ফারুক আহমেদ, পার্থ অস্ট্রেলিয়া থেকে:-
গতকাল রাতে ঠিক করেছিলাম আজ সকালে পান্তাভাত খাব । সাথে ডাল, কাঁচামরিচ, পেয়াঁজ এবং মুড়ি । গিন্নিকে বলেছিলাম ভাতে পানি দিয়ে রাখতে ।
সকালে উঠে যা হলো ।
ছুটির দিন । গিন্নি গিয়েছে বাচ্চাদের নিয়ে আরবী ক্লাসে । ঘুম থেকে উঠে হাতমুখ ধুয়ে রান্নাঘরের বেঞ্চটপের উপর বাটিতে পান্তাভাত পেলাম । এবার আনুসঙ্গিক জিনিসের যোগাড়ে লেগে গেলাম । তিন গাছ থেকে তিন প্রজাতির কাঁচামরিচ তুলে আনলাম টিপে টিপে । টেপাটিপির কারণ হলো, কাঁচামরিচ হতে হবে সঠিক আয়ুর – বেশি কচি হওয়া যাবে না আবার বেশি বতি হওয়া যাবে না – হতে হবে মাঝামাঝি । তাতে কাঁচামরিচের সুগন্ধ হয়, বেশি ঝালে হা-হু করতে হবে না আবার অল্প ঝালের জন্য খাওয়াটা মাটি হবে না ।
এবার পেয়াঁজ । সাধারণ পেয়াঁজ দিয়ে পান্তাভাত খাওয়ার মজা নষ্ট । গ্রাম-বাংলায় যে ছোট-ছোট দেশী পেয়াঁজ তাই লাগবে । এখানেও তা পাওয়া যায় । সাহেবরা এর নাম দিয়েছে স্যালট । পেয়াঁজ পেলাম ফ্রিজে । ছুরির খোঁজে কাবার্ড-ড্রয়ার সব খোলা-খুলি শুরু করলাম । ছুরি নেই । বাসায় তো অন্তত আধ-ডজন ছুরি থাকার কথা – সবজি কাটার জন্য, মাছ-মাংশ কাটার জন্য, ফল কাটার জন্য – এমনকি দেশ থেকে আনা একটা বটিও থাকার কথা । কিছুই নেই । পুরো রান্নাঘর তন্নতন্ন করে খুঁজেও কিছু পেলাম না । পেয়াঁজ কাটব কি করে? গিন্নিকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করবো? সে ছুরির অবস্থান বলার আগে বলবে –“হু, রান্না ঘরের তো কোন খবরই রাখ না – আমাকেই তো সব করতে হয়, ইত্যাদি ইত্যাদি “। এমন কথা শোনার চেয়ে পেয়াঁজ কামড়ে খোসা ছাড়ানো সন্মানজনক ।
পেয়াঁজ কামড়ে খোসা ছাড়াতে হলো না । ছোট একটা ফল কাটার ছুরি পেলাম । পেয়াঁজ কাটলে তো গন্ধ লেগে থাকবে! কি করি? থাকুক আপেল-তরমুজের চেয়ে শ্যালট বাবাজির বাজার মূল্য কয়েকগুন । শ্যালটের গন্ধে আপেল-তরমুজের ধন্য হওয়া উচিত ।
ফ্রিজ থেকে ডাল বের করে ওভেনে খানিকটা গরম করে পান্তাভাতে মেশালাম । এবার মুড়ি খুঁজতে লাগলাম । নেই, কোথাও নেই । ড্রয়ার খুললেই চকলেট, বিস্কুট কিংবা বাচ্চাদের খাবার জিনিস । মুড়ি ছাড়া পান্তাভাত খাব না । ফোন দেব? যদি বলে “বাজার-ঘাটের খবর তো কিছু রাখো না । মুড়ি নাই, শেষ হয়ে গেছে” । তার চেয়ে মুড়ি ছাড়াই পান্তাভাত খাওয়া ভাল । অবশেষে মুড়ি পেলাম প্যানট্রির সবার উপরের তাকে – সুপার মার্কেটে যেমন অ-গুরুত্ব্পুর্ন সদাই সবার উপরের তাকে রাখে – খুঁজে পেতে যেমন আপনাকে পায়ের আঙ্গুলের উপরে ভর দিয়ে উঁচু হয়ে দেখতে হয় । মুড়ির টিন নামানোর আগে ভাবছিলাম – টিন খালি নয় তো! টিন হাতে নিয়ে হালকা মনে হলো । খোলার আগে হালকা ঝাঁকি দিলাম । আছে, অল্প হলেও আছে ।
নাস্তার যোগাড়ে যত কষ্টই হলো না কেন, নাস্তাটা হলো জব্বর । কষ্ট করলে কেষ্ট মেলে ।