গ্রামে আমরা তিন- চারজন বন্ধু খুবই ঘনিষ্ট ছিলাম, ভালো হোক আর মন্দ কাজ যাই করতাম না কেন একই সাথে যুক্তি করে করতাম। আমাদের সবার বয়স এক হলেও মাদ্রাসা কিংবা স্কুলে ওরা আমার এক দু ক্লাস নিচে পড়তো তারপরও স্কুল, মাদ্রাসা শেষে বাড়ি ফিরলে আমরা সবাই আগের মতো বন্ধু হয়ে যেতাম একসাথে ক্রিকেট খেলতে যেতাম, একসাথে আড্ডা দিতাম। বনুয়ার বিল, কানু চাচার বাড়ির পিছনের জঙ্গল কিংবা গ্রামের প্রাইমারি স্কুলের ছাদের উপর জমিয়ে আড্ডা মারতাম। বয়স বাড়ার সাথে সাথে সবাই যে যার পথ ধরে স্কুল কলেজে পড়তে থাকি, দূরে দূরে পড়া লেখা করলেও ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে আমরা সবাই আবার একসাথে মিলতাম।
যাই হোক আসল কথায় আসি, আমি তখন সিলেট এম সি কলেজে পদার্থ বিজ্ঞানে অনার্স পড়ছি, গ্রামের স্কুলে এসএস সি পাশ করবার পর গ্রাম্য জীবন ছেড়ে শহুরে জীবনে পদার্পন ১৯৯৯ সালে, ৫ বৎসরের ব্যাবধানে ২০০৪ সালে জীবনে অনেক চেঞ্জ এসেছে, নতুন অনেক বন্ধুবান্দব, থাকতাম সিলেট শহরের রায়নগরে। তো একদিন গ্রামের সবচেয়ে ঘনিষ্ট বন্ধুর সাথে দেখা, বন্ধুকে বললাম যে আমি ইংল্যান্ডে পড়ালেখার জন্য IELTS নামের একটা কোর্স করছি, ও শুনেই বললো ঠিক আছে কিন্তু মনে হয়না করে কোনো লাভ হবে। কেননা IELTS ভালো পয়েন্ট না পেলে ইংল্যান্ডে এপ্লাই করা যায়না এবং হাজার হাজার ছাত্র ছাত্রী প্রতি বৎসর ইংল্যান্ড আমেরিকার জন্য এপলাই করছে এর মধ্যে খুব কম সংখক ছাত্র ছাত্রী স্টুডেন্ট ভিসায় ভালো দেশগুলোতে যাওয়ার চান্স পায়। এক উপায়ে ও বলছিলো যে ওগুলো করে কোনো লাভ নাই, অযথা সময় নষ্ট করছিস। ওর কথায় অনেক যুক্তি ছিল, অনেক নেগেটিভ দিকগুলো ছিলো, কিন্তু আমি হাল ছাড়িনি। ২০০৭ সালে সব শেষ করে আমি ঠিকই ইংল্যান্ড গিয়েছিলাম। তবে এ ক্ষেত্রে আমার অনার্স কোর্সের সহপাঠীরা অনেক পজেটিভ ছিলো। ওরা প্রথম দিন থেকেই এক রকম জানতো যে আমি উপায়ে ইংল্যান্ড যাবোই যাবো , ওদের পজেটিভ সহযুগিতা আমাকে আমার স্বপ্ন পূরণে অনেক সাহায্য করেছিল।
আজ কালও কাউকে যখন স্বপ্নের কথা বলি, আগামীর কথা বলি , অনেকেই মুখ টিপে হাসে। ওরা হয়তোবা জানেনা একজন মানুষের কাছে তার স্বপ্ন -শ্রম -আর মেধার সৎ ব্যবহারের চাইতে বড়ো কিছু নেই এবং মানুষ যখন তার স্বপ্ন, মেধা পরিশ্রমকে এক সুতায় আবদ্ধ করতে পারে তখন জীবনের কোনো ধাপে উঠতেই তাকে তেমন একটা বেগ পেতে হয়না।
এক নরওয়েজিয়ান যুবক নরওয়েতে অয়েল ফিল্ড আবিষ্কার এবং এগুলো থেকে উত্তোলিত অয়েল বিক্রি করে নরওয়েকে নরওয়ের আসপাশের দেশগুলো থেকে অনেক এগিয়ে নিতে চেয়েছিলেন, নরওয়েতে অনেক অয়েল ফিল্ড আছে এই ব্যাপারটা তৎকালীন নরওয়েজিয়ান সরকারকে বুঝাতে উনার অনেক বেগ পেতে হয়েছিল কিন্তু উনি হাল ছেড়ে দেন নি। নরওয়েজিয়ান যুবক ফিলিপ ১৯৬৯ সালে নরওয়েতে অয়েল ফিল্ড আবিষ্কার এবং অয়েল বিক্রি করে ঐশর্যবান নরওয়ে দেখার স্বপ্ন দেখেছিলেন বলেই ১৯৭০ থেকে অয়েল এবং অয়েল প্রযুক্তি বিক্রি করে নরওয়ে আজ এতো ধনী একটা রাষ্ট্র।
তাই যে যতই বাধা হয়ে দাঁড়াক, যে যতই হাসুক, নিজের স্বপ্ন থেকে বিচ্ছিন্ন হবেন না। যাদের স্বপ্ন আছে, যারা তাদের স্বপ্নকে সফল করতে কাজ করে যায়, তারা সফল হয়ই হয়।