পার্থ, অস্ট্রেলিয়া থেকে :
এক বিকেলে বুড়োটার জন্য জন্ম দিনের কার্ড নিয়ে তার নার্সিং হোমে হাজির হয়েছিলাম, অস্ট্রেলিয়ার পার্থ শহরের একটা নার্সিং হোম। কার্ডে লেখা ‘ইওর ড্রিম কাম ট্রু’। নার্সিং হোম হচ্ছে ওল্ড হোম থেকে একধাপ এগিয়ে। এইধাপ জীবনের ধাপ, মৃত্যুর দিকে। ওল্ড হোমের বুড়োবুড়িরা চলতে ফিরতে পারেন। নার্সিং হোমের বুড়োবুড়িরা নার্সের সাহায্য ছাড়া চলতে পারেন না। আমি ভলাণ্টিয়ার, মানে বিনে পয়সায় কাজ করি। কাজ মানে দু-এক সপ্তাহে ঘণ্টাখানেক বুড়োটার সঙ্গে কথা বলা, কথা শোনা – তাকে সঙ্গ দেওয়া।
রুমে ঢুকতেই বুড়ো দন্তহীন মুখে হাসল।
আমি হেসে বললাম, ‘হ্যাপি বার্থডে। কেমন আছ রুডি’?
রুডি দুই ঠোঁট আরও প্রশস্ত করল, মাথা ওপর-নিচ ঝাঁকাল- যার অর্থ ভালো আছি কিংবা অন্য কিছু। তার ঘোলা দুইচোখে খুশি দেখতে পাই – পুরনো বন্ধুকে দেখলে যেমন হয়।
ঘরটা তার প্রয়োজনের তুলনায় বড়। সে সারাদিন বিছানায় থাকে। যেটুকু শক্তি অবশিষ্ট আছে তা সে ব্যবহার করে শোয়া থেকে উঠে বসতে। কিছুক্ষণ বসে থেকে আচমকা শুয়ে পড়ে।
তার ডানপাশের দেয়ালজুড়ে জানালা, ভারী পর্দা বাইরের আলো ঢুকতে দেয় না। সিলিংয়ে অল্প পাওয়ারের ডাউন লাইট। তার পায়ের দিকের দেওয়ালে কাঠের ডেস্ক। ডেস্কের ওপর কয়েকটা ছবির ফ্রেম, একটা ক্যালেন্ডার। কয়েকটা বার্থডে ধরনের কার্ড ডেস্কের ওপর দাঁড় করানো। ডেস্কের ওপর দেয়ালে রুডির মেয়ে ইগনেসের আঁকা দুটো ছবি। তার বামপাশে বাথরুমের দরজা – বোধহয় নার্সরা তাকে সেখানে নিয়ে যান।
বিছানাটা বোতাম চেপে উঁচু-নিচু করা যায় – পুরো বিছানা অথবা পিঠের পাশের অর্ধেকটা। বিছানা মেঝেতে লাগানো থাকে, পিঠের অংশটা ওঠানো থাকে ইজি চেয়ারের মতো করে। আমি তার সঙ্গে মেঝের কার্পেটে হাঁটু গেড়ে বসে কথা বলি, যেমন করে বড়রা চার-পাঁচ বছরের ছেলেমেয়েদের সঙ্গে কথা বলে – যাতে দুই জোড়া চোখ প্রায় সমান উচ্চতায় থাকে।
আমি কার্ডটা রুডির হাতে দিয়ে আবার বললাম, ‘হ্যাপি বার্থডে রুডি’।
‘থ’ উচ্চারণ করতে জিহ্বা উপরের পাটির দাঁতে ঠেকাতে না পেরে উপরের ঠোঁটে ঠেকিয়ে রুডি বলে, ‘থ্যাংক ইউ’। শব্দ উচ্চারণে দাঁতের প্রয়োজনীয়তা এই বুড়োর সঙ্গে দেখা হওয়ার আগে বুঝতে পারিনি।
সে কার্ডটা খুলে পড়ল – ‘ইউর ড্রিম কাম ট্রূ -’। আমার দিকে তাকিয়ে হাসে, আবার কার্ডের লেখাটার দিকে তাকায়, আবার আমার দিকে তাকিয়ে হাসে।
আমি জিজ্ঞেস করি, ‘তোমার কোনো ড্রিম আছে রুডি?’
সে এবার একদৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে হাসে।
আমি আবার জিজ্ঞেস করি – আরও গলা উঁচিয়ে, ‘তোমার কোনো ড্রিম আছে রুডি?’ যদিও তার কানের সমস্যা নেই, এ বয়েসীদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে আমাদের গলা এমনিতেই উঁচু হয়ে যায়। কানের সমস্যা থাকুক আর নাই থাকুক।
রুডি হেসে বলে, ‘ইয়েস, আই হ্যাভ’।
আমি ভাবছিলাম কি করে তার জন্ম দিনটা একটু রঙিন করা যায়। ভাবছিলাম গল্প করে তাকে তার রোমান্টিক দিনে ফিরিয়ে নিয়ে যাব। তার সঙ্গে গল্প করার উদ্দেশ্য শুধু তাকে সঙ্গ দেওয়া নয়। আমার নিজের স্বার্থ আছে। আমি সাধারণ মানুষ। সাধারণ মানুষেরা কিছু করার আগে বা পরে, সচেতন বা অবচেতনভাবে লাভ-ক্ষতির হিসাব করে। টাকা পয়সার হিসাবে না হলেও অন্যভাবে। ঈশ্বরচন্দ্র বা মাদার তেরেসার মতো মহামানব-মানবীরা এসবের ঊর্ধ্বে। আমাদের সঙ্গে তাদের মহাসমুদ্রের ব্যবধান। গতরাতের একটা ঘটনা বললে উপলব্ধি করতে সহজ হবে।
আমি স্বপরিবারে ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপ থেকে ছুটি কাটিয়ে ফিরছিলাম। ট্যাক্সি যখন এয়ারপোর্টে নামিয়ে দিল তখন মিটারে ভাড়া সত্তর হাজার রুপিয়া (এক ডলার সমান দশ হাজার রুপিয়া)। আমার কাছে সর্বসাকুল্যে একলাখ রুপিয়া ছিল। আমি পুরোটাই তাকে দিলাম। ড্রাইভারের বড় একটা ‘থ্যাংক ইউ’ দিল। চেক-ইন, সিকুরিটি এবং ইমিগ্রেশন পার হয়ে অপেক্ষা করছিলাম একটা কফির দোকানের সামনে বসে। ফ্রেশ কফির গন্ধে নিজেকে ধরে রাখতে পারছিলাম না। এক কাপের দাম তিরিশ হাজার রুপিয়া (তিন ডলার)।
ভাবছিলাম, আহ হা, ট্যাক্সিকে টাকাটা না দিলেই পারতাম। আরাম করে একটা কফি খাওয়া যেত।
আমি তিনটাকা বখশিস দিয়ে আনন্দ পাই। পরক্ষণেই কফির লোভ অবচেতন মনকে খোঁচাতে থাকে – আফসোসের মধ্য দিয়ে যার প্রকাশ। মহামানবরা পরের জন্য নিজেকে নিঃস্ব করে আনন্দ পান। তারপর তারা আফসোস করেন না। যেমন, ঈশ্বরচন্দ্র নিজে যা উপার্জন করতেন তার ক্ষুদ্র অংশ নিজের জন্য ব্যয় করতেন। সারাজীবন তিনি মেয়েদের স্কুল আর বিধবা বিবাহের জন্য ব্যয় করেছিলেন। দুহাত উজাড় করে, বিশাল হৃদয় উন্মুক্ত করে মানুষের জন্য করতেন – শেষ আনাটি পর্যন্ত। প্রয়োজনে নদী সাঁতরে পার হতেন। আমার ধারণা ঈশ্বরচন্দ্র জন্মায়, তৈরি হয় না – তাদের জন্ম হয় আর সবার চেয়ে বড় হৃদপিণ্ড নিয়ে। সৃষ্টিকর্তা কোন দেশে এমন হৃদপিণ্ড দিয়ে হাজার বছরে দু-একজন পাঠান।
রুডি হাসিমুখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। রুডিকে আমি পছন্দ করি। আমি ওর কথা শুনে আনন্দ পাই – অবশ্য যখন সে কথা বলে, তা নির্ভর করে তার মুডের ওপর। সে কথা শুরু করলে বেশ কথা বলে। না বললে হাসে আর মাথা ঝাঁকায়। আমি আসি কিছু জানার আশায়, কিছু পাওয়ার আশায়।
আমি এ বয়সের মানুষের কষ্ট উপলব্ধি করতে চাই। আল্লাহপাক যদি এ বয়স পর্যন্ত আমাকে নিয়ে যান, তখন যেন কষ্টটা মেনে নেওয়া সহজ হয়। এ নার্সিং হোমে নানা ধরনের বৃদ্ধ-বৃদ্ধা। একটা হলরুম আছে। যারা নিজে হাঁটতে পারেন বা অন্যের কাঁধে ভর করেও হাঁটতে পারেন তারা হলরুমে বসেন। দশ-বারোজন সোফায় এলোপাতাড়ি বসে থাকেন। টিভি দেখেন। অনেকে বসে ঝিমান। দু-একজন নানারকম অদ্ভূত শব্দ করেন – শিশুরা কথা বলা শেখার আগে যেমন শব্দ করে।
এক বৃদ্ধা আছেন – তিনি পুতুল খেলেন। তিনি চার চাকার একটা চেয়ারে ভর করে হাঁটেন। তার চেয়ারভরা টেডি বেয়ার ধরনের খেল না। একদিন ইশারায় আমাকে ডাকলেন। তারপর চেয়ারের উপরের বন্ধুদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন। একটা খয়েরি টেডি বেয়ার দেখিয়ে ফিসফিস করে বললেন, ‘এ হচ্ছে পিটার – আমাকে সারাদিন জ্বালায়। শুধু গল্প শুনতে চায়’। তারপর তর্জনী ঠোঁটে চেপে ধরে আমাকে চুপ থাকার ইশারা করলেন (যদিও আমি কোনো কথাই বলছিলাম না), ‘কথা বলো না – লিয়া ঘুমাচ্ছে’। ধারণা করলাম গোলাপী পুতুলটা লিয়া। লিয়ার গায়ের ওপর এক টুকরো কাপড় কম্বলের মতো গলা পর্যন্ত টেনে দেওয়া।
আমার চোখ ঝাঁপসা হয়ে আসে। শিশুতে জীবন শুরু, শিশুতেই শেষ। জীবনের শুরুতে চারপাশে কত আনন্দ, কত আদর, কত উচ্ছ্বাস ! শেষবেলাতে শুধু মৃত্যুর অপেক্ষা!
আর যে কারণে আসি তা হলো আমার আগ্রহ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইউরোপের মানুষের জীবনের ওপর। বই পড়ে, ডকুমেন্টারি দেখে আগ্রহ বেড়েছে। ওই সময়ে যারা বালক-বালিকা ছিলেন – তাদের কাছ থেকে ওই সময়ের জীবনের কথা শোনার তীব্র ইচ্ছা থেকে এ পোলিশ বৃদ্ধের কাছে আসা।
শেষ কারণটা হলো – যদি লেখার কিছু পাই ! এই যেমন রুডিকে নিয়ে লিখছি।
রুডি তাকিয়ে আছে হাসিমুখে। দুই ঠোঁট একটু ফাঁক। আমি জিজ্ঞাসা করি –
‘এটা তোমার কততম বার্থডে রুডি?’
‘সেভেটি এইট’
‘ওয়াও, তোমার কি মনে পড়ে প্রথম কোন মেয়েকে ভালো লেগেছিল?’
সে হাসে। একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে আমার দিকে।
আমি অন্যভাবে জিজ্ঞেস করলাম – ‘তোমার স্ত্রীর সঙ্গে কখন প্রথম দেখা হয়?’
সে একটু নীরব থেকে বলল – ‘আমি তেইশ। সে ছিল উনিশ। ভেরি স্টানিং ইয়াং লেডি!’
‘কোথায় দেখা হলো?’
‘কফি শপ। সে সেখানে কাজ করত।’
‘পোলান্ডে?’
‘হ্যা, উত্তরের ছোট একটা শহরে। তাপমাত্রা মাইনাস’
‘আর তুমি? তুমিও কি সেখানে কাজ করতে?’
‘আমি একটা ওয়ার্কশপে কাজ করতাম।’
‘তারপর?’
‘আমি সেখানে একটা ব্রেড আর কফি খেয়ে কাজে যেতাম। ‘ব্রেড আর কফি। হ্যাঁ, ব্রেড আর কফি।’
আমি বুঝলাম বুড়ো মুখ খোলা শুরু করেছে। এবার বলতে থাকবে। ছোটবেলায় নারকেলের পাতা দিয়ে চরকা বানিয়ে কাঠি দিয়ে বাতাসে ধরতাম। চরকাকে হাত দিয়ে একবার ঘুরিয়ে দিলে সে বাতাসে ঘুরতে শুরু করতো।
‘তারপর?’
‘শী ওয়াজ স্টানিং ইয়াং লেডি, ভেরি স্টানিং ইয়াং লেডি।’ থেমে থেমে বলল রুডি।
‘তাকে দেখার জন্যই কি প্রতিদিন কফিশপে যেতে?’
রুডি হেসে ফেলে, ‘প্রতিদিন যেতাম। প্রতিদিন। আমি টেবিলে বসলেই সে হেসে জিজ্ঞেস করত – একটা চিনি? ‘আমি কফিতে একটা চিনি খেতাম, এখনো একটাই।’
‘তারপর?’
‘একদিন বললাম – আমি কি তোমার সঙ্গে কফি খেতে পারি?’ সে হেসে ফেলল – পার। কিন্তু আমি কাজ করছি। কাজের সময় তোমার সঙ্গে বসে কফি খেলে আমার চাকরি চলে যাবে। আমি জিজ্ঞেস করলাম – ‘কখন?’
রুডির চেহারার মাঝে – মুখমণ্ডলের চামড়ার ভাঁজে ভাঁজে, কাঁপা-কাঁপা চোখের পাতা আর চোখের মাঝে আমি উচ্ছ্বাস দেখছিলাম। আমি চুপ করে অপেক্ষা করছিলাম – দশ বা বিশ সেকেন্ড। তারপর সে আচমকা কাত হয়ে বিছানার উঁচু করা পিঠের পাশটায় শরীর এলিয়ে দিল। আমি অপেক্ষা করছিলাম। মিনিটখানেক পর সে বাম কনুই আর ডানহাতের তালুতে ভর করে উঠে বসলো। একটু যেন হাঁপিয়ে গেল। একটু হাসলো, তারপর বলল-
‘সে বলল- কাল সন্ধ্যা সাতটায়। কফিশপ বন্ধ হয় আটটায়। আমি একঘণ্টা ছুটি নেব।’
রুডি একটু বিরতি নিয়ে থেমে থেমে বলল, ‘ওহ ! সবচেয়ে কঠিন অপেক্ষার একদিন! কঠিন একদিন ! পরদিন সাতটায় সে সেখানে ছিল না। আরেকটা মেয়েকে জিজ্ঞেস করলাম। সে ছুটি নিয়ে চলে গেছে কিছুক্ষণ আগে। আমার মন খারাপ হলো নাÑ অপমানবোধ হলো। ইট ওয়াজ ইনসাল্টিং। ইট ওয়াজ ইনসাল্টিং।’
আমি অবাক হলাম, ‘ইন্টারেস্টিং মেয়ে!’
রুডি বলল, ‘তখন আমি শক্ত যুবক। স্ট্রং এন্ড ইয়াং। আমি শপের বাইরে গেলাম। ফুটপাথে বসে পড়লাম। অনেক ঠাণ্ডা। জমে যাওয়ার মতো ঠাণ্ডা। রাস্তার ওপারে তাকালাম। সে কাঠের পোলে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়েছিল। আমাকে দেখছিল। হাসছিল। কান পর্যন্ত ঢাকা লাল রঙের উলের টুপি।’
‘ওয়াও, সিনেমার মতো। তারপর রাস্তা পার হয়ে তোমরা চুমু খেলে?’
‘নাহ। এত সহজ ছিল না।’
‘কবে প্রথম তোমরা চুমু খেলে?’
রুডি একদৃষ্টিতে আমার চোখে তাকিয়ে থাকে – যেন ভাবছে আমাকে সব বলবে কিনা। তারপর মাথা ঝাঁকায় যেন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
‘আমরা সিনেমা দেখতে গিয়েছিলাম। আমেরিকান সিনেমা। সেভেন গার্লফ্রেন্ডস টু সেভেন বয়ফ্রেন্ডস। আই কিসঠ হার – হে হে হে উই কিসঠ। সেভেন গার্লফ্রেন্ডস টু সেভেন বয়ফ্রেন্ডস। আমেরিকান সিনেমা। উই কিসঠ হে হে হে হে , রুডি শব্দ করে হাসে – উচ্ছ্বাস যেন উপচে পড়ছিল। কখনও শব্দ করে হাসতে শুনিনি! যে আশা নিয়ে এসেছিলাম – সার্থক।
আমি বুড়োকে চেপে ধরলাম, ‘কতক্ষণ তোমরা চুমু খেলে? মানে প্রথম চুমু কতক্ষণ স্থায়ী ছিল? এক মিনিট? দুই মিনিট?’
‘অনেকক্ষণ’ বলে সে কাত হয়ে আচমকা আবার বিছানায় গা ছেড়ে দিল।
ভাবছিলাম সে এখন বিশ্রাম করুক, চোখ বুঁজে পোলান্ডের সুখের সময় মনে করুক।
আমি বিদায় নিলাম, ‘আমাকে যেতে হবে। আজ আমি আসি রুডি।’
রুডি মাথা ঝাঁকাল। আমি দাঁড়ালাম। সে উঠে বসল, যেমন করে উঠে বসে। বলল- ‘থাংক ইউ।’
দরজার কাছে যেতেই সে আমাকে ডাকল, ‘ফাউক’
আমি ঘুরে এগিয়ে গেলাম, ‘কিছু বলবে?’
সে আমার দিকে তাকিয়েছিল। ঘোলা দুই চোখে পানি। সে এমন করে আমার দিকে তাকিয়েছিল যেন আমাকে দেখছিল না।
আমি আবার বললাম, ‘কিছু বলবে?’
সে আপন মনে বল – ‘আই হ্যাভ এ ড্রিম।’
আমি অনেক অবাক হলাম। অনেক। জন্মদিনের কার্ডটা খাটের পাশে পড়ে গিয়েছিল। আমি কার্পেটের ওপর হাঁটু গেড়ে বসলাম। কার্ডটা তুলে খাটের পাশে ছোট টেবিলটায় রাখলাম। তারপর জিজ্ঞেস করলাম-
‘কি তোমার ড্রিম ?’
‘আমি পোল্যান্ড ফিরে যেতে চাই, পোল্যান্ড ফিরে যেতে চাইঃ’ একসময় কথাগুলো আর বোঝা গেল না।
তার হাসিখুশি মুখে এতক্ষণের উচ্ছ্বাস যেন উড়ে গিয়েছিল। হয়ত তার ভাই, বোন, ছেলেবেলার খেলার সাথীরা এখনও সেখানে অনেকেই বেঁচে আছেন। আরেকদিন শোনা যাবে তাদের কথা। চল্লিশ বছর এদেশে থাকলেও নিজ দেশের জন্য তার ভাঙ্গা হৃদয় আমাকেও পেয়ে বসল। আমিও কি তার বয়সে একই স্বপ্ন দেখব দেশে ফেরার? কিন্তু নিরুপায় ? আমাকে উঠতে হলো। উঠতে উঠতে বললাম- ‘হ্যাপি বার্থ ডে রুডি। উইশ ইওর ড্রিম কাম ট্রু-’।
গভীর অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে দেখা এই লেখার মধ্যে একটি বিশেষ বয়সের মানুষের চাওয়া, পাওয়া তথা জীবনের সীমাবদ্দতা খুব সুন্দরভাবে ফুটে উঠেচে. বেলা শেষের এই গান একদিন আমাদেরকেও গাইতে হবে. একদিন আমরাও খুজবো জীবন সায়ান্নে মানবতার রূপ. অনেক ধন্যবাদ ফারুক ভাই, চমত্কার এই লেখার জন্য. আরো লেখার অপেক্ষায় রইলাম.