পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ কানাডা। রাশিয়ার পরেই এর অবস্থান। আক্ষরিক অর্থেই বিশাল এক দেশ। আটত্রিশ লক্ষ পঞ্চান্ন হাজার একশত তিন বর্গমাইল জায়গা জুড়ে অবস্থিত এই দেশটি আয়তনের দিক থেকে সাতষট্টিটি বাংলাদেশ অথবা চল্লিশটি ইংল্যান্ডের সমান। অথচ আয়তনের তুলনায় এদেশের জনসংখ্যার অনুপাত বলা যায় নিতান্তই নগন্য। ২০১৬ সালে পরিচালিত সর্বশেষ আদমশুমারির তথ্য অনুসারে কানাডার বর্তমান জনসংখ্যা ৩৫ মিলিয়ন বা তিন কোটি পঞ্চাশ লক্ষ। এর মধ্যে সিনিয়র বা বয়োজৈষ্ঠদের সংখ্যা ৫.৯ মিলিয়ন। অর্থাৎ কানাডার মোট জনসংখ্যার ১৬.৮৫ শতাংশই হচ্ছে বয়োজৈষ্ঠ। ২০১১ সালের তুলনায় সার্বিক জনসংখ্যা বেড়েছে পাঁচ শতাংশ আর বয়োজৈষ্টদের সংখ্যা বেড়েছে বিশ শতাংশ। সমাজবিজ্ঞানীরা এর কারণ হিসেবে গত পাঁচ বছরে জনসংখ্যার একটি বড় অংশের ৬৫তে উপনীত হওয়া, কানাডার মানুষের আয়ুষ্কাল বেড়ে যাওয়া এবং fertilityর হার কমে যাওয়াকে চিহ্নিত করেছেন। যে কারণেই হউক কানাডার জনসংখ্যার একটি বড় অংশ এখন দখল করে আছেন প্রবীণরা। এই দেশটিকে সুখী, সমৃদ্ধ করে গড়ে তুলতে প্রবীণদের অবদানকে কানাডার সরকার এবং সাধারণ জনগণ যথাযথ সম্মানের সঙ্গেই স্বীকৃতি দেয়। মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করলেও যাদের নিয়ে কাজ করি তাদের একটি বড় অংশ এখন ধীরে ধীরে প্রবীণদের কাতারে সামিল হচ্ছেন। তাদেরকে সহায়তা করার জন্য বিভিন্ন রকমের সেবা বা সহায়তা কার্যক্রম চালু আছে কানাডায়। এসব সেবা বা সহায়তা কার্যক্রমের কিছুটা আমরা সবাই জানি, আবার কিছু কিছু বিষয় সম্পর্কে আমরা অনেকেই হয়তো অবগত নই। এই লেখা এরকম কিছু বিষয়কে তুলে ধরারই একটি প্রয়াস।
আর্থিক সেবা কার্যক্রম: বয়সে প্রবীণ হলেও মানুষের টাকার প্রয়োজন কখনো ফুরিয়ে যায়না। না ফেরার দেশে যাওয়ার আগ পর্যন্ত এর প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। উপার্জনের স্থিতিশীল উৎস থাকলে দৈনন্দিন জীবন যাপন অনেক সহজ হয়ে উঠে। কানাডার প্রবীণদের জন্যও একই বিষয় সমানভাবে প্রযোজ্য। এই দিকে খেয়াল রেখে প্রবীণদের অর্থনৈতিক সহায়তার জন্য কয়েকটি বিশেষ ব্যবস্থা এখানে চালু রয়েছে। কানাডায় পঁয়ষট্টি বছর বা এর বেশি বয়স্ক মানুষদের জন্য আর্থিক সহায়তা কার্যক্রমের তালিকার শীর্ষে রয়েছে Old Age Security (OAS)। এখানকার নাগরিক বা স্থায়ী বাসিন্দা যারা ন্যূনতম দশ বছর এদেশে বসবাস করেছেন তারা প্রতিমাসে সরকারের কাছ থেকে একটি আর্থিক ভাতা পান। জানুয়ারী ২০১৮ তে এই ভাতার পরিমান ছিল ৫৮৬ ডলার। কানাডার Old Age Security Act এর অধীনে OAS ভাতাপ্রাপ্ত প্রবীণরা Guaranteed Income Supplement বা GIS নামে প্রতিমাসে আরও একটি ভাতা পান। এই ভাতার পরিমান নির্ভর করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বাৎসরিক আয়ের পরিমানের উপর। উদাহরণ দিলে বিষয়টি হয়তো পরিষ্কার হবে। ধরা যাক পঁয়ষট্টি বছর বয়স্ক দবির সাহেবের (ছদ্মনাম) বাৎসরিক আয় শূন্যের কোঠায়। তবুও উদাহরণের জন্য ধরে নিলাম তার বাৎসরিক আয় ৮৬৩ ডলার। সার্ভিস কানাডার হিসেবে অনুযায়ী উনি (একক ব্যক্তি হিসাবে) OAS বাবত পাবেন ৫৮৬.৬৬ ডলার আর GIS হিসেবে পাবেন ৮৪১. ২৩ ডলার। সর্বমোট মাসে ১৪২৭.৮৯ ডলার। বলা বাহুল্য এটি সাধারণ হিসাব। বাৎসরিক আয়ের উপর ভিত্তি করে এর তারতম্য হতে পারে। কানাডার প্রবীণরা কানাডা পেনশন প্ল্যান বা CPP নামে অবসরকালীন ভাতাও পেয়ে থাকেন যদিও সেটা নির্ভর করে তারা চাকরিকালীন সময়ে নিজেরা পেনশন খাতে কত ডলার নিয়মিত পরিশোধ করে এসেছেন এবং সেটা কতদিন বা কত বছর ধরে। এই বছরের জানুয়ারী থেকে যারা কানাডা পেনশন প্ল্যান এর নুতন গ্রহীতা তাদের পেনশন ভাতার সর্বোচ্চ পরিমান হবে ১১৩৪ কানাডীয় ডলার। কানাডার অন্টারিও প্রভিন্সে বসবাসরত নিম্নআয়ের প্রবীণদের জন্য Guaranteed Annual Income System বা GAINS নামে আর একটি প্রাদেশিক আর্থিক সহায়তার ব্যবস্থা রয়েছে। এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে এখানকার প্রবীণদেরকে তাদের বাসস্থান, খাদ্য অথবা জীবনযাত্রার ব্যয় নির্বাহের জন্য বাড়তি সহযোগিতা নিশ্চিত করা। এই ব্যবস্থার অধীনে ব্যক্তিগত আয়বিহীন কোনো প্রবীণ মাসে সর্বোচ্চ ৮৩ ডলার করে পেতে পারেন। এছাড়াও Goods & Services Tax, Harmonized Sales Tax, Ontario Trillium Benefit নামে কিছু সহায়তা কর্মূসূচি রয়েছে যেখান থেকে প্রবীণরা সীমিত আকারে হলেও আরো কিছু অর্থনৈতিক সহায়তা পাবার দাবি রাখেন। এইসব আর্থিক সুযোগ সুবিধা পাওয়ার অন্যতম একটি শর্ত হচ্ছে বাৎসরিক আয়কর দাখিল করা । অন্যান্য শর্তের মধ্যে রয়েছে সংশ্লিষ্ট প্রবীণ ব্যক্তির বাৎসরিক আয়, বৈবাহিক অবস্থা এবং তার উপর নির্ভরশীল মানুষের সংখ্যার উপর। এসব ভাতা হয়তো সব প্রবীণরা একই হারে পান না কিংবা পেলেও তা পর্যাপ্ত নয়। কিন্তু তারপরেও আয়ের এই প্রবাহ নিরবিচ্ছিন্ন থাকার কারণে বলা যায় অনেক দেশের তুলনায় কানাডার প্রবীণরা অনেক ভালো অবস্থানে আছেন।
অন্যান্য “Welfare State” বা জনকল্যাণমুখী উন্নত রাষ্ট্রসমূহের প্রবীণ হিতৈষী কার্যক্রম সম্পর্কে বিশদ ধারণা না থাকলেও কানাডার প্রবীণদের জন্য ব্যাপক কার্যক্রমের প্রশংসা না করার উপায় নেই। শুধু অর্থনৈতিক নয়, স্বাস্থ্যগত এবং সামাজিক ক্ষেত্রেও প্রবীণদেরকে সক্রিয়, সুস্থ এবং বিনোদনের মধ্যে রাখার জন্য কানাডায় বিভিন্ন রকমের কর্মসূচি এবং কর্মকান্ড চালু আছে। পরবর্তী পর্বে এই বিষয়গুলো তুলে ধরার চেষ্টা করবো। সেই পর্যন্ত আসুন নিজেরা ভালো থাকি, ভালো রাখার চেষ্টা করি আশেপাশের সবাইকে। আরো শ্রদ্ধাশীল, যত্নবান হই আমাদের প্রবীণদের প্রতি।
একই পথে একদিন হয়তো আমাদেরকেও হাটতে হবে অবিরাম – অনেকদূর।
সৈয়দ মসিউল হাসান
টরন্টো থেকে
(ছবি সৌজন্যে:-www.shutterstock,com)
To give a precise idea about this subject is a daunting task, and exactly Hasan bhai did that. I think everyone should keep a copy of this. Of course you get this information in the government website but it will really be very difficult to filter out your required information amids 100s of other information. kudos Hashan bha!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!
Thank you Mukul bhai for your kind words of encouragement. Yes indeed, gleaning required information, from the vast pool of resources sometimes becomes a formidable challenge. Yet it pays off when we can share the resources and information among aspiring people through this blog. I believe our respected readers of parobashiblog will find it useful and share their own insights. Thanks again for your perpetual motivational support.