্য। সেখানকার মহাপরিচালক মিসেস কামরুন্নাহার আমার ঘনিষ্ট বন্ধু।আমরা একসাথে পাশাপাশি ডেস্কে কাজ করেছি কয়েক বছর। তার অফিসে বসে অন্য বন্ধুদের খবর পেলাম। কয়েকজন বিভিন্ন দফতর ও সংস্থার মহাপরিচালক এবং কয়েকজন অতিরিক্ত সচিব হয়েছেন। এ ছাড়া প্রায় সবাই যুগ্ম সচিব হয়েছেন এবং বিভিন্ন মন্ত্রনালয় ও সংস্থায় কর্মরত আছেন।তার অফিসে বসে বেশ কয়েকজন বন্ধু বান্ধবের সাথে কয়েক ঘন্টা সময় কাটিয়ে যখন নিকেতনে আমার শ্যালিকার বাসায় আসছিলাম তখন থেকে মনে মনে ভাবছিলাম আর তুলনা করছিলাম যে গত এগারো বছর আগে কানাডা প্রবাসী হয়ে কি লাভ বা কি লোকসান করেছি।
তবে এ তুলনামূলক বিশ্লেষণের আগে একটু নিজের সম্মন্ধে বলে রাখি। আমি ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের ইনফরমেশন ক্যাডারে সিলেক্ট হয়ে ১৯৮৬ এর জানুয়ারী মাসের ২১ তারিখে ইনফরমেশন অফিসার পদে যোগদান করি গোপালগঞ্জ জেলা তথ্য অফিসে। পরবর্তিতে বাগেরহাট জেলা তথ্য অফিস,খুলনা আঞ্চলিক তথ্য অফিসে কাজ করে ঢাকা PID (প্রেস ইনফরমেশন ডিপার্টমেন্ট) তে যোগদান করি ১৯৯১সালে। PID থেকে কৃষি মন্ত্রনালয় ,পানি উন্নয়ন মন্ত্রনালয় ,শিক্ষা মন্ত্রনালয়ে,প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রনালয়ে কাজ করি ৭/৮ বছর। এ ছাড়া জাতীয় গনমাধ্যম ইনস্টিটিউট ও গণযোগাযোগ অধিদফতরে দুই বছর ও পরে PID এর প্রশাসনিক বিভাগে কাজ করি আরো কয়েক বছর। এ সময়ের মধ্যে আমার ছোট ভাই ও আমার স্ত্রীর একান্ত ইচছা ও পিড়াপিড়িতে কানাডায় SKILLED CATEGORY তে ইমিগ্রেশন এর জন্য আবেদন করি ২০০১ এর প্রথমদিকে এবং সব শেষে ২০০৫ এর মে মাসে কানাডায় আসি।
কানাডায় আসার পরে সার্বিক পরিস্থিতি দেখে প্রথম দিকে খুবই হতাশ হয়েছিলাম।বার বার নিজেকে ধিক্কার দিয়াছি ও আক্ষেপ করেছি নিজের আহাম্মকির জন্য। কোনো কোনো সময় মনে হয়েছে যে আবার দেশে ফিরে যাই। কিন্তু যখন দেখলাম আমার স্ত্রী ও পুত্র যথারীতি কানাডার পরিবেশ ও পরিস্থিতির সাথে এডজাস্ট করে নিয়েছে তখন আবার নিজকে প্রবোধ দিয়াছি যে যা হবার তা হয়ে গেছে। বেশ কয়েক বছর আমার এ হতাশা কাটে নাই। তবে এখন আমি এ হতাশা থেকে অনেকটা মুক্ত।
যাইহোক শালিকার বাসায় এসে রাতে ঘুম আসছিল না। বার বার শুধু বন্ধুদের অবস্থা ,দেশের সার্বিক পরিস্থিতি ও আমার নিজের বর্তমান অবস্থা নিয়ে চিন্তা করছিলাম। এ সময় আমার কর্মজীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে পর্যালোচনা করে আমি দেশে থাকলে বর্তমান অবস্থা ও কানাডায় বর্তমান অবস্থার একটি তুলনামূলক বিশ্লেষণ করি যা সকলের জানার জন্য নিচে উল্লেখ করছি।
এ সকল বিষয়ের সাথে আরো অনেক বিষয় যোগ করা যেতে পারে। আমি মাত্র কয়েকটা উল্লেখ করেছি। দেশে থাকলে চাকুরীতে পদোন্নতি ও মান-সম্মান অনেক কিছু হয়তো অর্জন করতে পারতাম কিন্তু সামাজিক নিরাপত্তা ও শান্তি পূর্ণ জীবন যাপন সম্ভব হতনা। সম্প্রতি দেশ থেকে এবার ঘুরে এসে আমার এ ধারণা হয়েছে।
আমার এ পর্যালোচনা থেকে আমি এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি যে বর্তমানে কানাডায় বসবাস করে আমার বন্ধু বান্ধব ও নিকটজনের কাছে থেকে দুরে থাকলেও আর সব দিক থেকে ভালো আছি। আপনাদের কি মনে হয় ? আমার হিসাব ও বিশ্লেষণ কি ঠিক আছে ?
ব্লগে আসার জন্য ধন্যবাদ।
এই রকম লেখার অপেক্ষায় ছিলাম।
মনির ভাই, অনেক ধন্যবাদ আপনার এই তুলনামূলক এই বিশ্লেষণের জন্য, যদিও বিষয়টি কঠিন এবং আপেক্ষিক. আপেক্ষিক এই অর্থে যে আমাদের প্রত্যেকের বাস্তবতা ভিন্ন এবং বাস্তবতাকে বিশ্লেষণের লেন্স ও ভিন্ন. ফলে একই লক্ষে অভিভাসনের রাস্তায় নামলেও সাফল্যের বিচারে আমাদের উপলব্ব্দি একরকম না ও হতে পারে. সার্বিক জীবন মান নির্ধারণের অনেকগুলো সূচকের মধ্যে অন্যতম একটি হলো কর্মসংস্তান বা পেশাগত জীবন. শুধু এই সূচক দিয়ে নির্ধারণ করলে, অনেকের জন্যই অভিভাসন হচ্ছে “a journey through a tinted vision”. আবার জীবন মানের অন্যান্য নির্ধারক যেমন শিক্ষা, সাস্থ্য, নাগরিক সুযুগ সুবিধা এবং সামাজিক নিরাপত্তা বিবেচনা করলে, আপনার বিশ্লেষণের সাথে একমত না হবার কোনো কারণ নেই. আমার একান্তই নিজের উপলব্ব্দি হচ্ছে সর্ব অবস্তায় স্রষ্টায় সন্তুষ্টি থাকলে তার অপার করুনায় সময়ের সাথে সাথে সব কিছুরই ইতিবাচক পরিবর্তন সম্ভব. তখন যেখানেই থাকি, যে অবস্তায়ই থাকি, মনে হবে Life is Beautiful.
ধনবাদ হাসান ভাই….আসলে যে কোনো বিষয় বা ঘটনাপুঞ্জি এক একজন এক এক দৃষ্টিভঙ্গিতে বিচার করেন। আপনার বক্তব্যের জন্য আবারও ধন্যবদ।