ভালো মন্দ মিলিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতে বিচিত্র রকমের লেখা বা পোস্টিং লক্ষ্য করা যায়। কিছু লেখা নিতান্তই অপ্রয়োজনীয়, অর্থহীন। কিছু লেখা তত্ত্ব ও তথ্যে ভরপুর। আবার কিছু লেখা আত্মউপলব্দীকে জাগ্রতকারী- যা চিন্তার স্রোতকে ভিন্ন অথচ অর্থবহ দিকে প্রবাহিত করতে পারে। সম্প্রতি এরকম একটি লেখা পড়ার সুযোগ হয়েছে। মূল লেখকের নাম জানা সম্ভব হয়নি। স্রষ্টার সীমাহীন নেয়ামত ও কৃতজ্ঞতা বোধকে নিয়ে ইংরেজিতে লেখা এই সংক্ষিপ্ত পোস্টিংটি অনেকের ভালো লাগতে পারে ভেবে ভাষান্তরের চেষ্টা করলাম। প্রতীকী গল্পের অবয়বে লেখা হলেও এর মর্মার্থ অনেক গভীর।
“ধনবান এক ব্যক্তি একদিন তার ঘরের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখলেন যে হতদরিদ্র এক লোক তার বাড়ির ডাস্টবিন থেকে কিছু একটা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে। ধনী ব্যক্তিটি তখন মনে মনে বললেন” ‘তোমার কাছে কৃতজ্ঞ প্রভু, আমি এতটা দরিদ্র নই।’
হতদরিদ্র লোকটি একটু দূরে তাকিয়ে দেখলেন যে একটি অ্যাম্বুলেন্স একজন অসুস্থ মানুষকে নিয়ে সাইরেন বাজিয়ে হাসপাতালে যাচ্ছে। দরিদ্র মানুষটি কৃতজ্ঞতা জানালেন তার স্রষ্টাকে। বললেন, ‘প্রভু তোমাকে ধন্যবাদ এজন্য যে আমি দরিদ্র হলেও অসুস্থ নই।’
হাসপাতালের বেডে শোয়া অসুস্থ সেই মানুষটি দেখতে পেলেন তার পাশ দিয়ে বড় ট্রলিতে করে একটি মৃতদেহ মর্গে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তিনি নীরবে চোঁখের পানি ফেলে বলে উঠলেন, “হে দয়াময় তোমার কাছে অনেক কৃতজ্ঞ আমি। অসুস্থ হলেও তুমি আমাকে এখনো বাঁচিয়ে রেখেছো।’
জীবনকে ভালোভাবে বুঝার জন্য হাসপাতাল, জেল এবং সমাধি ক্ষেত্রে যাওয়া প্রয়োজন। হাসপাতালে গেলে অনুভব করা যায় কেন সুস্থভাবে বেঁচে থাকার চাইতে বড় কোনো সুখ নেই। জেলে গেলে বুঝা যায় একজন মানুষের জীবনে স্বাধীনতার বিষয়টি কতটা গুরুত্বপূর্ণ। সমাধিক্ষেত্রে গেলে উপলব্দি করা যায় আমাদের জীবন কতটা মূল্যহীন। যে মাটির উপর দিয়ে আজ আমি হেটে যাচ্ছি, সেই একই মাটি কাল আমার মাথার উপর ছাদ হয়ে দেখা দিবে।
আমরা দুনিয়াতে আসি নিঃস্ব অবস্থায়। আবার ফিরেও যাই নিঃস্ব হয়েই। যে অবস্থায়ই থাকি, মাঝের এই সময়টুকুর জন্য আমাদের কৃতজ্ঞ থাকা দরকার। শুধুমাত্র একজন মৃত ব্যক্তিই তার স্রষ্টার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারেন না। আমাদের প্রয়োজন বিনয়ী হওয়া, সদয় হওয়া এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা সেই স্রষ্টার কাছে যিনি পরম করুনায় আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছেন। দিয়েছেন আরো একটি চমৎকার দিন জীবনকে উপলব্দি ও উপভোগ করার জন্য। মানব জীবন ভরিয়ে দিয়েছেন অফুরান নিয়ামতে।”
সৈয়দ মসিউল হাসান
টরন্টো থেকে